Skip to main content

পর্দার বিধান ও না মানার পরিণাম


পর্দা শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ হুকুম । এ হুকুমের উপর আমল নারীর ইজ্জত সম্মান বহুগুণে বৃদ্ধি করে। দুনিয়ার জীবনে তাকে সুসংহত ও নিরাপদ করে । পর্দা নারীর ভূষণ, নারীর পবিত্রতা, তার স্বকীয়তা, আত্মমর্যাদাবোধ, লজ্জা ও ঈমান । মুসলিম সমাজে পর্দার রেওয়াজ আছে। কিন্তু পরিপূর্ণ শরয়ী পর্দা খুবই কম । ব্যাপকভাবে পর্দার ব্যাপারে বিভিন্ন দিক দিয়ে ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় । নিম্নে এ সম্পর্কিত কিছু বিষয় তুলে ধরা হল যেন মুসলিম মা-বোনেরা পরিপূর্ণ শরয়ীপর্দা করতে সক্ষম হয় ।


চেহারাও পর্দার অন্তর্ভুক্ত:
এক শ্রেণীর লোক নারীর চেহারাকে পর্দার অন্তর্ভুক্ত মনে করে না । অথচ চেহারা পর্দার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চেহারা পর্দার অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার ব্যাপারে সূরা নূরের ৩১ নং আয়াত উল্লেখ করা হয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তবে যা সত্যই প্রকাশমান’। অথচ হিজাবের মূল আয়াত এটি নয়। পর্দার বিষয়ে এই আয়াত দ্বারা দলীল দেওয়া এবং এই আয়াতকেই একমাত্র দলীল মনে করা ভুল । মূলত পর্দার আয়াত হল সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াত ।


‘হে নবী আপনার স্ত্রী ও অন্যদেরকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন চাদর নিজেদের উপর টেনে নেয়’।

ইমাম সূয়ূতী র. বলেন, এটি সকল নারীর জন্য হিজাবের আয়াত । এতে মাথা ও চেহারা ঢাকা ওয়াজিব করা হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের স্ত্রীদের আদেশ করেছেন তারা যেন প্রয়োজনের মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় উপর দিয়ে পর্দা ঝুলিয়ে চেহারা ঢেকে রাখে এবং শুধু এক চোখ খোলা রাখে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩/৮২৪)

প্রখ্যাত ফকীহ তাবেয়ী উবাদা আসলামী রা. দেখিয়েছেন, কীভাবে নারীগণ এই আয়াতের উপর আমল করেন। তিনি তাঁর চাদর দিয়ে এমনভাবে মুখমন্ডল আবৃত করলেন যে, নাক ও বাম চোখ আবৃত হয়ে গেল। শুধু ডান চোখ খোলা থাকল। তদ্রƒপ মাথার উপর থেকে কপাল ও চোখের ভ্রুও আবৃত হল । তাফসীরে তাবারী, আদ্দুররুল মানসুর ৫/২২১, আহকামুল কোরআন- জাসসাস: ৩/৩৭১; তাফসীরে কাশশাফ ৩/২৭৪; আহকামুল কোরআন- ইবনুল আরাবী ৩/১৫৮৫-১৫৮৭; যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর ৬/৪২২; আদ্দুররুল মানসুর ৫/২২১; আনওয়ারুত তানযীল ওয়া আসরারুত তাবীল ২/২৮০; তাফসীরে কুরতুবূ ১৪/২৪৩-২৪৪।

উল্লেখ্য, সূরা নূরের ৩১ নং আয়তে মূলত সতরের সীমারেখা বর্ণনা করা হয়েছে। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে হাত এবং মুখ খোলা রাখার তথাও বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনাগুলোর অধিকাংশই নেহায়েত দুর্বল । দু’একটি গ্রহণযোগ্য বর্ণনা রয়েছে। সে হিসাবে এটি এ আয়াতের একটি ব্যাখা ।

আয়াতের অন্য আরেকটি ব্যাখ্যা হল, ‘মা যাহারা মিনহা’ দ্বারা উদ্দেশ্য কাপড় । প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. এই ব্যাখ্যাই করেছেন । ইমাম ইবনে কাসীর র. এই মতকে প্রধান্য দিয়ে বলেন, হযরত হাসান, ইবনে সীরিন, আবুল জাওযা, আব্দুর রহীম নাখয়ী, হযরত ইবনে মাসঊদ রা. এর অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন।

ইবনে জাওযী র. আরো বলেন, ইমাম আহমদ র.ও বলেছেন যে, প্রকাশ্য সৌন্দর্য হল কাপড়, আর নারীরর শরীরের সব কিছু এমনকি নখও পর্দার অন্তর্ভুক্ত । ( যাদুল মাসীর ৬/৩১)

আর ইবনে আব্বাস রা. এর ব্যাখ্যা গ্রহণ করলেও এই আয়াত পরবর্তীতে নাযিলকৃত হিযাবের আয়াত দ্বারা মানসুখ হয়েছে । শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া র. সহ আরো কিছু মনীষীও এই মত পোষণ করেন।

আয়েশা রা. এর ‘ইফক’এর ঘটনায় উল্লেখিত হাদীস নসখেন সুস্পষ্ট প্রমাণ। আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তখন সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আমার নিকটে এসে আমাকে দেখে চিনে ফেলল। কেননা, সে আমাকে হিজাবের হুকুম নাযিল হওয়ার আগে দেখেছিলেন। সে তখন ইন্নালিল্লাহ বলল । আমি তার ইন্নালিল্লাহ বলার শব্দে জেগে উঠি । তখন আমি ওড়না দিয়ে আমার মুখ ঢেকে ফেলি’। সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম হাদীস ২৭৭০; জামে তিরমিযী হাদীস ৩১৭৯) প্রকাশ থাকে যে, সাহাবায়ে কেরাম হিজাবের আয়াত নাযিল হওয়ার পর চেহারায় পর্দা করতেন, যা আম্মাজান আয়েশা রা. এর উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । এছাড়া এ সংক্রান্ত আরো প্রমাণ পরবর্তী আলোচনায় আছে।

এহরাম অবস্থায় মহিলারা চেহারা খোলা রাখা:
অনেকে মনে করে, ইহরাম অবস্থায় চেহারার পর্দা নেই। ফলে তারা অন্য সময় পর্দা করলেও ইহরাম অবস্থায় চেহারার পর্দা করেন না। প্রকৃত বিষয় এই যে, ইহরাম অবস্থায় চেহারায় কাপড় লাগানো নিষেধ, কিন্তু পর্দা করা নিষেধ নয় । উম্মুল মুমিনীন ও একাধিক সাহাবী থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, তারা ইহরাম অবস্থায়ও চেহারার পর্দা করতেন । আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম । পথচারীগণ আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত । তারা আমাদের নিকট আসলে আমরা মাথার উপর থেকে নেকাব চেহারায় ফেলে দিতাম । তারা চলে গেলে নেকাব উঠিয়ে নিতাম। ( সুনানে আবূ দাঊদ হাদীস ১৮৩৩; ফাতহুল বারী ৩/৪৭৪)

হযরত ফাতেমা বিনতে মুনযির র. বলেন, অর্থ আমরা ইহরাম অবস্থায় চেহারা আবৃত করে রাখতাম । আবূ বকর সিদ্দীক রা. এর কন্যা আসমা রা. এর সাথে আমরা ছিলাম । তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেননি । (মুয়াত্তা মালেক: পৃঃ ২১৭২) মোটকথা, সাহাবা-তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনের মাঝে কোন দ্বিমত ছিল না । এ ব্যাপারে তাদের মাঝে ব্যাপক আমল ছিল । এমনকি ইহরাম অবস্থায় যখন চেহারায় কাপড় লাগানো মহিলাদের জন্যও নিষিদ্ধ তখনও তারা চেহারার পর্দা করতেন ।

চোখ ঢাকাও পূর্ণ পর্দার অংশ:
অনেকে অর্ধমুখ খোলা রাখেন । ভ্রƒর উপর থেকে নাকের অর্ধেক পর্যন্ত খোলা রাখেন । এটাও ঠিক নয় । হযরত আয়েশা রা. ও ফাতিমা বিনতে মুনযির রা. এর উপরোক্ত বর্ণনায় পূর্ণ চেহারা ঢাকার কথা আছে। এছাড়া সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস রা. এবং উবাদা আসলামী রা. যা বলেছেন, তা আরো স্পষ্ট যে, তিনি বাম চোখও ঢেকে নিয়েছেন। শুধু ডান চোখটি দেখার স্বার্থে বের করে রেখেছেন । আর মাথার উপর থেকে নেকাব এমনভাবে ঝুলিয়েছেন যে, চোখও ভ্রু ঢেকে আছে। আজকাল নেকাবের জন্য পাতলা কাপড় পাওয়া যায় । যা ব্যবহারে ঢেকে যায় । আবার চলাচলেরও অসুবিধা হয় না।

মাহরাম ছাড়া সফর করা
আজকাল অনেক মহিলারা দূর দূরান্ত থেকে মাহরাম ছাড়া একাকী সফর করে । দেশে এক শহর থেকে অন্য শহর এমনকি বিদেশ সফরও একাকী করে থাকে । এটা নাজায়েজ । শরীয়তের বিধান হল ৪৮ মাইল বা ততোধিকের সফর মহিলারা মাহরাম ছাড়া করবে না। অন্য মহিলাদের সঙ্গী হয়ে যায়ার ও অনুমতি নেই । অনেক মহিলারা মাহরাম ছাড়া হজ্বের সফরেও যায় । অন্য মহিলার সঙ্গী হয়ে যাওয়াকে বৈধ মনে করে । বিশেষ করে জিদ্দা থেকে কোন মাহরাম সঙ্গী হওয়ার মতো ব্যবস্থা থাকলে এবং দেশে বাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিলে পথিমধ্যে একাকী সফরকে দোষনীয় মনে করা হয় না । অথচ একাকী সফর করার বাপারে হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হজ্জের সফরেও একাকী যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ এসেছে।
(সহীহ মুসলিম ৯/১১০; সুনানে দারাকুতনী ২/২২৩)

নিয়মিত বাইরের ব্যস্ততা সমীচীন নয়:
অনেক মহিলারা ঘরের বাইরের ব্যস্থতা নিয়মিত রাখে । যেমন চাকরি, স্কুল-কলেজে পড়া লেখা ইত্যাদি। নিয়মিত বাইরের ব্যস্ততা রাখা ঠিক নয়। বিশেষত একাকী যাতায়াত করা আরো খারাপ। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান কর ।’

এই আয়তের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, অতি প্রয়োজন ছাড়া মহিলাদের বের হওয়া ঠিক নয়। আর নিয়মিত বাইরের ব্যস্ততায় ফিতনার আশংকা রয়েছে। এজন্য মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। তাই পড়া-শুনা বা প্রয়োজনীয় কোন কাজে নিয়মতি বের হলে পূর্ণ শরঈ পর্দার সাথে মাহরামসহ বের হবে ।

মহিলাদের একাকী বাজার করা অনুচিত:
অনেক পর্দাশীল মহিলা একাকী বাজার করে । অথচ একাজগুলো বাড়ির পুরুষদের দিয়ে সুন্দরভাবে হয়ে যায়। এ কাজ মহিলাদের নিজে নিজে করা কোরআনে কারীমের আয়াত-‘তোমরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান কর’-এর খেলাফ । দ্বিতীয়ত কেনাকাটা করতে গিয়ে দোকানী পুরুষদের সাথে সরাসরি কথাবার্তা বলতে হয়, পুরুষদের ভীড়ের মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে হয় । এভাবে শরীয়তের হুকুম লঙ্ঘন করা হয়। এজন্য মহিলাদের এভাবে একাকী বাজার করা অনুচিত ।

বাইরে সুগন্ধি ব্যবহার করা নাজায়েয:
অনেক মহিলা বাইরে বের হওয়ার সময় পর্দা করে বের হয় বটে, কিন্তু পারফিউম বা অন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে । মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার করা নাজায়েয। এতে পর্দা লঙ্ঘন হয় । শরঈ পর্দা আদায় হয় না । হাদীস শরীফে ওই সব মহিলার উপর অভিসম্পাদ করা হয়েছে যারা সুগন্ধি মেখে বের হয় ।

এক হাদীসে এসেছে, অর্থ: যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের হল, অতঃপর লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করল যে, তারা যেন সুঘ্রাণ পায় সে ব্যভিচারিনী । (মুসনাদে আহমাদ ৪/৪১৪; মুসতাদরাকে হাকেম ২/৩৯৬; সুনানে আবূ দাঊদ ৪১৭৫)

আঁটসাঁট বোরকা পরা:
কিছু মহিলা এমন বোরকা পরে যে, বোরকার উপর দিয়ে শরীরের আকার- আকৃতি বোঝা যায় । কেউ কেউ একেবারে টাইটফিট বোরকা পরে । এমন পোশাক পরে বাইরে রেব হয়, যা পরিধান করে বাইরে বের হওয়া নাজায়েয । এতে বোরকার হক আদায় হয় না । শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে উঠে এমন পোশাকে যারা বের হয় তাদেরকে হাদীস শরীফে কঠিন ভাবে সাবধান করা হয়েছে। এক হাদীসে তাদের উপর লানত করা হয়েছে। আর এক হাদীসে বলা হয়েছে, দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী তার মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণী লোক হচ্ছে, ঐ সকল নারী, যারা পোশাক পরিধান করা স্বওে¦ও বিবস্ত্র । অন্যকে নিজের প্রতি আকর্ষণকারিনী ও নিজেও আকৃষ্ট। বুখতি উটের উঁচু কুঁজের মতো তাদের চুলের খোপা । এসব নারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে’।

আকর্ষণীয় ও কারুকার্যময় বোরকা পরিধান করা:
আজকাল জাঁকজমকপূর্ণ বোরকার প্রচলন বেরেছে। বিভিন্ন ডিজাইনের আকর্ষণীয় বোরকা । এধরনের জাঁকজমকপূর্ণ আকর্ষণীয় বোরকা পরা ঠিক নয় । মহিলাদরে বাইরে বের হওয়ার একটি মূলনীতি হল, বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী কোন কিছু ব্যবহার না করা । এজন্য সুগন্ধিসহ সকল আকর্ষণ সৃষ্টিকারী বস্তু ব্যবহার নাজায়েজ । কেউ কেউ পেন্সিল হিল ব্যবহার করে । এর ব্যবহারও এড়িয়ে চলা জরুরী ।

পুরুষদের সঙ্গে সহাবস্থান:
পুরুষদের সাথে একত্রে চাকরি বা পড়া-শুনার ক্ষেত্রে বোরকা পরাকেই যথেষ্ট মনে করা হয় । অথচ গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে সান্নিধ্য ও তাদের সঙ্গে ওঠাবসা থেকে মহিলাদের দূরে থাকা কর্তব্য । তাই পুরুষের সহাবস্থানে শুধু বোরকা দ্বারা পর্দার হক আদায় হয় না । কেননা পর পুরুষের সাথে উঠা-বসা, লেনদেন জিনিসপত্রের আদান-প্রদান এবং অফিসিয়াল প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে অপরিচিতদের সাথে কথাবার্তা বলতে হয় । এতেও পর্দার খেলাফ হয় । এসকল ক্ষেত্রে বোরকা পরে থাকলেও পর্দার খেলাফ হয় । অবশ্য বোরকা পরিধানের কারণে বোরকা ছাড়া মহিলাদের চেয়ে গুনাহ কম হবে।

অন্যদের সাথে কোমলতা প্রদর্শন ঠিক নয়:
গায়রে মাহরামের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলা নিষেধ নয় । কিন্তু এক্ষেত্রেও কোমলতা বর্জন করা কোরআনের নির্দেশ। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা পর পুরুষের সাথে কোমল স্বরে কথা বলো না । ফলে সে ব্যক্তি কুবাসনা করবে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে।’ (সূরা আহযাব:৩২)

সুতরাং প্রয়োজনীয় কথা-বার্তার ক্ষেত্রে কোমলতা বর্জন না করাও পর্দার খেলাফ। আর প্রয়োজন ছাড়া গায়রে মাহরামের সাথে কথা না বলাই কাম্য। বিশেষ কোন ফেতনার আশংকা থাকলে কথা বলা জায়েয হবে না। (শরহে মুসলিম- নববী কৃত ২/১২১আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৬; আল মুফাসসাল৩/২৭৬)

শরঈ পর্দার শর্তাবলি:
শর্তগুলো উপরে বিক্ষিপ্তভাবে এসেছে সহজকরণের লক্ষে তা সংক্ষিপ্তভাবে আবারো প্রদত্ত হল। অনেক মা-বোনই পর্দা করে কিন্তু অনেকে জানেনই না পূর্ণ পর্দা কাকে বলে? এর জন্য কি কি শর্ত রয়েছে? তাই পূর্ণ পর্দার শর্তাবলি উল্লেখ করা হল।

১.কোন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া। এক্ষেত্রে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পূর্ণ শরীর আবৃত করা, মুখ ও চোখের উপর নেকাব রাখা, হাত মোজা ও পা মোজা পরিধান করা।

২.বোরকার কাপড় ভালো ও শালীন হওয়া, আকর্ষণীয় কারুকাজ ও নকশা না থাকা। অর্থাৎ বোরকা আকর্ষণীয় না হওয়া। আজকাল বিভিন্ন প্রিন্টের বোরকা পাওয়া যায় যথা সম্ভব এ থেকে এড়িয়ে থাকা। তদ্রƒপ কালো কাপড়ের উপর আকর্ষণীয় কাজও যেন না হয়।

৩.বোরকার কাপড় মোটা হওয়া। এমন পাতলা না হওয়া যে, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা যায়।

৪.অধিক ঢিলাঢালা বোরকা হওয়া। এমন আঁটসাঁট না হওয়া যে, বোরকা শরীরের সাথে লেগে থাকে কিংবা পরিধানের পর শরীরের কোন অঙ্গ প্রকাশ পায়।

৫.বাইরে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার না করা। এটাও শরঈ পর্দার অংশ।

৬.এমন অলংকার পরে বাইরে না যাওয়া, যা পরিধান করে চললে আওয়াজ হয়। যেমন-নুপুর, কাঁচের চুড়ি ইত্যাদি।

৭.চিকন ও লম্বা হিল বিশিষ্ট জুতাপরিধান না করা। যেন চললে স্বাভাবিকতা বজায় থাকে।

৮.উঁচু করে খোপা বা চুল না বাঁধা।

৯.গায়রে মাহরামের সাথে অপ্রয়োজণীয় কথা বলা ও সালাম দেওয়া-নেওয়া থেকে বিরকত থাকা। প্রয়োজনে বলতে হলে কোমলতা পরিহার করা।

১০.সফরসম দূরত্বে কিংবা ফেতনার আশংকা থাকলে মাহরাম পুরুষের সঙ্গে যাওয়া।


মহিলাদের নাম সতর নয়:

কেউ কেউ মনে করে মহিলাদের নামের পর্দা আছে। পর পুরুষের সামনে বলা গুনাহ । এধারণা ঠিক নয়। এতে গুনাহ নেই । তবে মহিলাদরে নাম অন্যকে বিনা প্রয়োজনে না বলাই ভালো। ফিতনামুক্ত থাকার জন্য এটি সহায়ক হতে পারে।


চাচী, মামী ও ভাবীর সঙ্গে পর্দা করা আবশ্যক:

কেউ কেউ মনে করে চাচী, ভাবী, মামী এ ধরনের গায়রে মাহরাম আত্মীয়দের সাথে দেখা দেয়া যায়। বিশেষত যখন তাদের কাছেই বড় হয় কিংবা তারা বয়স্কা হয়ে যান। কিন্তু যেহেতু ইসলামে তাঁদের সঙ্গেও পর্দার বিধান রয়েছে তাই শুধু উপরোক্ত যুক্তিতে দেখা জায়েয হবে না। সর্বাবস্থায় তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হারাম।

উকিল বাবার সাথে পর্দা করা আবশ্যক:
বিয়ের সময় যাকে উকিল বানানো হয় তাকে সমাজে পাত্র-পাত্রীর উকিল বাবা বলা হয়। তার সাথে পরবর্তীতে অবাধে দেখা-সাক্ষাত করা হয়। এমনকি মাহরামের অন্তর্ভুক্তও মনে করা হয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল। গায়রে মাহরামকে উকিল বানানো হলেও তার সাথে দেখা-সাক্ষাত পূর্বের মতোই হারনাম।


ধর্মের বোন ডাকা ও পর্দা না করা:

অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে গায়রে মাহরাম মহিলাকে বোন ডাকে। সমাজে একে ‘ধর্মের বোন’ বলে অভিহিত করা হয়। ধর্মের বোনের সাথে আপন বোনের মতোই আচরণ করা হয় পর্দা করা হয় না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মীরাসও দেওয়া হয়। গায়রে মাহরাম মহিলার সাথে এ ধরনের সম্পর্ক বৈধ নয়। ধর্মের বোন বলতে যা বোঝানো হয় শরীয়তে তা স্বীকৃত নয়। তাদের পরস্পর দেখা-সাক্ষাত নাজায়েয।

মহিলাদের মসজিদে গমন:
কিছু কিছু পর্দাশীন নারী মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করে থাকে। বিশেষত জুমআ পড়ে থাকে। এভাবে মসজিদে গিযে নামায আদায় করলে নামায হয়ে যাবে কিন্তু তাদের জন্য মসজিদে শরীক হয়ে নামায পড়া মাকরুহ।

(ফাতাওয়া শামী ১/৫৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭১/৩৮৮)

মহিলাদের মসজিদে যাওয়াকে রাসূল সা. নিরুৎসাহিত করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ ৬/৩৭১)
পরবর্তীতে আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. সহ অনেক সাহাবী মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন। সহীহ বোখারী ১/১২০; সহীহ মুসলিম১/১৮৩ মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা ৫/২২-২০৩)
মহিলাদের মসজিদে নামায আদায়ের মধ্যে বিশেষত বর্তমান যুগে পর্দার হক আদায় হয় না।

মাহরাম পুরুষের সামনে সতরের ব্যাপারে উদাসীনতা:
আমাদের দেশে মহিলাদের অনেকে শাড়ী পরে থাকে। এতে অনেক সময় পেট ও পিঠ খোলা থাকে ঘরে মাহরাম পুরুষের সামনে একে গুনাহ মনে করা হয় না। অথচ এর দ্বারা সতর খোলার গুনাহ হয়। মহিলাদের পেট-পিঠ সতরের অন্তুর্ভুক্ত। মাহরাম পুরুষের সামনেও তা ঢেকে রাখা ফরয।

জাহেলী যুগের মতো ওড়না ব্যবহার:
জাহেলী যুগে ওড়না ব্যবহারের নিয়ম ছিল, নারীরা মাথায় ওড়না দিয়ে তার দুই প্রান্ত পৃষ্ঠদেশে ফেলে রাখত। ফলে গলা ও বক্ষদেশ অনাবৃত থাকত। ইসলামের প্রথমযুগে আল্লাহ তা‘আলা জাহেলী যুগের এই কু-প্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। কোরআন মজীদে এসেছে-‘তারা যেন বক্ষদেশে ওড়না ফেলে রাখে’ (সূরা নূর;৩১)

আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হয়, তখন (তৎক্ষণাৎ আমলের জন্য মহিলা সাহাবিগণ নিজেদের-পেটিকোট) নিয়ে তার পাশ থেকে কেটে তা ওড়না রূপে পরে নেয়।’ (সহীহ বুখারী ৮/৩৪৭)

বর্তমান জাহেলীযুগ পূর্বের জাহেলী যুগও ছেড়ে গেছে। অতি আধুনিক মেয়েরা তো ওড়না ব্যবহারই করে না। কেউ কেউ ব্যবহার করলেও জাহেলী যুগের মতো গলাও বক্ষদেশ খোলা রাখে। সুতরাং ঘরে-বাইরে সর্বত্র মহিলাদের ওড়না পরিধানের নিয়ম এটিই। এমনকি ফাতাওয়া শামীতে ঘরের মাহরামদের সামনে মহিলাদের মাথায় কাপড় রাখাকে মুস্থাহাব বলা হয়েছে। (ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/৪০৪)

পালক সন্তানের সাথে পর্দা করা:
পালক সন্তান আপন সন্তানের মতো নয়। তার সাথে পর্দা করা ফরজ। হ্যাঁ, সন্তানের দুই বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে যদি নিজের বুকের দুধ খাওয়ায় সেক্ষেত্রে সন্তানও হয়ে যায়। আর দুধ সন্তানের সাথে দেখা দেওয়া জায়েয । দুধ পান না করিয়ে থাকলে পালক সন্তানের সাথে দেখা দেয়া জায়েয হবে না। পালক সন্তান নিজের সন্তানের মতো নয় তা সূরা আহযাবের ৪ও৫নং আয়াতে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে।


মেয়েদের পর্দার বয়স:

অনেকে মনে করে না দেখা দেয়া পর্যন্ত পর্দার বয়স হয় না। এই ধারণা ঠিক নয়। মেয়েরা বড় হয়ে ওঠলেই পর্দার বয়স শুরু হয়ে যায় । ফাতাওয়ায়ে শামীসহ অন্যান্য ফাতাওয়া গ্রন্থে নয় বছর অতিক্রম করলেই পর্দার বয়স হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই এই বয়স থেকেই পর্দা করা জরুরূ।
(ফাতাওয়ায়ে শামী:১/৪০৮;৩.৩৭ আহসানুল ফাতাওয়া :৮/৩৮)

ছেলেদের পর্দার বয়স
ছেলেদের যখন নারীদের সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন হতে আরম্ভ করে তখন থেকেই তার সঙ্গে পর্দা করতে হবে। সূরা নূরের ৩১নং আয়াতে এসেছে তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে কিন্তু তাদের স্বামীর নিকট অথবা যৌন কামনামুক্ত পুরুষ ও বালক যারা নারীদের আবৃত অঙ্গ-প্রতঙ্গ সম্পর্কে সচেতন নয়।” (সূরা আন নূর ৩১)

এই চেতনা সাধারণত কত বছর বয়সে হয় এ নিয়ে ফকীহগণের বিভিন্ন মত আছে। ইমাম আহমদ র. সহ অনেকেই দশ বছর বলেছেন। তবে ফাতাওয়া শামীতে বয়োপ্রাপ্তির ন্যূনতম সীমা ১২ বছর বলা হয়েছে। সুতরাং ছেলের ১২ বছর বয়স হলেই তার সাথে নারীদের পর্দা করতে হবে। তবে দশ বছর বয়স থেকেই শুরু করা ভাল।

প্রসঙ্গত বর্তমানে এ বিষয়ে অনেক বেশী সতর্ক ও সচেতন হওয়া উচিত। ফাতাওয়ায়ে শামী : ৩/৩৫; আলমুফাসসাল: ৩/১৮০-১৮১)

মেয়েদের সাথে মেয়েদের পর্দা:
অন্য নারীর সামনে একজন নারীর সতর নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত । এ অংশ কোন বিশেষ ওযর ছাড়া কোন নারীর সামনেও খোলা জায়েয নয়। আর পেট, পিঠ, বুক এগুলোও প্রয়োজন ছাড়া অন্য নারীর সামনে অনাবৃত করা অনুচিত। আর ফিতনার আশংকা হলে তা আবৃত রাখা জরুরী। ( আল মুফাসসাল: ৩/২৬৫; ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৭১)

বিধর্মী নারীর সাথে মুসলিম নারীর পর্দা না করা গুনাহ:
বিধর্মী নারীর সামনে মুখ, হাত ও পা ছাড়া পুরো শরীর এমনকি চুলও ঢেকে রাখা জরুরী। তাদের সামনে শরীরের সৌন্দর্য প্রকাশ করা গুনাহ। (ফাতাওয়ায়ে শামী: ৬/৩৭১; ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৪/১৯৬)

পুরুষদের প্রতি নজর করা:
এ প্রসঙ্গে সূরা নূরের ৩১ নং আয়াত স্মরনীয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, অর্থ-‘হে নবী! আপনি মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন দৃষ্টিকে অবনত রাখে।’অর্থাৎ পর পুরুষের দিকে না তাকায়। হযরত উম্মে সালমা রা. বলেন, আমি রাসূল সা. এর কাছে ছিলাম, হযরত মায়মুনা রা. ও ছিলেন। ইতিমধ্যে অন্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম এলেন। এটা ছিল হেজাবের হুকুম নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা। তখন নবী কারীম সা. ইরশাদ করলেন.

অর্থ: তোমরা দু’জন তার থেকে পর্দা কর। আমরা বললাম, সে তো অন্ধ। আমাদেরকে দেখছে না এবং আমাদেরকে চিনেও না। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছ না? (সুনানে আবূ দাঊদ হাদীস ৪১১২)

উক্ত আয়াতও হাদীসের আলোকে ফকীহগণ বলেন, কুনজরে পুরুষের দিকে তাকানো মহিলাদের জন্য নাজায়েয। তদ্রপ আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এমন গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করাও নিষেধ। আর কোন ধরনের ফিতনার আশংকা না হলে সাধারণ দৃষ্টিতে পর পুরুষের দিকে তাকানো নাজায়েয নয়। তবে এক্ষেত্রে না তাকানোই ভালো। (ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৭১; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২২৭; আল মুফাসসাল: ৩/২২৭; জামেউ আহকামিন নিসা: ৪/২৮৩; বেহেশতী জেওর: ৩/৬৫)


পুরুষদের নিকট গায়রে মাহরাম নারীদের সৌন্দর্য বর্ণনা করা:

একাধিক হাদীসে গায়রে মাহরাম নারীর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে েিষধ করা হয়েছে। এতেও নারীর পর্দার এক প্রকার লঙ্ঘন আছে। সাধারণত মেয়েরা তার স্বামী, ভাই ইত্যাদির কাছে গায়রে মাহরাম মহিলাদের সৌন্দর্য গুণাবলি বর্ণনা করে থাকে। যেমন- কোন পর্দাশীন মেয়েদের সাথে সাক্ষাৎ হলে, নতুন করে তার কথা বলে ইত্যাদি। এটি গুনাহ । এর দ্বারাও এক প্রকার পর্দার লঙ্ঘন হয়। হাদীস শরীফে এসেছে, নারীগণ যেন পরস্পর এ ইদ্দেশ্যে একত্রিত না হয় যে, স্বামীর কাছে অন্যদের গুণাবলি এমনভাবে বলবে যেন সে ঐ মহিলাকে দেখছে। (ফাতহুল বারী: ৯/৩৩৮; জামিউল আহকামিন নিসা : ৪/৩৩৭)

পর্দা না মানার পরিণাম:
“ তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ ও অসৎ পন্থা।”
(সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২)

তিনি অন্য স্থানে বলেন:
“ কোন রকম অশ্লীলতার কাছেও যেও না তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক।” (সূরা আল-আনআম: ১৫১)
রাসূল (সা) বলেছেন, ‘মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে জিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের জিনা,ফুঁসলানো কণ্ঠের জিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের জিনা, হাত দিয়ে স্পর্শ করা হাতের জিনা, কোনো অবৈধ উদ্দেশ্যে পথ চলা পায়ের জিনা, এভাবে ব্যভিচারের যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয়, তখন লজ্জাস্থান তার পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে’ (বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ)।
এ শ্রেণীর মানুষের দৃষ্টান্ত দিয়ে আল্লাহ বলেন:
• “তারা খায় ও আনন্দ উপভোগ করে যেমন আনন্দ উপভোগ করে চতুষ্পদ জানোয়ার।” (সূরা : মুহাম্মদ ১২)

যখন কোন মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। ঈমান তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করে যাখন সে বিরত থাকে ঈমান আবার ফিরে আসে।(তিরমিযি : ২৫৪৯)

আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। আর যে ঈমানের সাথে কুফরী করবে, অবশ্যই তার আমল বরবাদ হবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।মায়িদা:৫

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“কেয়ামতের লক্ষণ হচ্ছে মুসলমান সমাজের মধ্যেই যিনা-ব্যভিচার ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে, এমনকি মানুষ পশুর মতোই প্রকাশ্যে জিনাতে লিপ্ত হবে”

যিনা কি?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের যিনা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার যিনা, অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের যিনা, ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা, খারাপ কথা শোনা কানের যিনা আর যিনার কল্পণা করা ও আকাংখা করা মনের যিনা। অতঃপর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়”। [সহীহ আল-বুখারী, সহীহ আল-মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন-নাসায়ী]

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেন,
“ইশক বা প্রেম একটি মানসিক ব্যাধি। আর যখন তা প্রকট আকার ধারণ করে তখন তা শরীরকেও প্রভাবিত করে। সে হিসেবে ইশক শরীরের জন্যও একটা ব্যাধি। মস্তিষ্কের জন্যও তা ব্যাধি। এজন্যই বলা হয়েছে যে, ইশক একটা হৃদয়জাত ব্যাধি। শরীরের ক্ষেত্রে এ ব্যাধির প্রকাশ ঘটে দুর্বলতা ও শরীর শুকিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।”

# তিনি আরও বলেন, “পরনারীর প্রেমে এমন সব ফাসাদ রয়েছে যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেও গুনে শেষ করতে পারবে না। এটা এমন ব্যাধিগুলোর একটি, যা মানুষের দ্বীনকে নষ্ট করে দেয়। মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনাকে নষ্ট করে দেয়, অতঃপর তা শরীরকেও নষ্ট করে।”
[মাজমুউল ফাতওয়াঃ ১০/১২৯-১৩২]

# হযরত আবু হুরায়রা বর্ণিত অন্য এক হাদীসে রাসুল (স) আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে অথবা মদ পান করে, আল্লাহ তার কাছ থেকে ঈমান ঠিক এমনভাবে কেড়ে নেন, যেমন কোন মানুষ তার মাথার উপর দিয়ে জামা খুলে থাকে।”

# রাসুল (স) বলেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক কঠোর শাস্তি নির্ধারিত থাকবে। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক এবং অহংকারী গরীব।” [মুসলিম ও নাসায়ী]

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা