Skip to main content

আসহাবুল উখদুদ: গর্তওয়ালাদের কাহিনী


গর্তে আগুন জালিয়ে ঈমানদাদেরকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করার একাধিক ঘঠনার বর্ণনা পাওয়া যায়।
এ থেকে জানা যায় এ ধরনের ঘঠনা একাধিক বার ঘটেছে।হযরত সুহাইব রুমী (রা) রাসূল (সা:) থেকে বর্ণনা করেছন, এক বাদশার নিকট একজন যাদুকর ছিল। বৃদ্ধবয়সে সে বাদশাহকে বলল একজন যুবককে আমার কাছে নিয়োগ কর সে আমার কাছ থেকে যাদু শিখে নেবে।কথামত বাদশাহ এক যুবককে নিযুক্ত করল।যুবকটি যাদুকরের নিকট আসা যাওয়ার পথে একজন পাদ্রীর ( সম্ভবত হযরত ঈসা (আ:) এর অনুসারী )সাথে পরিচিত হল। পাদ্রীর কথায় প্রভাবিত হয়ে সে ঈমান আনল। এমনকি তার শিক্ষায় সে অন্ধদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে এবং কুষ্ট রোগ নিরাময় করতে লাগল।যুবকটি তাওহীদের প্রতি ঈমান এনেছে শুনে বাদশাহ প্রথমে পাদ্রীককে হত্যা করল।তারপর যুবকটিকে হত্যার জন্য বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেও তাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হল।শেষে যুবকটি বলল তুমি আমাকে হত্যা করতে হলে জনসমাবেশে "বিইমি রাব্বিল গোলামী " ( যুবকটি রবের নামে) বাক্য উচ্চারণ করে আমাকে তীর মারো তাতেই আমি মারা যাবো।বাদশাহ তাই করলা । ফলে যুবকটি মারা গেল।ঘঠনা দেখে উপস্তিত লোকেরা চিৎকার করে বলল আমরা এ ছেলেটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম। (সুবহানআল্লাহ )
বাদশাহ এতে ক্রুদ্ব হয়ে রাস্তার পাশে গর্ত করে তাতে আগুন জালালো । যারা ঈমান ত্যাগ করতে রাজি হয়নি তাদের সকলকে এই গর্তে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হল ।
[মুসনাদে আহমদ, মুসলিম,নাসাঈ,তিরমিযী] ।


হযরত আলী [রা:] থেকে আন্য একটা ঘটনা বর্নিত হয়েছে । ইরানের এক বাদশাহ শরাব পান করে নিজের বোনের সাথে ব্যভিচার করে এবং উভয়ের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক স্তাপিত হয় । কথাটি প্রকাশ হয়ে গেলে বাদশাহ জনসমক্ষে ঘোষনা করে দেয় যে, আল্লাহ বোনের সাথে বিবাহ হালাল করে দিয়েছেন । লোকেরা তার কথা মানতে রাজী হয়নি । ফলে সে নানান ধরনের শাস্তি দিয়ে লোকদের একথা মানতে বাধ্য করে ।এমনকি সে অগ্নি কুণ্ড জ্বালিয়ে যে ব্যক্তি একথা মানতে প্রস্তুত হয়নি তাকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করতে থাকে । হযরত আলী বলেন,তখন থেকেই অগ্নি উপাসকদের মধ্যে রক্ত সম্পর্কের আত্বীয়কে বিয়ে করার পদ্বতি প্রচলিত হয়।
(ইবনে জাবির)

তাফসীর ইবনে কাসীরের বর্ণনায়:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের সত্তর বছর পূর্বে ইয়েমেনের নাজরানে ইউসুফ জুনয়াস নামক এক জালিম বাদশাহ ছিল। সে এতটাই জালিম ছিল যে, নিজের রাজ্যত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সাধারণ মানুষের উপর জাদু করে তাদের কে বশ করে রাখত যেন কেউ তার বিরুদ্ধে বিদ্রহ বা প্রতিবাদ করতে না পারে। এর জন্য তার এক বিখ্যাত জাদুকর ছিল যে মানুষের উপর জাদু টুনা চালাত এবং গ্রহ নক্ষত্র দেখে রাজা কে ভবিষ্যতের খবরাদি দিত। কিন্তু সেই জাদুকর বৃদ্ধ হয়ে পড়েছিল তাই রাজার কাছে সে আবদার করল তাকে একটা চালাক চতুর বালক দেওয়া হোক যাকে সে মৃত্যুর পূর্বে তার সকল জ্ঞান শিখিয়ে যেতে পারে।
তখন রাজার আদেশে অনেক যাচাই বাছাই এর পর এক বালক কে নির্বাচন করা হল। তার নাম ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে তামের। রাজা তাকে জাদুকরের কাছে বিদ্যা অর্জন করতে আদেশ দিল। তো যথারীতি সে জাদুকরের কাছে আসা যাওয়া করতে লাগল।কিন্তু আসা যাওয়ার পথে জনৈক খৃষ্টান পাদ্রী বসবাস করত। সেই যুগে খৃষ্ট ধর্মই ছিল সত্য ধর্ম। তো সে পাদ্রির কথা বার্তাই কিছু টা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। এর পর আশা যাওয়ার পথে সে পাদ্রীর কাছ থেকেও জ্ঞান অর্জন করতে থাকে। কিন্তু বাড়িতে ফিরে আসতে এবং জাদুকরের কাছে যেতে তার তার দেরি হয়ে যেত পাদ্রীর মজলিসে বসার কারণে। তাই উভয় পক্ষের লোকেরা যাতে সন্দেহ না করে সেমতে পাদ্রী তাকে বলে দিল যদি জাদুকর তাকে জিজ্ঞাস করে দেরি হল কেন তবে বলবে বাড়ি থেকে দেরিতে ছেড়েছে আর যদি বাড়ির লোকেরা শোনে দেরি হল কেন তবে বলবে পাদ্রী দেরিতে ছেড়েছে এবং কোন অবস্থাতেই যেন পাদ্রীর কথা না বলে।
একবার আসা যাওয়ার পথে যুবকের দৃষ্টিতে এক হিংস্র জন্তু পড়ে যে মানুষ কে যাতায়াতে সমস্যার সৃষ্টি করছিল। তো সে একটি পাথর নিয়ে মনে মনে বলল যদি পাদ্রী সত্য হয় তবে যেন জন্তুটি মারা যায় আর জাদুকর সত্য হয় তবে যেন জন্তুটি না মরে। এর পর পাথরটি নিক্ষেপ করলে জন্তুর মৃত্যু ঘটে। এই খবরের মাধ্যমে যুবকের ক্ষমতার কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে রাজদরবারের জনৈক অন্ধ ব্যাক্তি এসে তার অন্ধত্ব মোচনের জন্য আবেদন করে। বালক বলে সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ্‌ তায়ালা তুমি সত্য ধর্ম গ্রহণ করলে আমি চেষ্টা করে দেখব। অন্ধ এই শর্ত মেনে নিলে যুবক তার জন্য দুয়া করতেই সে দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায় এবং সত্য ধর্ম গ্রহণ করে।
এই সংবাদ বাদশাহর কানে যাওয়ার পর উভয় কে গ্রেফতার করা হল অন্ধ ব্যাক্তিকে ধর্ম ত্যাগ করাতে না পারায় নির্মম ভাবে হত্যা করা হল। বালক কে অনেক নির্যাতন করার পর সে পাদ্রীর নাম বলে দেয়। পাদ্রিকে এনে করাত দ্বারা মাথা থেকে চিড়ে ফেলে হত্যা করা হল। অতঃপর বালকের অতিকষ্টকর মৃত্যু আচ্ছাদনের জন্য রাজা তাকে পাহাড়ের উপর থেকে ফেলে হত্যা করার নির্দেশ দিল কিন্তু যারা বালকের সাথে পাহাড়ে গেল তারাই বরং ভূকম্পনের ফলে পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেল। যুবক তখন নিরাপদে ফিরে এল। তার পর রাজা তাকে সমুদ্রে নিয়ে নিক্ষেপ করার আদেশ দিল। কিন্তু যারা তাকে নিয়ে গেল তারাই সমুদ্রে নিমজ্জিত হল এবং বালক নিরাপদে ফিরে এল।
রাজা কোন ভাবেই তাকে হত্যা করতে সমর্থ হল না। অবশেষে বালক রাজা কে বলল তুমি শুধু আমার কথা মত কাজ করলেই আমাকে মারতে পারবে। তখন রাজা বলল ঠিক আছে। বালক বলল এই শহরের সবচেয়ে বড় মাঠে সকল মানুষ কে জড়ো কর অতঃপর তাদের সম্মুখে আমার তূণীর থেকে একটি তীর নিয়ে '' এই যুবকের পালনকর্তাই নামে '' বলে নিক্ষেপ করলেই আমি মারা যাব। সেই অনুযায়ী কাজ করা হলে বালক টি মারা গেল। এই বিস্ময়কর ঘটনা দেখে সকলে কতিপয় কিছু দরবারী ছাড়া বলে উঠল আমরা এই বালকের পালনকর্তার উপর ঈমান আনলাম।
কিন্তু রাজা এতে পেরেশান হয়ে গেল এবং তার সভাসদদের পরামর্শে বিরাট বিরাট গর্ত খনন করে তাতে অগ্নি পূর্ণ করে ঘোষণা যেই এই নতুন ধর্ম ত্যাগ না করবে তাকেই অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হবে। কিন্তু কেউই তাতে রাজী হল না বর্ং অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া কেই বেছে নিল। কিন্তু মাত্র এক জন মহিলা তার কোলের বাচ্চার কারণে অগ্নিতে ঝাপ দিতে ইতস্তিত বোধ করছিল তখন আল্লাহ্‌ তায়ালা বাচ্চার জবান খুলে দেন এবং বাচ্চা বলে উঠল 'আম্মা আপনি সত্যের উপর আছেন' তখন মহিলা নিশ্চিত হয়ে আগুনে ঝাপ দিল।
বিভিন্ন রেওয়াতে এই সংখ্যা বার হাজার বলা হয়েছে। এক রেওয়াতে আছে, মুমিন দের অগ্নিতে নিক্ষেপ করার পর অগ্নি স্পর্শ করার পূর্বেই আল্লাহ্‌ তাদের রূহ কবজ করে নেন। এভাবে তিনি তাদেরকে দহন যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করেন। অতঃপর এই আগুন আরও বেশী প্রজ্বলিত হয়ে লেলিহান শিখা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে যে সব লোকেরা মুমিন দের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার তামাশা দেখছিল তারাও এই আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়।
কেবল বাদশা কোনরকমে পালাতে সক্ষম হয় কিন্তু আত্নরক্ষার জন্য সাগরে ঝাপ দেয় এবং সেখানেই সলিল সমাধি লাভ করে।এর সত্তর বছর পর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেন। এই ঘটনা আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালা সূরা বুরুজের মাধ্যমে মুমিনদের জানিয়ে দেন।

তার পর সময় কেটে যায় এবং উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) মুসলিম উম্মাহর খলিফা হন। এই সময়কার একটা ঘটনা মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক রাহিমাহুল্লাহ এর রেওয়াতে বর্ণিত আছে, ......ইয়েমেনে যে স্থানে ঐ বালকের সমাধি ছিল। ঘটনা ক্রমে কোন এক প্রয়োজনে সেই জায়গা খনন করা হয়। এ সময় তার লাশ সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। লাশটি উপবিষ্ট অবস্থায় ছিল এবং হাত কোমরদেশে রাখা ছিল। বাদশাহের তীর মুলত সেখানেই লেগেছিল। কোন এক দর্শক কৌতূহল বশত তার হাত টি সরিয়ে দিলে ক্ষতস্থান থেকে তাজা রক্ত নির্গত হতে থাকে আবার হাতটি পূর্বের ন্যায় রেখে দিলে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। তার তাকে একটি আংটি পাওয়া যায় যাতে আরবি হরফে লেখা ছিল (আল্লাহ্‌ আমার পালনকর্তা)।, ইয়েমেনের গভর্নর হযরত উমর (রাযি) এর কাছে এই ঘটনার সংবাদ দিলে তিনি উত্তরে লিখে পাঠান তাকে আংটি সহ পূর্বের অবস্থায় দাফন করে দাও এবং আর যাতে বোঝা না যায় সেমতে কবর সমান করে দাও। পরে তা বাস্তবায়িত হয় এখন আর সেই কবরের চিহ্ন পাওয়া যায় না।
সূত্র:
1.তাফসীর ইবনে কাসীর অষ্টাদশ খণ্ড পেইজ (১০৫-১২২)
2.তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন অষ্টম খণ্ড পেইজ (৭৩৮-৭৪৪)

সুহাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্ব যুগে একজন বাদশাহ ছিল এবং তাঁর (উপদেষ্টা) এক জাদুকর ছিল। জাদুকর বার্ধক্যে উপনীত হলে বাদশাহকে বলল যে, ‘আমি বৃদ্ধ হয়ে গেলাম তাই আপনি আমার নিকট একটি বালক পাঠিয়ে দিন, যাতে আমি তাকে জাদু-বিদ্যা শিক্ষা দিতে পারি।’ ফলে বাদশাহ তার কাছে একটি বালক পাঠাতে আরম্ভ করল, যাকে সে জাদু শিক্ষা দিত। তার যাতায়াত পথে এক পাদ্রী বাস করত। যখনই বালকটি জাদুকরের কাছে যেত, তখনই পাদ্রীর নিকটে কিছুক্ষণের জন্য বসত, তাঁর কথা বালকটির ভালো লাগত। ফলে সে যখনই জাদুকরের নিকট যেত, তখনই যাওয়ার সময় সে পাদ্রীর কাছে বসত। যখন সে পাদ্রীর কাছে আসত জাদুকর তাকে (তার বিলম্বের কারণে) মারত। ফলে সে পাদ্রীর নিকটে এর অভিযোগ করল। পাদ্রী বলল, ‘যখন তোমার ভয় হবে যে, জাদুকর তোমাকে মারধর করবে, তখন তুমি বলবে, আমার বাড়ির লোক আমাকে (কোনো কাজে) আটকে দিয়েছিল। আর যখন বাড়ির লোকে মারবে বলে আশঙ্কা হবে, তখন তুমি বলবে যে, জাদুকর আমাকে (কোনো কাজে) আটকে দিয়েছিল।’
সুতরাং সে এভাবেই দিনাতিপাত করতে থাকল। একদিন বালকটি তার চলার পথে একটি বিরাট (হিংস্র) জন্তু দেখতে পেল। ঐ (জন্তু)টি লোকের পথ অবরোধ করে রেখেছিল। বালকটি (মনে মনে) বলল, ‘আজ আমি জানতে পারব যে, জাদুকর শ্রেষ্ঠ না পাদ্রী?’ অতঃপর সে একটি পাথর নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ! যদি পাদ্রীর বিষয়টি তোমার নিকটে জাদুকরের বিষয় থেকে পছন্দনীয় হয়, তাহলে তুমি এই পাথর দ্বারা এই জন্তুটিকে মেরে ফেল। যাতে (রাস্তা নিরাপদ হয়) এবং লোকেরা চলাফেরা করতে পারে।’ (এই দু‘আ করে) সে জন্তুটাকে পাথর ছুঁড়ল এবং তাকে হত্যা করে দিল। এরপর লোকেরা চলাফেরা করতে লাগল। বালকটি পাদ্রীর নিকটে এসে ঘটনাটি বর্ণনা করল। পাদ্রী তাকে বলল, ‘বৎস! তুমি আজ আমার চেয়ে উত্তম। তোমার (ঈমান ও একীনের) ব্যাপার দেখে আমি অনুভব করছি যে, শীঘ্রই তোমাকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সুতরাং যখন তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তখন তুমি আমার রহস্য প্রকাশ করে দিও না।’
আর বালকটি (আল্লাহর ইচ্ছায়) জন্মান্ধত্ব ও কুষ্ঠরোগ ভালো করত এবং অন্যান্য সমস্ত রোগের চিকিৎসা করত। (এমতাবস্থায়) বাদশাহর জনৈক দরবারী অন্ধ হয়ে গেল। যখন সে বালকটির কথা শুনল, তখন প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে তার কাছে এল এবং তাকে বলল যে, ‘তুমি যদি আমাকে ভালো করতে পার, তাহলে এ সমস্ত উপঢৌকন তোমার।’ সে বলল, ‘আমি তো কাউকে আরোগ্য দিতে পারি না, আল্লাহ তা‘আলাই আরোগ্য দান করে থাকেন। যদি তুমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন কর, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করব, ফলে তিনি তোমাকে অন্ধত্বমুক্ত করবেন।’ সুতরাং সে তার প্রতি ঈমান আনল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরোগ্য দান করলেন। তারপর সে পূর্বেকার অভ্যাস অনুযায়ী বাদশাহর কাছে গিয়ে বসল। বাদশাহ তাকে বলল, ‘কে তোমাকে চোখ ফিরিয়ে দিল?’ সে বলল, ‘আমার প্রভু!’ সে বলল, ‘আমি ব্যাতীত তোমার অন্য কেউ প্রভু আছে?’ সে বলল, ‘আমার প্রভু ও আপনার প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ।’ বাদশাহ তাকে গ্রেপ্তার করল এবং তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ (চিকিৎসক) বালকের কথা বলে দিল। অতএব তাকে (বাদশার দরবারে) নিয়ে আসা হল। বাদশাহ তাকে বলল, ‘বৎস! তোমার কৃতিত্ব ঐ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যে, তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করছ এবং আরো অনেক কিছু করছ।’ বালকটি বলল, ‘আমি কাউকে আরোগ্য দান করি না, আরোগ্য দানকারী হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ।’ বাদশাহ তাকেও গ্রেপ্তার করে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ পাদ্রীর কথা বলে দিল।

অতঃপর পাদ্রীকেও (তার কাছে) নিয়ে আসা হল। পাদ্রীকে বলা হল যে, ‘তুমি নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যাও।’ কিন্তু সে অস্বীকার করল। ফলে তার মাথার সিঁথিতে করাত রাখা হল। করাতটি তাকে (চিরে) দ্বিখন্ডিত করে দিল; এমনকি তার দুই ধার (মাটিতে) পড়ে গেল। তারপর বাদশাহর দরবারীকে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বলা হল যে, ‘তোমার ধর্ম পরিত্যাগ কর।’ কিন্তু সেও (বাদশার কথা) প্রত্যাখান করল। ফলে তার মাথার সিঁথিতে করাত রাখা হল। তা দিয়ে তাকে (চিরে) দ্বিখন্ডিত করে দিল; এমনকি তার দুই ধার (মাটিতে) পড়ে গেল। তারপর বালকটিকে নিয়ে আসা হল। অতঃপর তাকে বলা হল যে, ‘তুমি ধর্ম থেকে ফিরে এস।’ কিন্তু সেও অসম্মতি জানাল। সুতরাং বাদশাহ তাকে তার কিছু বিশেষ লোকের হাতে সঁপে দিয়ে বলল যে, ‘একে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও, তার উপরে তাকে আরোহণ করাও। অতঃপর যখন তোমরা তার চূড়ায় পৌঁছবে (তখন তাকে ধর্ম-ত্যাগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর) যদি সে নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যায়, তাহলে ভাল। নচেৎ তাকে ওখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দাও।’ সুতরাং তারা তাকে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের উপর আরোহণ করল। বালকটি আল্লাহর কাছে দু‘আ করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তাদের মুকাবেলায় যে ভাবেই চাও যথেষ্ট হয়ে যাও।’ সুতরাং পাহাড় কেঁপে উঠল এবং তারা সকলেই নীচে পড়ে গেল।
বালকটি হেঁটে বাদশার কাছে উপস্থিত হল। বাদশাহ তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার সঙ্গীদের কি হল?’ বালকটি বলল, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের মোকাবেলায় আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছেন।’
বাদশাহ আবার তাকে তার কিছু বিশেষ লোকের হাতে সঁপে দিয়ে বলল যে, ‘একে নিয়ে তোমরা নৌকায় চড় এবং সমুদ্রের মধ্যস্থলে গিয়ে তাকে ধর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর! যদি সে স্বধর্ম থেকে ফিরে আসে, তাহলে ঠিক আছে। নচেৎ তাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ কর।’ সুতরাং তারা তাকে নিয়ে গেল। অতঃপর বালকটি (নৌকায় চড়ে) দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি এদের মোকাবেলায় যেভাবে চাও আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাও।’ সুতরাং নৌকা উল্টে গেল এবং তারা সকলেই পানিতে ডুবে গেল।
তারপর বালকটি হেঁটে বাদশাহর কাছে এল। বাদশাহ বলল, ‘তোমার সঙ্গীদের কী হল?’ বালকটি বলল, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের মোকাবেলায় আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছেন।’ পুনরায় বালকটি বাদশাহকে বলল যে, ‘আপনি আমাকে সে পর্যন্ত হত্যা করতে পারবেন না, যে পর্যন্ত না আপনি আমার নির্দেশিত পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।’ বাদশাহ বলল, ‘তা কী?’ সে বলল, ‘আপনি একটি মাঠে লোকজন একত্রিত করুন এবং গাছের গুড়িতে আমাকে ঝুলিয়ে দিন। অতঃপর আমার তূণ থেকে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রাখুন, তারপর বলুন, ‘‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম!’’ (অর্থাৎ এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে মারছি।) অতঃপর আমাকে তীর মারুন। এভাবে করলে আপনি আমাকে হত্যা করতে সফল হবেন।’
সুতরাং (বালকটির নির্দেশানুযায়ী) বাদশাহ একটি মাঠে লোকজন একত্রিত করল এবং গাছের গুঁড়িতে তাকে ঝুলিয়ে দিল। অতঃপর তার তূণ থেকে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রেখে বলল, ‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম!’ (অর্থাৎ এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে মারছি।) অতঃপর তাকে তীর মারল। তীরটি তার কান ও মাথার মধ্যবর্তী স্থানে (কানমুতোয়) লাগল। বালকটি তার কানমুতোয় হাত রেখে মারা গেল। অতঃপর লোকেরা (বালকটির অলৌকিকতা দেখে) বলল যে, ‘আমরা এ বালকটির প্রভুর উপর ঈমান আনলাম।’ বাদশার কাছে এসে বলা হল যে, ‘আপনি যার ভয় করছিলেন তাই ঘটে গেছে, লোকেরা (আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছে।’ সুতরাং সে পথের দুয়ারে গর্ত খোঁড়ার আদেশ দিল। ফলে তা খোঁড়া হল এবং তাতে আগুন জ্বালানো হল। বাদশাহ আদেশ করল যে, ‘যে দ্বীন থেকে না ফিরবে তাকে এই আগুনে নিক্ষেপ কর’ অথবা তাকে বলা হল যে, ‘তুমি আগুনে প্রবেশ কর।’ তারা তাই করল। শেষ পর্যন্ত একটি স্ত্রীলোক এল। তার সঙ্গে তার একটি শিশু ছিল। সে তাতে পতিত হতে কুণ্ঠিত হলে তার বালকটি বলল, ‘আম্মা! তুমি সবর কর। কেননা, তুমি সত্যের উপরে আছ।’’

উৎসঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন, হাদীস নম্বরঃ ৩১, অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ, তাওহীদ পাবলিকেশন

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা