Skip to main content

মক্কা মুকাররমার কয়েকটি বিশিষ্ট স্থানের পরিচয়

মাতাফ:
কাবাঘরের চারদিকে অবস্থিত তওয়াফের স্থানকে ‘মাতাফ’ বা চত্বর বলা হয়।


হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর:
হাজরে আসওয়াদ কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্বকোণে মাতাফ (তাওয়াফের জায়গা) থেকে দেড় মিটার ওপরে লাগানো। হাজরে আসওয়াদ তাওয়াফ (কাবা শরিফ সাতবার চক্কর দেওয়া) শুরুর স্থান। প্রতিবার চক্কর দেওয়ার সময় এই হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতে হয়। ভিড়ের কারণে না পারলে চুমুর ইশারা করলেও চলে। এটিও নিয়ম। ফ্রেমের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে পাথরে চুমু দিতে হয়। মুখ না ঢোকালে চুমু দেওয়া সম্ভব নয়। আর মুখ ঢোকাতে গিয়ে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড ভিড়। ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। হাজরে আসওয়াদের পাশে সৌদি পুলিশ দাঁড়ানো থাকে ২৪ ঘণ্টা। মাথা ঢোকাতে বা চুমু দিতে গিয়ে কেউ যেন কষ্ট না পান, তা তাঁরা খেয়াল রাখেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও চুমু দেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করেন।

মাকামে ইব্রাহিম:
কাবা শরিফের পাশেই আছে ক্রিস্টালের একটা বাক্স, চারদিকে লোহার বেষ্টনী। ভেতরে বর্গাকৃতির একটি পাথর। পাথরটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান-প্রায় এক হাত। এই পাথরটিই মাকামে ইব্রাহিম। মাকাম শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে দাঁড়ানোর স্থান। অর্থাৎ হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান। এই পাথরে দাঁড়িয়ে তিনি ঠিক কী কাজ করতেন, তা নিয়ে মতভেদ আছে। তবে তিনি এর ওপর দাঁড়িয়ে কাবা শরিফ নির্মাণ করেছেন-এটি সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মু’জিজার কারণে শক্ত পাথরটি ভিজে তাতে তাঁর পায়ের দাগ বসে যায়। আজও আছে সেই ছাপ। তামা ও আয়নার তৈরি বাক্সে রাখার আগ পর্যন্ত মানুষ পাথরটি হাতে ধরে দেখার সুযোগ পেয়েছে। এখন শুধু দেখা যায়, ধরা যায় না। মানুষের হাতের স্পর্শে ও জমজমের পানি দিয়ে ধোয়ায় পাথরটির ভেতরে কিছুটা ডিম্বাকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চার হাজার বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মাকামে ইব্রাহিমে এখনো পায়ের চিহ্ন অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিশ্বাস করে, কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে। ওপরে প্রতিটি ছাপের দৈর্ঘ্য ২৭ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১৪ সেন্টিমিটার। পাথরের নিচের অংশে রুপাসহ প্রতিটি পায়ের দৈর্ঘ্য ২২ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ১১ সেন্টিমিটার। দুই পায়ের মধ্যে ব্যবধান প্রায় এক সেন্টিমিটার। পাথরটিতে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পায়ের দাগের গভীরতা পাথরটির উচ্চতার অর্ধেক, ৯ সেন্টিমিটার। দীর্ঘদিন ধরে লাখ লাখ মানুষের হাতের স্পর্শে আঙুলের চিহ্নগুলো মুছে গেছে। তবে ভালো করে খেয়াল করলে এখনো আঙুলের ছাপ বোঝা যায়। বোঝা যায় পায়ের গোড়ালির চিহ্ন। মাকামে ইব্রাহিমের কাছে বাঁ ঘেঁষে অনেক মুসল্লি নামাজ পড়েন, অনবরত চলে তাওয়াফ।

কাবার গিলাফ :
আরবরা কাবাকে আবৃত করে রাখা কাপড়টিকে বলে কিসওয়া। আর আমরা বলি গিলাফ। হজের কয়েক দিন আগে থেকেই কাবা শরিফের গিলাফের নিচু অংশ ওপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়। এতে কাবা শরিফের দেয়ালের বাইরের অংশ দেখা ও ধরা যায়। কাবা শরিফের দরজা ও বাইরের গিলাফ দুটোই মজবুত রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। গিলাফের মোট পাঁচটি টুকরো বানানো হয়। চারটি টুকরো চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরোটি দরজায় লাগানো হয়। টুকরোগুলো পরস্পর সেলাইযুক্ত।

প্রতিবছর ৯ জিলহজ কাবা শরিফের গায়ে পরানো হয় এই নতুন গিলাফ। সেই দিন হজের দিন। হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পান। নতুন গিলাফ পরানোর সময় পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন রেশম দিয়ে তৈরি করা হয় কাবার গিলাফ। রেশমকে রং দিয়ে কালো করা হয়। পরে গিলাফে বিভিন্ন দোয়ার নকশা আঁকা হয়। গিলাফের উচ্চতা ১৪ মিটার। ওপরের তৃতীয়াংশে ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়া বন্ধনীতে কোরআনের আয়াত লেখা। বন্ধনীতে ইসলামি কারুকাজ করা একটি ফ্রেম থাকে। বন্ধনীটি সোনার প্রলেপ দেওয়া রুপালি তারের মাধ্যমে এমব্রয়ডারি করা। এই বন্ধনীটা কাবা শরিফের চারদিকে পরিবেষ্টিত। ৪৭ মিটার লম্বা বন্ধনীটি ১৬টি টুকরায় বিভক্ত। বন্ধনীটির নিচে প্রতি কোনায় সূরা আল-ইখলাস লেখা। নিচে পৃথক পৃথক ফ্রেমে লেখা হয় পবিত্র কোরআনের ৬টি আয়াত। এতে এমব্রয়ডারি করে ওপরে সোনা ও রুপার চিকন তার লাগানো হয়।

কাবাঘর:
কাবাঘর প্রায় বর্গাকৃতির। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে আনুমানিক ৪৫ ও ৪০ ফুট। কাবা শরিফের দরজা একটি এবং দরজাটি কাবাঘরের পূর্ব দিকে অবস্থিত।

মিযাবে রহমত:

বায়তুল্লাহর উত্তর দিকের ছাদে (হাতিমের মাঝ বরাবর) যে নালা বসানো আছে, তাকে ‘মিযাবে রহমত’ বলা হয়। এই নালা দিয়ে ছাদের বৃষ্টির পানি পড়ে।


হাতিম:

কাবাঘরের উত্তর দিকে অর্ধবৃত্তাকার উঁচু প্রাচীরে ঘেরা একটি স্থান।


জমজম কূপ:

দুনিয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যত অনুপম নিদর্শন আছে, এর মধ্যে মক্কা শরিফে অবস্থিত ‘জমজম কূপ’ অন্যতম। জমজম কূপের ইতিহাস কমবেশি সবারই জানা। এ কূপের পানি সর্বাধিক স্বচ্ছ, উৎকৃষ্ট, পবিত্র ও বরকতময়। এ পানি শুধু পিপাসাই মেটায় না; এতে ক্ষুধাও নিবৃত্ত হয়। এ সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘এ পানি শুধু পানীয় নয়; বরং খাদ্যের অংশ এবং এতে পুষ্টি রয়েছে।’


জান্নাতুল মুআল্লা:

মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকে মক্কা শরিফের বিখ্যাত কবরস্থান।


জাবাল-ই-নূর বা গারে হেরা:

মক্কার সর্বাধিক উঁচু পাহাড়। এখানে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ধ্যানমগ্ন থাকতেন। এখানে ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় সর্ব প্রথম ওহি নাজিল হয়।


জাবাল-ই-সাওর বা গারে সাওর:

মসজিদুল হারামের পশ্চিমে হিজরতের সময় এই প্রকাণ্ড সুউচ্চ পাহাড়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.) তিন দিন অবস্থান করেছিলেন।


জাবাল-ই-রহমত:

আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত। এ পাহাড়ে সর্ব প্রথম নবী হজরত আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল হয়। এখানে তিনি বিবি হাওয়া (আ.)-এর সাক্ষাৎ পান। ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের খুতবাও এখান থেকে দিয়েছিলেন।


মক্কায় আরো যা দেখবেন

মসজিদুল হারাম (কাবা শরিফ)
সাফা ও মারওয়া
মক্কা লাইব্রেরি
মক্কা জাদুঘর (মক্কা-মদিনার দুই হারাম শরিফে ব্যবহৃত জাদুঘর)
কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা
আল-খায়েফ মসজিদ (মিনা)
হজ পালন করতে মক্কায় কাবা শরিফ ছাড়াও, মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতের ময়দান, নামিরাহ মসজিদ প্রভৃতি ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরে আসা যায়।

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা