Skip to main content

আবিষ্কারের পেছনের মজার গল্প

১. টুথপেস্ট
সকালবেলা ব্রাশ হাতে নিয়ে টুথপেস্ট টিউবের পেট টিপে যদি পেস্ট না পাওয়া যায় তখন মেজাজটা বিগড়ে যাওয়া খুব অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু কী করে এই টুথপেস্ট আমাদের ঘরে এলো। টুথপেস্ট আবিষ্কারের হাজার হাজার বছর আগে চীন, মিশর ও ভারতে প্রথম দাঁত মাজা ও সুস্থ থাকার চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। এসময় মানুষ গাছের বাকল, লবণ ও ফুলের পাপড়ি মিশিয়ে এক ধরনের মিশ্রণ তৈরি করত। এরপর পারস্যের এক ব্যক্তি জিরইয়াব নতুন এক ধরনের মাজন তৈরি করেন। এটা ছিল পরিশোধিত ও সুগন্ধযুক্ত। তারপর নানা হাত ঘুরে আজকের মাজন ও পেস্ট চলে আসে আমাদের ঘরে।


২. ব্রাশ
সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজার জন্য আমরা যে আধুনিক ঝকঝকে রং বেরংয়ের ব্রাশ ব্যবহার করি তার আবিষ্কারের গল্পটাও বেশ মজার। ১৭৭০ সালে দুষ্কর্মের অভিযোগে ইংল্যান্ডের উইলিয়াম অ্যাডিস নামের এক ভদ্রলোককে জেলে যেতে হয়। সেসময় জেলের ভেতর মোটা কাপড় দিয়ে দাঁত মাজতে হতো। ব্যাপারটা মোটেই ভালো লাগত না তার। তিনি চিন্তা ভাবনা করে বের করেন চমৎকার একটি আইডিয়া। খাবার শেষে পড়ে থাকা একটি হাড়ের এক দিকে বেশ কিছু ফুটো করে জেলের সেপাইদের কাছ থেকে চেয়ে নেন ঘোড়ার লেজের কিছু চুল। তারপর কায়দা করে ফুটো গলিয়ে চুলগুলো বেঁধে দিয়ে তৈরি করেন ব্রাশ। তারপর জেল থেকে বেরিয়ে আরো সুন্দর করে বানালেন ব্রাশ। খুলে বসেন মস্ত একটি কারখানা। এরপরই আধুনিক ব্রাশের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া।


৩. কলম
কলম ছাড়া কি একদিনও আমাদের চলে। এখন হয়ত মোবাইল, ল্যাপ্টপ কিংবা কিংবা কম্পিউটারে কলম ছাড়া অনেক কিছু লিখে রাখা যায়। কিন্তু পড়ালেখার ক্ষেত্রে কলমের কোনো বিকল্প নেই। প্রথম কলম আবিষ্কারের পেটেন্ট নেন রোমানিয়ার পেত্রাশ পোনারু। সেটা ১৮২৭ সালের কথা। এসময় পোনারুকে প্রচুর নোট নিতে হতো। তাই সহজে এবং দ্রুত কোনো কিছু লেখার তাড়না থেকেই পোনারু আবিষ্কার করেন ফাউন্টেন পেন। আর আজকে আমরা যে বলপেন ব্যবহার করি তার আবিষ্কারের গল্পটাও বেশ চমকপ্রদ। জন লাউড নামের একজন মার্কিনি তার চামড়ার ব্যবসার জন্য চামড়ার ওপর লেখার বলপেন আবিষ্কার করেন। কিন্তু এটা দিয়ে চামড়ায় লেখা গেলেও কাগজের ওপর লেখা যেত না। এর প্রায় ৫০ বছর পর হাঙ্গেরির একজন সাংবাদিক তরল কালির পরিবর্তে কলমে ছাপাখানার শুকনো কালি ভরে দেন। তারপর কলমের নিবের মাথায় বসিয়ে দিলেন ছোট্ট একটি ঘুরন্ত বল। যাতে কালির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ব্যস, বিশ্ব পেয়ে গেল সহজে লেখার জন্য আধুনিক বলপয়েন্ট পেন।


৪. পেন্সিল
পেন্সিলের ব্যবহার শুরু হয় ১৫৬৫ সালের পর থেকে—যখন এর আবিষ্কার হলো। ধারণা করা হয় ইংল্যান্ডের বরোডেলে প্রচুর পরিমাণ গ্রাফাইট আবিষ্কৃত হয়। এখানকার মেষ পালকেরা একদিন দেখেন এই গ্রাফাইট দিয়ে ভেড়ার গায়ে দাগ দিলে তা সহজে উঠে যাচ্ছে না। এরপর থেকে আস্তে আস্তে গ্রাফাইটের ব্যবহার শুরু। কিন্তু বারবার ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে এটি কাঠের সঙ্গে বেধে ব্যবহার করা হতো। তারপর বিবর্তিত হয়ে আজকের পেন্সিলের রূপ পেয়েছে। 

৫. সেফটি পিন
আমেরিকার ওয়াল্টার হান্ট সেফটি পিনের জনক। কিন্তু নেহাত ধার পরিশোধ করতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করে ফেলেন আজকের বহুল ব্যবহৃত সেফটি পিন। তার এক বন্ধুর কাছ থেকে ১৫ ডলার ধার নিয়েছিলেন। সেই ধার পরিশোধ করার জন্য কিছু একটা আবিষ্কারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এ সময় একটি পিতলের তার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এদিক সেদিক করে আজকের সেফটি পিনের আকারে রূপ দিলেন। ১৮৪৯ সালের এপ্রিল মাসে সেফটি পিনের পেটেন্ট ৪০০ ডলারে বিক্রি করে তারপরই বন্ধুর ধার শোধ করেছিলেন হান্ট। 


৬. সুপার গ্ল
সুপার গ্লু আমরা কে না চিনি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজেই আমরা এটি ব্যবহার করি ভেঙ্গে যাওয়া নানা জিনিস জোড় লাগানোর কাজে। এর বৈজ্ঞানিক নাম সায়ানোয়াক্রাইলেট (Cyanoacrylate)। ডক্তর হ্যারি কুভার ১৯৪২ সালে বন্দুকের সাইটর জন্য স্বচ্ছ প্লাস্টিক তৈরির গবেষনা করতে গিয়ে তিনি আচমকা আবিষ্কার করে ফেলেন সুপার গ্লু।কিন্তু তখন এর মরম বুঝতে পারেনি।নয় বছর পর তিনি জেটপ্লেনের ককপিটের জন্য তাপিনরোধক পলিমর তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু তার চেষ্টা ব্যথ হয় এবং নতুন একটি বস্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে আবিষ্কার করে ফেলেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি আঠালো ঠিক নয় বছর আগে তিনি যা পেয়েছিলেন। অবশেষে তিনি বুঝতে পারেন জোড় লাগানোর দুদান্ত ক্ষমতা রয়েছে তার অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারটির। আর এর ফলসূতিতেই ১৯৬৮ সালে সুপার গ্লু নামে এটি বাজারজাতা করেন।

আসলে সুপার গ্লু প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কিছুতে পরিনত হয়েছিল । ভিয়েতনাম যুদ্ধে অনেক সৈনিকের প্রান বাঁচিয়েছিল এই সুপার গ্লু। যুদ্ধক্ষেএ থেকে হাসপাতালে আনার আগে তাদের ক্ষত বন্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হত এই সুপার গ্লু। 

৭. ভেলক্রো            
জ্যাকেট কিংবা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার সময় যেসব কাপড় পরি কিংবা অ্যাথলেটিক সু বা সান্ডালে ব্যবহৃত হয় এক ধরনের স্ট্রিপ জোড়া। আপনার লাগেজে কিংবা স্কুল ব্যাগেও অনেক ক্ষেত্রে এ  ধরনের স্ট্রিপ জোড়া ব্যবহার করেন আপনি। এমনকি মহাকাশচারীদের স্পেসসুটেও ব্যবহার করা হয় এ  ধরনের স্ট্রিপ জোড়া । একে বলা হয় ভেলক্রো। কিন্তু কি করে  আবিষ্কার হলো এ কাজের জিনিস? কার মাথায় প্রথম খেললো এমন জিনিস তৈরির আইডিয়া?

১৯৪০ সালের সুইস বিজ্ঞানী জর্জ ডি মেস্ট্রাল বিকালে হাটতে বের হয়ে যখন বাড়ি ফিরে এলেন তিনি লক্ষ্য করলেন তার ডগকোট এবং প্যান্টে ককলবার ফলে ভরে আছে। এমন অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আপনারও হয়েছে যে, গ্রামের ক্ষেত-খামারে হাটতে গিয়ে পরনের কাপড়ে ছোট ছোট কাটা জাতীয় এক ধরনের ফল আটকে গেছে। গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায় একে বলে ভাটুইগাছ। জর্জ যেহেতু কৌতূহলী মানুষ, তাই তিনি দেখতে চাইলেন কেন এমনটা হচ্ছে। বলা নেই, কওয়া নেই, কাপড়ে আটকে পড়ছে একটা কাটাওয়ালা ফল। মাইক্রোসকোপের তলায় রেখে ফলটাকে পর্যবেক্ষণ করলেন তিনি। দেখলেন, হুক আকৃতির গঠন প্রাকৃতিক কাটাগুলোর।

জর্জ বুঝতে পারলেন, দুটি সারফেসকে শক্ত করে আটকানোর নতুন একটা কার্যকর উপায় সম্ভবত তিনি খুজে পেয়েছেন। তবে এ আবিষ্কারটিকে পূর্ণাঙ্গরূপ দিতে তার সময় লাগলো আট বছর। ঘটনা পরম্পরায় ফ্যাব্রিক নাইলনের দুটো স্ট্রিপ তৈরি করলেন।

৮. কফি
কফি আবিষ্কারের গল্পটা আরো চমকপ্রদ। ইথিওপিয়ার কালদি নামের এক মেষ পালক। ছাগল চড়াতে গিয়ে একদিন লক্ষ্য করেন অন্য দিনের তুলনায় তার ছাগলগুলো রীতিমতো উত্তেজিত, বলা যায় দাপাদাপি করছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে কালদি এক রকম বুনো ফল খুঁজে পান। যেটা খেয়ে ছাগলের এই অবস্থা। তারপর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে এই বুনো ফলের কথা। সেই ফলই আজকের কফি বিন।
তবে এর আরেকজন আবিষ্কর্তা মনে করা হয় ইয়েমেনের শেখ ওমর নামের নির্বাসিত এক ভদ্রলোককে। বনের মধ্যে ক্ষুধায় যখন তার মরমর অবস্থা তখন তিনি এই বুনো ফল চোখে দেখেন এবং খেয়ে ফেলেন। তারপর তো তিনি রীতিমতো ফিট। 



৯. চুইংগাম
চুইংগামের সঙ্গে আমাদের পরিচয় নেই—এমন দাবি খুব কম মানুষই করতে পারবে। চলতি পথে, খেলার মাঠে চুইংগাম আমাদের পরিচিত সঙ্গী। এর আবিষ্কারক আমেরিকার টমাস অ্যাডামস। সাপোডিলা গাছের আঠা জাতীয় নির্যাস জমাট করে রাবার বানানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। অনেক চেষ্টা চরিত্রের পর কিছুই যখন দাঁড় করাতে পারছিলেন না তখন অন্যমনস্ক হয়ে সেটা মুখে পুরে ফেলেন। তারপর দেখলেন আরে এ তো মন্দ লাগছে না। আবার ফুরুচ্ছেও না সহজে। এরপর তাতে নানা সুস্বাদু উপকরণ মিশিয়ে চুইংগামের এক বিশাল কারখানাই খুলে বসেন ভদ্রলোক।



১০. চুম্বক:
ধারনা করা হয় ম্যাগনেট সর্বপ্রথম আবিস্কার হয় আজ থেকে প্রায় ৪,০০০ বছর আগে আর আবিস্কার করে ম্যাগনাস নামের এক ভেড়াপালক যখন তার জুতোতে থাকা লোহার আংটা ম্যাগনেটিক পাথরের সাথে আটকে যায়। সেই পাথরের পরে নামকরন হয় ম্যাগনেটাইট।



১১. মাইক্রোওয়েভ ওভেন
গবেষণাগারে খাওয়া–দাওয়া করা নিশ্চয়ই খুব কাজের কথা নয়! কিন্তু এই কাজটি করতে গিয়েই পার্সি স্পেনসার নামের এক আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার যুগান্তকারী এক আবিষ্কার করে ফেলেন!

তিনি ম্যাগনেট্রন নামে একটি ভ্যাকুয়াম টিউব নিয়ে কাজ করছিলেন, যেটি থেকে মাইক্রোওয়েভ নির্গত হয়। টিউবের সামনে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবছিলেন তিনি, হঠাৎ অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন বিচিত্র একটি ব্যাপার ঘটেছে– তার প্যান্টের পকেটে রাখা চকলেটের বার গলতে শুরু করেছে!

বুদ্ধিমান বিজ্ঞানী স্পেনসার তখনই বুঝতে পারেন একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার ততক্ষণে তিনি করে ফেলেছেন।

বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর ১৯৪৫ সালে তিনি প্রথম মাইক্রোওয়েভ ওভেন তৈরি করেন, আকারে সেটি ঢাউস একটি জিনিস ছিল। ১৯৬৭ সাল থেকে মাইক্রোওয়েভ ওভেন যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়। এখন তো পৃথিবীজুড়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের জনপ্রিয়তার জুড়ি মেলে।


১২. পেনিসিলিন:
পেনিসিলিন চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি অসামান্য আবিষ্কার। এটি পৃথিবীতে আবিষ্কৃত প্রথম এ্যান্টিবায়োটিক যা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছিলেন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং, যিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং জীবাণুতত্ত্ববিদ।

১৯২১ সালের ঘটনা, তখন ইংল্যান্ডের সেন্ট মেরিজ মেডিকেল স্কুলের ল্যাবরেটরিতে কাজ করতেন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। কয়েকদিন ধরে তিনি ঠাণ্ডায় ভুগছিলেন। জীবাণু কালচার নিয়ে ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় হঠাৎ তীব্র হাঁচি এলো। ফ্লেমিং নিজেকে সামলাতে পারলেন না, সেটটা সরানোর আগেই হাঁচির দমকে নাক থেকে কিছুটা সর্দি সেটের উপর পড়ে গেলো!

পুরো জিনিসটা নষ্ট হয়ে গেল দেখে সেটটা সরিয়ে রেখে নতুন আরেকটা সেট নিয়ে কাজ শুরু করলেন। পরদিন ল্যাবরেটরিতে ঢুকে সরিয়ে রাখা সেই সেটটার দিকে নজর পড়ল তার, ভাবলেন সেটটা ধুয়ে কাজ করবেন। কিন্তু সেটটি হাতে তুলেই চমকে উঠলেন ফ্লেমিং। অবাক ব্যাপার, গতকালের জীবাণুগুলো আর নেই! তিনি দেহ থেকে বের হওয়া এই প্রতিষেধকটির নাম দিলেন লাইসোজাইম।


অনেক বছর পরের কথা, ১৯২৮ সালে ফ্লেমিং স্টেফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন লন্ডনের এক ল্যাবরেটরিতে। মাঝে গবেষণা স্থগিত রেখে তিনি বেড়াতে যান স্কটল্যান্ডে। যাবার সময় তিনি স্টেফাইলোকক্কাসটি একটি কাঁচের পাত্রে রেখে যান এবং একটি ভুল করেন- গবেষণাগারের জানালা খুলে রেখে যান! এই ভুলের বদৌলতেই ফ্লেমিং চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিসটি আবিষ্কার করেন।

দু’সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে গবেষণাগারে ফিরে তিনি আবিষ্কার করেন, কোন ফাঁকে ঝড়ো বাতাসের দমকে খোলা জানালা দিয়ে ল্যাবরেটরির বাগান থেকে কিছু ঘাস পাতা উড়ে এসে পড়েছে জীবাণু ভর্তি প্লেটের উপর। তিনি প্লেটগুলোতে দেখলেন জীবাণুর কালচারের মধ্যে স্পষ্ট পরিবর্তন।

ফ্লেমিং বুঝলেন এই আগাছাগুলোর মধ্যে এমন কিছু আছে যার জন্য পরিবর্তন ঘটেছে, পরীক্ষা করে দেখা গেলো আগাছাগুলোর উপর একরকম ছত্রাক জন্ম নিয়েছে। সেই ছত্রাকগুলো বেছে বেছে জীবাণুর উপর দিতেই জীবাণুগুলো ধ্বংস হয়ে গেল! তিনি বুঝতে পারলেন, তার এতোদিনের গবেষণা অবশেষে সার্থক হয়েছে! ছত্রাকগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম ছিল পেনিসিলিয়াম নোটেটাম, তাই তিনি এর নাম দিলেন পেনিসিলিন।

১৯৪৫ সালে পেনিসিলিন আবিষ্কার এবং মানবকল্যাণে এর অসামান্য অবদানের জন্য আলেকজান্ডার ফ্লেমিং নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন। পুরষ্কার পেয়ে ফ্লেমিং কৌতুক করে বলেন, ‘এ পুরষ্কারটি ঈশ্বরের পাওয়া উচিত, কারণ তিনিই সবকিছুর আকস্মিক যোগাযোগ ঘটিয়েছেন।’

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার এই পেনিসিলিন। জীবনের ছোট্ট একটি ভুলের পুরষ্কার স্বরুপ আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ইতিহাসের পাতায় চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন।

১৩. এক্সরে:
এক্সরে বা রঞ্জন রশ্মি হচ্ছে একটি তড়িৎ চৌম্বক বিকিরণ। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য টেন ইনভার্স টেন মিটার যা সাধারণ আলোর চেয়েও অনেক কম। তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম থাকার কারণে এটি যে কোনো পদার্থকে খুব সহজেই ভেদ করতে পারে।

“ক্যাথোড রে” আবিষ্কার হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু গবেষকরা তখনও জানতেন না এটি ব্যবহার করে মানবদেহের কঙ্কালের ছবি তোলা সম্ভব। ১৮৯৫ সালে জার্মান পদার্থবিদ উইলহেম রঞ্জন একটি কালো কাগজে ঢাকা গ্লাস টিউবে ক্যাথোড রশ্মি চালিয়ে পরীক্ষা করছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল কাঁচ থেকে ক্যাথোড রে বের হয় কিনা সেটি পরীক্ষা করা।

কিন্তু এমন সময় একটি মজার ঘটনা ঘটলো, রঞ্জন লক্ষ্য করলেন,  তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন তার কয়েক ফুট দূরে একরকম আলোক রশ্মি দেখা যাচ্ছে! তিনি ভাবলেন কার্ডবোর্ড কোথাও ফেটে গিয়ে হয়ত আলো বের হচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেলো- কার্ডবোর্ড ফেটে নয় বরং কার্ডবোর্ড ভেদ করে রশ্মি বের হচ্ছে!


ঘটনা দেখে রঞ্জনের মাথায় বিচিত্র একটি আইডিয়া খেলে গেলো-  যে রশ্মি কার্ডবোর্ড ভেদ করতে পারছে তা মানবদেহ কেন ভেদ করতে পারবে না? যেই ভাবা সেই কাজ, তিনি তার স্ত্রীর হাত সামনে রেখে পরীক্ষা চালালেন এবং ইতিহাস বদলে দেওয়া একটি ঘটনা ঘটলো- প্রথমবারের মতো কাটাছেঁড়া না করেই মানবদেহের কঙ্কালের ফটোগ্রাফিক ইমেজ তৈরি সম্ভব হলো! রঞ্জনের স্ত্রী নিজের কঙ্কালের ছবি দেখে আঁতকে উঠে বলেন, “আমি যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুকে দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে!”  

অদৃশ্য এই রশ্মির বৈশিষ্ট্য অজানা থাকায় রঞ্জন এর নাম দেন এক্স-রে। অবশ্য একে তার নাম অনুসারে অনেকে রঞ্জন রশ্মি নামেও ডাকে।

১৪. ক্লোরোফর্ম:
সেকালে অস্ত্রোপচার করা হতো কোনরকম চেতনানাশক ছাড়া, ফলে রোগীকে অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো অস্ত্রোপচার টেবিলে। এ অবস্থার নিরসন ঘটে ক্লোরোফর্ম আবিষ্কারের পরে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্লোরোফর্ম আবিষ্কারের ঘটনাটি দুর্ঘটনার চেয়ে কম কিছু নয়!

স্যার জেমস ইয়ং সিম্পসন বহুদিন ধরেই চেতনানাশক নিয়ে গবেষণা করছিলেন। একদিন এডিনবার্গে নিজ বাড়িতে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে আলাপচারিতার ফাঁকে তার মনে হলো নিজের আবিষ্কার পরীক্ষা করে দেখলে কেমন হয়?

যেই ভাবা সেই কাজ, একটি শিশিতে করে ক্লোরোফর্ম অতিথিবৃন্দের সামনে আনলেন। তারপর আর কারো কিছু মনে নেই! হুঁশ ফিরলো পরদিন সকালে, এদিকে অতিথিরা একেকজন বেহুঁশ হয়ে এদিক ওদিক পড়ে আছেন। শুরুতে তিনি ভয়ই পেয়ে গেলেন। পরে সবার জ্ঞান ফিরলে আশ্বস্ত হন।

যদিও পরবর্তীতে এমন বিপজ্জনক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন তিনি, কারণ বর্ণহীন এই জৈন যৌগটি খোলা জায়গায় রেখে দিলে উড়ে যেতে থাকে। বাতাসে ক্লোরোফর্মের পরিমাণ খুব বেশি হয়ে গেলে তা মারাত্মক ক্ষতিকর। যেহেতু এটি সরাসরি স্নায়ুর ওপর ক্রিয়া করে, তাই  বেশি পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা থেকে শুরু করে কিডনি ও লিভারের স্থায়ী সমস্যা তৈরি হতে পারে।


বড় ধরনের অপারেশনে ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করা হয়ে থাকে

যাই হোক, সিম্পসন অবশেষে ১৯৪৭ সালে এই আবিষ্কারের কথা জানান সবাইকে, এবং মাত্র তিন বছরের মাথায় শুরু হয়ে যায় রোগীদের অপারেশনের বেলায় অজ্ঞান করার কাজে আন্তর্জাতিকভাবে ক্লোরোফর্মের ব্যবহার।

ক্লোরোফর্ম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক ল্যাবরেটরি ও বাণিজ্যিকভাবে প্লাস্টিক তৈরিতে। এর পরই ব্যবহৃত হয় মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর শরীরের কিছু অংশ অবশ করতে বা সাময়িকভাবে অজ্ঞান করতে। রোগীদের দেহের সূক্ষ্ম কাটাকাটি থেকে শুরু করে বড় ধরনের অপারেশনে ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

১৫. ডায়নামাইট:
নোবেল পুরষ্কারের প্রবক্তা হিসেবে আলফ্রেড নোবেল চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ইতিহাসে, তিনি ছিলেন একজন সুইডিশ রসায়নবিদ এবং ইঞ্জিনিয়ার। রাসায়নিক বিভিন্ন বিপদজনক তরল পদার্থ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নোবেল এবং তার ল্যাবরেটরির মানুষজন বেশ কয়েকবার ভয়াবহ সব দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনা খুব মারাত্মক ছিল, ১৮৬৪ সালে সুইডেনের স্টকহোমে সেই বিস্ফোরণে আলফ্রেড নোবেলের ছোটভাই সহ আরো কয়েকজন মারা যায়।

ভাইয়ের মৃত্যুতে নোবেল ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়েন। এই ঘটনার পর আলফ্রেড নোবেল নিরাপদভাবে বিস্ফোরণ ঘটানোর উপকরণ আবিষ্কারের জন্য উঠে-পড়ে লাগেন।

মজার ব্যাপার হলো মারাত্মক বিস্ফোরক নাইট্রোগ্লিসারিনকে সামলানোর উপায় নোবেল খুঁজে পান আরেকটি দুর্ঘটনার মাধ্যমে! একবার নাইট্রোগ্লিসারিন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার সময় নোবেল দেখেন একটি পাত্র ছিদ্র হয়ে খুলে গেছে। দেখা গেল পাত্র মোড়ানো ছিল যে জিনিসটি দিয়ে সেটি ভয়াবহ বিস্ফোরক নাইটড়োগ্লিসারিনকে খুব ভালোভাবে শোষণ করেছে। কিয়েসেলগার নামে এক ধরনের পাললিক শিলার মিশ্রণ দিয়ে পাত্রগুলো মোড়ানো ছিল।


নাইট্রোগ্লিসারিন যেহেতু তরল অবস্থায় খুব বিপদজনক, তাই নোবেল সিদ্ধান্ত নেন এই কিয়েসেলগারকে তিনি বিস্ফোরকের স্ট্যাবিলাইজার হিসাবে ব্যবহার করবেন। ১৮৬৭ সালে নোবেল তার আবিষ্কৃত নিরাপদ কিন্তু মারাত্মক শক্তিশালী এই বিস্ফোরকটি ‘ডিনামাইট’ নামে পেটেন্ট করান।

১৬. স্যাকারিন:
ঘটনাকাল ১৮৭৯ সাল। কন্সশটান্টিন ফ্যালবার্গ জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারে অধ্যাপক আইরা রেমসেনের সহযোগিতায় আলকাতরা থেকে নতুন কোনো রাসায়নিক যৌগ সংশ্লেষণের চেষ্টা করছিলেন। সারাদিন কাজ শেষে প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত ফ্যালবার্গ বাসায় ফিরে হাত না ধুয়েই ময়লা হাতে খাওয়া শুরু করেন। ফ্যালবার্গের মনে হয় অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকের খাবার স্বাদে অনেক মিষ্টি। স্ত্রীকে ডেকে খাবার মিষ্টি হওয়ার কারণ জানতে চান। স্ত্রী জানায় খাবারে কোনো বাড়তি মিষ্টি দেয়া হয়নি। ফ্যালবার্গ দুয়ে চার মিলিয়ে ফেলেন, বুঝতে পারেন হাতে লেগে থাকা ময়লাই বাড়তি মিষ্টতার কারণ। এভাবেই ঘটনাচক্রে ফ্যালবার্গ স্যাকারিন আবিষ্কার করেন। পরে ফ্যালবার্গ রেমসেনকে বাদ দিয়ে নিজের নামে স্যাকারিনের পেটেন্ট করান। ফ্যালবার্গ-রেমসেনের দা-কুমড়া সম্পর্কের শুরুও তখন থেকে।


১৭. কর্নফ্লেকস:
কর্নফ্লেকস আবিষ্কার করেছেন উইল কীথ কেলগ নামের এক ব্যক্তি। কেলগের ভাই ছিলেন মিশিগানের ব্যাটল ক্রিক স্যানাটোরিয়ামের ডাক্তার। তিনি সেখানে রোগীদের ডায়েট দেখাশোনা করতেন। কেলগ তার ভাইকে সহযোগিতা করতেন।

একদিন কেলগের দায়িত্ব ছিল রোগীদের জন্য ব্রেড-ডাফ তৈরি করা। কেলগ গম সিদ্ধ করতে দিয়ে ভুলে যান। কয়েক ঘণ্টা পরে যখন তিনি ডাফ রোল করার জন্য ফিরে আসেন দেখেন গমগুলি ফ্লেকসের মত হয়ে গেছে। কেলগ সেগুলি দিয়েই মচমচে ডাফ তৈরি করেন। রোগীদের কাছে খাবারটি খুব জনপ্রিয় হয়।



কেলগ পরে বাণিজ্যিকভাবে ফ্লেকস বিক্রির চিন্তা করেন। অবশ্য রেসিপিতে তিনি ভুট্টাকেই ফ্লেকস তৈরির প্রধান উপাদান হিসাবে বেছে নেন। কেলগ ‘দি ব্যাটল ক্রিক টোস্টেড কর্ন ফ্লেকস কোম্পানি’ নামে ব্যবসা শুরু করেন ১৯০৬ সালে। পরে এই কোম্পানিটির নাম হয় কেলগ’স কোম্পানি। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের সীরেয়াল, কর্নফ্লেকস এগুলি বিক্রি করত।

১৮. পটেটো চিপস:
লেখার খাতা খুলে বসেছিলাম বিজ্ঞানের বিখ্যাত আবিষ্কারের কথাগুলো লিখে রাখার জন্য। সেখানে পটেটো চিপসের আবিষ্কার কি লেখার মত কোন বিষয়! হঠাৎ মনে হলো কোন আবিষ্কার ছোট নয়। নাট-বোল্ট স্ক্রু আবিষ্কার হয়েছিলো বলে আজ আমরা বিশাল কাঠামো স্বাচ্ছন্দে দাড় করাতে পারছি। আমার আজকের বিষয় মানুষ প্রথম কিভাবে পটেটো চিপসের সন্ধান পেলো।

বেশী বেশী আলু খান, ভাতের উপর চাপ কমান। আলু বাঙালী জীবনের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে আছে। আলু আমাদের মাছের বিকল্প, মাংসের বিকল্প, নিরামিশে মিলেমিশে আছে। ঝালে, ঝোলে, ভাজিতে কোথায় আলুর ব্যবহার নেই। পৃথিবীতে চালের পর দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য শষ্য হচ্ছে আলু। আলু থেকেই তৈরী হয় পটেটো চিপস। আপনি বলতে পারেন, দ্যাখো গাধাটা বলে কি? পটেটো চিপস আলু থেকে হবে নাতো কি ধানের খড় থেকে হবে! বাংলাদেশে কয়েকজাতের আলু পাওয়া যায়। যথাঃ- গোল আলু, মিষ্টি আলু, শাক আলু, মেটে আলু। সাদা গোল আলু থেকে তৈরী হয় পটেটো চিপস।



১৭০০ সালের দিলে ফ্রান্সে মোটা করে কাটা আলু ভাজা বেশ জনপ্রিয় হয়। ফ্রান্সে তখন আমেরিকার রাষ্ট্রদূত থমাস জেফারসন, তিনি ফেন্স ফ্রাই এর প্রেমে পড়ে যান। দেশে ফেরার সময়ে তিনি ফ্রেন্স ফ্রাই এর রেসিপি বা প্রস্তুত প্রণালী সাথে করে নিয়ে যান। মন্টিসেল্লোর অতিথিদের তিনি ফ্রেন্স ফ্রাই খাইয়ে মুগ্ধ করেন। এরপর পুরো আমেরিকায় ফ্রেন্স ফ্রাই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ১৮৫৩ সালের বসন্তের এক সন্ধ্যা। নিউ ইয়র্কের সারাগোটা স্প্রিংসের অভিজাত রিসোর্টগুলোতে পর্যটকের উপচে পড়া ভীড়। মুন লেক লজ রেস্টুর্যারন্টে ডিনারের টেবিলে একজন গেস্ট ফ্রেন্স ফ্রাই এর টুকরা অতিরিক্ত পুরো বলে অভিযোগ করে অর্ডার বাতিল করেন। রেস্তোরায় তখন শেফের দ্বায়িত্বে ছিলে জর্জ ক্রাম নামের একজন নেটিভ আমেরিকান। ক্রাম আরো পাতলা করে কেটে ভেজে ফ্রেন্স ফ্রাই তৈরী করে আনলেন। কিন্তু তাতেও সেই গেস্টের মন ভরলো না। সে ফিরিয়ে দিলো। ক্রাম কিচেনে ফিরে গেলো। যতটা সম্ভব পাতলা করে আলুর স্লাইস কাটলো। তারপর সেটা ভেজে তাতে লবন ছিটিয়ে দিলো। এত পাতলা করলো যাতে গেস্ট ফর্ক দিয়ে এটা তুলতে না পারে। তাতে হিতে বিপরীত হলো। গেস্ট এই নতুন আইটেম খুব পছন্দ করলো এবং পরের দিন আবার অর্ডার দিলো এই বিশেষ আলু ভাজা খাওয়ার জন্য। অনেক অনুরোধ আসতে থাকলো ক্রামের পটেটো চিপসের জন্য। এরপর রেস্তোরার মেনু কার্ডে সারাগোটা চিপস বলে স্পেশাল একটা আইটেম যুক্ত হলো ।

১৮৬০ সালে ক্রাম সারাগোটা লেকের কাছেই মাল্টা এভিনিউয়ে তার নিজের রেস্তোরা চালু করলেন। তখনকার সময়ের বিত্তশালী ব্যক্তি বর্গ যেমন উইলিয়াম ভ্যান্ডারবিল্ট, কর্নেলিয়াস ভ্যান্ডারবিল্ট, জয় গোল্ড, হেনরি হিলটন ছিলো তার নিয়মিত খদ্দের। ত্রিশ বছর রেস্তোরা চালানোর পর ১৮৯০ সালে রেস্টোরাটি বন্ধ করে দেন। ৯২ বছর বয়সে ১৯১৪ সালে জর্জ ক্রাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজকের দিনে আমরা কুড়কুড়ে মুড়মুড়ে প্রান পটেটো চিপস খাচ্ছি অথচ জর্জ ক্রামের নাম আমরা কজনই বা জানি। সময়ের নায়কেরা এভাবেই বিস্মৃত হয়ে যায়।

১৮৯৫ সালে ক্লিভল্যান্ডের উইলিয়াম ট্যাপেনডন প্রথম বাসায় পটেটো চিপস তৈরী করে পার্শ্ববর্তী মুদি দোকানগুলোতে বিক্রির জন্য সরবরাহ করতেন। তার বাসাতেই তৈরী হয় পৃথিবীর প্রথম পটেটো ফ্যাক্টরি। ১৮৫৩ সালে জর্জ ক্রামের হাতে আবিষ্কৃত হওয়া পটেটো চিপস এখনো আমেরিকানদের প্রিয় স্ন্যাকস। অতলান্তিকের জলরাশি পেরিয়ে পটেটো চিপস এখন বাঙালী শিশু কিশোরের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। আপনি কি কখনো পটেটো চিপস খেয়েছেন?

১৯. চা:
সৌভাগ্যবান এই পানীয় আবিষ্কার করেন ২৭৩৭ খ্রিষ্টপুর্বাব্দে মহান চৈনিক শাসক শেন নাং( উচ্চারণটা শেনাং হতে পারে। চৈনিক নামগুলো উচ্চারণ করতে গেলে অধিকাংশ সময় আমি ক্লান্ত বোধ করি।)। শেন তার সাম্রাজ্যে এই বলে ডিক্রি করেন যে তার প্রজাদের সবাইকে জলপানের পূর্বে অবশ্যই সেটা ফুটিয়ে নিতে হবে। তিনি নিজেই সবসময় ফোঁটানো পানি পান করতেন। একদিনের কথা, শেন তখন চীনের জুন্নান প্রদেশে অবস্থান করছেন। যাত্রাপথে এক বনানীর নিচে যাত্রা বিরতি করা হলো। খোলা প্রান্তরে গাছের ছায়ায় বসে আছে সবাই। কেউ বিশ্রাম করছে, কেউ খাবারের ব্যবস্থা করছে। জলপাত্রে পানি ফুটানো হচ্ছে। রাজকীয় ফরমান সে তো আর বৃথা যেতে পারেনা। বাংলাদেশে সংসদে যারা আইন পাশ করেন তারাই কিন্তু আবার সেই আইনকে অশ্রদ্ধা করেন। শেনের রাজ্যে তা হবার জো নেই। তাই পানিকে ফুটতেই হবে। পানির স্ফূটনাংক ১০০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। মনটাও ফুরফুরে হয়ে গেলো। গলা ছেড়ে গান গাওয়ার জন্য পারফেক্ট সময়।


হঠাৎ বাতাস পাশের ঝোপ থেকে কিছু পাতা উড়িয়ে এনে ফুটন্ত পানির ভিতর ফেলল। পাতাটাকে তুলে ফেলার চেষ্টা করার আগেই সেটা জলে দ্রবীভূত হয়ে গেছে। জলের রং বদলে গেলো। কৃষি এবং ভেষজ চিকিৎসায় শেনের ব্যাপক আগ্রহ ছিলো।

শেন কৌতূহলী হয়ে জলের ঘ্রাণ শুঁকে দেখেন অন্যরকম এক মাদকতা ছড়ানো গন্ধ। তিনি এটার স্বাদ নিলেন। প্রথম মানুষ চায়ের স্বাদ নিলো। তারপর তো রীতিমত চায়ের প্রেমে পড়ে গেলো। টি এর বাংলা হিসেবে আমরা চা ব্যবহার করি। চা কিন্তু বাংলা শব্দ না। চা চীনা শব্দ।

শাং শাসনামলে (১৫০০-১০৪৬ খ্রিষ্টপুর্বাব্দ) চা পাতার রস ঔষধি পানীয় হিসেবে সেবন করা হত। সিচুয়ান প্রদেশের লোকেরা প্রথম চা পাতা সিদ্ধ করে ঘন লিকার তৈরী করা শেখে।

১৬১০ সালের দিকে ইউরোপে চায়ের প্রবেশ ঘটে পর্তুগীজদের হাত ধরে । শীতের দেশে উষ্ণ চায়ের কাপ প্রাণে স্ফুর্তির জোয়ার নিয়ে এলো। আজ থেকে আনুমানিক আড়াইশো বছর পুর্বে এশিয়ার অনেক দেশে চা পাতার তৈরী ইট মুদ্রার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হত। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় তৎকালীন সময়ে চায়ের কদর বোঝা যায়। ১৭০০ সালের দিকে ব্রিটেনে চা জনপ্রিয় হয়। ইংরেজদের হাত ধরে চা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে। তারা ভারতের আসাম রাজ্যে চায়ের চাষ শুরু করে। চা উৎপাদনে চীনের একক আধিপত্যকে খর্ব করতে বিলাতিরা ভারতে চা চাষ শুরু করে। প্রথম দিকে এংলো ইন্ডিয়ানরাই চা ব্যবসা শুরু করে পরে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর চা শিল্প দেশীয়দের হাতে বিকশিত হয়। আসাম থেকে ছড়িয়ে পড়ে দার্জিলিং, কেরালা, বাংলায়। ভারত পৃথিবীর এখন প্রধান চা উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে আছে নয়নাভিরাম চা বাগান। পৃথিবীর অধিকাংশ বৃষ্টিবহুল দেশে এখন চা উৎপন্ন হয়।

২০. ভায়াগ্রা:
আমেরিকার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী PFIZER এ কর্মরত দুইজন রিসার্চার সাইমন ক্যাম্পবেল এবং ডেভিড রবার্টস কোম্পানীর নতুন একটি ওষুধের কার্যক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করলেন। তাদের আবিষ্কারের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলোনা। তারা উচ্চরক্তচাপ ও হৃদঘটিত রোগ এনজিনা’র চিকিৎসার জন্য একটি ওষুধ তৈরী করলেন। নানাবিধ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ১৯৮০ সালের দিকে এটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানুষের উপর পরীক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হলো। দলটি তাদের ওষুধের নাম দিলো UK-92480 । ট্রায়ালের রোগীদের উপর গবেষণা করে দেখা গেলো গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী ওষুধের কার্যক্ষমতা নেই। কিন্তু ট্রায়ালে বিজ্ঞানীরা কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানতে পারলেন যা তাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন। যাদের উপর গবেষণা চালানো হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন রোগীর দেয়া তথ্য থেকে জানা গেলো এই ওষুধ ব্যবহারের সময় তাদের যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা নতুন করে গবেষনায় বসে গেলেন।



উচ্চরক্তচাপ ও হৃদঘটিত রোগের চিকিৎসার বদলে কোম্পানীটি নতুন একটি ট্রায়ালের ব্যবস্থা করলো যেখানে erectile dysfunction disorder জন্য নতুন ওষুধের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হলো। পরীক্ষা সফল হলো। নতুন ওষুধের নাম রাখা হলো ভায়াগ্রা। অনেকে রাসায়নিক নাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট নামে ডাকেন। ১৯৯৮ সালে আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ অধিদপ্তর ভায়াগ্রাকে ওষুধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা