Skip to main content

সম্ভাবনাময় ফসল সুগার বিট’


আখ স্বল্পতা বা ত্র“টিপূর্ণ আখের কারনে যখন চিনিকলগুলোতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চিনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে সেই সময়ে দেশে চিনির ঘাটতি পূরণ করতে এবার আবাদ হবে সুগার বিটের। সনাতনী পদ্ধতিতে চিনিকলগুলোতে আখের রস থেকে চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি শীতপ্রধান অঞ্চলের ফসল সুগারবিট থেকে চিনি ও গুড় উৎপাদনের গবেষণায় এরই মধ্যে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সফলতা লাভ করেছেন। সুগারবিট থেকে গুড় ও চিনি উৎপাদনের পর ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন চলতি বছর থেকেই দেশে সুগারবিট উৎপাদন ও এ থেকে বাণিজ্যিকভাবে চিনি ও গুড় তৈরী সম্ভব।

শীতপ্রধাণ অঞ্চলের ফসল সুগারবিট দেখতে অনেকটা মূলার মতন। জমিতে চারা রোপণের ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সুগারবিট জমি থেকে তোলা যায়। ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জানান, যেখানে আখ থেকে শতকরা ৬ থেকে ৭ ভাগ চিনি পাওয়া যায় সেখানে সুগারবিট থেকে শতকরা ১৪ থেকে ১৮ ভাগ চিনি উৎপাদনে তারা সক্ষম হয়েছেন।

এর পাশাপাশি লবনাক্ত এলাকায় সুগারবিটের পরীক্ষামূলক চাষ করে সফলতা পাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা দেশে সুগারবিটের উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভবনার আশা করছেন। আর এ কারণেই তারা ভাবছেন বাণিজ্যিকভাবে সুগারবিটের উৎপাদন ও চিনিকলগুলো গুলো সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনে সক্ষম হলে দেশের চিনির ঘাটতির বিরাট অংশ পূরণ হবে।

ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহম্মদ খলিলুর রহমান জানান, দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ২৩ লক্ষ মেট্রিক টন চিনি চাহিদার দেশে যে চিনি উৎপাদন হয় তার পরিমাণ খুবই কম। শুধুমাত্র গত বছরে দেশে ১৫টি চিনিকলের উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনের বিপরীতে চিনি উৎপাদন করা হয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৩০৮ মেট্রিক টন। ঘাটতি থাকা বিপুল পরিমাণের এই চিনি বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। পাশাপাশি দেশের চিনিকলগুলো শুধুমাত্র আখের রস থেকে চিনি উৎপাদন করে থাকে। তিনি আরো জানান, আখ একটি দীর্ঘমেয়াদী ফসল হওয়ায় একদিকে আখচাষীরা তাদের জমিতে শুধুমাত্র আখের আবাদে দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর পাশাপাশি দেশে বিভিন্নভাবে কৃষি জমি কমে যাওয়ায় আখ উৎপাদনও কমছে। ফলে প্রয়োজনীয় আখ না পাওয়ায় চিনি উৎপাদনের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। ফলে দেশের চিনির চাহিদা পূরণ এবং চিনিকলগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য চিনি উৎপাদনের বিকল্প উৎস সুগারবিট ব্যবহার করার জন্য ইক্ষু গবেষনা ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ২০০২-২০০৩ মৌসুম থেকে গবেষনা শুরু করেন। ২০১১-২০১২ মৌসুমে এজন্য একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউট সহ দেশের কয়েকটি স্থানে সুগার বিটের দুইটি জাত শুভ্রা ও কাবেরীর পরীক্ষামূলকভাবে সুগারবিটের আবাদ করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করা সুগারবিটের মধ্যে শুভ্রা জাত প্রতি হেক্টরে ৮২ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন এবং কাবেরী জাত প্রতি হেক্টর থেকে ৭৫ দশমিক ৭৭ মেট্রিক টন উৎপাদন পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উৎপাদিত সুগারবিট থেকে গড়ে শতকরা ১২ দশমিক ০১ ভাগ চিনি আহরন সম্ভব হয়েছে বলেও তারা জানান। এই গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা পরীক্ষামূলকভাবে লবনাক্ত প্রবণ এলাকা বলে পরিচিত সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাটে সুগারবিটের ঐ দুইটি জাত আবাদ করে হেক্টর প্রতি ৬৭ থেকে ৭৭ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন পেয়েছেন এবং সেখানে চিনি আহরনের হার ছিলো শতকরা ১২ ভাগ। বিজ্ঞানীরা জানান, ঠাকুরগাও চিনিকল এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করে শুভ্রা জাতের সুগারবিটের সর্বোচ্চ ফলন হেক্টরপ্রতি ১০৬ দশমিক ২১ মেট্রিক টন এবং শ্যামপুর চিনিকল এলাকায় সর্বোচ্চ ১৩৫ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া গেছে। এ থেকে বিজ্ঞানীরা এখন সুগারবিট উৎপাদন তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।

ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহম্মদ খলিলুর রহমান জানান, চিনিকল গুলোতে তাদের যন্ত্রপাতির সাথে অল্প কয়েকটি নতুন যন্ত্র সংযোজনের মাধ্যমে খুব সহজেই সুগারবিট থেকে সাদা চিনি উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি বলেন, সুগারবিটের সমস্যা হলো আখের মত সেখান থেকে কোনো রস পাওয়া যায় না। একারনে সুগারবিটকে স্লাইস করে কেটে ডিফিউজার মেশিনে পানিতে তা মেশালে সুগারবিটের চিনি অংশ পানিতে দ্রবীভুত হয়ে যায়। সেই দ্রবণ জাল দিয়ে সহজেই গুড় বা চিনি পাওয়া যায়। এ বছর থেকে ঠাকুরগাও সুগার মিলে সুগার বিট থেকে চিনি পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করা হবে বলে তিনি জানান।

পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমল কান্তি সরকার জানান, চলতি মাড়াই মৌসুমে পাবনা সুগার মিলে ৯০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৬ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মাড়াই এখনো চলছে। তিনি আরো জানান, মাড়াই অব্যাহত থাকলেও চলতি মৌসুমে আবর্জনাপূর্ণ আখ, পোকা যুক্ত আখ সহ নানা কারনে এই মাড়াই মৌসুমে মিলের রিকভারী হার অনেক নীচে নেমে এসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কাংখিত লক্ষ্যমাত্রার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউটের সাম্প্রতিক কিছু সাফল্য : ১৯৫১ সালে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে মাত্র ১৭ জন জনবল নিয়ে ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রটিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ চিনিকল সংস্থার (বর্তমান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা) নিকট হস্তান্তর করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ চিনিকল সংস্থা ১৯৭৪ সালে ‘ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে যা ঈশ্বরদীতে প্রধান কার্যালয়সহ ঠাকুরগাঁওস্থ আঞ্চলিক কেন্দ্রসহ একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাহী আদেশ বলে ইক্ষু গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউটকে বিলুপ্ত করে ‘বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট’ স্থাপন করা হয়। বর্তমানে ইনষ্টিটিউটে প্রজনন বিভাগ, কৃষিতত্ব ও ফার্মিং সিস্টেম বিভাগ. শারীরতত্ব ও চিনি রসায়ন বিভাগ, রোগতত বিভাগ, কীটতত্ব বিভাগ, মৃত্তিকা ও পুষ্টি বিভাগ, কৃষি অর্থনীতি বিভাগ, কৃষি প্রকৌশল বিভাগ, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর বিভাগ, অন-ফার্ম গবেষনা বিভাগ সহ ১০টি বিভাগে গবেষক, বিজ্ঞানী সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এর বাইরে বায়েটেকনোলোজী বিভাগ এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ নামের দুটো বিভাগের প্রস্তাবও অনুমোদন হয়েছে।

ইনষ্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা ড. খলিলুর রহমান জানান, ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের বিজ্ঞানীরা আখের ৪১টি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। তিনি আরো জানান, গত তিন বছরে ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল এবং অধিক চিনি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। জাতগুলো হলো ঈশ্বরদী-৩৯, ঈশ্বরদী-৪০ এবং বিএসআরআই-৪১। এর মধ্যে ঈশ্বরদী-৩৯ এবং ঈশ্বরদী-৪০ জাতের আখ স্বাভাবিক জমির পাশাপাশি লবনাক্ত প্রবণ এলাকায় আবাদ করা যায়। এর বাইরে সাম্প্রতিককালে স্বাভাবিক জমি ( প্লেইন ল্যান্ড ) এর পাশাপাশি প্রচলিত এলাকা যেমন চর এলাকা, পাহাড়ের ঢালে ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সফলভাবে আখ আবাদের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন। বিজ্ঞানীরা জানান, আখের পাশাপাশি গুড় উৎপাদনের জন্য উচ্চ ফলনশীল তাল, খেজুর গাছের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী ফসল আখের সাথে সাথী ফসল হিসাবে একই জমিতে আলু, পেঁয়াজ, রশুন, মটরশুটি, বাধাকপি, পালংশাক, গাজর, টমেটো, বেবীকর্ণ, লেটুস, ধনে, কালোজিরা, মেথী, মুগডাল, মৌরী, তিল, কচু ইত্যাদি শষ্য সফলভাবে আবাদের প্রক্রিয়াও ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সফলতার সাথে উদ্ভাবন করেছেন। বিজ্ঞানীরা জানান, সফলভাবে সাথী ফসল আবাদের মাধ্যমে একটি জমির বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিতের পাশাপাশি বছরে একই জমি থেকে কমপক্ষে ৪টি ফসল পাওয়া যাবে।

আখের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন এবং অপ্রচলিত অঞ্চলে আখ চাষ সম্প্রসারণের পাশাপাশি সহজে আখ চাষ এবং আখচাষীদের কাছে সহজে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা চারা উৎপাদনের জন্য বার্ড চিপ কাটিং মেশিন, প্যাডেল পাম্প, জোরা সারি নালা তৈরীর যন্ত্র, মিনি হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সহ বেশ কিছু যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। এ যন্ত্রগুলোর অনেকগুলোই কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলেও কর্মকর্তারা জানান।

সুগারবিট উৎপাদন কলাকৌশল:
সুগারবিট একটি ৪-৫ মাসের শীতকালীন ফসল। এর মূলে মিষ্টি জাতীয় পদার্থ সংরক্ষিত থাকে যা ব্যবহার করেই চিনি বা গুড় উৎপাদন করা যায়। সুগারবিট থেকে চকলেট, সিরাপ, ইথানল তৈরি করা যায়। সুগারবিট পাল্প উত্তম পশু খাদ্য। সুগারবিটের ফলন ৬০-৮২ টন/হেক্টর এবং সুগার রিকভারি ১৪-১৮%।

জমি নির্বাচনঃ
ট্রপিক্যাল সুগারবিট চাষাবাদের জন্য উঁচু, মাঝারি উঁচু ও সমতল জমি নির্বাচন করতে হবে। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায় এমন জমি সুগারবিট চাষাবাদের জন্য উত্তম। জমির মাটি দোআঁশ অথবা বেলে-দোঅাঁশ এবং পর্যাপ্ত জৈব পদার্থযুক্ত হলে সুগারবিট উৎপাদন ভাল হয়। মাটির পিএইচ ৬.৫ থেকে ৯.০ হলে উত্তম। লবণাক্ত জমিতেও সুগারবিট উৎপাদন করা যায়।

জমি তৈরিঃ
সুগারবিট একটি মুল জাতীয় ফসল তাই জমিতে প্রয়োজনীয় জৈব সার প্রয়োগ করার পর ৩০ সেমি থেকে ৪৫ সেমি গভীর করে আড়া-আড়িভাবে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি উত্তমরুপে তৈরি করতে হবে। সেচের পানি যাতে গাছের গোড়ায় জমে না থাকে তার জন্য ৫০ সেমি. দূরে দূরে ৫-৬ সেমি. উঁচু রিজ/আইল তৈরি করতে হবে।

সুগারবিট উৎপাদন সফলভাবে করার জন্য প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া ২৬০কেজি, টিএসপি ১২০ কেজি, এমওপি ২২৫ কেজি, জিপসাম ১০০ কেজি, জিঙ্ক সালফেট ১০ কেজি, বোরাক্স ২০ কেজি এবং গোবর ১৫০০০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। জমি চাষ করার পূর্বে সম্পূর্ণ জৈব সার (গোবর) সমানভাবে জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। রিজ করার পূর্বে সারি/লাইনে সম্পূর্ণ টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট ও বোরাক্স এবং এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। পরবর্তীতে বীজ বপনেরর ৩০ ও ৬০ দিন পর বাকি ইউরিয়া ও এমওপি সার সারিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

বীজ হার ও বীজ বপন পদ্ধতিঃ
হেক্টর প্রতি বীজের পরিমাণ ৩.৫-৪.০ কেজি (হেক্টর প্রতি ১,০০,০০০-১,২০,০০০ টি গাছ থাকবে)। ৫০ সেমি দূরে দূরে তৈরিকৃত রিজ/আইলের উপর ২০ সেমি দূরে দূরে বীজ ২-৩ সেমি নিচে বপন করতে হবে।কাঙ্খিত গাছের সংখ্যা পাওয়ার জন্য পাশাপাশি দুটি গর্ত করে প্রতিটি গর্তে ১টি করে বীজ বপন করতে হবে এবং পরবর্তী ২০-২৫ দিন পর প্রতি ২০ সেমি. দূরে একটি করে গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে।

সেচ প্রয়োগঃ
সুগারবিট উৎপাদনেরর জন্য মাটির আদ্রতা অবশ্যই ৬৫% এর উপরে রাখতে হবে। সুগারবিটের সক্রিয় মুল প্রায় ২০০-২৫০ সেমি পর্যন্ত মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই মাটির ৬০ সেমি গভীর থেকে সে প্রায় ৭০% পানি গ্রহণ করে। প্রতি ১০০ কেজি মূল উৎপাদনের জন্য সুগারবিট মাটি থেকে প্রায় ৪০-৪৫ কেজি পানি গ্রহণ করে। সুগারবিটের জীবনকালে মাটির আদ্রতাভেদে ৫-৬টি সেচ প্রয়োজন হয়্ অঙ্কুরোদগম ভালভাবে হওয়ার জন্য বীজ বপনের পরপরই এমনভাবে একটি সেচ দিতে হবে যাতে রিজ/আইল সম্পূর্ণভাবে ভিজে যায়।পরবর্তীতে ১৫/২০ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। বিট উত্তোলনের ১৫-২০ দিন পূর্বে সেচ প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। তবে বিট উত্তোলনের সময় মাটি খুবই শুকনা ও শক্ত থাকলে সহজভাবে বিট উত্তোলনের সময মাটি খুবই শুকনা ও শক্ত থাকলে সহজভাবে বিট উত্তোললের জন্য হালকা সেচ প্রয়োগ করা যেতে পারে।

আন্তঃপরিচর্যাঃ
গ্যাপ ফিলিং:
বিটের কাক্ষিত ফলন পাওয়ার জন্য গ্যাপ ফিলিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বীজ বপনের ১০ দিনের মধ্যে বীজ থেকে চারা না গজালে বীজ দ্বারা এবং ২০ দিনের মধ্যে বীজ থেকে চারা না হলে/রোগাক্রান্ত হলে আলাদাভাবে পলিব্যাগে তৈরিকৃত চারা দ্বারা গ্যাপ ফিলিং করতে হবে। উল্লেখ্য যে, সারি থেকে উত্তোলিত চারা দ্বরাও গ্যাপ ফিলিং করা যাবে।

আগাছা দমনঃ
সুগারবিট ভাল ফলন পাওয়ার জন্য সময়মত আগাছা দমলের প্রয়োজনীয়তা অত্যাধিক। বীজ বপনেরর পর থেকে ৯০-১০০ দিন পর্যন্ত জমি অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।তিন পর্যায়ে আগাছা দমন করতে হবে। প্রথম ২৫-৩০ দিন পর, দ্বিতীয় ৪৫-৫০ দিন পর এবং তৃতীয় ৭০-৮০ দিন পর। তবে জমিতে আগাছার পরিমাণ বেশি হবে প্রয়োজনে আরও অাগাছা দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

গোড়ায় মাটি দেওয়াঃ
সুগারবিট একটি মুলজাতীয় ফসল তাই গোড়ায় মাটি দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। দ্বিতীয় রার সার উপরি প্রয়োগ করার পর গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে। মাটি এমনভাবে দিতে হবে যাতে গাছের মাথায় (Crown) মাটি না পড়ে।


পোকা-মাকড় দমন ব্যবস্থাপনাঃ
সাধারণত: সুগারবিট উৎপাদনের ক্ষেত্রে সুগারবিট ক্যাটারপিলার, কাটুই পোকা, জাবপোকা ইত্যাদি পোকার আক্রমণ হয়। বীজ বপনের ২০-২৫ দিন পর পর ১ লিটার পানিতে ১ এমএল নাইট্রো ৫০৫ ইসি (ক্লোরোপাইরিফস ও সাইপারমেথিন মিশ্রণ) মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকা দমন করা যায়। পোকা দমনের জন্য হেক্টর প্রতি ৩০-৩৫ টি সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়। পোকা দমনে প্রয়োজনে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসাআরআই) এর কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনাঃ
সুগারবিট স্ক্লেরোসিয়াম রুট রট, রাইযোকটনিয়া রুট ও ক্রাউন রট, সারকোসপোরা লিপ স্পট, অলটারনারিয়া লিফ স্পট, এ্যানথ্রাকনোস ইত্যাদি রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর পর ব্যাভিস্টিন (১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম) অথবা স্কোর ২৫০ ইসি (১ লিটার পানিতে ০.৫ এমএল) অথবা টিল্ট (১ লিটার পানিতে ০.৫ এমএল) স্প্রে করলে রোগ দমন করা যায়। বোগবালাই ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনে (বিএসাআরআই) এর কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

বিট উত্তোলন ও ফলনঃ
সুগারবিট ফসলটি ৫ থেকে ৫.৫ মাসে উত্তোলনের উপযুক্ত হয়।এজন্য বিটের বয়স ৪ মাস হওয়ার পর প্রতি ১০ দিন পর পর ব্রিক্সের পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। গাছের পাতাগুলো হলুদ হতে শুরু করলে এবং মূলে ব্রিক্সের পরিমাণ ১৮ থেকে ২২% হলে বিট সংগ্রহ করতে হবে। মাঠ থেকে সাধারণত: হাত দিয়ে বিট উত্তোলন করা হয়। সুগারবিটের হেক্টর প্রতি ফলন ৮০-১০০টন।

বিট থেকে গুড় উৎপাদনঃ

উৎপাদিত বিট ভালভাবে পরিস্কার করে পাতলা স্লাইস করতে হবে। স্লাইসকৃত বিট ডিফিউজারে ৭০°সে. তাপমাত্রার স্লাইসের দ্বিগুণ পরিমাণ পানিতে ১ ঘন্টা সিদ্ধ করতে হবে। ডিফিউজার থেকে রস সংগ্রহ করে জ্বাল দিযে রস ঘনীভূত করতে হবে। ঘনীভূত রসে প্রয়োজনমত পাউডার চিনি মিশিয়ে দানাদার গুড় উৎপাদন করা যায়। পরবর্তীতে উৎপাদিত গুড় রোদে শুকিয়ে প্যাকেটজাত করতে হবে।
কৃষিবিদ জাহেদুল আলম রুবেল
দৈনিক কালের কন্ঠ

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা