Skip to main content

মুরগির বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আধুনিক ও দেশীয় পদ্ধতি


মুরগি পালন লাভজনক হলেও বিভিন্ন প্রকার রোগ এ লাভের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবছর বিভিন্ন রোগের কারণে ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। তাছাড়াও রোগ নিরাময়, রোগ নির্ণয় করতে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ঔষধ আনতে হয়। মুরগির রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারলে তা নিরাময় করা সহজ হয়। কিন্তু এ রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে আনা হয় বিভিন্ন কিট, যা অনেক ব্যয়বহুল। এসব দিক চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক এমদাদুল হক চৌধুরী উদ্ভাবন করেছেন মুরগির দুটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ সালমোনেলোসিস ও মাইকোপস্নাজমসিস নির্ণয়ের দেশি প্রযুক্তির কিট। এগুলো ব্যবহার করে খুব কম সময়ে সহজে ও অতি অল্প খরচে নির্ভুলভাবে রোগ দুটি নির্ণয় করা সম্ভব।

সালমোনেলোসিস মুরগির ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগে মুরগির মৃতু্যর হার বেশি এবং মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সালমোনেলা গোত্রভুক্ত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বাংলাদেশে মূলত মুরগির হোয়াইট ব্যাসিলারি ডাইরিয়া বা পুলুরাম রোগ, ফাউল টাইফয়েড নামক রোগ হয়ে থাকে। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিনেশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, এটেস্টে অনেক সময় ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এ পরীক্ষাটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ অতি সহজে স্বল্প খরচে এবং নিভর্ুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path S-antigen kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে সালমোনেলুসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা যাবে।

মাইকোপস্নাজমসিস মুরগির আরেকটি মাইকোপস্নাজমাজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগেও খামারিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাইকোপস্নাজমা গোত্রভুক্ত চার ধরনের প্রজাতি দ্বারা মুরগি, তিতির ও অন্যান্য পাখির এ রোগ দেখা দেয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়, যা আমদানি নির্ভর এবং তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এ কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ স্বল্প খরচে এবং নির্ভুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path Mg-Antigen Kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে মাইকোপেস্নাজমসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা সম্ভব।

"BAU Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-Antigen Kit" এর সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রণালীর স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সালমোনিলা ও মাইকোপস্নাজমা হতে প্রস্তুতকৃত এন্টিজেনটি ৪০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। পরীক্ষাটি সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে গস্নাস সস্নাইড, ড্রপার, সন্দেহযুক্ত মুরগির রক্তরস প্রয়োজন হয়। সস্নাইডের উপর বিশ মাইক্রোলিটার এন্টিজেন (BAU Path Mg-Antigen Kit) এবং সমপরিমাণ রক্তরস মেশানোর ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে খালি চোখে সুস্পষ্ট দানার উপস্থিতি দেখে রোগটি উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। এখানে উলেস্নখ্য যে, রক্তরস ও এন্টিজেন মেশানোর এক মিনিটের অধিকাল অপেক্ষা করলে ভুল ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেবলমাত্র এক মিনিটের মধ্যে সৃষ্ট দানা রোগটির উপস্থিতি নিশ্চিত করে।

বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কিটগুলো আমদানি নির্ভর ব্যয়বহুল এবং এই কিটগুলোর ব্যবহার কালে গাঢ় নীল রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে অস্পষ্ট নীল দানা সৃষ্টি হয় বলে রোগ সনাক্তকরণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অথচ উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করলে সস্নাইডে গোলাপী রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে সুস্পষ্ট লালদানা সৃষ্টি হয় যা সহজেই খালি চোখে দেখা যায়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ উদ্ভাবিত "BAU Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-Antigen Kit" কিট দুটি মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা গেলে একদিকে রোগটি স্বল্প খরচে দ্রুততার সাথে সনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে, অপরদিকে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

লেখক: আব্দুস সালাম সাগর, ছাত্র, বাকৃবি, ময়মনসিংহ
এগ্রোবাংলা ডটকম

মুরগির বিভিন্ন রোগ, সমস্যা ও আধুনিক সমাধান
*সমস্যা: মুরগির বাচ্চা হয় এবং বাচ্চা অবস্থায় বাচ্চার চোখে ফোট আকৃতি হয় চোখ বন্ধ হয়ে পরে মাড়া যায়।

সমাধান: অসুস্থ্য মুরগীকে আলাদা করে রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগীকে ফাউল পক্স ভেক্সিন (বোতলেরে সাথে নির্দেশিকা মোতাবেক) দিতে হবে।

*সমস্যা: দেশী মুরগী (৫-৭ টি) খাবার খায় না, নাক দিয়ে পানি পরে, ঝুটিতে পক্স হয়েছে, শ্বাস কষ্ট আছে , হাল্কা চুনা পায়খানা করে, করনীয় জানাবেন।

সমাধান: ডক্সিভেট/টাইরোসেফ আধা কেজি সমপরিমান ভাতের সাথে ৫-১০ গ্রাম ঔষধ মিশিয়ে রোগাক্রান্ত মুরগীগুলোকে খাওয়াতে হবে। অথবা রেনামাইসিন টেব্লেট (২ টি) আধা কেজি সমপরিমান ভাতের সাথে গুরা করে খাওয়াতে হবে।

*সমস্যা: মুরগী জিমায়, চুনা চুনা পায়খানা করে, অবশেষে মারা যায়। করনীয় জানাবেন।
সমাধান: রেনামাইসিন ১ লিটার পানির সাথে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে পরপর ৫ দিন খাওয়াতে হবে।

*সমস্যা: মুরগী চোখে গুটি, চোখ ফুলে বন্ধ হয়ে গেছে। করনীয় জানাবেন।

সমাধান: ১. পভিসেট তুলা দিয়ে আক্রান্ত স্থানে পরিষ্কার করতে হবে সকাল ও বিকালে। ২. ডিসপ্রিন ১টি টেবলেট পানিতে গুলিয়ে সকালে ১ বেলা খাওয়াতে হবে।

*সমস্যা: মুরগী ঝিমায়, চুনা চুনা পায়খানা করে, অবশেষে মারা যায়। করনীয় জানাবেন।

সমাধান: রেনামাইসিন ১ লিটার পানির সাথে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে পরপর ৫ দিন খাওয়াতে হবে।

*সমস্যা: পোল্ট্রি মুরগীর রক্ত আমাশয়।

সমাধান: ১.প্রতি লিটার খাবার পানিতে দুই গ্রাম ‘ইএসবি-৩’ ৩০% ঔষধ মিশ্রিত করে পর পর তিন দিন খাওয়ানোর পর আরও দুই দিন বন্ধ রেখে তারপর আরও দুইদিন খাওয়াতে হবে এবং তারপর আরও একদিনের খাবার পানিতে প্রতি লিটার দেড় গ্রাম হারে ঔষধ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ২.’সিকাল রক্ত আমাশয়’ এর বেলায় ৬০ মিলি তরল এমবাজিন ১৩.৫ লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানিতে অথবা ৪ এম, এল তরল এমবাজিন ১ লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানিতে মিশিয়ে পর পর তিনদিন খাওয়ানোর পর দুইদিন ঔষধ বন্ধ রেখে শুধু পানি মেশানো খাওয়াতে হবে। ৩.আন্ত্রিক রক্ত আমাশয়ের বেলায় ৩০ মিলি তরলড় এমবাজিন।

*সমস্যা: মুরগীর মুখ কালো ও ফ্যাকাশে হয় এবং চুন পায়খানা করে মারা যায়।
সমাধান:ররেনামাইসিন প্রতি চারটি মুরগীর জন্য প্রতিদিন একটি ট্যাবলেট খাদ্য বা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে পরপর তিন দিন।

*সমস্যা: ব্রয়লার মুরগীর বাচ্চার ১২/১৩ দিন সময় থেকে দেখা যায় খামারে ৫ থেকে ২৫% বাচ্চা দাড়িয়ে থেকে ঝিমায়, বাড়ে না, শুকিয়ে যায়, তলপেটে পানি জমে ফুলে থাকে। অবশেষে মারা যায়। এর প্রতিকার কি?

সমাধান: জেন্টামাইসিন ০.৩ মিলি হারে মুরগীর বুকের মাংসে পরপর ৫ দিন ইনজেকশন দিতে হবে।

*সমস্যা: মুরগীর হঠাৎ করে মুখ চোখ ফুলে গিয়ে মুখ দিয়ে লালা পড়তেছে এবং এভাবে ৫/৬ দিন থাকার পর মুরগীটা মারা যাচ্ছে । খুব দ্রুত এর সমাধান দরকার।

সমাধান: ট্রিমাভেট সাচপেন সন=২ লিটার পানিতে ১ এম এল ট্রিমাভেট সাচপেন সন মিশিয়ে মুরগীকে ৭দিন খাওয়াতে হবে।*সমস্যা: মুরগী সাদা পায়খানা করে এবং মারা যায় ভোরভোরা হয়ে যায়।

সমাধান: জেন্টামাইসিন .৩ মিলি করে ইনজেকশন দিতে হবে।

*সমস্যা: ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার কোন ধরনের রোগ হয় এবং এর জন্য কোন প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে কি?

সমাধান: মুরগির বাচ্চার অনেক রোগ হতে পারে যেমন ম্যারেক্স, গামবুরো, রাণিক্ষেত , কলেরা ইত্যাদি। এর জন্য এক দিন বয়সের বাচ্চা থেকে শুরু করে করে বিভিন্ন বয়সের মুরগিকে টিকা প্রদান করতে হবে।

*সমস্যা: মুরগী চুনের মত পায়খানা করে এবং গলা খক খক করে। ২/৩ দিনের মধ্যে মারা যায়।

সমাধান: জেন্টামাইসিন ০.৩ এমএল এবং মাল্টিভিটামিন ০.১ এমএল মোট ০.৪ এমএল করে ৫ দিন ইনজেকশন দিতে হবে।

*সমস্যা: দেশী মুরগী চূনের পায়খানা করে, এ অবস্থায় ২-৩ দিনের মধ্যে মারা যায়।

সমাধান: আপনার মুরগীর রাণীক্ষেত রোগ হয়েছে। এ অবস্থায় কোন প্রতিকার নেই। তাই আক্রান্ত মুরগীকে আলাদা করে রাখতে হবে। আর আগে থেকে রাণীক্ষেত রোগের টিকা দিয়ে নিতে হবে।

*সমস্যা: আমি একজন মুরগির খামার ব্যবসায়ী। আমার ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার বয়স ০৬ দিন। আমি লক্ষ করছি বাচ্চগুলি ঝিমিয়ে আছে। সবগুলি এক জায়গায় একত্রিত হচ্ছে। যার কারনে দু-একটি বাচ্চা মারাও যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে ঠান্ডাজনিত কারনে হতে পারে। এতে আমার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে আমি কোন পদ্ধতি ব্যবহার করলে ভাল হবে।

সমাধান: এটা ঠান্ডাজনিত কারনে হয় তাই মুরগীর শেডে ১০০ ওয়াটের বাল্ব (শেড বড় হলে একাধিক) টানা ৬ ঘন্টা জালিয়ে রাখতে হবে।

*সমস্যা: আমি একজন মুরগির খামার ব্যবসায়ী। আমার সেডে জায়গার পরিমান দৈর্ঘ্য ১০ফুট এবং প্রস্থ ২০ ফুট। ১০০০টি বাচ্চা আছে। বাচ্চার বয়স ১০ দিন। সবগুলি এক জায়গায় একত্রিত হচ্ছে। যার কারনে বেশ কিছু বাচ্চা অন্য বাচচার চাপা পরে মারাও যাচ্ছে। আমি ১০০ ওয়াট ১০টি বাল্ব ব্যবহার করছি। এর বেশি বাল্ব দিলে বাচ্চা হাই ফাই করে। আমি কতটি বাল্ব ব্যবহার করতে পারি।

সমাধান: আপনি ১০০০ বাচ্চাকে ৫০০ টি করে দুইভাগ করে মাঝখানে পার্টিশন দিয়ে প্রত্যেক ৫০০টি বাচ্চার জন্য ১০০ ওয়াটের ৪টি বাল্ব ব্যবহার করবেন। আপনার মোট বাল্বেও প্রয়োজন হবে ৮টি। খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রত্যেক বাচ্চা সমান তাপ পায়। 

*সমস্যা: ১৫টি মুরগী আাছে। বয়স ২ মাস কিন্তু মুরগী গুলো ঝিমাতে ঝিমাতে মারা যায়। চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে গিয়ে বলেছে, রেনামাইসিন খাওয়াতে তাতেও কাজ হয়নি।

সমাধান: কলিপ্রিম পাউডার ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে। খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। জেন্টামাইসিন .৩ মিলি করে বুকের মাংসে ইনজেনশন দিতে হবে। আপনি দ্রুত ভাল ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Comments

  1. আমার বাসার ৪০ দিন বয়সের বাচ্চা আছে সেগুলোকে কোন টিকা দেই নায় এখন এ বয়স হতে কি টিকা দেওয়া যাবে?

    ReplyDelete
  2. দেশী মুরগী ৭-৮ টা গলায় গর গর করছে। এজিন ভ্যাট খাওয়াইছি কয়েকদিন,একটু কমেছে।১৫-২০ দিন হবে সমস্যাটা। আর কি করতে পারি।
    *পাতলা পায়খানা করলে কি খাওয়াতে পারি।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা