অনেক বছর ধরে অনেক পরিবর্তন, পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আজকের বাংলা ভাষা। এটা সব ভাষার নিয়ম। ভাষাকে তাই তুলনা করা হয় নদীর স্রোতের সাথে, যা চলার পথে গতি পাল্টায়। ভাষাও এমন। মানুষের মুখে মুখে ব্যবহৃত হতে হতে উচ্চারণজনিত কারণে কিছু শব্দ, কিছু ধ্বনি পাল্টে যায়। এক সময় এই পরিবর্তনের কারণে ভাষাটাও পাল্টে যায় অনেকখানি। আর এভাবেই একটা ভাষা থেকে তৈরি হয় এক বা একাধিক নতুন ভাষা। বাংলা ভাষার উৎপত্তি নিয়ে
মতপার্থক্য রয়েছে। প্রথমে ধারণা করা হতো, সংস্কৃত থেকে এসেছে বাংলা। কিন্তু সংস্কৃত ছিল লেখার ভাষা, সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা নয়। তাই পরে এই ধারণা পরিবর্তিত হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে নানারকম প্রাকৃত ভাষা প্রচলিত ছিল। এসব ভাষাই ছিল সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা। যেহেতু এই ভাষাগুলোতে মানুষ কথা বলতো, তাই ধারণা করা হয় প্রাকৃত থেকেই বাংলার জন্ম।
ভারতীয় আর্যভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলোর একটি শাখা। প্রাকৃত ভাষা এটির একটি স্তর। প্রাকৃত ভাষাও অবশ্য কয়েকটি স্তরে বিভক্ত। প্রাকৃত অপভ্রংশ তার মধ্যে সবচেয়ে শেষ স্তর।
নানারকম প্রাকৃত অপভ্রংশের মধ্যে একটি হচ্ছে মাগধী প্রাকৃত। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন মনে করেন এই মাগধী ভাষার পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকেই বাংলা ভাষা সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. কাজী দীন মুহাম্মদসহ কয়েকজন ভাষাবিজ্ঞানীর মতে প্রাকৃত অপভ্রংশের পূর্বরূপ গৌড়ী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার জন্ম।
বাংলা ভাষার তিনটি স্তর-
প্রথম স্তরটি প্রাচীন বাংলা:
৯০০/১০০০-১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিল এর সময়কাল। এই স্তরেই লেখা হয়েছিল চর্যাপদ। আমি-তুমি জাতীয় সর্বনামের ব্যবহারও শুরু হয় এখান থেকেই।
বাংলার দ্বিতীয় স্তর মধ্য বাংলা:
এর সময়কাল ১৪০০-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ। চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন লেখা হয় এই স্তরে।
শেষ স্তর বর্তমানে প্রচলিত বাংলা :
আমরা বর্তমানে যেই ভাষায় কথা বলি এটি বাংলার শেষ স্তর। একে বলা হয় আধুনিক বাংলা। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এখনও পর্যন্ত এই স্তরটি চলছে।
এভাবেই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বাংলা হয়ে উঠেছে আমাদের আজকের মুখের ভাষা।
Comments
Post a Comment