Skip to main content

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার



ক্ষুরা রোগ 
ইহা সকল বয়সের গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়ার ভাইরাসজনিক একটি মারাত্মক অতি ছোঁয়াছে রোগ। 

লক্ষণঃ 
শরীরের তাপমাত্রা অতি বৃদ্ধি পায়। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, সম্পূর্ণ মুখ গহ্বর, পায়ের ক্ষুরের মধ্যভাগে ঘা বা ক্ষত সুষ্টি হয়। ক্ষত সৃষ্টির ফলে মুখ থেকে লালা ঝরে, সাদা ফেনা বের হয়। কখনও বা ওলানে ফোসকার সৃষ্টি হয়। পশু খোঁড়াতে থাকে এবং মুখে ঘা বা ক্ষতের কারণে খেতে কষ্ট হয়। অল্প সময়ে পশু দূর্বল হয়ে পরে। এ রোগে গর্ভবর্তী গাভীর প্রায়ই গর্ভপাত ঘটে। দুধালো গাভীর দুধ উৎপাদন মারাত্মক ভাবে হ্রাস পায়। বয়স্ক গরুর মৃত্যুহার কম হলেও আক্রান্ত বাছুরকে টিকিয়ে রাখা কঠিন। 



করণীয়ঃ 
আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে। অসুস্থ পশুর ক্ষত পটাশ বা আইওসান মিশ্রিত পানি দ্বারা ধৌত করে দিতে হবে। ফিটকিরির পানি ১০ গ্রাম (২ চা চামচ) ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। সোহাগার খৈ মধু মিশিয়ে মুখের ঘায়ে প্রলেপ দিতে হবে। নরম খাবার দিতে হবে। পশুকে শুস্ক মেঝেতে রাখতে হবে কোন অবস্থায়ই কাদা মাটি বা পানিতে রাখা যাবেনা। সুস্থ অবস্থায় গবাদিপশুকে বছরে দুইবার প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। খাওয়ার সোডা ৪০ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে পায়ের ঘা পরিষ্কার করে সালফানাসাইড পাউডার লাগাতে হবে। সালফানামাইড / টেট্রাসাইক্লিন অথবা উভয় ঔষধ ৫- ৭ দিন ব্যবহার করা যাবে।

জলাতংক 
মানুষসহ সকল গবাদিপশুর ভাইরাসজনিত একটি মারত্মক রোগ। আক্রান্ত পশুর লালাতে এ রোগজীবাণু থাকে এবং আক্রান্ত পশুর কামড়ে সুস্থ পশু বা মানুষ এ রোগ জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়। লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে মৃত্যুই এ রোগের নিশ্চিত পরিনতি। শিয়াল ও বাঁদুর এ রোগজীবাণুর বাহক এবং প্রধানতঃ কুকুর আক্রান্ত প্রাণী। 

লক্ষণঃ 
পশু কান সজাগ ও চোখ বড় করে রাখে। মুখ দিয়ে প্রচুর লালা ঝরে। পানি পিপাসা হয়, তবে পান করতে পারে না। ভীষণভাবে অশান্ত হয়ে উঠে। শক্ত রশি ছাড়া আটকে রাখা যায় না। সামনে যা পায় তা’ই কামড়ানোর চেষ্টা করে। আক্রান্ত পশু পরিশেষে নিস্তেজ ও অবশ হয়ে মারা যায়। 

করণীয়ঃ 
আক্রান্ত পশুকে মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করতে হবে। গৃহপালিত কুকুরকে নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা প্রদান করতে হবে। চিকিৎসা অর্থহীন এবং কোন অবস্থায়ই ঔষধ খাওয়ানোর জন্য পশুর মুখে হাত দেয়া যাবে না। 

প্রতিষেধকঃ 
পোষা কুকুর / বিড়ালকে নিয়মিত প্রতিশেধক টিকা দিতে হবে। টিকা দেয়া হয়নি এমন পশুর কামড়ে মানুষ / পশু আক্রানত্ম হলে অনতিবিলম্বে নির্ধারিত মাত্রায় প্রতিশেধক টিকা দিতে হবে।

পি পি আর 
ইহা ভাইরাসজনিক একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। সকল বয়সের ছাগল-ভেড়া এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং আমাদের দেশে ছাগলের এ রোগ যথেষ্ট হয়ে থাকে।



লক্ষণঃ 
আক্রান্ত ছাগলের অবসাদ, ক্ষুদামন্দা হয়। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। মুখে ক্ষত হয় এবং নাক দিয়ে প্রচুর শ্লেম্মা বের হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টকর ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়। তীব্র ডায়েরিয়া দেখা দেয় এবং মৃত্যু ঘটে। 

করণীয়ঃ 
অসুস্থ পশুকে দ্রুত সুস্থ পশুকে আলাদা করতে হবে। বাসস্থান পরিস্কার রাখতে হবে। ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ার এ রোগের কোন সফল চিকিৎসা নেই। সুস্থ পশুকে নিয়মিত টিকা দিয়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। 

চিকিৎসাঃ 
প্রকৃত চিকিৎসা না থাকলেও সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টামিনিক এবং প্রয়োজনে স্যালাইন ব্যবহার করে ফল পাওয়া যেতে পারে।

ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশায়:
ইহা অল্প বয়স্ক গবাদি পশুর প্রোটোজোয়া জনিক একটি রোগ 

লক্ষণঃ 
দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা হয়। পায়খানা রক্ত ও মিউকাস (আম) মেশানো থাকে। পায়খানার সময় ঘনঘন কোঁথ দেয়।



করণীয়ঃ 
বাসস্থান, খাবার ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত পশুর দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। 

চিকিৎসাঃ 
সালফানামাইড জাতীয় ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে ।

ব্যেবেসিওসিস বা রক্ত প্রস্রাব 
আঁটালীর মাধ্যমে ব্যবেসিয়া নামক এক প্রকার ব্লাড প্রটোজোয়া সংক্রমিত হয়ে এই রোগের সৃষ্টি হয়। দেশের সর্বত্র এ রোগ হয়, তবে পাহাড়ী এলাকায এই রোগ বেশী হতে দেখা যায়। 

লক্ষণঃ 
অতি উচ্চ তাপমাত্রা (১০৮ ডিগ্রী ফাঃ)। রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে হিমোগ্লোবিন প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে আসে। প্রস্রাবের রং কালচে লাল হয়। 

করণীয়ঃ 
পশুকে নিযমিত কীটনাশক সেপ্র করে আঁটালীমুক্ত রাখতে হবে। পশুর বাসস্তান নিয়মিত পরিস্কার রাখতে হবে। অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে। জরুরী ভিত্তিতে সামান্য বরিক পাউডার ফিটকিরি মিশ্রিত পানি গুলে খাওয়ালে রোগের কিছুটা উপশম হয়। 

চিকিৎসাঃ 
বেরিলিন জাতীয় ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে।

কৃমি (পরজীবি):
সকল প্রকার গবাদি পশুই অন্তঃ ও বহিঃ পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। অন্তঃ পরজীবিকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়-

ক) পাতা কৃমি।
খ) ফিতা কৃমি।
গ) গোল কৃমি।

বহিঃ পরজীবির মধ্যে উকুঁন, আঁটালী ও মাইট উল্লেখযোগ্য। আইভারমেকটিন ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে । 

লক্ষণঃ 
পশুর খাদ্য পুষ্টিতে ভাগ বসায় ও পশুর রক্ত শোষণ করে। পশু দিনদিন শুকিয়ে দূর্বল ও হাড্ডিসার হয়ে পড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। পাতলা পায়খানা করে। শরীরের লোম বা পশম উসকো খুসকো থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই বাছুরের মৃত্যু ঘটে। বয়স্ক পশুর উৎপাদন কমে যায়। 

করণীয়ঃ 
পশুকে বছরে ৩-৪ বার নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে গবাদি পশুর বাসস্থান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বহিঃ পরজীরি ক্ষেত্রে নিয়মিত পরজীবি নাশক ঔষধ সেপ্র করতে হবে। 


চিকিৎসাঃ 
ক) পাতা কৃমি। ট্রাইকেলা বেনডাজল / অক্সিবেনডাজল ইত্যাদি ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে।
খ) ফিতা কৃমি। চিকিৎসা: নিকলোসামাইড জাতীয় ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে ।
গ) গোল কৃমি। চিকিৎসা: অলবেনডাজল /ফেনবেনডাজল /মে বেনডাজল /লিভামেসল /পাইপেরাজিন / আইভারমেকটিন ইত্যাদি ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে ।

বহিঃ পরজীবির মধ্যে উকুঁন, আঁটালী ও মাইট উল্লেখ যোগ্য। আইভারমেকটিন ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে ।

কৃমি
কৃমি নানা জাতের ও নানা আকারের হয়ে থাকে। কৃমিতে আক্রান্ত পশুকে ঠিক মতো খাবার দিলেও তার স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি হয় না। বরং দি দিন রোগা হতে থাকে।

লক্ষণ
ক) পশু দূর্বল হয়ে যায়
খ) খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয়
গ) হাড্ডিসার হয়ে যায়
ঘ) সময় সময় পায়খানা পাতলা হয়
ঙ) শরীরের ওজন কমে যায়
ছ) দুগ্ধবর্তী গাভীর দুধ কমে যায়
চ) রক্তশুণ্যতায় ভোগে বলে সহজেই অন্যান্য আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
জ) দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধি পায় না।
ঝ) ফলে পশুকে রোগা ও আকারে ছোট দেখায়

চিকিৎসা ও প্রতিকার
গোবর পরীক্ষান্তে কৃমিনাশক ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে।

লক্ষণ
প্রাথমিক অবস্থায়
ক) আক্রান্ত পশু কিছু খেতে চায় না
খ) হাটতে চায় না
গ) জিহবা বের হয়ে থাকে
ঘ) মাথা ও পায়ের মাংসপেশী কাপতে থাকে

পরবর্তী অবস্থায় আক্রান্ত গাভী
ক) বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে
খ) মাথা বাঁকিয়ে এক পাশে কাধের ওপর ফেলে রাখে
গ) এ অবস্থায় গাভী অনেকটা চৈতন্য হারিয়ে ফেলে
ঘ) গাভী কাত হয়ে শুয়ে পড়ে, উঠতে পারে না
ঙ) ধমনীর মাত্রা বেড়ে যায়
চ) অবশেষে গাভী মারা যায়

চিকিৎসা ও প্রতিকার
গাভীকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালসিয়াম ইনজেকশন দিতে পারলে দ্রুত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।



দুগ্ধ জ্বর বা মিল্ক ফিভার: 
প্রসবের সাথে সম্পর্কিত একটি বিপাকীয় রোগ। সাধারণতঃ অধিক দুগ্ধ দানকারী গাভী প্রসবের পর পরই এ রোগে আক্রান্ত হয়। 

লক্ষণঃ 
আক্রান্ত পশু কিছু খেতে চায় না মাথা স্থির রাখতে পারে না এবং জিহ্বা বের হয়ে আসে। পরবর্তিতে গাভী বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে। মাথা একপাশে কাঁধের উপর ফেলে রাখে। গাভী চৈতন্য হারিয়ে ফেলে এবং অবশেষে মারা যায়। 

করণীয়ঃ 
গর্ভবতী গাভীকে সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। প্রসবকালীন শেষ মাস থেকে গাভীর খাদ্যে পরিমিত অনুপাতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি এর সরবরাহ করতে হবে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসায় তাৎক্ষনিকভাবে রোগ নিরাময় ঘটে। 

চিকিৎসাঃ 
ক্যালসিয়াম ইনজেকশন রোগের তীব্রতা ও পশুর ওজন অনুযায়ী শিরায় প্রযোগ করতে হবে।


তড়কা :এটি গবাদিপশু ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ।

লক্ষণঃ 
উচ্চ তাপমাত্রা, অস্বত্তি ও শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। মাংশ পেশীর কাঁপুনি ও পরবর্তীতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মৃত্যুর পর নাক, মুখ, প্রস্রাব ও মলদ্বার দিয়ে রক্ত বা রক্ত মিশ্রিত রস বের হয়। তীব্র প্রকৃতির ক্ষেত্রে চিকিৎসার অভাবে দু এক দিনের মধ্যে মৃত্যু ঘটে। অতিতীব্র প্রকৃতির ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই পশুর আকস্মিক মৃত্যু হয়। এই জীবাণু মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় এবং কারবাংকল রোগের সৃষ্টি করে। 

করনীয়ঃ 
আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে। অতি দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কোন অবস্থায়ই মৃত পশুর চামড়া ছাড়ানো যাবে না। মৃত দেহ কোন অবস্থায়ই খোলা মাঠে রাখা বা পানিতে ভাসিয়ে দেয়া যাবেনা। মৃত পশুকে পুঁতে রাখতে হবে। মৃত পশুর রক্তে যে রোগ জীবানু থাকে তা মাটিতে কুড়ি বৎসর পর্যন্ত জীবিত থেকে অন্য পশুতে সংক্রমিত হতে পারে। গর্ত করে গর্তে চুন ছিটিয়ে দিলে তা এ রোগ জীবাণুকে ধবংস করতে পারে। পশুর বাসস্থানে মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটিয়ে দিতে হবে। এই জন্য চুন স্বল্পমূল্যের উৎকৃষ্ট জীবাণুনাশক। সুস্থ পশুকে প্রতি বৎসর একবার টিকা দিতে হবে। 

প্রতিষেধকঃ 
সুস্থ্য পশুকে ছয় মাস পর পর নিয়মিত টিকা দিতে হবে। 

চিকিৎসাঃ 
পেনিসিলিন গ্রুপের ইনজেকশন নির্ধারিত মাত্রায় ৪- ৫ দিন ব্যবহার করতে হবে।


বাদলা:এটি সাধারণত কম বয়সের গরু মহিষের ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। 

লক্ষণঃ 
শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। পেট ফাঁপা দেখা দেয়। শরীরের মাংশালো স্থান ফুলে উঠে। ফোলা স্থান প্রথমে শক্ত, গরম অনুভুত হয়। পরবর্তিতে ফুলা স্থানে চাপ দিলে বজ বজ শব্দ হয়। ফুলা স্থান কাটলে ফেনাযুক্ত রস বাহির হয় এবং টক টক গন্ধ পাওয়া যায়। প্রচন্ড ব্যথা হয় ও পশু প্রাথমিক পর্যায়ে খুড়িয়ে হাঁটে। পরবর্তিতে আক্রান্ত পশু হাটতে বা দাঁড়াতে পারেনা। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে পশুর মৃত্যু হয়। 

করনীয়ঃ 
অসুস্থ্য পশুকে সুস্থ্য পশু থেকে আলাদা করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। গর্ত করে চুন ছিটিয়ে মৃত পশুকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। মৃতদেহ কোন অবস্থাতেই খোলা মাঠে বা পানিতে ভাসিয়ে দেয়া যাবেনা । গর্তে পর্যাপ্ত চুনা ছিটিয়ে দিতে হবে। 

প্রতিষেধকঃ 
সুস্থ্য পশুকে ছয় মাস পর পর নিয়মিত টিকা দিতে হবে বিশেষ করে ২ বছরের কম বয়সের গবাদিপশুকে। 

চিকিৎসাঃ 
পেনিসিলিন গ্রুপের ইনজেকশন নির্ধারিত মাত্রায় ৪ - ৫ দিন ব্যবহার করতে হবে।


গলাফুলা :
এটি গবাদি পশুর ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ।

লক্ষণঃ 
দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। মুখ দিয়ে লালা ও নাক দিয়ে সর্দি বের হয়। গলার নীচে, চোয়াল, বুক, পেট ও কানের অংশে পানি জমে ও ফুলে যায়। ফোলা অংশ শক্ত ও ব্যথাপূর্ণ থাকে। সূঁচ দিয়ে ছিদ্র করলে হলুদ বর্ণের তরল পর্দাথ বের হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসে ভীষণ কষ্ট হয়। শ্বাস ত্যাগের সময় ঘড় ঘড় শব্দ হয়। তীব্র প্রকৃতির ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টায় মধ্যে মৃত্যু ঘটে। 

প্রাথমিক চিকিৎসা ও করণীয়ঃ 
রোগাক্রান্ত পশুকে আলাদা রাখতে হবে। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। বৎসরে একবার সুস্থ্য পশুকে টিকা দিতে হবে। পশুকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখতে হবে। পশুর বাসস্থানে জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটাতে হবে। এই রোগ দুরারোগ্য এবং চিকিৎসা করে ভাল ফল পাওয়া কঠিন। 

চিকিৎসাঃ 
সালফানামাইড বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন অথবা উভয় জাতীয় ঔষধ নির্ধারিত মাত্রায় ৪ - ৫ দিন ব্যবহার করতে হবে।

ওলান ফুলা বা ওলান প্রদাহ: 


বিভিন্ন প্রকার জীবাণু দ্বারা গবাদি পশুর ওলান এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে গরুর ওলান আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

লক্ষণঃ 
ওলানফুলে শক্ত ও গরম হয়। ওলানে ব্যথা হয়। দুধ কমে যায় এমনকি বন্ধও হয়ে যায়। দুধের রং পরিবর্তন, কখনও পুজের মত বা রক্ত মিশ্রিত হয়। কখনও কখনও দুধের পরিবর্তে টাটকা রক্ত বের হয়। 

করণীয়ঃ 
দ্রুত চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। পশুকে শুকনা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখতে হবে। ওলান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে। দোহনের পূর্বে দোহনকারীর হাত ধুয়ে নিতে হবে। ওলানে দুধ জমিয়ে রাখা যাবেনা। কোন অবস্থায় ওলানে কোন কিছুর প্রলেপ দেয়া যাবেনা। ওলান গরম হলে ঠান্ডা এবং ঠান্ডা হলে ঈষৎ গরম সেক দিতে হবে। শক্ত ওলানে দিনে দুই তিন বার কর্পূর তৈল মালিশ করতে হবে। কোন অবস্থায়ই বিলম্ব না করে অসুস্থ পশুকে অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা করতে হবে। হাতুরে ডাক্তারের চিকিৎসার মারত্মক ক্ষতি হতে পারে। 

চিকিৎসাঃ 
এ রোগটি জটিল প্রকৃতির বিধায় পশুচিকিৎসকের পরামর্শমত চিকিৎসা করানো উচিৎ।
বাছুরের সাদা উদরাময় (ডায়েরিয়া) 
এটি ১ দিন বয়স থেকে ৩ সপ্তাহ বয়সের বাছুরের ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি রোগ। 

লক্ষণঃ 
বাছুর ঘনঘন চাল ধোয়া পানির মত দূর্গন্ধযুক্ত সাদা পাতলা পায়খানা করে। বাছুরের অরুচি হয় এবং শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। বাচুর দুর্বল ও ক্রমে ক্রমে নিস্তেজ হয়ে মারা যায়। 

করণীয়ঃ 
জন্মের পর বাছুরকে পর্যাপ্তপরিমাণ কাঁচলা/শাল দুধ পান করাতে হবে। বাছুরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখতে হবে। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। 

চিকিৎসাঃ 
সালফানামাইড বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন অথবা উভয় জাতীয় ঔষধ নির্ধারিত মাত্রায় ৪ - ৫ দিন ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে স্যালাইন ব্যবহার করতে হবে।


বাছুরের নাভীফোলা (নেভাল ইল) রোগ :এটি নবজাত বাছুরের নাভীর একটি সংক্রামক রোগ।


লক্ষণঃ 
জন্মের পর ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ হয়। এ রোগে বাছুরের নাভী ফুলে যায়। প্রথমে শক্ত ও পরে নাভীতে ঘা ও পুঁজ হয়।



করণীয়ঃ 
জন্মের পর নাড়ী নতুন ব্লেড/ছুরি দিয়ে কেটে ক্ষত স্থানে জীবাণুনাশক ঔষধ (টিংচার আয়োডিন, স্যাভলন, ডেটল) লাগাতে হবে। গাভীকে বাছুরের নাভীচাটা থেকে বিরত রাখতে হবে। 

চিকিৎসাঃ 
পেনিসিলিন অথবা ষ্ট্রেপটোপেনিসিলিন জাতীয় ইনজেকশন নির্ধারিত মাত্রায় ৫ - ৭ দিন ব্যবহার করতে হবে।

প্যারাটিউবারকিউলসিস প্রতিরোধ:
প্যারাটিউবারকিউলসিস গরুর একটি ছোঁয়াচে রোগ। Mycobacterium paratuberculosis নামের এক জাতীয় ব্যাক্টেরিয়ার কারণে এ রোগ হয়। একে ‘জোনস’ ডিজিসও বলে। এ রোগের ফলে দুগ্ধবতী গাভীর দুধ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এ রোগে গাভী মারাও যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার গাভী রয়েছে এমন একটি দুগ্ধ খামার প্যারাটিউবারকিউলসিস রোগের কারণে বছরে প্রায় দুই লাখ ইউএস ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আমাদের দেশে ক্ষতির পরিমাণ কত সে বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। প্যারাটিউবারকিউলসিস রোগে দুগ্ধবতী গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। দীর্ঘস্থায়ী এবং ভয়ংকর ডায়রিয়া তার মধ্যে অন্যতম। ডায়রিয়ায় পানি ও প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ হারানোর কারণে গরুর শরীর শুকিয়ে যায়, ওজন কমে যায় এবং চামড়া রুক্ষ হয়ে যায়। কয়েক সপ্তাহ পর চোয়ালের নীচে ফুলে উঠে। দেখে মনে হয় বোতল জাতীয় কিছু মুখে রেখে হয়ত মুখ বন্ধ করে আছে। তাই একে ‘বটল জো’ বলে। প্রোটিন ঘাটতির কারণে এমনটি হয়ে থাকে। প্যারাটিউবারকিউলসিস প্রতিরোধ করা মোটেও সহজ নয়। ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের উৎস কিছুতেই বন্ধ করা যায় না। ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ বন্ধ না করতে পারায় রোগ প্রতিরোধ করাও সম্ভব হয় না। তবে প্যারাটিউবারকিউলসিস প্রতিরোধে নতুন উপায়ের কথা শুনিয়েছেন আমেরিকান এগ্রিকালচারাল রিসার্চ সার্ভিসের

গরুর প্রাণঘাতী রোগ ব্যাবেসিওসিস:
যেকোনো গরুরই এ ধরনের রোগ হতে পারে, যার নাম ব্যাবেসিওসিস। পরজীবীঘটিত একধরনের রোগ। Boophilus microplus নামের এক ধরনের উকুনের কামড়ে এই পরজীবী গরুর দেহে প্রবেশ করে রক্তের লোহিত কণিকায় আশ্রয় নেয়, সেখানেই বংশ বৃদ্ধি করে। ক্রমেই অন্যান্য লোহিত কণিকায়ও আক্রমণ করে। এতে লোহিত কণিকা ভেঙে হিমোগ্লোবিন রক্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। বেশি লোহিত কণিকা আক্রান্ত হলে গরুর রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

রোগের লক্ষণ :


জ্বর হচ্ছে এই রোগের প্রথম লক্ষণ। জীবাণু বহনকারী উকুনের কামড়ের প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যেই জ্বর দেখা দেয়। গরু ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়। শ্বাস গ্রহণের চেয়ে শ্বাস একটু জোরে ত্যাগ করে। খাবারের রুচি কমে যায়। আক্রান্ত গরু দুর্বল হয়ে যায়। চোখ এবং দাঁতের মাড়ি ফ্যাকাশে হয়ে যায়। প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হয়। অনেক সময় পায়খানার সাথেও রক্ত বের হতে পারে। গর্ভবতী গাভীর ক্ষেত্রে গর্ভপাত হতে পারে। গরু কোনো কিছুর সাথে মাথা ঘষা, বৃত্তাকারে চার দিকে ঘোরাসহ এই ধরনের নানান অসংলগ্ন আচরণ করতে পারে। পক্ষাঘাত, অচেতন হয়ে যাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুও হতে পারে।

পোস্টমর্টেম লক্ষণসমূহ :


মৃত গরুর দেহ পোস্টমর্টেম করলে হৃৎপিণ্ড ও অন্ত্রে সাব সেরোসাল হেমোরহেজ দেখা যায়। প্লীহা কিছুটা বড় হয়ে যায়। দেখতে লালচে ও নরম হয়। যকৃৎ আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হতে পারে।

রোগ সনাক্তকরা :


রোগের লক্ষণ দেখে এ রোগ নিরুপণ করা যায়। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আক্রান্ত গরুর রক্ত পরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা :


রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা দিলে দ্রুত সেরে যায়। এই রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রয়েছে। বাজারে এখন যেসব ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে ইমিডোকার্ব ও ডিমিনাজেন এসিচুরেট বেশি ব্যবহার করা হয়। ট্রিপেন ব্লুও প্রয়োগ করা হয়। মনে রাখা প্রয়োজন, কিছু ওষুধ রয়েছে বিষাক্ত। তাই সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।

বেবিসিয়াসিস বা রক্ত প্রস্রাব
আটালি দ্বারা এ রোগের জীবাণূ সংক্রামিত হয়।

লক্ষণ
ক) হঠাৎ জ্বর (১০৮ ডিগ্রী ফা.) হয়
খ) জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়
গ) রক্তের সঙ্গে লোহিত কাণিকা ডাঙ্গা হিমোব্লোবিন যুক্ত হবে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে আসে।
ঘ) প্রস্রাবের রঙ লাল হয়।

প্রতিকার ও চিকিৎসা
১। বেরিনিণ ইনজেকশন
২। শরীরের আটালিমুক্ত করার জন্য নেগুভন সপ্রে অথবা আসানটল সপ্রে দিতে হবে।

উকুন/আটালি
এরা এক প্রকার বহিঃ পরজীবী। অধিকাংশ গবাদি পশু উকুন/ আটালি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। নিওসিডল ৪০ ডবি্লউ-পি
২। আসানটল
৩। নেগুভন সপ্রে ইত্যাদি মিশিয়ে পশুর গায়ের সপ্রে করতে হবে।

প্রতিকারমূলক ব্যবস্খা :


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্খার মধ্যে উকুন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এ জন্য যেসব এলাকায় এই উকুনের প্রাদুর্ভাব বেশি সেখানে পানির মধ্যে একারাসিড জাতীয় ওষুধ গুলে গরুকে গোসল করাতে হবে। তাতে গরুর শরীর উকুনমুক্ত হবে। চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর পর গোসল করালে উকুনের আক্রমণের সম্ভাবনা কমে। দেশীয় গরুগুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বলে এই রোগে কম আক্রান্ত হয়। কিন্তু সঙ্কর জাতের কিংবা বিদেশী জাতের গরু সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ জন্য ভ্যাকসিন দেয়া প্রয়োজন। অবশ্য কোনো গরু একবার এই রোগে আক্রান্ত হলে পরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। কারণ আক্রান্ত হওয়ার ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্ম নেয়। গরুকে রোগবালাই থেকে রক্ষার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্খা সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এ ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সুষ্ঠু ও যত্নশীল পরিচর্যা গরুকে এ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। কোনো কারণে রোগগ্রস্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্খা করা এ রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করবে।

গবাদিপশুর থাইলেরিয়াসিস রোগ ও প্রতিকার:
থাইলেরিয়াসিস গবাদিপশুর রক্তবাহিত এক প্রকার প্রোটোজোয়াজনিত রোগ। এই জীবাণু গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়াকে আক্রান্ত করে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে থাইলেরিয়াসিস রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। থাইলেরিয়ার জীবাণু আক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুতে আঠালির মাধ্যমে এ রোগ সংক্রমিত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকাল আঠালির প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সময়। এ কারণে গ্রীষ্মকালে গরু আঠালি দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং দ্রুত রোগ ছড়াতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে থাইলেরিয়াসিস দেখা যায়। Theileriaগণভুক্ত বিভিন্ন প্রজাতির প্রোটোজোয়া দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে গরুতে Theileria annulata আক্রান্তের হার খুব কম হলেও মৃত্যু হার প্রায় ৯০-১০০%। এ রোগের ক্লিনিক্যাল লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর পশুর রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব নীচে নেমে যায়। ফলে রোগটি নির্ণিত হওয়ার পর চিকিৎসা দিলেও গরুকে সুস্থ করে তোলা প্রায়ই সম্ভব হয় না। তাছাড়া মাঠপর্যায়ে গরুর রক্ত পরিবহন বাস্তবে সম্ভব হয়ে উঠে না। এ রোগের চিকিৎসার জন্য উন্নতমানের ঔষধের দাম খুব বেশি এবং তা সর্বত্র সহজে সব সময় পাওয়া যায় না। এ কারণে থাইলেরিয়াসিস অর্থনৈতিক ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ রোগ সঙ্কর জাতের গরুতে বেশি দেখা যায়। সঙ্কর জাতের একটি গাভীর দাম ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা। গবাদিপশুর খামারের ক্ষতিকর রোগগুলির মধ্যে থাইলেরিয়াসিস একটি অন্যতম রোগ। আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই এ রোগ দেখা যায়। বিভিন্ন কারণে থাইলেরিয়া রোগ নির্ণয় করতে অনেক সময় লেগে যায়। খামারীদের কাছাকাছি এলাকায় প্রায়শ রোগ নির্ণয় কেন্দ্র থাকে না। থাইলেরিয়া রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা মূল্যের গো-সম্পদ নষ্ট হয়ে থাকে।

রোগের জীবন চক্র:
থাইলেরিয়া রোগের মাধ্যমিক পোষক হিসাবে কাজ করে প্রায় ছয় প্রজাতির আঠালি। যথা-
Rhipicephalus Spp
Hyalomma Spp
Boophilus Spp
Haemophysalis Spp
Ornithodoros Spp

Dermacentor Sppবাংলাদেশে প্রধানত Hyalomma Spp -এর আঠালি Theileria annulataপ্রোটোজায়ার মাধ্যমিক পোষক হিসাবে কাজ করে। থাইলেরিয়া আক্রান্ত আঠালির লালা গ্রন্থির মধ্যে অবস্থিত Sporozoits রক্ত শোষণকালে সুস্থ গরুর দেহে প্রবেশ করে। পরে লসিকা গ্রন্থি ও প্লীহার লসিকা কোষকে আক্রান্ত করে ম্যাক্রোসাইজোন্ট বা ককস্-ব্লু বডি (Koch’s blue bodies) সৃষ্টি করে যা মাইক্রোসাইজোন্ট-এ পরিণত হয়। এই মাইক্রোসাইজোন্ট লোহিত কণিকাকে আক্রান্ত করে পাইরোপ্লাজম সৃষ্টি করে। রক্ত শোষণের সময় এই পাইরোপ্লাজম আঠালির দেহে প্রবেশ করে। আঠালির দেহের মধ্যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়ে আঠালির লালা গ্রন্থিতে অবস্থান নেয় যা পরে গবাদিপশুর রক্ত শোষণকালে প্রাণীর দেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত আঠালি সুস্থ গরুকে কামড়ানোর ৭-১০ দিন পর পশুর দেহে তাপ দেখা দেয়।

রোগ লক্ষণ:
গরুর প্রবল জ্বর (১০৪-১০৭০ ফা), ক্ষুধামান্দ্য, রক্তশূন্যতা, চোখ দিয়ে পানি ঝরা, রুমেনের গতি হ্রাস, লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, রক্ত ও আম মিশ্রিত ডায়ারিয়া ও নাসিকা থেকে শ্লেম্মা নির্গত হয়। এ সময় গরু শুকিয়ে যায় এবং কোনো এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসায় ফল পাওয়া যায় না। দুধ উৎপাদন একদম কমে যায়, গরু শুয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করে, হাঁপায় এবং ধীরে ধীরে গরুর মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর পূর্বে হঠাৎ করে গরুর শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। সাধারণত আক্রান্ত হবার ১৮-২৪ দিন পর প্রাণী মারা যায়। থাইলেরিয়ায় আক্রান্ত প্রাণী চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠলে কিছুটা প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে তবে প্রাণীটি এ রোগের বাহক হিসাবে কাজ করে।

রোগ নির্ণয়:
রোগের লক্ষণ, ইতিহাস এবং চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রাথমিক ভাবে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। ল্যাবরেটরিতে আক্রান্ত প্রাণীর রক্ত জেম্সা স্টেইন করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পাইরোপ্লাজম দেখে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়।

চিকিৎসা:
রোগ নির্ণয়ে বেশি দেরী হলে চিকিৎসায় তেমন উপকার হয় না। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে মাত্রামত Buparvaquone, Diminazene diaceturate ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হবে। সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে ভিটামিন ই১২ ইনজেকশন, Hartmann’s Solution ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হবে। সম্ভব হলে রক্ত সংযোজন করতে হবে যা দূরূহ ব্যাপার। আক্রান্ত প্রাণীর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়াতে হবে। পশুকে ছায়াযুক্ত আরামদায়ক পরিবেশে রাখতে হবে। প্রচুর ঠান্ডা পানি পান করতে দিতে হবে।

প্রতিরোধ:
ডেইরী খামারীদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে থাইলেরিয়া রোগ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। যে কোন মূল্যে পশুর খামারকে উকুন, আঠালি ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। গোয়াল ঘর ও এর চতুর্দিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রতি ৪ মাস অন্তর গাভীকে আঠালি প্রতিরোধক ইনজেকশন প্রয়োগ করে আঠালি মুক্ত রাখতে হবে। গ্রীষ্মকালে সপ্তাহে দুই বার গোয়াল ঘরে আঠালিনাশক ঔষধ মাত্রামত সপ্রে করলে গোয়াল ঘর আঠালি মুক্ত থাকে। আক্রান্ত এলাকার সন্দেহজনক সকল গবাদিপশুকে Buparvaquone, Diminazene diaceturate ইত্যাদি প্রতিশেধক হিসাবে মাত্রামত প্রয়োগ করা উচিত।


গবাদিপশুর ফুট রট রোগ নিয়ন্ত্রণ:

ফুট রট গবাদিপশুর পায়ের ক্ষুরের চারপাশে ও ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানের টিস্যুর প্রদাহজনিত একটি সংক্রামক রোগ। সকল শ্রেণীর সব বয়সের পশুই (গাভী, বলদ, ষাঁড়, বকনা ইত্যাদি) এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগকে ইন্টারডিজিটাল নেক্রোব্যাসিলোসিস, ফাউল ইনদি ফুট, ফুট রট বা ইন্টার ডিজিটাল ফ্লেগমন হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

কারণতত্ব ও এপিডেমিওলজী:
ফুট রট সাধারণত Fusobacterium necrophorum দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে তবে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া যেমন Bacterorides melaninogenicus ও এ রোগের কারণ হতে পারে। পরীক্ষামূলকভাবে F. necrophorum গবাদিপশুর ইন্টারডিজিটাল চামড়ার মাঝে ইনজেকশন দিলে ইন্টারডিজিটাল নেক্রোব্যাসিলোসিস এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লিশান পরিদৃষ্ট হয়। এই ব্যাকটেরিয়ার অধিকাংশ আইসোলেট পরীক্ষা করে দেখো গেছে এরা অ এবং অই গ্রুপের অর্ন্তভুক্ত। এরা একজাতীয় exotoxinউৎপন্ন করে যা ইনজেকশন করলে গবাদি পশু ও ইঁদুর আক্রান্ত হয়। আবার লিশান থেকে প্রাপ্ত আর একজাতীয় isolotes যারা ইন্টারডিজিটাল নেক্রোব্যাসিলোসিস হিসাবে শ্রেণীভুক্ত নয় এবং সুস্থ গরুর পা থেকে সংগৃহীত হয় এরা বায়োটাইপ ই হিসাবে (F. necrophorum subspecies funduliforme) চিহ্নিত হয়। এরা তেমন ক্ষতিকারক নয়। Bacteroides nodosus এর স্ট্রেইন যা ভেড়ার ফুট রট করে তা গবাদিপশুর ক্ষুর থেকে সংগৃহীত হয়েছে তবে তা অল্প বিস্তর ইন্টারডিজিটাল ডার্মাটাইটিস করে থাকে। কিন্তু এরা আবার মারাত্নক ইন্টারডিজিটাল নেক্রোব্যাসিলোসিস রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়ে থাকে এবং এর ফলে ৫-১০% গবাদিপশু খোঁড়া হয়ে যেতে পারে। সকল বয়সের গরু এবং দুই মাস বয়সের বেশি ভেড়া ও ছাগলে এ রোগ দেখা দিতে পারে। বর্ষা ও স্যাঁৎসেঁতে আবহাওয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়ে থাকে। ডেয়রী খামারের গাভীতে এ রোগ হলে অত্যন্ত ক্ষতি হয়। দেশী জাতের গরু অপেক্ষা বিদেশী জাতের ও সংকর জাতের গাভীতে এ রোগ মারাত্নক হয়ে থাকে। আক্রান্ত গরুর পায়ের ক্ষত হতে নিঃসৃত রস থেকে রোগজীবাণু অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। যদিও এ রোগ বিচ্ছিন্নভাবে দেখা দেয় তথাপি তা অনুকূল পরিবেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রোগ বিস্তার:
সাধারণত আক্রান্ত গরু থেকে রোগের বিস্তার ঘটে। আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষুরের ক্ষত স্থান থেকে নিঃসৃত রস প্রচুর জীবাণু বহন করে যা থেকে সুস্থ প্রাণী আক্রান্ত হয়ে থাকে। গবাদি পশুর পায়ের ক্ষুরের করোনেট বা দুই ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানের টিসু্যতে কোনো কিছু দ্বারা আঘাতের ফলে ক্ষত হলে ও সর্বদা কাদা-পানি বা গোবরের মাঝে পা রাখলে ক্ষতস্থান দিয়ে রোগজীবাণু সহজেই দেহে প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়াও শক্ত স্থান, ধারালো পাথরের নুড়ি অথবা চারণক্ষেত্রের শক্ত ধান বা গমের মুড়া থেকে ক্ষুরের নরম টিসু্য আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেখান থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। যে কোনো কারণেই হোক না কেন পা যদি সব সময় ভেজা থাকে তাহলে ক্ষুরের মাঝে ক্ষত হবার সম্ভাবনা বেশি দেখা দেয়। অস্বাস্থ্যকর গোয়াল ঘর হলে রোগের সংক্রমণ বেশি হতে পারে।

রোগ লক্ষণ:
আক্রান্ত প্রাণীকে আকষ্মিকভাবে খোঁড়াতে দেখা যায়। সাধারণত এক পায়ে ব্যথা হলেও তা প্রায়শ মারাত্নক হয়ে থাকে। দেহের তাপমাত্রা ১০৩-১০৪ ফা লক্ষ্য করা যায়। ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয় ও গাভীর দৈহিক ওজন ও দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়। আক্রান্ত ষাঁড় সাময়িকভাবে অনুর্বর (infertile) হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় পায়ের ক্ষতে পুঁজ হয় ও নেক্রসিস হয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। রোগজীবাণুর সংক্রমণের ফলে অস্থিসন্ধি, সাইনোভিয়া ও টেন্ডনের প্রদাহ দেখা দেয়। ফলে আক্রান্ত গরু মাটিতে শুয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করালে ক্ষুর খসে যেতে পারে ও গরু স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। গরু যদি কয়েক সপ্তাহ যাবৎ খোঁড়াতে থাকে তাহলে দুধ উৎপাদন দারুণভাবে কমে যায় এবং দৈহিক ওজনও হ্রাস পায়। চিকিৎসার অভাবে রোগ যদি খুব জটিল আকার ধারণ করে তাহলে আক্রান্ত প্রাণীকে বাতিল ঘোষণা করতে হয়।

রোগ নির্ণয়:
রোগের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রোগলক্ষণ দেখে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। এছাড়া পায়ের করোনেটের ক্ষত পরীক্ষা করে এ রোগ সনাক্ত করা যেতে পারে।
ল্যাবরেটরিতে এ রোগের জীবাণু সনাক্ত করা যায়। রোগজীবাণু সুনির্দিষ্টভাবে সনাক্ত করার জন্য পায়ের ক্ষত থেকে সোয়াব নিয়ে গ্রাম স্টেইন ও ব্লাড আগারে কালচার করে এ রোগের জীবাণু সনাক্ত করা যায়।

রোগ সনাক্তকরণে পার্থক্য:
রোগের লিশানের স্থান, রোগের প্রকৃতি, লিশানের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দুর্গন্ধ, পালে রোগের ধরন, ঋতু ও আবহাওয়া পর্যালোচনা করে ফুট রটে আক্রান্ত গরুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায।

ইন্টারডিজিটাল ডার্মাটাইটিস/স্টেবল ফুট রট:
গবাদিপশুকে আবদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘ দিন প্রতিপালন করলে সাধারণত এ রোগ দেখা দিয়ে থাকে। তবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পালন করা হলে প্রায়শ এ রোগ দেখা দেয়। আবার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে পালিত গরুতেও এ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগের কারণ ঠিক জানা না গেলেও আক্রান্ত পশু থেকে Bacteroides সনাক্ত করা গেছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষুরের bulb এলাকা থেকে দুর্গন্ধযুক্ত আঠালো রস নিঃসরণ হতে থাকে। লিশান বেদনাদায়ক হয় কিন্তু অন্য কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। একাধিক ক্ষুর আক্রান্ত হতে পারে। দীর্ঘ দিন ভুগতে থাকলে ক্ষত মারাত্নক হয় ও সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। স্টেবল ফুটরটে ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসায় তেমন উপকার হয় না তবে ক্ষতস্থানে পরিচর্যা করে সেখানে ব্যাকটেরিয়ানাশক ঔষধ ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যায়।

খুরো বা খুর পচা
খুরের ভিতরের বা চারপাশের টিস্যু পচনশীল অবস্থাকে ফুটরট বলে।

লক্ষণ
ক) আঘাতপ্রাপ্ত টিস্যুতে পচন যুক্ত ঘা হয়
খ) আশপাশের টিস্যুতে রক্ত জমা হতে দেখা যায়
গ) পশু খুড়িয়ে হাঁটে এবং কিছু খেতে চায় না
ঘ) পশুর ওজন ও দুধ কমে যায়
ঙ) শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়

চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ভেসাডিন
২। ভেসুলাং ২০% ইনজেকশন
৩। এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন
৪। ক্ষতস্থান ভালভাবে পরিস্কার করে দিনে ২ বার ডাস্টিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে।

ভেরুকোজ ডার্মাটাইটিস:
সাধারণত কাদাযুক্ত ভেজা স্থানে গাদাগাদি করে গরু পালিত হলে তাদের এরোগ হয়ে থাকে। ক্ষুরের planter অঞ্চলে প্রদাহ দেখা দেয়। চার পায়ের ক্ষুরই আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত স্থান অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয় ও গরু খোঁড়াতে থাকে। আক্রান্ত স্থান থেকে smear নিয়ে পরীক্ষা করলে পর্যাপ্ত সংখ্যক F. necrophorumব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করা যায়। এ রোগের চিকিৎসা হচ্ছে, আক্রান্ত স্থান জীবাণুনাশক সাবান ও পানি দ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে তারপর সেখানে ৫% কপার সালফেট সলিউশন প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে প্রতিদিন চিকিৎসা করতে হবে। যখন অনেক গরু একই সাথে আক্রান্ত হয় তখন কপার সালফেটের সলিউশনের মাঝে প্রতিদিন ফুট ডিপ প্রয়োগ করতে হবে।

আঘাতজনিত ক্ষত:
পায়ের ক্ষুরে কোনো ধারালো বস্তু দ্বারা ক্ষত হলে কিংবা ক্ষুর বেড়ে গেলে তা ভালোভাবে পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে। ল্যামিনাইটিস (Laminitis) হলে গরু প্রায়শ খোঁড়া হয়ে যায় কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কোনো লিশান পরিলক্ষিত হয় না।

চিকিৎসা:
আক্রান্ত পশুদেরকে শুকনো পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে। এ্যান্টিবায়োটিকস বা সালফোনামাইডস প্রয়োগ করতে হবে এবং ক্ষত স্থান জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। চিকিৎসার জন্য প্রোকেইন পেনিসিলিন-জি প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২২,০০০ ইউনিট হিসাবে দিনে দুইবার মাংসপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে।

অক্সিটেট্রাসাইক্লিন প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০ মিগ্রা হিসাবে দৈনিক শিরা বা মাংশপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে। ভেড়া ও ছাগলের জন্য প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৭৫ মিগ্রা স্ট্রেপটোমাইসিন এবং ৭০০০ ইউনিট প্রোকেইন পেনিসিলিন মাংসপেশীতে দিলে উপকার হয়।

সোডিয়াম সালফাডিমিডিন প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১৫০-২০০ মিলিগ্রাম হিসাবে শিরা বা পেরিটোনিয়ামের মধ্যে ইনজেকশন দিলেও কাজ হয়।

ক্ষতস্থান ভালোভাবে জীবাণুনাশক সলিউশন দ্বারা পরিষ্কার করে এন্টিসেপ্টিক ও এসট্রিনজেন্ট ঔষধ প্রয়োগ করে ব্যান্ডেজ করে দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও ৫% কপার সালফেট বা ৫% ফরমালিন দ্বারা ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে ১০% জিংক সালফেট ব্রাশের মাধ্যমে প্রয়োগ করলেও উপকার হয়।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
• গরুর ক্ষুরে যেন ক্ষত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতে হবে।
• গোয়াল ঘর বা খামারের প্রবেশ পথে ৫% কপার সালফেট সলিউশন ফুট বাথ হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। এই সলিউশন দিনে দুইবার নূতন করে প্রস্তুত করে ফুট বাথ হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে। নিয়মিত এই ফুটবাথে গরু পা ডুবালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বহুলাংশে রোধ করা যাবে।
• কেমোপ্রোফাইল্যাক্সিসঃ রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় প্রতিটি গরুকে দৈনিক ৫০০ মিলিগ্রাম হিসাবে ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন ২৮ দিন এবং পরে প্রত্যহ ৭৫ মিলিগ্রাম হিসাবে সেবন করানো হলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করা যায়।
• গবাদিপশুর খাদ্যে দৈনিক ২০০-৪০০ মিলিগ্রাম অর্গানিক আয়োডাইড (ethylene diamine dihydriodide) খাওয়ানো হলে এ রোগের প্রতিরোধ হয়।
• ভ্যাকসিন প্রয়োগঃ মিনারেল অয়েল এডজুভ্যান্ট ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
• গবাদিপশুকে কাদা বা ভেজা স্থানে রাখা বা যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
• গোয়াল ঘর সব সময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে।

ফুট রট:
ডেয়রী খামারের ক্ষেত্রে ফুট রট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ডেয়রী খামারের গাভী যেহেতু নিবিড়ভাবে পালিত হয় সেহেতু সেখানে রোগের প্রাদুর্ভাব প্রায়শ ব্যাপক আকারে দেখা দিয়ে থাকে। খাঁটি বা সংকর জাতের গাভীতে এ রোগ হলে পায়ের ব্যথায় মাটিতে শুয়ে পড়ে ও খাদ্য কম খায়। ওলান মাটির সাথে দীর্ঘ সময় লেগে থাকায় ওলানফোলা রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। আক্রান্ত গাভীর দুধ উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়। কোনো কোনো সময় পায়ের সন্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এবং পরবর্তী পর্যায়ে গাভী চলাফেরায় অক্ষম হয়ে যায়। যদিও এ রোগে মৃত্যু ঘটে না কিন্তু বর্ণিত আনুসাঙ্গিক কারণে খামারের উৎপাদন দারুণভাবে হ্রাস পেয়ে থাকে। এর ফলে খামারী অর্থনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

মাংসের জন্য পালিত ষাঁড়ের (beef cattle) খামারে এ রোগের প্রাদুর্ভাব হলেও খামারীর প্রভূত আর্থিক ক্ষতি হয়। আক্রান্ত ষাঁড় ঠিকমতো খাদ্য গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় শুকিয়ে যায় ও মাংস উৎপাদন হ্রাস পায়।

ওলান পাকা রোগ
নানা প্রকার রোগ-জীবাণু বা অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়।

লক্ষণ
ক) ওলান লাল হয়ে ওঠে এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করলে গরম অনুভব হয়।
খ) ব্যাথার দরুণ গাভী ওলানে হাত দিতে দেয় না এবং দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
গ) হলুদ বর্ণ দুধের সাথে ছানার মতো টুকরা বের হয়।
পুরনো রোগে দুধ কমে যায় এমনকি একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ওলান শুক্ত হয়ে যায়।

চিকিৎসা ও প্রতিকার
প্রথমত আক্রান্ত পশুকে পরিস্কার জায়গায় রাখতে হবে। ওলানে জমে থাকা দুধ বের করে দিতে হবে। বাঁচের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে টিটিসাইফন দ্বারা বাঁচের মুখ পরিস্কার করে দিতে হবে।
১. ভেলুস ২০%
২. এ্যান্টিবায়েটিক
৩. ম্যাসটাইটিস টিউব ইত্যাদি।

পেট ফাঁপা
সাধারণত গরহজমের জন্য গাভীর পেট ফেঁপে যায়। এছাড়া কিছু কিছু রোগের কারণেও পেট ফাঁপে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার
দানাদার খাদ্য বন্ধ করে দিতে হবে। শুধুমাত্র শুকনা খড় খেতে দেওয়া যেতে পারে।
১. নিওমেট্রিল
২. কারমিনেটিভ মিঙ্চার ইত্যাদি।

জায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা
অনেক রোগের দরুন পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। তবে অস্ত্রর রোগ এদের মধ্যে অন্যতম। আক্রান্ত পশু দূর্বল হয়ে পড়ে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার
১. সকেটিল পাউডার
২. স্টিনামিন ট্যাবলেট ইত্যাদি।

নিউমোনিয়া
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, রাসায়নিক দ্রবাদি, ঠান্ডা ইত্যাদির কারণে পশুর নিউমোনিয়া হতে পারে।

লক্ষণ
ক) ঘনঘন নিঃশ্বাস এ রোগের প্রধান লক্ষণ।
খ) রোগের শেষ পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট হয়
গ) শুল্ক কাশি হতে পারে।
ঘ) তীব্র রোগে জ্বর হয় এবং নাক দিয়ে সর্দি পড়ে।
ঙ) বুকের মধ্যে গরগর শব্দ হয়।

চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ভেলুসং ২০%
২। অ্যান্টিবায়টিক
৩। ক্লোরেটেট্রাসন
৪। টেরামাইসিন
৫। ভেটিবেনজামিন


কিটোসিস
দেহের মধ্যে শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাকক্রিয়ার কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটলে রক্তে এসিটোন বা কিটোন নামক বিষাক্ত দ্রব্য অধিক মাত্রায় জমা হয়ে দেহ বিষিয়ে তোলে। এই বিষক্রিয়ার ফলেই কিটোসিস রোগের সৃষ্টি হয়।

লক্ষণ
ক) ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়
খ) গাভীর দুধ কমে যায়
গ) দৈহিক ওজন কমে যায়
ঘ) কোষ্ঠাকাঠিন্য দেখা দেয়
ঙ) এছাড়া আক্রান্ত পশুর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে এসিটোনের মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়
চ) অনেক সময় গাভী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চতুর্দিকে ঘোরে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার
অপটিকরটেনল-এস ইনজেকশন।

ফুল আটকে যাওয়া
বাচ্চা প্রসবের পর অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফুল বের হয়ে আসে না। এবং এসব ক্ষেত্রে গর্ভ ফুলের অংশ বিশেষ বাইরের দিক হতে ঝুলে থাকতে দেখা যায়।

চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। অকসিটোসিন
২। ইউটোসিল পেশারিস
৩। এ্যানটবায়েটিক ইনজেকশন ইত্যাদি।

জলুবায়ুর প্রদাহ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগের জীবাণূ যোনিপথ হতে জরায়ুতে পৌছে এ রোগ হতে পারে। গর্ভ ফুলের টুকরা ভেতরে থেকে গেলে পচে যায় এবং প্রদাহের কারণ ঘটায়। কামপর্বে পশুর যৌন-ক্রিয়ার সয়ও অনেক সময় জরায়ুতে রোগ জীবানূ সংক্রমিত হয়ে থাকে।

লক্ষণ
ক) জ্বর হয়
খ) দুর্গন্ধযুক্ত জলের মতো কিংবা কালচে লাল রঙের স্রাব পড়তে দেখা যায়
গ) খাদ্যে অরুচি হয়
ঘ) দুধ কমে যায়
ঙ) গাভী পাল রাখে না

চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ইউটোলিস পেরারিস
২। এ্যান্টিবায়েটিক ইনজেকশন ইত্যাদি

গর্ভপাত
সাধারণত রোগ-জীবানুর কারণেই অধিকাংশ গর্ভপাত হয়ে থাকে। এছাড়া আঘাত, বিষক্রিয়া, পক্ষাঘাত ইত্যাদি কারণেও গর্ভপাত হতে পারে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ইউটোসিল পেশারিশ
২। এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ইত্যাদি।

অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব
সাধারণত প্রজনন ইন্দ্রিয়সমূহের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি, হরমোন ক্ষরণের অনিয়ম, অসমতা, ওভারিতে সিস্ট ও পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি কারণে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব রোগ হয়ে থাকে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার
সঠিক কারণ নির্ধারণ করে হরমোন দ্বাা চিকিৎসা করলে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। যৌননালীর অসুখের দরুন বন্ধ্যাত্ব হলে ইউটোলিস পেশারিস, স্টিমাভেট ট্যাবলেট জরায়ুতে স্থাপন করতে হবে। ভিটামিন 'এ' যুক্ত সুষম পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।


ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশয়
রক্ত মিশানো পাতলা পায়খানা, রক্ত শূণ্যতা ও শরীরের দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্তি এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

লক্ষণ
ক) শরীরের তাপমাত্রা অল্প বৃদ্ধি পায়
খ) হঠাৎ করে পায়খানা শুরু হয়
গ) পায়খানার সময় ঘন ঘন কোথ দেয়
ঘ) পায়খানা খুবই দুগর্ন্ধযুক্ত
ঙ) আক্রান্ত পশু দিন দিন দূর্বল হতে থাকে
চ) মলের সাথে মিউকাস অথবা চাকা চাকা রক্ত থাকে
ছ) খেতে চায় না
জ) শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়

চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ভেলুসং ২০% ইনজেকশন
২। সকেটিল পাউডার ইত্যাদি

১. তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত
২. লেখক: ডাঃ মনোজিৎ কুমার সরকার
ভেটেরিনারি সার্জন,উপজেলা পশুসম্পদ অফিস, রংপুর।
তথ্যসূত্র: পোলট্রি, পশুসম্পদ ও মৎস্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘খামার’ ও
৩. লেখক: ডাঃ এ এফ এম রফিকুল হাসান
গ্রুপ পাবলিকেশন ম্যানেজার, এ্যাডভান্স এনিমেল সায়েন্স কোং লিঃ
তথ্যসূত্র: পোলট্রি, পশুসম্পদ ও মৎস্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘খামার’
৪. লেখক: ডা.হাসান মুহাম্মদ মিনহাজে আউয়াল ডিভিএম, পিজিটি, জামালপুর

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা