ফরজ নামাজের পরে বিভিন্ন জিকির ও দোয়া-দরুদ পাঠ করা মোস্তাহাব। আলেমদের অভিমত হলো, দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ সময় এটা। তাই ফরজ নামাজের সালাম ফিরানো মাত্রই জিকির ও দোয়া না করে উঠে পড়া, দাঁড়িয়ে নামাজ পরবর্তী সুন্নত শুরু করা কিংবা চলে যাওয়া অনুচিৎ।
আবার অনেককে দেখা যায়, ফরজ নামাজের পর অমনোযোগিতা ও অবহেলার সঙ্গে দোয়া করে থাকে। এমন আচরণ চরম ধৃষ্ঠতা ও বেয়াদবি। বরং ফরজ নামাজের পর মনোযোগের সঙ্গে জিকির ও দোয়া করে নিজের দুনিয়া ও আখেরাতকে সুন্দর করা উচিৎ।
অনেক হাদিসে এ সময় জিকির ও দোয়া করার গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। আবার অনেক হাদিসে শিখানো হয়েছে ফরজ নামাজের পর কোন কোন জিকির ও দোয়া করতে হবে।
একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন দোয়া কবুলের অধিক সম্ভাবনা রাখে? তিনি ইরশাদ করলেন, গভীর রাতের দোয়া আর ফরজ নামাজ পরবর্তী দোয়া। -সহিহ তিরমিজি: ৩৪৯৯
বর্ণিত হাদিসের প্রেক্ষিতে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নিম্নবর্ণিত দোয়াসমূহ পাঠ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ইসলামি স্কলাররা।
এক.
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
এ বাক্যটি তিন বার পাঠ করতে হয়। -সহিহ মুসলিম: ১৩৬২
দুই.
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়াজাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার গুণবাচক নাম সালাম। তুমি শান্তিদাতা। তুমি কল্যাণময়। তুমি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।
উল্লেখিত দোয়াটি এক বার পাঠ করতে হয়। -মুসলিম শরিফ: ১৩৬২
তিন.
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ اَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু। ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। আল্লাহুম্মা লা-মানিয়া লিমা আতাইতা। ওয়া-লা মুতিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক। তার কোনো শরিক নেই। সার্বভৌমত্বের মালিক তিনি। সকল প্রশংসা তার। তিনি সব কিছুর ওপর সামর্থ্যবান। আপনি দিলে কেউ বাঁধা দিতে পারে না। আপনি না দিলে কেউ দিতে পারে না, কেউ উপকার করতে পারে না।
এ দোয়াটি একবার পাঠ করতে হয়। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
চার.
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَلاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ
الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। লাহুল মুলকু। ওয়া লাহুল হামদু। ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা হাউলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। ওয়া লা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু। লাহুন নি’মাতু ওয়া লাহুল ফাজলু। ওয়া লাহুস সানাউল হাসানু। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসিনা লাহুদ দ্বীনা। ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরূন।
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক। তার কোনো শরিক নেই। সার্বভৌমত্বের মালিক তিনি। সকল প্রশংসা তার। তিনি সবকিছুর ওপর সামর্থ্যবান। নেক কাজের তওফিক দান করার ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত আর কারো নেই। গুনাহ থেকে বিরত রাখার ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত আর কারো নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কারো ইবাদত আমি করি না। প্রাচুর্য দেওয়ার ও অনুগ্রহ করার ক্ষমতা তার। সকল প্রশংসা ও সৌন্দর্য তার। আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা একনিষ্ঠ ভাবে তার দ্বীন মেনে চলি। যদিও অবিশ্বাসীরা তাতে অসন্তুষ্ট হয়।
এই দোয়াটিও এক বার পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। -সহিহ মুসলিম: ১৩৭১
পাঁচ.
প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের পর সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার ও আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পাঠ করা। -সহিহ মুসলিম: ১৩৭৭
অথবা সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার। এর পর ১ বার
لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। লাহুল মুলকু। ওয়ালাহুল হামদু। ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক। তার কোনো শরিক নেই। সার্বভৌমত্বের মালিক তিনি। সকল প্রশংসা তার। তিনি সবকিছুর ওপর সামর্থ্যবান। -সহিহ মুসলিম: ১৩৮০
ছয়.
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْجُبْنِ وَأَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا
وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল জুবনি। ওয়া আউযু বিকা আন আরুদ্দা ইলা আরজালিল উমুরি। আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনিয়া। আউজু বিকা মিন আজাবিল কাবরি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই। বার্ধক্যজনিত অক্ষমতা থেকে আশ্রয় চাই। দুনিয়ার ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই। কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।
বর্ণিত দোয়াটিও এক বার পাঠ করতে হয়। -সহিহ বোখারি: ২৮২২
সাত.
সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস এক বার করে তেলাওয়াত করা। -সুনানে আবু দাউদ: ১২২৫
আট.
اَللَّهُمَّ أَعِنِّى عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শোকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তোমার জিকির করার সুযোগ দাও। তোমার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায়ের সুযোগ দাও। সুন্দরভাবে তোমার ইবাদতের সুযোগ দাও।
এই দোয়াটিও এক বার করে পাঠ করতে হয়। -সুনানে আবু দাউদ: ১৫২৪
গোনাহ থেকে বাঁচতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াগুলো পড়তে বলেছেন
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় পাপ বা গোনাহ হলো- আল্লাহতায়ালা যা করা বান্দার জন্য আবশ্যক করেছেন, তা পালনে বিরত থাকা, এবং যা হারাম করেছেন, তা পালন করা। আমরা জানি, মানুষ মাত্রই গোনাহ করে। শয়তানের ধোঁকায় এবং নফসের প্ররোচনায় মানুষ বারবার গোনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। তবে গোনাহের মধ্যে অবিচল না থেকে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা এবং তওবা করার জন্য আল্লাহতায়ালা বান্দাকে আহ্বান জানিয়েছেন। তওবা হলো- জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে জগতের সবার গোনাহ মাফের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বদা আল্লাহতায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। কারণ আল্লাহতায়ালার সার্বক্ষণিক সাহায্য ও অনুগ্রহ ছাড়া কারও পক্ষে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
তাই গোনাহ থেকে রক্ষা পেতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কিছু দোয়া পড়ে আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। আবার মহান আল্লাহ তায়ালাও পবিত্র কোরআনে ক্ষমা পার্থনার কিছু আয়াত নাজিল করেছেন। নাযিলকৃত আয়াত ও দোয়াগুলো হলো—
এক. ‘রাব্বানা লা তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা ওয়াহাব লানা মিল্লাদুনকা রাহমা- ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।’
এ দোয়া বেশি বেশি পাঠ করলে দ্বীনের পথে ও হেদায়েতের ওপর টিকে থাকা সহজ হয়। দোয়াটি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত। যা সূরা আল ইমরানের ৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! হেদায়েত প্রদান করার পর আপনি আমাদের অন্তঃকরণকে বক্র করবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন! নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর দাতা।
দুই. ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব- সাব্বিত কালবি আলা দিনিক।’
এই দোয়াটি পবিত্র হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। উম্মত জননী হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বেশিরভাগ সময়ে এই দোয়াটি পাঠ করতেন। এটা রাসূলের শিখানো দোয়া বিশেষ।
অর্থ: হে অন্তরসমূহের ওলট-পালটকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অবিচল রাখুন। -তিরমিজি
তিন. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতেন-
‘আল্লাহুম্মা মুসাররিফাল কুলুব সাররিফ কুলুবানা আলা ত-আতিক।’
অর্থ: হে আল্লাহ! (আপনি) হৃদয়সমূহের পরিবর্তনকারী! আমাদের হৃদয়গুলোকে আপনার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দিন। -সহিহ মুসলিম
চার. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াটিও করতেন—
‘আল্লাহুম্ম ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াততুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েদত, তাকওয়া, সচ্চরিত্রতা ও প্রাচুর্য্যতার প্রার্থনা করছি। -সহিহ মুসলিম
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সব ধরনের গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।
একনিষ্ঠ তওবায় গোনাহ মাফ হয়
তওবা আরবি আরবি শব্দ। অর্থ প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে শব্দটি আল্লাহর নিষেধকৃত বিষয়সমূহ ত্যাগ করা ও তার আদেশকৃত বিষয়সমূহের দিকে ফিরে আসা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় শব্দটি নিজের কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তা পরিত্যাগের দৃঢ় সংকল্পকে বোঝায়।
পবিত্র কোরআনে কারিমের অনেক স্থানে তওবা শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি পবিত্র কোরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ সূরার নামকরণ করা হয়েছে সূরা তওবা। এছাড়া সূরা নুর, সূরা সূরা তাহরিম, সূরা বাকারা ও সূরা ফুরকানসহ কোরআনের আরও সূরায় তওবা এবং এর গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।
কোরআনের ন্যায়, হাদিসেও তওবার কথা উল্লেখ রয়েছে এবং এর প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। যেহেতু কোরআনে এবং হাদিসে কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়টি বারংবার উল্লেখ ও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, সে কারণে ইসলামে তওবার গুরুত্ব অনেক।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, গোনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা যেমন মুমিনের পরিচায়ক তেমনি তওবা করাও মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। চাই তা সগিরা (ছোট) গোনাহ বা কবিরা (বড়) গোনাহ।
এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো বান্দা যদি সগিরা গোনাহ করে অনুতপ্ত না হয় এবং তওবা না করে তবে তা আল্লাহর কাছে কবিরা গোনাহ বলে বিবেচিত হয়। পক্ষান্তরে কেউ কবিরা গোনাহ করেও যদি অনুতপ্ত ও অনুশোচনা করে তওবা করে তবে তা আল্লাহর কাছে সগিরা গোনাহ বলে গণ্য হয় এবং তিনি তা ক্ষমা করে দেন। -সুনানে তিরমিজি
গোনাহ করা যেমন বান্দার স্বভাব তেমনি গোনাহ মাফ করাও আল্লাহর স্বভাব ও বিশেষ গুণ। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তার গোনাহগুলো মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তার প্রতিদানকে বহুগুণে বৃদ্ধি করা হবে। -সূরা তালাক: ০৫
গোনাহ চার প্রকার। দু’প্রকার ক্ষমা করা হয় বাকি দু’প্রকার ক্ষমা করা হয় না।
১. যে গোনাহ বান্দার অনিচ্ছায় হয়ে যায় তা ক্ষমা করা হয় এবং আজাব দেওয়া হয় না, নেয়ামত বন্ধ হয় না। -সূরা আহজাব: ০৫
২. বান্দা কবিরা গোনাহ করার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন এবং তার পদমর্যাদা বৃদ্ধি করেন। -সূরা আল ইমরান: ১৩৫
৩. বান্দা গোনাহ করার পর যদি অনুতপ্ত না হয় বা তওবা না করে তাকে তুচ্ছ মনে করে তবে তার গোনাহ তওবা না করা পর্যন্ত ক্ষমা করা হয় না।
৪. যে ব্যক্তির কাছে পাপের কাজ পাপের বলে মনে হয় না বরং তা স্বাভাবিক মনে করে এ ধরনের গোনাহ ক্ষমা করা হয় না। এসব লোকই জাতির সবচেয়ে হতভাগ্য, যাদের আমল তাদের ধ্বংস করে দেয়।
তবে কেউ যদি পরবর্তীতে তার পাপের ব্যাপারে অনুতপ্ত হয় এবং একনিষ্ঠ মনে তওবা করে সংশ্লিষ্ট পাপ থেকে বিরত থাকে তাহলে তাকে ক্ষমা করা হবে। কারণ আল্লাহতায়ালা তার রহমত থেকে মানুষকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। -সূরা জুমার: ৫৩
তওবা করতে হবে মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগে। কারণ এ মুহূর্তে মানুষের ঈমান আনা ও তওবা করাতে কোনো লাভ নেই। -সূরা মুমিনুন: ১০০
মুমিন ও মুনাফিকের গোনাহের মধ্যে পার্থক্য হলো- মুমিন গোনাহকে পাহাড়সম বোঝা মনে করে আর মুনাফিক তাকে খুবই তুচ্ছ ও স্বাভাবিক মনে করে।
তওবার দরজা কিয়ামতের নিদর্শন পশ্চিমাকাশে সূর্য উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত খোলা রয়েছে এবং আল্লাহতায়ালা বান্দাকে ক্ষমা করবেন।
কিন্তু তওবার রয়েছে তিনটি শর্ত।
১. কৃতকর্মের অনুশোচনা করা।
২. ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট গোনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
৩. আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
এবং ভাল কাজের মাধ্যমে কাফফারা দেয়ার চেষ্টা করা
তবে যদি তা ব্যক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হক আদায় করতে হবে। অথবা ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।
মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
খুব ভালো লাগলো দোয়াগুলো অর্থসহ পড়ে।
ReplyDelete