Skip to main content

ব্রয়লার মুরগির খামার পালন ও পরিচর্যা












মুরগি পালন
মুরগি পালন হচ্ছে এমন একটি ব্যবসা যেখানে অল্প দিনে ভালো আয় করা সম্ভব। মুরগির ডিম ও গোশত শুধু সুস্বাদু নয় আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য। মুরগি পালন করলে পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে শহর, উপ-শহর এবং গ্রামেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মুরগির খামার গড়ে উঠছে। বসত বাড়িতে মুরগি চাষ হচ্ছে একটি সহজ এবং লাভজনক কাজ। বাড়ির গৃহিণীরা খামার স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারে। পারিবারিক এই খামারে ডিম পাড়া মুরগি ছাড়াও ব্রয়লার মুরগি চাষ করা যায়। এ অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে বাণিজ্যিক খামার প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগে।

মুরগি পালনের উপকারিতা :
মুরগির ডিম ও গোশত পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। 
অল্প টাকা বিনিয়োগ করে অধিক আয় করা যায়। 
মুরগির বিষ্ঠা জৈব সারের একটি ভালো উৎস। 
বিচরণের সময় মুরগি পোকা-মাকড় খেয়ে তা দমন করতে সহায়তা করে।

বাজার সম্ভাবনা:
স্থানীয় বাজার ছাড়াও বড় বড় হাট-বাজারে মুরগি বিক্রি করা যায়। মুরগির ডিম প্রতিবেশীদের কাছে, স্থানীয় দোকানে বা বাজারে পাইকারি বা খুচরা বিক্রি করা যায়। এছাড়া থানা সদরের হোটেলগুলোতেও ডিম বিক্রি করা যায়।

মুরগী পালন ব্যবস্থাপনা:
ছাড়া অবস্থায় মুরগি পালন পদ্ধতি:
এ পদ্ধতিতে গ্রামে-গঞ্জে গৃহস্থের বাড়িতে স্বাধীনভাবে মুরগি ঘুরে বেড়ায় এবং বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তা-ঘাট, মাঠ ও ক্ষেত খামারে অবাধে ঘুরে বেড়ায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খাবার কুড়িয়ে খায়।

* বাসস্থান
মুরগির বাসস্থান এমন এক জায়গায় হতে হবে যা রোদ, বৃষ্টি ও ঠান্ডা থেকে মুক্ত থাকে। জায়গাটি অবশ্যই খোলামেলা হতে হবে। মুরগির ঘর তৈরির নিয়ম নিচে দেওয়া হলো :

১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা X১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে। 
ঘরের বেড়া বাঁশের তরজা বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। এছাড়া মাটির দেয়ালও তৈরি করা যাবে। 
বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। 
ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের তরজার সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। এরকম ঘরে ১০-১৫টি মুরগি পালন করা যায়। 

* খাবার
বাড়ির প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসী খাদ্য যেমন ফেলে দেওয়া এঁটোভাত, তরকারি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতাপাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায়। এরা মুক্ত আলো বাতাস বিশেষ করে প্রচুর সূর্য কিরণে বেড়ে উঠে যা তাদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করতে সাহায্য করে। এদের খাবারের জন্য তেমন কোন খরচ করতে হয় না।

পরিচর্যা:
এ পদ্ধতিতে মুরগি পরিচর্যার জন্য সময় বা লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। তারপরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয় :

সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে। 
সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে। 
ঘরে উঠলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। 
মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া ২.৫ সে.মি. (১ ইঞ্চি) পুরু করে বিছাতে হবে। 
পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। 
এ পদ্ধতিতে সাধরণত দেশি মুরগি পালন করা হয় এবং প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ডিম ও মাংসের জন্য মুরগি পাওয়া যায়। 

উন্নত জাতের মুরগি পালন পদ্ধতি:
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নত জাতের মুরগি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্রয়লার এবং ডিমপাড়া মুরগি পালন করা হয় :

* ব্রয়লার:
এ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্যারেন্ট স্টক মুরগির মাধ্যমে ডিম উৎপাদন করে ব্রয়লারে বাচ্চা ফুটাতে হয়। ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান মুরগির খামারিদের সাথে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনে জড়িত। এ সংক্রান্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো একদিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদন করে যার দাম সাধারণত ১৬-২৪ টাকা। মুরগির খামারিরা এ বাচ্চাগুলো ৫ সপ্তাহ ধরে লালনপালন করে এবং যখন মুরগিগুলো ১১০০-১২০০ গ্রাম ওজনের হয় তখন বাজারজাত করা হয়। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের সহজ শর্তে মুরগির খাদ্য, ঔষধ ও রোগবালাই প্রতিষেধক সরবরাহ করা হয়।

* উন্নত জাতের মুরগির বাচ্চা পালন ঘরের নকশা:
বাচ্চা পালন ঘরে ১ দিন বয়সের বাচ্চা ৮ সপ্তাহ বা ২ মাস পর্যন্ত পালন করা হয়। ১-২১ দিন বয়স পর্যন্ত বাচ্চা ব্রুডিং হাউজে পালন করা হয়। এর জন্য আলাদা ঘর তৈরি করতে হয়। বাচ্চা পালন ঘরেও ব্রুডিং হাউজ তৈরি করা যায়। নিচে ২০০-২৫০টি মুরগির বাচ্চা পালন ঘর তৈরির কৌশল বর্ণনা করা হলো :

দৈর্ঘ্য ২০ ফুট ও প্রস্থ ১২ফুট বা (২০‌‌˝X১২˝)=২৪০ বর্গফুটের হতে হবে। 
ভিটা থেকে ঘরের উচ্চতা ৭˝হবে। ভিটা হবে দেড় থেকে দুই ফুট। 
ঘরের চালা বাঁশের চটা, চাটাই এবং পলিথিন দিয়ে তৈরি করতে হবে। 
ভিটার উপরে বেড়ার নিচের ২˝এমনভাবে দিতে হবে যেন কোন ছিদ্র না থাকে। ছিদ্র ছাড়া বেড়া থেকে চালা পর্যমত্ম বেড়ার বাকি অংশ নেট যুক্ত হবে। নেট বাঁশের চটা বা তার দিয়ে দিতে হবে। 
ঘরের ভিটা বেলে বা দোঁ-আশ মাটি দিয়ে করতে হবে। 
মেঝে সিমেন্টের প্লাস্টার দিয়ে করতে পারলে ভালো হয়। প্লাস্টার করা না গেলে হাড়ি ভাঙ্গা খোয়া বালু দিয়ে পিটিয়ে শক্ত করে দিতে হবে এবং উপরে এঁটেল মাটি ও গোবর দিয়ে লেপে দিতে হবে। এর ফলে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। 

* ব্রুডার বা তাপ ঘর তৈরির কৌশল:
১ দিন হতে ২১ দিন পর্যন্ত কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চাদের লালনপালনের জন্য ব্রুডার বা ব্রুডিং হাউজ বা তাপ ঘর তৈরি করা হয়। নিচে ব্রুডার তৈরির কৌশল দেওয়া হলো :

ব্রুডার বর্গাকার/চারকোণা হলে দৈর্ঘ্য ৭ ফুট এবং প্রস্থ ৭ ফুট হতে হবে। আর যদি গোলাকার হয় তাহলে এর ব্যাসার্ধ ৪ ফুট হতে হবে। 
বর্গক্ষেত্রের চারবাহু বা বৃত্ত বাঁশের চাটাই বা মোটা কাগজ দিয়ে তৈরি করতে হবে, যাকে বলে চিকগার্ড। 
চিকগার্ডের উচ্চতা দেড় থেকে দুই ফুট হতে হবে। 
ব্রুডারের আয়তন ৫ বর্গফুট হতে হবে। 
ব্রুডারের মাঝখানে হোভার (তাপ দেয়ার যন্ত্র) ঝুলানো থাকবে। 
হোভার থেকে ব্রুডারের চিকগার্ডের দূরত্ব ৩ ফুট হবে। 
ঝুলানো হোভারে ১০০ পাওয়ারের তিনটি বাল্ব থাকবে। 
বিদ্যুৎ না থাকলে হারিকেন দিয়ে তাপ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। 
ব্রুডারের ভেতরের মেঝেতে কাঠের গুঁড়া বা তুষ, চাটাই বিছিয়ে বা বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। 

* কৃত্রিম তাপ নিয়ন্ত্রণ কৌশল
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিচে দেওয়া হলো :

১ম সপ্তাহ 
৯৫০ ফারেনহাইট 

২য় সপ্তাহ 
৯০০ ফারেনহাইট 

৩য় সপ্তাহ 
৮৫০ ফারেনহাইট 

৪র্থ সপ্তাহ 
৮০০ ফারেনহাইট 

৫ম সপ্তাহ 
৭৫০ ফারেনহাইট 

৬ষ্ঠ সপ্তাহ 
৭০০ ফারেনহাইট 

সতর্কতা:
হোভারের নিচে বাচ্চা গাদাগাদি লাগলে বুঝতে হবে তাপ কম হয়েছে তখন হোভার নিচু করে তাপ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বাল্বের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া চিকগার্ডের উচ্চতা বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।

ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্য:
ব্রয়লার বাচ্চার চার সপ্তাহ বয়স না হওয়া পর্যন্ত যে খাদ্য দেওয়া হয় তাকে স্টার্টার খাদ্য বলে। পাঁচ থেকে আট সপ্তাহ বয়সী বাচ্চাদের যে খাদ্য দেওয়া হয় তাকে ফিনিশার খাদ্য বলে। এই দুই ধরণের খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান নিচে দেওয়া হলো :

* ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্যের নমুনা তালিকা (২০০টি মুরগি)

খাদ্যের উপকরণ 
স্টার্টার ১-৪ সপ্তাহ (কেজি)
ফিনিশার ৫-৮ সপ্তাহ (কেজি) 
গম/ভুট্টা ভাঙ্গা 
১০০ 
১০০ 
চাউলের কুঁড়া 
৪০ 
৫০ 
তিল বা সয়াবিন খৈল 
৩০ 
২৪ 
প্রোটিন কনসেনট্রেট 
১৬ 
১২ 
শুটকি মাছের গুড়া 
২.৫ 
২.৫ 
ঝিনুক ভাঙ্গা 
২.৫ 
২.৫ 
লবণ 
১.০ 
১.০
ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ 
.৫০ 
.৫০ 

মোট 
১৯২.৫০ 
১৯২.৫০ 

তথ্য সূত্র: কৃষি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, জুন ২০০৭, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সেল-১, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ঢাকা। 

রোগ নির্ধারণ, দমন ও চিকিৎসা:
রুটিন অনুযায়ী নিয়মিত টিকা দিতে হবে এবং রোগাক্রান্ত মুরগিকে সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় ভেকসিন দেওয়া, ঠোঁট কাটা বা পালক কাটা ইত্যাদি কাজ সন্ধ্যার পর অন্ধকারে করাই ভালো। ব্রয়লার মুরগির টিকা দানের ধাপগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো :

বয়স 
রোগের নাম :
টিকাদান পদ্ধতি 

১ দিন 
রাণীক্ষেত এবং ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিস 
চোখে ফোঁটা/ঠোঁট ডোবানো/ ইনজেকশন 
১-৭ দিন 
গাম বোরো 
খাবার পানির সাথে/চোখে ফোঁটা/স্প্রে 
১৪ দিন 
রাণীক্ষেত এবং ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিস 
খাবার পানির সাথে/স্প্রে 
২১ দিন 
গাম বোরো 
খাবার পানির সাথে/স্প্রে 

তথ্য সূত্র: কৃষি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, জুন ২০০৭, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সেল-১, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ঢাকা। 

ব্যবসায়ের জন্য ব্রয়লার মুরগি নির্বাচনঃ
(১) একদিনের বাচ্চার ওজন হবে ৩৬ থেকে ৪০ গ্রাম। দেখা গেছে এদিনের বাচ্চার দেহের ওজন যদি ভাল হয় তবে বেচার সময় ব্রয়লার মুরগির ওজন ভালই দাড়াবে।

(২) বংশগতি ধারার ভাল ক্রিয়াকর্মঃ যদি ভাল বংশগতি ধারার মুরগির বাচ্চা না হয় তবে ব্যবসায় খুব এটা সুবিধা হবে না। প্রায়ই সময় দেখা যায় একদল ব্রয়লার মুরগি অন্য দলের চেয়ে ভাল বাড়ে, বেশি সংখ্যায় বাছে, সুলক্ষণযুক্ত, সমান এবং বেশ ভালো পরিমাণে দেহে মাংস লাগায় সুষম খাদ্য খাওয়ার অনুপাতে । যে বাচ্চা মুরগির প্রেরক অবশ্যই শৃঙ্খলের কায়দার মুরগির বাচ্চা দিয়ে যাবে। এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই সম্পূর্ণ ব্যবসাটি মার খাবে। আরো ভাল হয় যদি হ্যাচারি সংস্থা সমপ্রসারণ এবং কারিগরি জ্ঞান দরকার পড়লে দিতে পারে।

(৩) সুষম খাদ্য খুব উচুদের হওয়া চাই। অর্থাৎ খাওয়ার অনুপাতে দেহে যেন মাংস লাগে। খুব তাড়াতাড়ি বাড়ার জন্য ব্রয়লারের দরকার একই সঙ্গে উচ্চু পর্যায়ে আমিষ এবং শক্তি বা বেশি তাপ দিতে পারে এমন খাবার। ০-৬ সপ্তাহের ব্চাচার জন্য ব্রয়লার সুশস খাদ্যে থাকবে প্রতি কেজি খাবারে আমিষ ২২.২৪% , বিপাকীয় তাপ ২৯০০-৩০০০ কিলোক্যালরি। ব্জারে যাবার আগে ব্রয়লার মুরগির সুষম কাদ্যে থাকবে ১৯-২০%, বিপাকীয় তাপ ৩০০০/৩২০০০ কিলো ক্যালরি প্রতি কেজি খাবারে। ব্রয়লার বাজারে যাবার আগের খাবার ৫-৬ সপ্তাহ বয়সে দেওয়া যেতে পারে।

(৪) আমি ষ বিশেষ করে অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলির মধ্যে লাইসিন এবং মেথিও নাইন খবুই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এরা মুরগির বাড়ের জন্য সাহায্য করে। খাবারকে মাংসে পরিনত করে। ফলে ব্রয়লার ব্যবসায়ে পয়সা আসে।

(৫) ব্রয়লার মুরগির খাবারে মোটা আশের শতকরা হার ৬ এর বেশিদ কখনোই হবে না।
(৬) ভিটামিন A, B2, D3, B12 এবং K ভীষন প্রয়োজনীয়।

(৭) পটাসিয়াম, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট এবং জিঙ্ক কার্বনেট পৃথকভাবে ভাল করে মিশিয়ে মুরগিকে খাওয়ানো উচিত।


(৮) ব্রয়লার মুরগির খাবারে বীজঘ্ন নামমাত্র পরিমাণে মেশানো উচিত। লাভটা এই হবে বাচ্চা মুরগির দেহে সুপ্তভাবে যদি কোন রোগ থেকে থাকে তবে এই বীজঘ্ন খাওয়াবার দরুন মুরগির দেহে চট করে রোগাক্রমণ ঘটবে না।

ব্রয়লার মুরগি থেকে ভাল লাভ করতে হলে খামারীদের যা করনীয়:
ব্রয়লার মুরগি খাবারে এলো আর গেল নীতি মানাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। পলে খামারে একই বয়সের মুরগি থাকবে। এবং এ বয়সী মুরগি থেকে অপর বয়সী মুরগিদের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারবে না।

খামার ঘর পূর্ব পশ্চিম দিক করে হবে। বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ভারো থাকা দরকার। মুরগির ঘরগুলির পরস্পর দূরত্ব হবে ১১-১২ মিটার (৩৫-৪০ ফুট)।

ব্রয়লার মুরগির বাজারঃ
ব্রয়লার মুরগির পৃথিবীর জুড়ে এটাই সমস্যা। ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০, ১০০০ বা তারও বেশি শৃঙ্খল বা চেইন নিয়মে বিক্রি হয় বলে বাজার আগে থেকেই তৈরি করে নিতে হয়। অর্থাৎ কতজন খাবে জেনে নিয়ে ভাত বসানোর মত। হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, ক্যান্টিন, হোস্টেল প্রভূতি শৃঙ্খল নিয়ংমে ব্রয়লার বড় মুরগি নিয়ে থাকে। এলাকা যদি খুব ঘনবসতিসম্পন্ন হয় তবে শৃঙ্খলেরত খুব জোর ৫০ থেকে ১০০টি মুরগি ২ দিনে বিক্রি করা সম্ভব। যেখানে সুনিশ্চিত বাজার আছে সেখানে ৩০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম এবং কেজি হিসেবেও বিক্রি করা যেতে পারে।

ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্যের রকমফেরঃ

(১) পাউডার বা ধুলোর মত

(২) গুলি বা ওষুধের মত ছোট ছোট ট্যাবলেটের আকারে। সাধারণত ধুলোর ম্যাস করেই ব্রয়লার মুরগিকে খাওয়ানো হয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাইয়ে দেখা গেছে ৬ থেকে ১১% খাবারকে মাংসে পরিণত করা হয়েছে এবং শেষমেষ খামারির লাভ হয়েছে ৩ থেকে ১২% । অবশ্য এটা উৎপাদনের দিক থেকে । ইওরোপে ৯০% মত খাবার বস্তু ফের গুলির আকারে পরিবেশন করা হয়। আমেরিকায় ৫০% সংস্থা মুরগির সুষম খাদ্য ফের গুলির আকারে পরিবেশণ করে থাকে।


ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ে সতর্কতা
ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ে নিচের সতর্কগুলি মনে রাখা উচিতঃ
(১) ব্রয়লার উৎপাদনে ৬০ থেকে ৬৫% টাকা খাবারের পেছনে খরচ হয়।

(২) সুষম খাদ্যে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় জিনিস খাওয়ালে অতিরিক্ত দাম পাওয়া যায় না। কিন্তু গরম আবহাওয়া বা প্রবাহে আপনাকে অতিরিক্ত চর্বি বা তেল দিতেইত হবে।

(৩) ব্রয়লার মুরগি তার সুষম খাবারের ৬৪% আমিষ দেহের কাজে লাগাতে পারে। ব্রয়লারের প্রয়োজনীয় আমিষ তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-

(ক) কলা বৃদ্ধির জন্য; ব্রয়লার মুরগির শরীরে ১৮% আমিষ আছে।

(খ) দেহের ক্ষয় রোধের জন্য; ব্রয়লার প্রতিদিন তার দেহের কেজি হিসেবে ওজনের ১৬০০ মিঃ গ্রাঃ আমিষ ক্ষয় করে।

(গ) পালক গঠনের জন্য; ব্রয়লার মুরগির পালকে ৮২% আমিষ আছে এবং গড়ে পালকের ওজন সমস্ত দেহের দ৭০%।

গরমকালে ব্রয়লার সুষম খাদ্যে বেশি আমিষ দরকার শীতকালের তুলনায়। কারণটা হল মুরগি গরমকালে কম কায়।

ঠিক যতটুকু অ্যামাইনো অ্যাসিড দরকার ঠিক ততটুকুই ব্রয়লার মুরগিকে দিতে হবে। কমও নয়, বেশি তো নয়ই। যেহেতু বেশি পরিমাণে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড দেহের ক্ষতি করে। কম অ্যামইনো অ্যাসিড আবার দেহের বৃদ্ধিকে রোধ করে দেবে।

মাদি ব্রয়লার মুরগির চেয়ে মদ্দা ব্রয়লার মুরগি তাড়াতাড়ি বাড়ে। সুতরাং খামারের ভালর জন্য মাদি মদ্দা একসঙ্গে না পালন করে আলাদা আলাদা করা লাভজনক। প্রথম চার সপ্তাহ মদ্দা মাদিদ ব্রয়লার মুরগির আমিষের প্রয়োজন একই রকম। ৪ সপ্তাহ পরে মদ্দা ব্রয়লার মাদির চেয়ে ২% থেকে ৪ % বেশি আমিষের দরকার হয়। মাদিকে বেশি আমিষ দিলে সেটা খুব একটা কাজে আসে না।

ব্রয়লার মুরগির জন্য খনিজ এবং ভিটামিন:
সত্যিকথা বলতে পরিমাণ এবং উৎকর্ষকতা দুটো ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্যে দরকার। আরো দরকার খনিজ পদার্থের পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা। এই সমঝোতা অবশ্য খাদ্যের উপাদানের সঙ্গেও থাকা দরকার। খনিজ পদার্থের বেশি বা কম হওয়া দুটোই খনিজ পদার্থের মুল উদ্দেশ্য দেহের বাড়কে ব্যাহত করবে। ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মধ্যে সহযোগিতা খুবই দরকারী। খাবারের সমস্ত ক্যালসিয়াম যেন ১% গন্ডি কখনো না পেরিয়ে যায়।

ভিটামিন খাদ্য বিপাক এবং বিশ্লেষণ বিশেষ সহযোগিতা দেখায় । ফলে মুরগির দেহের বাড় ঠিক থাকে। রোগ ভোগ কম হয়। প্রতিটি ভিটামিনের আলাদা আলাদা কাজ আছে যা একই বইতে পরির্বতে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

ব্রয়লার খামারের পরিচালন ব্যবস্থা
(ক) খাবারকে দেহে লাগাবার ব্যবস্থাঃ

এটা বের করা হয় ব্রয়লার মোট যে বারটা খেল তাকে ব্রয়লার মুরগির কতটা ওজন পেল সেই ওজনকে দিয়ে ভাগ করে।

(খ) প্রতি কেজি ব্রয়লার ওজনের জন্য কত মুল্যের খাবার খেলঃ

এটা বের করা হয় খাবারকে দেহে লাগাবার অনুপাতকে প্রতি কেজি খাবারের মূল্যকে গুণ করে।

(গ) মোট সুবিধা প্রতি একক মেঝের জায়গা হিসেবেঃ

এটা বের করা হয় মোট খরচকে (বাচ্চার দাম, খাবার, ওষুধ পত্র) ব্রয়লার মুরগি বেচার আয় থেকে এবং বিয়োগফলকে মেঝের বর্গফুটকে ভাগ করে।

শতকরা বাচার হার = ১০০-শতকরা মৃতু্যর হার। উৎপাদন সংখ্যা (ইংরেজিতে বলে production number) একটি আন্তর্জাতিক সংখ্যা। এই সংখ্যার দ্বারা কারিগরির ব্যাপারে অনেক কিছু জানা যায়।

লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট।
ব্রয়লার পালনে কিছু সমস্যা ও এর প্রতিকার

ব্রয়লার লালন পালনে খামারি ভাইয়েরা মাঝে মধ্যেই নানা রকম সমস্যায় পড়েন। সময় মতো এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য খামারিকে চৌকস না হয়ে উপায় নেই। একজন চৌকস খামারি হিসেবে ব্রয়লার পালনে যেসব বিষয়ে নজর রাখতে হবে চলুন সেটা জেনে নিই।

ব্রয়লার পালনে সমস্যা : ব্রয়লার পালনে খামারি ভাইয়েরা যেসব সমস্যায় পড়েন সেগুলো হলোন্ধ

১. গামবোরো রোগ,
২. ওজনে পার্থক্য (একই বয়সের বাচ্চা কিছু দিন পর ছোট-বড় হওয়া),
৩. সমন্বয়হীন বাজারব্যবস্খা,
৪. খামারিদের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা।

পামবোরো রোগ : খামারি ভাইয়েরা গামবোরো রোগ নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। গামবোরো ভাইরাসের কারণে হয়। এই রোগের কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সময়মতো টিকা দেয়া থাকলে রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এই রোগের আক্রমণ যদি ঘটেই থাকে তাহলে উন্নত ব্যবস্খাপনার মাধ্যমে মৃত্যুহার কিছুটা কমানো যায়। এই রোগে আক্রান্ত মুরগি খাদ্য ও পানি খাওয়া বìধ করে দেয়, পালক উসকো-খুসকো দেখায়। সাদা পাতলা ও দুর্গìধযুক্ত পায়খানা করে। শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, হাঁটতে পারে না। অবশেষে মারা যায়। তবে এই রোগে মৃত্যুহার ৩০ ভাগের বেশি হয় না। থাইয়ের গোশতে রক্তের ছিটা দেখা যায়। একই বয়সের বাচ্চা প্রথমে বড় এবং পরে ছোট হয়ে যায়, বাচ্চা কাটলে ভিতরে রক্তের ফোঁটা দেখা যায়।

চিকিৎসা : এই রোগের কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধ ব্যবস্খাই একমাত্র উপায়। গামবোরো রোগ দেখা দিলে মুরগির ঘরে খাদ্য ও পানির পাত্র বাড়াতে হবে। কারণ এই রোগে খাবারের প্রতি অরুচি হওয়ায় না খেয়ে দুর্বল হয়ে মুরগি মারা যায়। তাই খাদ্য ও পানি পাত্র এমনভাবে দিতে হবে যাতে ঘুরলেই খাদ্য পায়। এই রোগে অরুচি, ডিহাইড্রেশন এবং মুরগি না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে পানিতে ভিটামিন সি, স্যালাইন ও গ্লুকোজ মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ছোট-বড় হওয়া : প্রায়ই দেখা যায় একই ব্যাচে একই বয়সের ব্রয়লার বাচ্চা কিছু দিন পর কতকগুলো বেশ ছোট হয়ে গেছে। এর জন্য দৃশ্যমান অদৃশ্যমান অনেক কারণ জড়িত। যেমনন্ধ কৌলিকাত্ত্বিক কারণ, পরিবেশগত ও ব্যবস্খাপনাগত কারণ। দৃশ্যমান বা পরিবেশগত কারণের মধ্যে প্রথম থেকেই প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য ও পানির পাত্র থাকা। কারণন্ধ প্রথম সপ্তাহে বিশেষ করে এক-তিন দিন বয়স পর্যন্ত বাচ্চার চলাচল সীমিত থাকে এবং খাদ্য না চেনার কারণে খাদ্য খাওয়ায় তেমন প্রতিযোগিতা থাকে না। তাই এই সময়ে যেসব বাচ্চা এক বা দুই দিন খাদ্য ভালোভাবে খেতে পারে না সেগুলোই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পরে খাদ্য খাওয়া প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে ছোট হয়ে যায়। পুরুষ বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি স্ত্রী বাচ্চার চেয়ে ২০-২৫ ভাগ বেশি হওয়ায় স্ত্রী বাচ্চা ছোট হয়। মিশ্রিত গ্রেডের বাচ্চা এক সাথে পালন করা। বিভিন্ন বয়সের মুরগির ডিম এক সাথে ফুটানো হলে পুলের ডিমের বাচ্চা ছোট হয়। ব্রুডিং পিরিয়ডে কাংক্ষত তাপ না পাওয়া।

প্রতিকার : মিশ্রিত গ্রেডের বাচ্চা না কিনে একই এ বা বি গ্রেডের বাচ্চা কিনতে হবে। বাচ্চা ছোট-বড় দৃশ্যমান হওয়ার সাথে সাথে আলাদা করে বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে। কাáিক্ষত পরিমাণ খাদ্য ও পানির পাত্র দিতে হবে।

খামারিদের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা : রোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম এ কথাটা মুরগি পালনের ক্ষেত্রে বেশি যুক্তিযুক্ত। অনেক খামারি জেনে না জেনে রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ান, যা মোটেও ঠিক না। অসুখ না হলে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়। রোগ প্রতিরোধের জন্য সময়মতো টিকা দিতে হবে। সুস্খ মুরগিকে রোগ প্রতিরোধের নামে ওষুধ খাওয়ানোর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এমনকি রোগ প্রতিরোধ শক্তিও কমে যেতে পারে। তাই প্রতিরোধের জন্য ওষুধ না খাইয়ে সময় মতো টিকা দিতে হবে।

লেখক: মহির উদ্দীন কৃষিবিদ
এগ্রোবাংলা ডটকম

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা