নারিকেলের খোল এখন থেকে আর ফেলনা নয়। এই খোল দিয়ে মাগুরা শহরতলীর বরুনাতৈল গ্রামের আব্দুল হান্নান বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি করছেন বিভিন্ন ডিজাইনের বোতাম ও মহিলাদের নানা রকম অলংকার। এ থেকে হান্নান নিজে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি তার এ কারখানায় বোতাম তৈরির কাজ করে এলাকার নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
হান্নান জানান, ঢাকার গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন দোকানে চীন থেকে আমদানি করা কাঠের বোতাম দেখে সর্ব প্রথম তার এই উদ্ভাবনি চিন্তা মাথায় আসে। তখন তার হাতে যথেষ্ঠ পুজি ছিল না।এ কারণে এক রকম ঝুকি নিয়েই এক সময়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি ও কৃষক শেখ হান্নান ৫ বছর আগে সামান্য এক টুকরো জমি বিক্রি করে কিনে আনেন বোতাম তৈরি ৭টি মোটর চালিত ড্রিল মেশিন।বসত বাড়ির একটি কক্ষে সাত জন মহিলা শ্রমিক নিয়ে শুরু হয় তার যাত্রা। প্রথম চালানেই ঢাকার বেশ কিছু গার্মেন্টসে সুনাম অর্জন করে তার তৈরি করা বোতাম। এরপর কঠোর পরিশ্রম তার এই পথচলাকে আরো বিস্তৃত করে।
এখন তার বাড়িতে বসেছে ১৬টি মেশিন। যেখানে প্রতিদিন কাজ করছেন এলাকার দরিদ্র পরিবারের ১৫ থেকে ২০ জন মেয়ে ও গৃহবধূ।আর তাদের হাতে প্রতিমাসে তৈরি হচ্ছে তিন থেকে চার লাখ বোতাম।
শুধু বোতাম নয় বোতাম তৈরির পর যে অতিরিক্ত অংশ থাকে তা থেকে তৈরি হচ্ছে মহিলাদের ব্যবহার উপযোগী সুদৃশ্য কানের দুল। বোতাম ও অলংকার তৈরির পর নারিকেলের খোলার বাকি অংশ সরবরাহ করা হচ্ছে ঢাকা, ময়মনসিংহ, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা মশার কয়েল কারখানায়।
হান্নান জানান, নারিকেলের খোল থেকে বোতাম তৈরির জন্য প্রথমে ড্রিল মেশিন দিয়ে বোতামের সাইজ অনুযায়ি নির্দিষ্ট বৃত্তাকারে পৃথক করা হয়। পরে অপর ড্রিল মেশিন দিয়ে ছিদ্র করা হয়। এরপর ফিনিশিং। এখানে কর্মরত মহিলারা জানায়, নিজ গৃহে কাজ করার পর এ কারখানায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টা শ্রম দিয়ে প্রতিদিন তারা গড়ে দুই থেকে তিন হাজার বোতাম তৈরি করে মাসে সাত থেকে নয় হাজার টাকা আয় করে থাকেন।
গৃহবধূ পারভিনা বেগম জানায়, তার স্বামীর একার আয়ে পরিবার স্বচ্ছলভাবে চলে না। এখানে বোতাম তৈরি কাজ করে যে টাকা পান তা থেকে তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন সংসারের কাজের ফাঁকে গড়ে ৫/৬ ঘণ্টা সময় এখানে অনায়াসেই দেওয়া সম্ভব। তার মতো কর্মরত মহিলাদের প্রত্যেকেরই মতামত একই রকম।
এ ব্যাপারে শেখ হান্নান জানান, বাগেরহাট জেলা ও স্থানীয়ভাবে ভাংড়ি বিক্রেতাদের কাছ থেকে নরিকেলের খোল কিনে তিনি বোতাম তৈরির কাজ করে থাকেন। প্রথম প্রথম এ খোলের দাম কম থাকলেও এখন সংকটের কারণে প্রতি কেজি খোল ছয় টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। প্রতি এক হাজার নারিকেলের খোলা থেকে ছোট বড় সাইজের ৩০ থেকে ৫০ হাজার বোতাম তৈরি হয়। যার উৎপাদন খরচ হয় পাঁচ হাজার ছয় হাজার টাকা। বড় সাইজের প্রতি এক হাজার বোতাম প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও কমন সাইজের শার্টের বোতাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
তার তৈরি বোতাম ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, সদর ঘাটের পাইকারি বাজার ও পাটের তৈরি বিভিন্ন জিনিস পত্রের কারখানায় বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া বায়াররা কিনে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে থাকে বলে হান্নান জানান।
তিনি বলেন, ‘পুজি সংকটের কারণে তার এ কারখানার পরিধি বাড়াতে পারছেন না। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খুব সহজেই এ শিল্পে বড় ধরণের বিস্তৃতি ঘটানো সম্ভব।’
হান্নান বলেন, ‘সেই সাথে বিদেশ থেকে বোতাম আমদানির প্রয়োজনিয়তা হ্রাসসহ কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।’
রাইজিংবিডি
Comments
Post a Comment