Skip to main content

ঢাকার যত দর্শনীয় স্থান


ঢাকা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট করে তেমন কিছু জানা যায় না। এ সম্পর্কে অনেকগুলি প্রচলিত মত রয়েছে। শোনা যায় ১৬১০ সালে ইসলাম খাঁ বুড়িগঙ্গার কাছে ঢাক বাজিয়ে যতদুর পর্যন্ত সেই ঢাকের শব্দ শোনা যায় ততদুর পর্যন্ত সীমানা নির্ধারন করে ঐ এলাককে রাজধানী বানান। আর তাই সেই এলাকাকেই ’ঢাকা’ নামে ডাকা হয়। অনেকে আবার বলেন বল্লাল সেন কতৃক নির্মিত ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ঢাকা নামের উৎপত্তি হয়েছে। অন্য আরেকটি জনশ্রুতি হচ্ছে- একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাক নামক গাছ ছিল বলে এর নাম হয়েছে ঢাকা। এটাও শোনা যায় “ঢাকাইয় ভাষা” নামে একটি ভাষা এখানে প্রচলিত ছিল, সেই অনুসারে নাম হয়ে যায় ঢাকা। সাধারন ভাবে এটাও শোনা যায়- এক সময় সারা অঞ্চলই ঘন বনে ঢাকা ছিলো বলে এর নাম হয়ে যায় ঢাকা। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দে ইসলাম খাঁ চিশতি বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন এবং সম্রাটের নামানুসারে এর নামকরণ করেন জাহাঙ্গীরনগর। প্রশাসনিকভাবে জাহাঙ্গীরনগর নামকরণ হলেও সাধারণ মানুষের মুখে ঢাকা নামটিই থেকে যায়। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২সালের ভাষা আন্দলন দিয়ে শুরু হয়ে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল হিসেবে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

ঢাকাতে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। আর এই লেখায় সেই সমস্ত দর্শনীয় স্থান গুলোর কথাই ফুটে উঠেছে। কয়েকটি অংশে ঢাকাকে ভাগ করে দশর্নীয় স্থানগুলোতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

১.বাহাদুর শাহ পার্ক:
পুরানো ঢাকার সদরঘাটের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক। এর পশ্চিমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তর পশ্চিমে জেলা আদালত অবস্থিত। পূর্বে এর নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবে শহীদ বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সিপাহী যুদ্ধের ঐক্যের প্রতীক বাহাদুর শাহ জাফরের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক।


২. ওসমানি উদ্যান, বিবি মরিয়ম কামান, কালে খাঁ জমজম:
১৭ শতকে সম্রাট জাহাঙ্গীর ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপন করলে রাজধানী ঢাকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে বেশ কিছু কামান তৈরি করা হয়। এসব কামানের মধ্যে “কালে খাঁ জমজম” ও “বিবি মরিয়ম” বিশালত্বে, নির্মাণ শৈলীতে ও সৌন্দর্যে ভারতখ্যাত হয়ে ওঠে। “কালে খাঁ” বুড়িগঙ্গা নদীতে তলিয়ে গেলে বিবি মরিয়ম হয়ে ওঠে দর্শনীয় বস্তু। বিবি মরিয়মের দৈর্ঘ্য ১১ ফুট। মুখের ব্যাস ৬ ইঞ্চি। ঢাকার কামান তৈরীর কারিগর জনার্ধন কর্মকার অত্যন্ত শক্ত পেটানো লোহা দিয়ে কামানটি তৈরী করেন। ১৯৮৩ সালে বিবি মরিয়ম কে গুলিস্থানের মোড় থেকে উঠিয়ে এনে ওসমানী উদ্যানের প্রধান ফটকের পেছনে স্থাপন করা হয়।


৩. জিনজিরা প্রাসাদ:
পুরান ঢাকার বড় কাটরার দক্ষিন দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর অপর তীরে জিনজিরা প্রাসাদ অবস্থিত। মুঘল সুবহাদার দ্বিতীয় ইব্রাহিম খান তাঁর প্রমোদ কেন্দ্র হিসেবে জিনজিরা প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা’র পতনের পর ঘসেটি বেগম, আমেনা বেগম, সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুত্ফুন্নেছা বেগম এবং তাঁর কন্যাকে জিনজিরা প্রাসাদে এনে বন্দী রাখা হয়। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে শহর থেকে জিনজিরার মধ্যে চলাচলের জন্য একটি কাঠের পুল ছিল। প্রাসাদটির পূর্বাংশ তিনতলা সমান, মাঝ বরাবর প্রকাণ্ড প্রাসাদ তোরণ। তোরণ প্রাসাদকে দুই ভাগ করে অপর প্রান্তে খোলা চত্বরে মিশেছে। প্রাসাদ তোরণের পূর্বাংশেই ছিল সুড়ঙ্গপথ।


৪. আহসান মঞ্জিল:
বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় ঘেঁষে সদরঘাট, ইসলামপুর, কুমারটুলি এলাকায় অবস্থিত। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে শেখ ইনায়েত উল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থানে রংমহল নামের একটি প্রমোদ ভবন নির্মাণ করেন। পরে বিভিন্ন হাতঘুরে তা নবাব আব্দুল গনির হাতে আসে। নবাব আব্দুল গনি ভবনটিকে পূণনির্মাণ করেন, ১৮৫৯ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ সালে শেষ হয়। নিজের ছেলে খাজা আহসান উল্লাহ-এর নামে “আহসান মঞ্জিল” নামটি তখনই রাখেন তিনি। পরে এ বাড়িতে নবাব আহসান উল্লাহ বাস করতেন। মঞ্জিলটি দুটি অংশে বিভক্ত “রংমহল” এবং “অন্দরমহল”। প্রাসাদটির উপরে অনেক সুদৃশ্য গম্বুজ রয়েছে। বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর; প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী এ জাদুঘর দেখতে এসে থাকেন। শনি থেকে বুধ, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের জন্য এটি খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে আহসান মঞ্জিল বন্ধ থাকে।


৫. লালবাগ কেল্লা পরীবিবির মাজার:
মোগল আমলের স্থাপত্যকীর্তি লালবাগের কেল্লা। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মোহাম্মদ আজমের সময়ে নির্মিত এ কেল্লায় রয়েছে পরীবিবির সমাধি, দরবার গৃহ, হাম্মামখানা, মসজিদ, দুর্গ ইত্যাদি। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে লালবাগ মহল্লায় এর অবস্থান। সম্রাট আওরঙ্গজেব এর পুত্র আজম ১৬৭৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নবাব শায়েস্তা খানের আমলে এর নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকে।


৬. বড়কাটরা:
চকবাজারের দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার দিকে মুখ করে নির্মিত এই ইমারত। ১৬৪৪ সালে দেওয়ান আবুল কাশেম কাটরাটি শাহ সুজার বাসস্থান হিসেবে নির্মাণ করেন। তবে শাহ সুজা কখনোই এই কাটরাটিতে বাস করেননি। মুসাফির, পথিক ও আশ্রয়হীনদের সরাইখানা বা লঙ্গরখানা হিসেবে ব্যবহার হয়েছে বড়কাটরা। বর্তমানে কাটরাটির একটি অংশ দখল করে রেখেছে একটি মাদ্রাসা আর অন্য আরেকটি অংশ দখল নিয়েছে বিভিন্ন স্তরের কিছু মানুষ।


৭. ছোটকাটরা:
বড়কাটরা থেকে ১৮২.২৭মিটার পুবে এই ছোটকাটরার অবস্থান। ধারনা করা হয় ১৬৬২ অথবা ১৬৭১ সালে শায়েস্তা খাঁ এটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে এটি সম্পূর্ণ বেদখল হয়ে গেছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের হাতে।


৮. তারা মসজিদ:
বিখ্যাত এই তারা মসজিদটি ঢাকার আর্মানিটোলায় অবস্থিত। মসজিটির সারা গায়ে রয়েছে শত শত ছোট বড় তারার কারুকাজ। সাদা সিমেন্টের উপর চিনামাটির তারকাকৃতি টুকরো বসিয়ে করা হয়েছে এই তারকাসজ্জা। আঠারশ শতকে ঢাকার জমিদার মির্জা গোলাম মসজিদটি নির্মান করেন।


৯. সাতগম্বুজ মসজিদ:
মোহাম্মদপুর বাসস্টপের আধা কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে এই মসজিদটি অবস্থিত। এর তিনটি বড় গম্বুজ মূল নামাযকক্ষের উপর এবং বাকি ছোটো চারটি চার কোণে স্থাপিত। তাই অনেক আগে থেকেই এর নাম মানুষের মুখে মুখে সাতগম্বুজ মসজিদ হয়ে গেছে।


১০. হোসেনী দালান:
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত। হযরত ইমাম হোসেন (রা:) -এর কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মরণে নির্মিত অপরূপ স্মৃতিসৌধ হোসেনী দালান। একজন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত লোক সৈয়দ মীর মুরাদ তৈরি করেছিলেন ঢাকার হোসেনী দালান। সৈয়দ মীর মুরাদ ছিলেন শাহ সুজার নৌবাহিনীর প্রধান। এই দালান নির্মাণের পেছনে একটি গল্প চালু রয়েছে। সেটি হচ্ছে, এক রাতে স্বপ্নে সৈয়দ মীর মুরাদ দেখতে পেলেন হযরত ইমাম হোসেন (রা.) কারবালার যুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করছেন এবং তাকে অনুরূপ একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে বলেন। অতঃপর মীর মুরাদ ১০৫২ হিজরি মোতাবেক ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে এই ইমামবাড়া নির্মাণ করেন। এখানে রয়েছে হোসনী দালান, ইমামবাড়া, পুকুর মাকবারা-এ নায়ের নাজিম স্থানে ৮ টি কবর, ইমাম হাসান (রা:) ও ইমাম হোসেন (রা:)-এর কবরের প্রতিকৃতি।


১১. কার্জন হল:
১৯০৪ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্ণর জেনারেল জর্জ কার্জন এর ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন করেন। টাউন হল হিসেবে ব্যবহারের জন্য মূলত কার্জন হল নির্মিত করা হয়েছিল । নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন ভাওয়ালের রাজকুমার। বড়লাট বাহাদুরের আগমন উপলক্ষে ভাওয়ালের রাজকুমারগণ এ অঞ্চলে লর্ড কার্জন বাহাদুরের নাম চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘কার্জন হল’ নির্মাণের জন্য সেইসময় ১,৫০,০০০ টাকা দান করে ছিলেন। কার্জন হল বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান অণুষদের কিছু শ্রেনীকক্ষ ও পরীক্ষার হল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।


১২. ঢাকেশ্বরী মন্দির:
ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। সলিমুল্লাহ হল থেকে আনুমানিক ১.৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঢাকেশ্বরী রোডের উত্তর পার্শ্বে একটি অনুচ্চ আবেষ্টনী প্রাচীরের মধ্যে মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দির অঙ্গনে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি সিংহদ্বার। সিংহদ্বারটি নহবতখানা তোরণ নামে অভিহিত।

জনশ্রুতি অনুযায়ী মন্দিরটির নির্মাতা বল্লাল সেন নামে একজন রাজা। তবে এ বল্লাল সেন প্রকৃত অর্থেই সেন বংশের বিখ্যাত রাজা কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য আছে। কেউ কেউ দাবি করেন যে, এখানে প্রতিষ্ঠিত ঢাকেশ্বরী মূর্তি ও মন্দির মহারাজা বল্লাল সেনের আমলের। কিন্তু স্থাপত্য নির্মাণ কৌশলের বিবেচনায় এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের আগমনের পূর্বে তথা সেন রাজবংশের রাজত্বকালে বাংলার স্থাপত্যশিল্পে মর্টার হিসেবে চুন-বালি মিশ্রণের ব্যবহার ছিল না। কিন্তু ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি আগাগোড়াই চুন-বালির গাঁথুনিতে নির্মিত, যা বাংলার মুসলিম আমলেরই স্থাপত্য রীতির বৈশিষ্ট্য।


১৩. বলধা গার্ডেন:
ওয়ারীতে অবস্থিত এটি একটি উদ্ভিদ উদ্যান। বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ৩.৩৮ একর জমির ওপর ১৯০৯ সালে উদ্যানটি নির্মাণের কাজ আরম্ভ করেন। যা শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৮ বছর। বিরল প্রজাতির ৮০০ গাছসহ বাগানটিতে প্রায় ১৮ হাজার গাছ রয়েছে। বর্তমানে এখানে ৬৭২ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বাগানটিতে এমনও অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। সপ্তাহের প্রতিদিনই এটি সকাল ৮টা থেকে ১১টা এবং ২টা থেকে ৫টা খোলা থাকে।


১৪. রোজ গার্ডেন:
রোজ গার্ডেন আজও দাঁড়িয়ে আছে পুরনো ঢাকার গোপীবাগ এলাকায়। তৎকালীন নব্য জমিদার ঋষিকেশ দাস বিশ শতকের তৃতীয় দশকে (সম্ভবত ১৯৩০ সালে) গড়ে তোলেন এ গার্ডেন। বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর বাগান-বাড়ির আদলে নির্মিত হয়েছিল রোজ গার্ডেন। তৎকালীন উচ্চবিত্ত হিন্দু সমাজের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল বলধা জমিদারের বাড়ি। একদিন বিনা আমন্ত্রণে ঋষিকেশ গিয়েছিলেন বলধার এক জলসায়। কিন্তু ঋষিকেশ দাস সনাতনী ধর্মে নিম্নবর্ণ হওয়ায় তাকে সেখানে অপমাণিত হতে হয়। তারপরই নির্মাণ করেন রোজ গার্ডেন।


১৫. রূপলাল হাউজ:
রূপলাল হাউজ উনবিংশ শতকে নির্মিত একটি ভবন। এটি পুরানো ঢাকা এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর পারে ফরাসগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত। ভবনটি নির্মান করেন হিন্দু ব্যবসায়ী ভ্রাতৃদ্বয় রুপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস। । দ্বিতল এই ভবনের স্থাপত্য শৈলী অভিনব। ভবনটিতে ৫০টির অধিক কক্ষ রয়েছে, এবং কয়েকটি প্রশস্ত দরবার কক্ষ রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে রূপলাল হাউজ মসলা ও সবজি ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়। তবে, বর্তমানে এটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখা রয়েছে নামে মাত্র।


১৬. কাস্বাবটুলী মসজিদ:১৯০৭ সালে নির্মিত মসজিদটি পুরান ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। মসজিদটি পুরাটাই নানা রং এর চিনা মাটির কাচ দ্বারা আবৃত। দেখতে অনেকটা চিনির টুকরার মত ঝকঝক। তাই এলাকাবাসী এই মসজিদকে চিনি মসজিদ বলেও ডাকে। ১৯৭৯ সালে মূল ভবনের কারুকাজের পরিবর্তন না করে এটি সংস্কার করা হয়। ফলে মূল ভবনের ভেতরটা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এই মসজিদের সুনাম আগে এতটাই ছিল বিটিভির আযানের সময় এই মসজিদের ছবি দেখানো হত।


১৭. আর্মেনীয় গির্জা:
পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় একসময় বিপুলসংখ্যক আর্মেনীয়র বসবাস ছিল। আর্মেনীয়দের বসবাসের কারণেই ওই এলাকার নামকরণ হয় আরমানিটোলা বা আর্মেনিয়ান স্ট্রিট। মূলত সম্রাট আকবরের অনুমতি সাপেক্ষে আর্মেনীয়রা ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, বসতি স্থাপন ও গির্জা নির্মাণ করে। ব্যবসার কারণে একসময় ঢাকায় আর্মেনীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তারা আরমানিটোলায় বসতি স্থাপন ও একটি ক্ষুদ্র গির্জা স্থপন করে প্রার্থনা করত এবং তাদের কারও মৃত্যু হলে তেজগাঁও রোমান ক্যাথলিক গির্জার পাশে মরদেহ সমাহিত করত। ১৭৮১ সালে একজন বিত্তবান আর্মেনীয় নিকোলাস পোগজ বেশ কয়েক বিঘা জমিতে ওই ক্ষুদ্র গির্জার স্থলে একটি বিশাল গির্জা নির্মাণ করেন। তিনি গির্জাটির নামকরণ করেন চার্চ অব দ্য রিজারেকশন।


১৮. লালকুঠি:
এটি নর্থব্রুক হল নামেও পরিচিত। বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে ফরাশগঞ্জ মহল্লায় অবস্থিত। গোটা ইমারতটি লাল রঙে রঙিন বলে এর নাম হয়েছে লালকুঠি। ৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ১৬ অক্টোবর ঢাকার নতুন রাজস্ব ও ডাক অফিস খোলার জন্য ওই দিনেই ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য খাজা মোহাম্মদ ইউসুফের উদ্যোগে নর্থব্রুক হলে একটি বড় সভা করা হয়। শহরের গণ্যমান্য মুসলমান ও ইউরোপিয়দের এতে আমন্ত্রন জানানো হয়। সভায় ব্রিটিশ সরকারকে নতুন প্রদেশ গঠন ও ঢাকায় রাজধানী করার জন্য ধন্যবাদ ও সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এ ধরনের নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে এই নর্থ ব্রুক হলো।


১৯. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম:
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ ‘বায়তুল মোকাররম মসজিদ’। মসজিদটি ঢাকার প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানের নিকট পল্টনে অবস্থিত। মসজিদের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, ঢাকায় অধিক মুসল্লি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি বড় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় তৎকালীন পাকিস্তানের বাওয়ানি পরিবার। সেই সূত্র ধরে, বাওয়ানি জুট মিলসের মালিক পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তাঁর ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানি মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মসজিদের নকশা প্রণয়ন করেন সিন্ধুর বিশিষ্ট স্থপতি এ এইচ থারানি। স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয় পুরান ও নতুন ঢাকার মিলনস্থল পল্টনে ৮.৩০ একর জমি। যা পল্টন পুকুর ছিল। ২৭ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে পুকুরটি ভরাট করার মধ্য দিয়ে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৯৬২ সালে ।  ৩০ হাজার মুসল্লি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই মসজিদটির নকশাতে ভিন্নতা আনার জন্য মসজিদটির নকশা মক্কার কাবা ঘরের আদলে চারকোনা আকৃতির করা হয়েছে। অন্যান্য মসজিদের মতো নকশায় সংযোজিত হয়নি কোনো গম্বুজ। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। ২০০৮ সালে সৌদি সরকারের অর্থায়নে মসজিদটি সম্প্রসারিত করা হয়।



২০. বোটানিক্যাল গার্ডেন:
মিরপুরের চিড়িয়াখানা আর বোটানিক্যাল গার্ডেন পাশাপাশি অবস্থিত। বিশাল জায়গা নিয়ে অবস্থিত এই গার্ডেনে ৮২.৯ হেক্টর অংশে আছে শুধু গাছপালা। আরো আছে পুকুর খাল ও সরু রাস্তা। সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে দেখা যাবে গোলাপ বাগান, রাস্তার পাশে আকাশমনি, শাপলাপুকুর, বাঁশঝাড়, পাদ্মপুকুর, ইউক্যালিপটাসের বাগান, গ্রিনহাউজ, ক্যাকটাসঘর ও গোলাপ বাগান। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে।


২১. রমনা পার্ক:
মাওলানা ভাসানী রোডের উত্তরে শিশু পার্কের উল্টো পাশেই অবস্থিত। এটি প্রতি দিন খোলা থাকে, কোনো প্রবেশ মূল্য নেই। এর ভিতরে আছে চমৎকার খাল, সরু পায়েচলার রাস্তা, অসংখ্য গাছ আর সবুজ ঘাসের লন। এর ভেতরে আছে চাইনিজ রেস্তোরা।


২২. জিয়া শিশুপার্ক:
মাওলানা ভাসানী রোডের উত্তরে শিশু পার্কের উল্টো পাশেই অবস্থিত। কম-বেশী ১৪টি রাইড এখানে রয়েছে বাচ্চাদের জন্য। বুধবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিনামূল্যে পথশিশুদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। রবিবারে শিশুপার্কটি বন্ধ থাকলেও সপ্তাহের বাকি দিনগুলি বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য খোলা থাকে।


২৩. ধানমন্ডি লেক, পার্ক, রবীন্দ্র সরোবর:
সারা ধানমন্ডি এলাকার প্রায় ১০ কি.মি জুড়ে অবস্থিত । ৫০মিটার চওড়া এই লেকটির গভীরতা ৮ থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত। এর বিভিন্ন অংশের উপরে রয়েছে সেতু পারাপারের জন্য, রয়েছে পথচারি বসে বিশ্রামের জন্য বসার ব্যবস্থাও। ৮নং সেতুর কাছে রয়েছে একটি ডিঙ্গি নামক ক্যাফে।


২৪. বসুন্ধরা সিটি,  টগী ওয়ার্ল্ড, স্টার সিনেপ্লেক্স:
শহরের পান্থপথের অভিজাত বিপণি বসুন্ধরা সিটির লেভেল-৮এ টগী ওয়ার্ল্ড অবস্থিত। চীনের প্রাচীর, স্টাচু অফ লিবার্টি, তাজমহল, পিরামিড, আইফেল টাওয়ারের আদলে সাজানো হয়েছে এখানকার ১০টি রাইড। রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক মুভি থিয়েটার স্টার সিনেপ্লেক্স।


২৫. শ্যামলী শিশুমেলা (ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড):
ছোট এই শিশুপার্কটি শ্যামলী থেকে আগারগাঁও রাস্তার মোড়ে অবস্থিত। প্রতি দিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য খোলা থাকে।


২৬. সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান:
রাজধানী ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত একটি সুপরিসর নগর উদ্যান। এটি পূর্বে রমনা রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত ছিল। এক সময় ঢাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ সৈন্যদের সামরিক ক্লাব এখানে প্রতিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীতে এটি রমনা রেস কোর্স এবং তারপর রমনা জিমখানা হিসাবে ডাকা হত।



২৭. মিরপুর জাতীয়  চিড়িয়াখানা:
মিরপুর ১ এর বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশেই চিড়িয়াখানা অবস্থিত। বিশাল এই চিড়িয়াখানার বিস্তৃতি ৯৩ হেক্টর। বিভিন্ন প্রজাতীর প্রচুর প্রাণী এখানে মিলবে বিভিন্ন খাঁচায়। শীতকালে অক্টোবর থেকে মাচ পর্যন্ত সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকলেও, গ্রীষ্মকালে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে।



২৮. তিন নেতার মাজার:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাছেই পূর্ব পাশে রয়েছে দোয়েল চত্বর। আর দোয়েল চত্বরের একটু পশ্চিমেই জাতীয় তিন নেতার সমাধি স্থাপিত। এই তিন নেতা হলেন শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং খাজা নাজিমউদ্দিন।


২৯. বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর:
ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১০ নম্বর সড়কের ৩২ নম্বরেই রয়েছে “বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর”।


৩০. জাতীয় জাদুঘর:
ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত। বাংলাদেশর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা নিদর্শন জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। প্রাচীন যুগ থেকে আজকের বাংলাদেশ যতগুলো সিড়ি পার করেছে তার সবকটির চিহ্ন ধরে রেখেছে জাতীয় জাদুঘর।


৩১. বিজ্ঞান জাদুঘর:
ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। জাদুঘর প্রাঙ্গনে ৪ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন রয়েছে। এই ভবনের ১ম ও ২য় তলাতে গ্যালারী, ৩য় তলায় অফিস এবং ৪র্থ তলায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী অবস্থিত। গ্যালারীগুলো হলো সাইন্স গ্যালারী, ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি গ্যালারী, বাইয়োলজি গ্যালারী, ইনফরমেশন টেকনোলজি গালারী, ফান সাইন্স গ্যালারী এবং ইয়ং সাইন্টিস্ট প্রোজেক্ট গ্যালারী। এখানে একটি লাইব্রেরী, ওয়ার্কশপ ও অডিটোরিয়াম রয়েছে। ভবনে দর্শনার্থীদের ওঠানামা করার জন্য পর্যাপ্ত সিড়ি পথ এবং কর্তৃপক্ষের ওঠা নামার জন্য একটি লিফট রয়েছে। এছাড়া ভবন প্রাঙ্গনে একটি ডাইনোসরের মূর্তি এবং একটি ছোট যুদ্ধ বিমান রয়েছে।


৩২. বিমান বাহিনী জাদুঘর:
ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম বিমান জাদুঘর। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস, সাফল্য ও উন্নয়নের ক্রমবিকাশকে সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে এই জাদুঘর ২০১৪ সালে উন্মু্ক্ত করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থাপিত বাংলাদেশ বিমান জাদুঘর এ রয়েছে ১৯ বিমান ও ৩ টি রাডার।


৩৩. জাতীয় সংসদ ভবন:
বিশ্ববিখ্যাত আমেরিকান স্থপতি লুইকান বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের নকশা করেন। তার নকশা অনুয়ায়ী ঢাকার শের-এ-বাংলা নগরে ২০৮ একর জমির উপর নির্মিত জাতীয় সংসদ ভবন এ উপমহাদেশের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন।


৩৪: ভাসানি নভোথিয়েটার ( বর্তমানে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার)
সংসদ ভবনের কাছাকাছি বিজয় সরণিতে এই আধুনিক তারামন্ডল বা নভোথিয়েটারটি অবস্থিত। সরকারি ছুটির দিন ও বুধবার এটি বন্ধ থাকে। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দেখানো হয় মোট চারটি ‘শো’ । আর অন্যান্য দিনগুলিতে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেখান হয় মোট তিনটি ‘শো’ ।


৩৫. রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তিলগ্নে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের সহযোগীদের সহায়তায় দেশের যে সকল শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবি এবং অন্যান্যদের হত্যা করেছিল তাঁদের শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ ঢাকার রায়ের বাজার ইটখোলায় এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।


৩৫. কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার:
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ২১ ও ২২ তারিখে ভাষার দাবিতে শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু করে। মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। কাজ শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলনে জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম। সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমস্ত্রী। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারনের জন্য জমিয়ে রাখা ইঁট বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি। ঐ দিনই অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে, ২২ ফেব্রুয়ারির শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।


৩৬. জাতীয় স্মৃতিসৌধ:
ঢাকার সাভারে অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা। এটি সাভারে অবস্থিত। এর নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল। মিনারটি ৪৫ মিটার (১৫০.০০ ফুট)উঁচু এবং জাতীয় শহীদ সৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দুতে অবস্থিত। মিনার ঘিরে আছে কৃত্রিম হ্রদ এবং বাগান।


৩৭. হাতিরঝিল:
ঢাকার তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক ও মগবাজারের পার্শ্ববর্তি এলাকা জুড়ে রয়েছে। এক হাজার ৯৬০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজধানীর যানজট নিরসন এবং নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। পরিবেশ ও নান্দনিকতার দিক থেকে হাতিরঝিল ঢাকায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ঝিলের চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ওভারপাসসহ ঝিলের দুপাশে পূর্ব-পশ্চিমে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। লেকের এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য দৃষ্টিনন্দন সেতু, নজরকাড়া বাহারি ফোয়ারা, চমৎকার শ্বেতশুভ্র সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। পালতোলা নৌকায় নৌবিহার করার সুবিধাও রয়েছে এখানে।


৩৮. ফ্যান্টাসী কিংডম:
আশুলিয়ার জামগড়ায় ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত অবস্থিত। ফ্যান্টাসী কিংডম ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম থিম পার্ক। এর আয়তন প্রায় ২০ একর। বিশ্বমানের এই কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে ফ্যান্টাসি কিংডম, ওয়াটার কিংডম, এক্সট্রিম রেসিং বা গো-কার্ট, রিসোর্ট আটলান্টিস ও হেরিটেজ পার্ক নামে পাঁচটি বিনোদন কেন্দ্র।


৩৯. নন্দন পার্ক:
সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা হাইওয়ের বাড়ইপাড়ায় অবস্থিত। ঢাকার মতিঝিল থেকে এখানে বাসযোগে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বিনোদনমূলক পার্ক।১৩৫ বিঘা আয়তনের মনোরম এই পার্কটি যুক্তরাজ্য থেকে প্রযুক্তি ও ডিজাইন নিয়ে ভারতের নিকো পার্কের সহায়তায় নির্মিত।


৪০. পাখির বাড়ি জাহাঙ্গীরনগর:
শীতের শুরু থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন নির্মল প্রকৃতির এ ক্যাম্পাস থেকে। সবুজ প্রকৃতির মাঝে নির্মল এক জায়গা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গাছপালায় ঢাকা সবুজ এ ক্যাম্পাসের বুকে আছে বেশ কয়েকটি জলাশয়। বেশ কয়েকবছর ধরে এ জলাশয়গুলোকেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিচ্ছে শীতের অতিথি পাখিরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কমবেশি ২২টির মতো জলাশয় আছে। এর মধ্যে পাখির আনাগোনা বেশি প্রশাসনিক ভবনের সামনে ও পেছনের দুটি জলাশয়, জাহানারা ইমাম হল, প্রীতীলতা হল এবং আল বেরুনী হল সংলগ্ন জলাশয়ে। সবগুলো জলাশয়ে আছে লাল শাপলা। দিনের প্রথমভাগে শাপলারা ফুটন্ত থাকে। লাল শাপলার এ গালিচার মাঝে অতিথি পাখিদের আনাগোনাও ভালো লাগবে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের জলাশয়ে হাঁসপাখি ‘পাতি সরালি’র প্রাধান্যই বেশি। এছাড়া মাঝে মাঝে দেখা মিলবে ছোট পানকৌড়ি, ধলাবুক ডাহুক কিংবা পাতি পানমুরগির। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জলাশয়গুলোতে পাখির সংখ্যা ও প্রজাতি সাধারণত বেড়ে থাকে।


ছবি ও তথ্যসূত্র: online-dhaka.com, adarbepari.com, উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা