গর জীবনে সবাই একটু সান্মিদ্য পেতে চায়। কিন্তু গ্রামীণ পরিবেশের মত নেই তেমন পর্যন্ত জমি বা খঅলি জায়গা। যে কারনে শহরে নাগরিকগণ নিজ বাসার ছাদে বা ক্যালকনিতে টবে বা ড্রামে কৃষিকাজ করতে আগ্রহী হন। কিন্তু বিজ্ঞান সম্মত উপায় হয়ত অনেকেই অবগত নন। সেজন্য এবারে বিজ্ঞান সম্মতি উপায়ে ছাদে বাগান করার বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হলো:
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
* একটি খালি ছাদ;
* হাফ ড্রাম, সিমেন্ট বা মাটির টব, ষ্টিল বা প্লাস্টিক ট্রে;
* ছাদের সুবিধা মত স্থানে স্থায়ী বেড ( ছাদ ও বেডে মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে।);
* সিকেচার, কোদাল, কাচি, ঝরনা, বালতি, করাত, খুরপি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি;
* দোঁআশ মাটি, পঁচা শুকনা গোবর ও কম্পোষ্ট, বালু ও ইটের খোয়া ইত্যাদি;
* গাছের চারা / কলম বা বীজ ।
চাদে চাষ উপযোগী গাছ :
* আম – বারি আম-৩ (আম্রপালি), বাউ আম-২ (সিন্দুরী)
* পেপে, কলা
* পেয়ারা – বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা-১
* কুল – বাউ কুল-১, ইপসা কুল-১ (আপেল কুল), থাই কুল-২
* লেবু – বারি লেবু -২ ও ৩, বাউ কাগজি লেবু-১
* আমড়া – বারি আমড়া-১, বাউ আমড়া-১
* করমচা – থাই করমচা
* ডালিম (দেশী উন্নত)
* কমলা ও মাল্টা – বারি কমলা-১, বারি মাল্টা ১
* জামরুল – বাউ জামরুল-১ (নাসপাতি জামরুল), বাউ জামরুল-২ (আপেল জামরুল) ইত্যাদি
* সবজি – লাল শাক, পালং শাক, মুলা শাক, ডাটা শাক, কলমী শাক, পুইঁশাক, লেটুস, বেগুন, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি।
পদ্ধতি:
* হাফ ড্রাম এর তলদেশে অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৫ / ৬ টি ছিদ্র রাখতে হবে।
* ছিদ্র গুলোর উপর মাটির টবের ভাঙ্গা টুকরো বসিয়ে দিতে হবে। ড্রামের তলদেশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া বিছিয়ে তার উপর বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
* সমপরিমাণ দোঁআশ মাটি ও পঁচা গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ড্রামটির দুই তৃতীয়াংশ ভরার পর হাফ ড্রাম অনুযায়ী ড্রাম প্রতি মিশ্র সার আনুমানিক ৫০-১০০ গ্রাম প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সম্পুর্ণ ড্রামটি মাটি দিয়ে ভর্তি করে নিতে হবে।
* ১৫ দিন পর ড্রামের ঠিক মাঝে মাটির বল পরিমাণ গর্ত করে কাংখিত গাছটি রোপন করতে হবে। এ সময় চারা গাছটির অতিরিক্ত শিকড়/ মরা শিকড় সমূহ কেটে ফেলতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে মাটির বলটি যেন ভেঙ্গে না যায়।
* রোপিত গাছটিতে খুটি দিয়ে বেধে দিতে হবে।
* রোপণের পর গাছের গোড়া ভালভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
* সময়ে সময়ে প্রয়োজন মত গাছে পানি সেচ ও উপরি সার প্রয়োগ, বালাই দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।
* রোপণের সময় হাফ ড্রাম প্রতি ২/৩ টি সিলভা মি*ড ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৬ ইঞ্চি দুর দিয়ে মাটির ৪ ইঞ্চি গভীরে প্রয়োগ করতে হবে।
* গাছের বাড়-বাড়তি অনুযায়ী ২ বারে টব প্রতি ৫০/১০০ গ্রাম মিশ্র সার প্রয়োগ করে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
* গাছের রোগাক্রান্ত ও মরা ডালগুলো ছাটাই করতে হবে এবং কর্তিত স্থানে বোর্দপেষ্ট লাগাতে হবে।
পরিচর্যাঃ
* ডাল-পালা ছাঁটাই :
কুল খাওয়ার পর ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি গাছের সমস্ত ডাল কেঁটে দিতে হবে। তাছাড়াও মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল গুলো কেটে বোর্দ পেষ্ট লাগাতে হবে।
* টব বা ড্রামের মাটি পরিবর্তনঃ
প্রতি বছর না হলেও ১ বছর অন্তর অস্তর টবের পুরাতন মাটি পরিবর্তন করে নতুন গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে পুনরায় টবটি/ ড্রামটি ভরে দিতে হবে। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে গাছ যেন বেশী ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। তাই এক স্তর বিশিষ্ট ড্রামের পরিবর্তে দ্বিস্তর বিশিষ্ট ড্রাম ব্যবহার করা উত্তম।
* বালাই দমন :
বালাই দমনে পরিবেশ বান্ধব আইপিএম বা আইসিএম পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে জৈব রাসায়নিক বালাই নাশক যেমন- নিমবিসিডিন, বাইকাও-১ ব্যাবহার করা যেতে পারে।
মিলি বাগ :
পেয়ারা, কুল, লেবু, আম, করমচা, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়।
লক্ষণঃ
* পাতার নিচে সাদা তুলার মত দেখা যায়।
* পোকা উড়তে পারেনা।
* টিপ দিলে হলুদ পানির মত বের হয়ে আসে।
* গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ও ফল ঝরে পড়ে, ফলের আকার বিকৃত হয়ে যায় ।
* অনেক সময় পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমণ হয়।
দমনঃ
হাত বাছাইয়ের মাধ্যমে পোকা দমন করতে হবে। প্রয়োজনে জৈব বালাই নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
সাদা মাছি :
পেয়ারা, লেবু, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়।
লক্ষণঃ
* পাতার নিচে সাদা তুলার মত মাছি পোকা দেখা যায়।
* পোকা উড়তে পারে।
* গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ঝরে পড়ে, পরবর্তী মৌসুমে ফলের উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পায়।
* পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমণ হয়।
দমনঃ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হুইল পাউডার মিশিয়ে পাতার নিচে ¯েপ্র করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
স্যুটি মোল্ডঃ
ছত্রাক দ্বারা সংগঠিত হয়। পাতার ওপর কাল কাল পাউডার দেখা দেয়। গাছের ফলন ব্যহত হয়। আক্রমণ ব্যাপক হলে পাতা ও ফল ঝরে যায়।
দমনঃ
টিল্ট-২৫০ ইসি, প্রতি লিটার পানিতে ০.৫০ মিঃলিঃ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কৃষিবিদ মোঃ মাহমুদুল হাসান খান
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন)
বি.এ.আর.আই, গাজীপুর।
Comments
Post a Comment