Skip to main content

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ


সিলেটের যত লুকানো সৌন্দর্য : দেখে নিন,তা কোথায় এবং কিভাবে যাবেন

সিলেটের যত লুকানো সৌন্দর্য, যা হয়তো আপনি জানেন না: দেখে নিন,তা কোথায় এবং কিভাবে যাবেন

সিলেটে ঘুরাঘুরির প্ল্যান করতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। কোন দিন কোথায় যাবেন, প্ল্যান টা কিভাবে করলে ভালো হবে? কোথা থেকে শুরু করে কোথায় শেষ করবেন আর সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েন এক সাথে কতটি স্পট কভার করতে পারবেন? এই নিয়ে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন ওপেন ফোরাম থেকে পাওয়া তথ্য গুলোকে সংকলন করে বানানো একটি তথ্য বাতায়ন। এই ব্লগে ব্যবহার করা সব কটি ছবি নেট থেকে সংগৃহীত

প্রথম দিন: সিলেট- ভোলা গঞ্জ (কোম্পানীগঞ্জ ) – সিলেট

দ্বিতীয় দিন: সিলেট-খাদিম নগর জাতীয় উদ্যান-মোটরঘাট-রাতারগুল-গোয়াইনঘাট-হাদারপাড়-বিছনাকান্দি-লক্ষনছড়া-পানথুমাই-গোয়াইন ঘাট- সারিঘাট-জৈন্তাপুর। অথবা হাদারপাড় থেকে সিলেট।

তৃতীয় দিন: সিলেট-সারি ঘাট-লালাখাল-জৈন্তা-তামাবিল-জাফলং-সিলেট/জৈন্তাপুর
চতুর্থ দিনঃ সিলেট-কানাইঘাট-লোভাছড়া-সিলেট।

সিলেট- ভোলাগঞ্জ:
মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়- ধলাই নদীর স্বচ্ছ নীল পানি-পাথরের কেয়ারি আর ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে প্রকল্প।

সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। সিলেট থেকে পাবলিক বাস বা সিএনজি বেবীট্যাক্সি করে টুকের বাজার পর্যন্ত যেতে পারবেন।ভাড়া ৬০ টাকা। রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ রকম খারাপ।টুকের বাজার থেকে আবার বেবীট্যাক্সি করে ভোলাগঞ্জ যেতে হবে। ভাড়া ৩০ টাকা। সিলেট থেকে রিজার্ভ সিএনজি প্রায় ১৫০০-২০০০ টাকার মত চাইতে পারে। বিশেষ কোয়ারীতে যেতে হলে বিজিবি’র অনুমতি নিতে হবে। ইঞ্জিন নৌকার ভাড়া ১০০০- ২০০০/- পর্যন্ত। এখানে থাকার কোন ভালো জায়গা নাই। দুপুরে খাবার জন্যে শুধু মধ্যমমানের হোটেল পাবেন।

দ্বিতীয় দিন:
রাতারগুল জলা বন:
খুব ভোরে নাস্তা করে সিলেট শহরের আম্বর খানা থেকে একটা সিএনজি রিজার্ভ করে মোটর ঘাট (শ্রিংগি ব্রিজ) চলে যাবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। সিএনজি যাবে খাদিম নগর জাতীয় উদ্যানের ভিতর দিয়ে। মাঝপথে কিছুক্ষনের জন্য থেকে যেতে পারেন। ভোর বেলার বন একটু অন্যরকম। সময় লাগবে ঘন্টা দেড়েক।

শ্রিংগি ব্রিজ থেকে ছোট ডিঙি নৌকা ভাড়া করতে হবে। একটি নৌকায় মোটামোটি ৬ জন বসতে পারে। ভাড়া নিবে ৩৫০-৬০০ টাকা। বিট অফিস এর অফিসার কে জানিয়ে এর পর বনে প্রবেশ করবেন একদম নিঃশব্দে। ঘন্টা খানেক জলাবন উপভোগ করে আবার চলে আসবেন মোটর ঘাট। এইবার আপনাকে একটি বড় ট্রলার ভাড়া করতে হবে গোয়াইনঘাট যাওয়ার জন্য। ভাড়া পরবে প্রায় ৭০০-১০০০টাকা। গোয়াইনঘাটে পৌঁছাতে লাগবে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা।

দুই. বিছনাকান্দি তিন. পান্থুমাই চার. লক্ষনছড়া
গোয়াইনঘাট বাজারেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে অথবা প্যাক করে নিতে পারেন। এরপর আর খাবার কোন জায়গা পাবেন না। গোয়াইন ঘাট থেকে আপনাকে যেতে হবে হাদারপাড়। গোয়াইন ঘাট বাজার থেকে সিএনজি নিয়ে সহজেই হাদারপাড় যাওয়া যাবে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৪০ টাকা। হাদারপাড় থেকে পানি কম থাকলে হেঁটেই চলে যেতে পারেন আপনার স্বপ্নের স্বর্গীয় স্থান ‘বিছনাকান্দি’। মাঝে একবার তিন টাকা দিয়ে খেয়া পার করতে হবে।

বর্ষার সময় পানি বেশি থাকলে আর একবারে পান্থুমাই আর লক্ষনছড়া দেখে ফেলতে চাইলে হাদারপাড় থেকে সরাসরি একটা বড় নৌকা রিজার্ভ করে নিলেই ভালো। ‘বিছনাকান্দি-লক্ষনছড়া-পান্থুমাই’ এই তিনটি জায়গা ঘুরিয়ে আনতে নৌকার খরচ পরবে ক্ষেত্র বিশেষে প্রায় ১৫০০-২০০টাকা। লক্ষনছড়া মাঝি চিনে কিনা সেটা আগেই জিজ্ঞেস করে শিওর হয়ে নিবেন। তিনটি জায়গা মোটামোটি ভাবে ঘুরে হাদারপাড় ফিরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘন্টা।

তৃতীয় দিন:
জাফলং- সেনগ্রামপুঞ্জি:
রাতের বেলা সিলেটে থাকলে সকাল সকাল নাস্তা করে জাফলং এ চলে আসবেন। লোকাল বাসে আসতে সময় লাগবে প্রায় দুই ঘন্টা। ভাড়া নিবে ১০০টাকা। সিএনজি রিজার্ভ করলে নিবে প্রায় ৫০০-৭০০টাকা। জাফলং নেমেই সময় নষ্ট না করে খেয়া পাড় হয়ে যাবেন। ৫-১০ টাকার মত নিবে। নদী পাড় হয়ে পুঞ্জির ভিতর দিয়ে হাঁটা শুরু করতেই দেখবেন খাশিয়াদের সুন্দর সাঁজানো ছবির মত গ্রাম আর পুঞ্জি। সোজা চলে গেলে একটু পরেই পুঞ্জির বাইরে একটা খোলা জায়গায় চলে আসবেন। এরপর পিয়াইন নদী ধরে আবার পূর্ব দিকে হাঁটা দিলেই পাবেন সেনগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। ঝর্ণা টা পড়েছে ভারতে। এর ঠিক সামনেই আছে সেনগ্রামপুঞ্জি রেস্তোরা। দুপুরে এখানেই খেয়ে নিতে পারেন অথবা সময় থাকলে লালাখালের জন্য ক্ষিদে জমিয়ে রাখতে পারেন।

জৈন্তা রাজবাড়ি:
জাফলং থেকে সারিঘাটে ফেরার পথে জৈন্তাপুর বাজারের কাছেই অবস্থিত রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখে নিতে পারেন। সাথে সাইট্রাস গবেষনা কেন্দ্রের বাহারি সব টক জাতীয় ফলের বাগান ও দেখে আসতে পারেন।


লালাখাল:
জৈন্তা থেকে লোকাল বাস/সিএনজি তেসারিঘাট। সারিঘাটে নেমে ইঞ্জিননৌকা নিয়ে যাওয়া যাবে লালাখাল। আপ-ডাউন ট্রিপে একটা নৌকা নিবে৩৫০-৫০০ টাকা। দুই ঘন্টার মত সময় লাগবে আসা-যাওয়ায়। লালাখালে ছোট একটি টি- এস্টেট আছে। আর একটা নাজিমগর রিসোর্টের রেস্তোরা (রিভারকুইন ০১৭৩৩৩৩৮৮৬৬/০১৭৩৩৩৩৫৫৬০) আছে। দুপুরের খাবার এখানে খেতে পারেন। এরপর সারি ঘাট থেকে আবার সিলেট শহরে অথবা আশাপাশের কোন রিসোর্টেও থাকতে পারেন।

চতুর্থ দিন:
লোভাছড়াঃ


সিলেট থেকে যেতে হবে কানাইঘাট। সিএনজি নিবে প্রায় ৫০০-৭০০টাকা। সময় লাগবে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা। সিএনজি কে আগেই বলে নিবেন আপনাদের কতক্ষন লাগতে পারে। পরে বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হয়েছে বলে হ্যারাস করতে পারে। কানাইঘাট থেকে একটা নৌকা নিয়ে যেতে হবে লোভাছড়া চা-বাগান আর লোভাছড়া জাতীয় উদ্যান। নৌকা ভাড়া নিবে প্রায় ৫০০-৮০০টাকা। এরপর সিলেটে ফিরে আসবেন আগের পথে।

শাহজালাল (রাঃ) মাজার:
মাজার দেখে বিকাল টা কাটাতে পারেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে।


ঢাকা থেকে সিলেট:
ট্রেনঃ ঢাকা থেকে সিলেট এর রাতের ট্রেন কমলাপুর থেকে ছাড়ে রাত ১০টায়। সিলেট পৌঁছায় সকাল ৭টায়। ভাড়া ২৯৫ টাকা।

বাসঃ শ্যামলী,হানিফ, গ্রীন লাইন, সোহাগ, সাউদিয়া, এস আলম, এনা (ঘোড়াশাল-টঙ্গী রুট)। ভাড়া ৪৫০ টাকা।

হোটেলঃ সিলেট শহরে থাকার জন্য অনেকভালো মানের হোটেল আছে। শহরের নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)।

জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)। ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৮২৬৩)। লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)।

আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)। দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)। হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)।

জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)। তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি।

জৈন্তাপুর ও তামাবিলে বেশ কিছু উচ্চমানের রিসোর্ট আছে যেমনঃ এই জায়গা গুলোতে থাকতে পারলে তাহলে আর কষ্ট করে সিলেট শহরে ফিরতে হবে না। আরামসে একদিন বিলাস বহুল ভাবে কাটিয়ে ঘুরফিরে চলে আসা যাবে।

জৈন্তা হিল রিসোর্ট: ওয়েব সাইট / ফোনঃ বাহার (০১১৯৩২১৮৯৯৯)

বিজিবি সম্মেলন কেন্দ্রে: সুন্দর, দামী আর জায়গা পাওয়া কষ্টকর। তাই বুকিং নিশ্চিত করে যাওয়া টা উত্তম।

যোগাযোগঃ ০১৯৬২৪০৫৮৬৪ (মাহবুবুল)

নলজুড়ি উপজেলা সরকারি ডাকবাংলো পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে এইখানে থাকতে পারেন। সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারিদের জন্য প্রতিটি রুম ৫০০টাকা। আর সিভিলিয়ানদের জন্য ১৫০০টাকা। আমার থাকা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সুন্দর ডাকবাংলো। এখান থেকে তামাবিলের বিখ্যাত তিন ঝর্ণাই দেখা যায়।

খাবার রেস্তোরা: পানশি, পাঁচ ভাই জনপ্রিয় দুটি রেস্তোরা। এছাড়া আছে উন্ডাল সহ সব নামি-দামি খাবার দোকান।

১. ঘুরতে যাওয়ার সময় চোখ কান বুজে দৌঁড়ানোটা বোকামী, তাই হাতে ভালো সময় নিয়ে ঘুরতে যাওয়া উচিৎ।

২. খুব ভোরে দিন শুরু করতে পারলে একদিনে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।

৩. স্থানীয় মানুষদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরন করুন। ভাব-ভঙ্গি ভালো হলে বাংলাদেশ সাহায্য পাওয়ার সব চাইতে ভালো জায়গা।

৪. পরিবেশ নোংরা করবেন না। আপনার চিপস/বিস্কিট অ অন্যান্য পলি জাতীয় আবর্জনা সাথে করে নিয়ে আসুন।

৫. এই জায়গা গুলো ভালো মত কম খরচে ঘুরার জন্য ৪-৫ জনের টীম সবচেয়ে আদর্শ।

৬. এখানে উল্লেখিত বিভিন্ন ভাড়া/দাম এর ব্যাপার টা মোটেও ফিক্সড কিছু না। পর্যটকদের চাপ বাড়লে এই দাম গুলো বেড়ে যায়। আবার ভিড় কম হলে কমে যায়। 

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা