
By
Blog Author
১. ক্যামেরা ধরার কৌশল/স্ট্যাবিলাইজার/ট্রাইপড:
ক্যামেরা ধরার সময় ক্যামেরার ফিতাটি গলায় কিংবা হাতে পেঁচিয়ে নিন, যাতে আপনার মুল্যবান ক্যামেরাটি অসাবধানতাবসত হাত থেকে পড়ে গেলেও মাটিতে পড়ে না যায়। ছবি তোলার সময় হাত যেনো না কাঁপে সেদিকে খেয়াল রাখুন। হাত শরীরের সাথে লাগিয়ে রাখুন, প্রয়োজনে কোনো কিছুর সাথে হেলান দিয়ে ছবি তুলুন। প্রয়োজনে ট্রাইপড ব্যবহার করুন। হাটতে হাটতে ছবি তুলতে স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
২. সাবজেক্টকে খালি চোখে দেখা ফিল করা:
ছবি তোলার আগে ছবির বিষয়বস্তু অর্থাৎ সাবজেক্টকে ভালো করে দেখুন। কোন এঙ্গেল থেকে কেমন দেখাচ্ছে? উঁচু থেকে, নিচু থেকে এবং আই লেভেল থেকে। খালি চোখে দেখে আগে বেটার এঙ্গেলটি বাছাই করুন। একটি ছোট শিশুর বেলায় আপনি দাঁড়িয়ে না থেকে নুয়ে ক্যামেরাটি তার আই লেভেলের কাছে নিয়ে যান। আর শিশুদের হাসির ব্যপারটি অবশ্যই খেয়াল করতে হবে। একটি মিষ্টি হাসি আপনার ছবিটিকে বানিয়ে দিবে সেরার সেরা।
৩. ভিউইং অ্যাঙ্গেল পার্সপেক্টিভ:
আমরা বেশিরভাগ সময়েই আমাদের আই লেভেল থেকে ছবি তুলে থাকি। আই লেভেল বলতে বোঝায় আমরা যে ভ্যিউ দেখি আমাদের চোখ দিয়ে বা আমাদের চোখ যে উচ্চতা থেকে দেখে। কিন্তু, আপনি যদি এই আই লেভেলের পরিবর্তে মাঝে মাঝে ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলে থাকেন তবে আপনার নিজের কাছেই ভিউ গুলো কিছুটা অন্যরকম এবং অবশ্যই ইন্টারেস্টিং মনে হবে। এছাড়া সভা সেমিনারে বক্তার সামনে থেকে কৌণিকভাবে ছবি তুলুন এবং পুরো ব্যানার ও স্টেজকে ফ্রেমে রাখার চেষ্টা করুন। মানববন্ধনের ছবি একদিক থেকে তুলুন। ভিআইপি বক্তা থাকলে সামনে থেকেও ছবি নিন।
৪. দ্রততা অবলম্বন:
চোখের সামনে কোনো চমৎকার বা আকর্ষণীয় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে কিন্তু আপনার দ্রুত ছবি তোলার অভ্যাস না থাকলে যেকোনো দুর্লভ মুহুর্তের ছবি মিস হয়ে যেতে পারে। এজন্য অবশ্যই দ্রুত ছবি তোলারও অভ্যাস থাকতে হবে।
৫. রুল অব থার্ড লুকরুম হেডরুম:
এটি মূলত ফটোগ্রাফাররা চমৎকার কম্পোজিশনের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। রুল অব থার্ড ব্যবহার করে তোলা ছবিগুলো বেশিরভাগ সময়ই পারফেক্ট হয়ে থাকে। রুল অব থার্ড আপনি খুব সহজেই আপনার মোবাইলের মাধ্যমেও অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
সাবজেক্ট সরাসরি ক্যামেরার দিকে না তাকিয়ে একদিকে তাকিয়ে(লুক) থাকলে রুল অব থার্ড অনুযায়ী সেদিকে ছবির তিনভাগের দুই অংশ রাখতে হবে। সাবজেক্টের মাথার উপর সামান্য যায়গা রাখতে হবে যেটাকে হেডরুম বলে।
৬. সাবজেক্টকে মাঝখান থেকে সরান:
সাবজেক্টকে সবসময় মাঝখানে রাখার প্রবণতা ত্যাগ করুন। অনেকসময় দেখা যায় সাবজেক্টকে মাঝখানে রাখতে গিয়ে অনেক চমৎকার ব্যাকগ্রাউন্ড মিসিং হয়ে যায়। ব্যাকগ্রাউন্ড আর সাবজেক্টকে আলাদা করার সুযোগ নেই। একটা আরেকটার পরিপূরক। এজন্য সাবজেক্টকে যেখানে বা যে পাশে রাখলে ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড আসবে সেখানেই রাখুন।
৭. ফ্ল্যাশ ও ন্যাচারাল লাইট:
আউটডোরে অর্থাৎ বাহিরে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনেও প্রয়োজনে ফ্লাশ ব্যবহার করে ছবি তুলুন। কারন অতিমাত্রায় রৌদ্র চেহারায় খুব বাজে ধরনের গাঢ় ছায়া তৈরি করে। নাকের ছায়া, চোখের কোঠরের ছায়া, এমনকি চুলেরও। এসব ছায়া দূর করার জন্য অবশ্যই ফ্লাশ ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া সূর্য যদি সাবজেক্টের পেছনে থাকে তাহলেও ফ্লাশ ব্যবহার করতে হবে। আপনার ক্যামেরার ফ্লাশ রেঞ্জ অর্থাৎ ফ্লাশ কতদূর পর্যন্ত যায় সেই মাপ সম্পর্কে অবগত থাকুন। নয়তো ফ্লাশরেঞ্জের চেয়ে বেশি দূরত্বের ছবিতে অযথাই ফ্লাশ ব্যবহার করে হয়রান হবেন।
৮. আলোর দিক খেয়াল রাখা:
সূর্য বা লাইট ইত্যাদি যেকোনো আলোর দিকেই লক্ষ্য রাখুন। বস্তুর আলোর বিপরীত দিকে বা আড়ালে ছায়া থাকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে এছাড়া একটি বাচ্চা ছেলের মুখে পতিত আলোক রশ্মি হয়তো ছবিটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে, কিন্তু একজন বুড়ো মানুষের মুখে আলোর রশ্মি পড়া মানে তার মুখের বার্ধক্যের সকল ভাঁজ ছবিতে স্পষ্ট হয়ে পড়া। এজন্য একটি ভালো ছবির জন্য অবশ্যই আলো এবং আলোর উৎসের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
৯. পোট্রেট ল্যান্ডস্কেপ:
আমরা সাধারনত ল্যান্ডস্ক্যাপেই(horizontal) বেশি ছবি তুলি। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু পোট্রেইট(vertical) ছবিও তোলা উচিত। একটি মসজিদের মিনার বা কোনো উঁচু স্থানের ছবি ব্যাকগ্রাউন্ডসহ নিতে হলে কিন্তু পোট্রেইট ছাড়া উপায় নেই। অনেকেই এসব ছবির ল্যান্ডস্ক্যাপ নিতে গিয়ে পুরো ছবিটাকেই বাজে বানিয়ে ফেলে। যেমন আপনি চাইলেও কি কাছ থেকে আইফেল টাওয়ারের ল্যান্ডস্ক্যাপ নিতে পারবেন? এমনটা নিতে হলে আপনাকে অনেক দূরে যেতে হবে এবং তখন শুধু আইফেল টাওয়ারটাই আসবেনা, আসেপাশের ব্যাকগ্রাউন্ডের অনেক কিছুর ছবিই চলে আসবে। অথচ পোট্রেইটে কাছ থেকে শুধু আইফেল টাওয়ারটা আপনি খুব সুন্দরভাবেই নিতে পারেন।
১০. ব্যাকগ্রাউন্ড সাইড অবজেক্ট সরল ব্যাকগ্রাউন্ড: সাদাকালো:
একটি জঞ্জালহীন সরল(plain) ব্যাকগ্রাউন্ড আপনার ছবির বিষয়বস্তু অর্থাৎ সাবজেক্ট এর ফোকাস বাড়িয়ে দিবে কয়েকগুন। অন্যকে সহজেই বুঝিয়ে দিবে আপনার ছবির মূল বিষয়(subject) আসলে কোনটি। অর্থাৎ ছবিতে পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড যদি বিভিন্ন কালার বা বিভিন্ন বস্তু বা বিভিন্ন দৃশ্যের সংযোজন থাকে তাহলে সেখানে আপনার মূল সাবজেক্টটি গৌন হয়ে যায়। এমনকি অনেকে আপনার ছবির মূল বিষয় নিয়েও দ্বিধায় পড়ে যাবেন। সুতরাং ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড যতটা সম্ভব সরল(plain) রাখার চেষ্টা করতে হবে।
এছাড়া ক্যামেরা লেন্স বা এই ধরণের কোনো ইলেক্ট্রনিক্স বা কোনো কিছুর স্টাইলিশ ছবি তুলতে পেছনে কম্পিউটারের মনিটরের মাধ্যমে বোকেহ ওয়ালপেপার দিয়ে ছবি তুলুন। ফুড ফটোগ্রাফির জন্য কাঠ, প্লাইউড, মেটাল তলের উপর এবং ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে ছবি তুলুন।
১১ . অসর্ম্পূর্ণতা ও ত্রুটি এড়ানো:
চূড়া কেটে যাওয়া বেকে যাওয়া অনাকাঙ্খিত বস্তু: গাছ, টাওয়ার, সুউচ্চ অট্রালিকা, মসজিদের গম্বুজ, মন্দির কিংবা যে কোনো উঁচু লম্বা জিনিসের চূড়া বা উপরের অংশ ছবিতে কেটে গেলে ছবির দামও মান কমে যায়। গাছ দৃশ্যমান নেই কিন্তু ডাল/পাতা ফ্রেমের ভিতরে ঢুকে পড়লেও ছবি অসম্পূর্ণ বোঝায়।
১২. বস্তুর কাছ থেকে ছবি তুলুন, জুম পরিহার করুন:
আপনার সাবজেক্ট(subject) যদি একটি ছোট গাড়ির (যেমন- প্রাইভেট কার) চাইতে ছোট হয় তাহলে যথাসম্ভব কাছ থেকে ক্লোজ শট নিন। তবে অতিরিক্ত ক্লোজ হওয়া যাবেনা, তাহলে ছবি ব্লার(ঝাপসা) হয়ে যাবে। বেশিরভাগ ক্যামেরার ক্লোজ শটের ন্যূনতম দূরত্ব ৩ ফিট। তাই ৩ ফিটের বেশি ক্লোজ না হওয়াই উত্তম। অযথা জুম করে ছবি তোলা পরিহার করুন। প্রয়োজনে এগিয়ে যান কিংবা কাছে আনতে ভালো ক্যামেরা/লেন্স ব্যবহার করুন।
১৩. ফোকাস ঠিক রাখা :
বেশিরভাগ ক্যামেরার অটো ফোকাস এর বেলায় ক্যামেরার ফোকাস থাকে ছবির মাঝখানে। এক্ষেত্রে আপনার সাবজেক্ট যদি ছবির এক পাশে থাকে তাহলে সাবজেক্ট ব্লার(ঝাপসা) আসার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এজন্য ছবি ক্লিক করার আগে ফোকাসটি সাবজেক্টের উপর স্থির করুন। যে বস্তুর ছবি তুলতে চাচ্ছেন সেটাই গুরুত্ব দিন অসংখ্য বিষয়কে দেখাতে গিয়ে আসল জিনিসই যেন লক্ষচ্যুত না হয়।
১৪.শাটার স্পিড:
শাটার স্পিড নিয়ে অনেকেই খুব বেশি একটা মাথা ঘামান না, বেশিরভাগ সাধারণ ব্যবহারকারী হয়ত এই টার্মটি সম্পর্কেই জানেন না। মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি শাটার স্পিড কম বেশি করেও আপনার ছবিতে নাটকীয় ভাবে পরিবর্তন আনতে পারবেন। আপনি নিশ্চয়ই ইন্টারনেটে পাখি উড়ছে বা বাঘ দৌড়াচ্ছে এমন ছবি দেখেছেন? কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে পাখিটিকে বা বাঘটিকে কীভাবে তাদের মুভমেন্টের সময় এত স্পষ্ট ভাবে স্থির করে ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে? এই ছবিগুলো হচ্ছে হাই শাটার স্পিডের কারণে হয়েছে। আবার আপনি নিশ্চয়ই রাতের রাস্তায় গাড়ীর লাইটের ট্রেইল ছবি দেখেছেন? এই ছবিগুলো হচ্ছে লো শাটার স্পিডের ফসল।
১৫. আইএসও:
আইএসও টার্মটিও আলোর সাথে সম্পর্কিত। আপনি যত বেশি আইএসও ব্যবহার করবেন তত বেশি আলো আপনার সেন্সর ক্যাপচার করার জন্য পাবে আর যত কম ব্যবহার করবেন তত কম আলো আপনার সেন্সর প্রডিউস করতে পারবে আপনার ছবিতে। তবে, হাই আইএসও আলোর সাথে সাথে ছবিতে নয়েজও যুক্ত করে থাকে ফলে ফটোগ্রাফির অন্যান্য মেইন টার্মগুলোর সাথে পরিবর্তন করে নিতে হয়। যাই হোক, আপনি আপনার ক্যামেরা/মোবাইলের সেটিংস থেকে আইএসও কম বেশি করে এখনই পরীক্ষা করতে পারেন। ডিফল্ট ভাবে মোবাইলে আইএসও অটো মোডে থাকে।
১৬. প্রতিফলন কাজে লাগান:
পানিতে কিংবা আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে অনেক সময় চমৎকার কোনো দৃশ্য তৈরি হতে পারে। সেটা পারলে অবশ্যই খুঁজে বের করবেন।
১৭.কাছে থেকে অনেক ক্ষুদ্র জিনিস যেমন ফুল, কীটপতঙ্গ ইত্যাদির নিখুঁত এবং স্পষ্ট ছবি তোলা যায় বিশেষ লেন্স ব্যবহার করে এই ধরণের ছবি তোলাকে বলে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি
১৮. পুরোনো ছবির ক্ষেত্রে সরলতা ও সতর্কতা:
পুরোনো, ঐতিহাসিক কিংবা প্রত্নতাত্বিক কোনো জিনিসের ছবি তোলার সময় সরলতা ও সতর্কতা অবলম্বন করুন কারণ এসব বস্তুর আসল রুপটাই প্রয়োজন বাহ্যিক কোনো ইফেক্ট এক্ষেত্রে আকর্ষণ করে না বরং ছবির আবেদনটাই নষ্ট হয়ে যায়।
১৯.প্যানোরমা:
এমন একটি জায়গায় গিয়েছেন যেখানে বেশ কিছু জায়গা আপনার একটি ফ্রেমে বন্দী করতে ইচ্ছে করছে? ফটোগ্রাফাররা এক্ষেত্রে তাদের ক্যামেরায় ওয়াইড লেন্স ব্যবহার করে থাকে, তবে তাও না হলে তারা প্যানারোমা মোড ব্যবহার করে। আমরা আমাদের মোবাইলে ওয়াইড লেন্স ব্যবহার করতে না পারলেও খুব সহজে প্যানারোমা মোডে ছবি তুলতে পারব। ট্রাই করে দেখুন, স্টেডি হাত থাকলে অবশ্যোই আপনি নিজেই আপনার তোলা ছবি দেখে অবাক হয়ে যাবেন।
২০. পোস্ট প্রসেস, ছবি রিটাচ এডিটিং বা ইফেক্ট দেয়া:
শুধু ছবি তুললেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। একটি সাধারণ মলিন ছবিকেও হালকা রিটাচ করে হালকা ইফেক্ট হাইলাইট কালার ব্যালান্স করে চমৎকার করে তোলা যায়। একজন ফটোগ্রাফারকে এজন্য একজন এডিটর বা ডিরেক্টরও হতে হবে। তবে এটাও আহামরি তেমন কিছু বা ভয়ের কোনো বিষয় না। যারা পারেন তার ফটোশপ বা লাইটরুম ব্যবহার করুন আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা স্ন্যাপসিড নামের একটি অ্যাপ দিয়ে আপনার স্মার্টফোনেই ছবিকে সহজেই আকর্ষনীয় করে তুলতে পারবেন।
- Get link
- X
- Other Apps
Labels
গ্রাফিক ডিজাইন প্রযুক্তি
Labels:
গ্রাফিক ডিজাইন
প্রযুক্তি
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment