গোপালভোগ: শাঁস রসালা আঁশহীন ও সুগন্ধি বলে এই আম অনেকেরই প্রিয়। মাঝারি আকারের এই আমের গড় ওজন ১৮৯ গ্রাম। আঁটি পাতলা, খাদ্যাংশ ৬২ শতাংশ, মিষ্টতা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। বাজারে আসে মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ়ের প্রথম দিকে।
হিমসাগর: আকারে মাঝারি, গড় ওজন ২১৯ গ্রাম। শাঁস হলুদাভ সবুজ, বেশ রসাল। আঁটি মাঝারি। এই আমের খাদ্যাংশ ৬২ শতাংশ এবং মিষ্টতা ১৬ দশমিক ২ শতাংশ।
খিরসাপাত: হিমসাগরের মতো খিরসাপাতও মাঝারি আকারের আম। এটি বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে হয়। গড় ওজন ২৪৪ গ্রাম, আঁটি পাতলা। এই আম আঁশহীন, রসাল ও সুগন্ধি। মিষ্টতা ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ, খাদ্যাংশ ৭১ শতাংশ।
ল্যাংড়া: বাজারে বেশ কদর আছে এই আমের। আকারে মাঝারি এই আম খেতে সুস্বাদু। সুগন্ধি ও আঁশহীন। গড় ওজন ২৪০ গ্রাম। আঁটি ছোট। এর খাদ্যাংশ ৭২ শতাংশ আর মিষ্টতা ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। পাকে জ্যৈষ্ঠের শেষে। রাজশাহীতে এই আম ভালো হয়।
ফজলি: আমের মধ্যে ফজলি খুব বড় আকারের। গড় ওজনও বেশি, ৬১০ গ্রাম। এর খাদ্যাংশ ৮১ শতাংশ, মিষ্টতা ১৯ শতাংশ। সুগন্ধি ও রসাল এই আম পাকে শ্রাবণ ও ভাদ্রে। ভালো হয় বৃহত্তর রাজশাহীতে।
আম্রপালি: নীলম ও দশহরি জাতের সংকর আম এটি। ভারতে ছাড়া হয় ১৯৭৮ সালে। এর গাছ খুব ছোট এবং ঝাঁকালো। এক গাছে আম ধরে প্রচুর। পাকলে শাঁস গাঢ় কমলা রঙের হয়। স্বাদে মিষ্টি আর খাদ্যাংশও ভালো, ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আম্রপালির গড় ওজন ৩০৭ গ্রাম। মিষ্টতা ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। সারা দেশেই এই আম হয়ে থাকে।
সূর্যপুরী: ছোট আকারের আম, দেখতে সরু। গড় ওজন মাত্র ১২৫ গ্রাম। আঁটি পাতলা ও সরু। এই আমের খাদ্যাংশও কম, ৫৬ শতাংশ; মিষ্টতা ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। শাঁস পুরু, আঁশযুক্ত হলেও বেশ রসাল। পাকে আষাঢ়ের শেষ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত। ঠাকুরগাঁওয়ের বিখ্যাত আম এটি। অন্য অঞ্চলে হয় না বললেই চলে।
নীলাম্বরী: গাছপাকা আম খাওয়া দায়। কারণ বেশি পাকলে খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। কাঁচা আম পেড়ে পাকাতে হয়। ছোট থেকে মাঝারি আকারের এই আমের গড় ওজন হয় ২০০ থেকে ৩৬০ গ্রামের মধ্যে। দেখতে গোল এই আমের অগ্রভাগ সুচালো। বাজারে আসে সাধারণত মৌসুমের শেষ দিকে। নীলাম্বরী হয় যশোর ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে।
গুলাবখাস: পাকলে গোলাপ ফুলের গন্ধ আসে বলেই বুঝি এর নাম গোলাপখাস। আকার মাঝারি, গড় ওজন ৩০০ গ্রাম। দেখতে লম্বাটে, বোঁটার দিকের অনেকটা জায়গা গাঢ় লাল, নিচের দিকটা হলুদ। হলদে শাঁসের এই আম খেতে সামান্য টক-মিষ্টি। মৌসুমের শুরুতেই বাজারে আসে। পাকে বৈশাখের শেষ থেকে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত।
হাড়িভাঙ্গা: বাংলার মাটিতে বিপুল সম্ভাবনাময় অপর আরেকটি আমের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে এবং ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে যার নাম “হাড়িভাঙ্গা” ।রংপুর এর মিঠাপুকুর উপজেলার ১০নং বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের আখিরাহাট সংলগ্ন খামারবাড়ীতে এ আমটির চাষ, ফলন ও সম্প্রসারণে পরিণত বয়সেও যে ব্যক্তিটি নিরলস ও অনবদ্য শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি হলেন জনাব আলহাজ্ব মোঃ আব্দুস সালাম সরকার । তিনি জমিদারের বাগানসহ অন্য আম চাষীদের আম পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন । জমিদার বাগানের আমদানীকৃত আমের মধ্যে একটি আম অত্যন্ত সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও দর্শনীয় হওয়ায় তিনি উহার একটি কলম (চারা) নিয়ে এসে নিজ জমিতে রোপন করেন । বরেন্দ্র প্রকৃতির জমি হওয়ায় শুকনো মৌসুমে গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার সুবিধার্থে একটি হাড়ি বসিয়ে ফিল্টার পদ্ধতিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন কিন্তু অল্পদিনের ব্যবধানে কে বা কারা উক্ত হাড়িটি ভেঙ্গে ফেলেন । কালের বিবর্তনে বৃক্ষটি ফলবান বৃক্ষে পরিণত হয় । মৃত নফল উদ্দিনের পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও ভোক্তাবৃন্দ উক্ত গাছের আম খাওয়ার পর এত সুস্বাদু আমের উৎস সম্বন্ধে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, কে বা কারা যে গাছটির হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছিল এটি সেই গাছেরই আম । গাছকে সনাক্তকরণের লক্ষ্যে নফল উদ্দিন কর্তৃক উচ্চারিত বা মুখ নিঃসৃত হাড়িভাঙ্গা কথার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে এটি “হাড়িভাঙ্গা” নামে পরিচিত লাভ করে ।
এছাড়াও রয়েছে সিন্দুরা, চোসা, সিন্ধু, রাজভোগ, কাচামিঠা, লক্ষণভোগ, দুধসাগর, গোবিন্দভোগ, গুটি, সুন্দরী, বোম্বাই, মল্লিকা, লখনা, অাশ্বিনা, অরুনা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, কালীভোগ, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, কেন্ট, পাহুতান, ত্রিফলা, ছাতাপরা, গুঠলি, আদাইরা, কলাবতী
Comments
Post a Comment