Skip to main content

বাগানের মালিকদের কাহিনী



সূরা ক্বালামে বর্ণিত বাগান মালিকদের কাহিনী:

আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয় আমি এদেরকে পরীক্ষা করেছি, যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে। যখন তারা কসম করেছিল যে, অবশ্যই তারা সকাল বেলা বাগানের ফল আহরণ করবে।” আর তারা ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেনি। অতঃপর তোমার রবের পক্ষ থেকে এক প্রদক্ষিণকারী (আগুন) বাগানের ওপর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে গেল, আর তারা ছিল ঘুমন্ত।ফলে তা (পুড়ে) কালো বর্ণের হয়ে গেল। তারপর সকাল বেলা তারা একে অপরকে ডেকে বলল, ‘তোমরা যদি ফল আহরণ করতে চাও তাহলে সকাল সকাল বাগানে যাও’। তারপর তারা চলল, নিম্নস্বরে একথা বলতে বলতে- যাতে সেখানে কোন অভাবী যেন প্রবেশ করতে না পারে’। আর তারা ভোর বেলা দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি নিয়ে সক্ষম অবস্থায় (বাগানে) গেল। তারপর তারা যখন বাগানটি দেখল, তখন তারা বলল, ‘অবশ্যই আমরা পথ ভুলে এসেছি’। ‘বরং আমরা বঞ্চিত’। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ব্যক্তিটি বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, তোমরা কেন (আল্লাহর) তাসবীহ পাঠ করছ না’? তারা বলল, ‘আমরা আমাদের রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমরা যালিম ছিলাম’। তারপর তারা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করতে লাগল। তারা বলল, ‘হায়, আমাদের ধ্বংস! নিশ্চয় আমরা সীমালঙ্ঘনকারী ছিলাম’।
সূরা ক্বালাম ১৭-৩১


বিভিন্ন তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে যে, ইয়েমেনের প্রদেশের কোন একটি বাগানের মালিক ছিল একজন আল্লাহভীরু লোক। সে বাগানের ফসলের নির্দিষ্ট একটি অংশ গরিব-মিসকিনগণকে দান করতঃ। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার তিন পুত্র তার মালিক হলো। তারা ভাবল যে, আমাদের লোকসংখ্যা অনেক। আমাদের পরিবার-পরিজনের তুলনায় বাগানের ফসল সম্পদ খুবই অপ্রতুল। সুতরাং গরিব-মিসকিনগণকে ফসলের নির্দিষ্ট একটি অংশ দান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব পর নয়; কিন্তু কোনো এক ছেলে এই চিন্তাধারার বিপরীত ছিল। সে গরিব-মিসকিনের প্রতি ছিল সহানুভূতিশীল। তবে তার কথায় অন্যান্যরা কান দিল না। তারা প্রতিজ্ঞা করল যে, আগামী দিন সকালবেলা আমরা ভিক্ষুকদল আসবার পূর্বেই গিয়ে ফসল কেটে আনবো; কিন্তু এ শপথ ও প্রতিজ্ঞায় আল্লাহর ইচ্ছাকে শমিল করল না। অর্থাৎ, তারা এ কথা বলল না যে, আল্লাহ চাইলে [ইনশাআল্লাহ] আমরা আগামীকল্য সকাল বেলা গিয়ে ফসল কেটে আনবো। এ ইনশাআল্লাহ না বলা এবং গরিব-মিসকিনগণকে না দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের অপরাধে তাদের ঘুমে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাদের বাগানের উপর গজব নজিল করলেন। ফলে প্রচন্ড মরুঝড়-বায়ু বাগানের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাগানের ফসলকে মথিত করে সম্পূর্ণরূপে বিনাশ ও ধ্বংশ করে ফেলল। বাগানটি দেখলে মনে হতো যে, মথিত হয়ে চর্বিত ফসলের ন্যায় হয়ে গেছে। অতঃপর অতি প্রত্যুষে তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল যে, তোমরা ফসল কাটতে চাইলে সকাল সকাল বাগনে চলো। ভিক্ষুকের দল ভিড় জমাবার পূর্বেই ফসল তুলে আনতে হবে। অতঃপর তারা পূর্ব সিদ্ধান্তমাফিক খুব দাম্ভিকতা ও অহংকারী মনে সকালবেলা ফসল কাটার জন্য রওয়ানা হলো। আর পরস্পর চুপে চুপে বলাবলি করতে লাগল- সাবধান! আজ যেন কোন প্রকারে তোমাদের কাছে ভিক্ষুকের দল ভিড় জমাতে না পারে। তারা আসার পূর্বেই ফসল তোলার কাজ শেষ করতে হবে। ভিক্ষুক ও গরিবদেরকে তাড়িয়ে দেওয়ার মনোভাব নিয়ে তারা বাগানে পৌঁছল। বাগানের বিনাশ ও ধ্বংসযজ্ঞ অবলোকন করে বলল- আমরা পথ ভুলে হয়তো অন্য কোনো বাগানে এসেছি। আমাদের বাগানতো এটা নয়। আমাদের বাগান কত সুন্দর, সুজলা-সুফলা শস্যভরা, আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি, কিন্তু বাগানের চতুর্দিকের সীমানা ও আলামত দেখে তারা চেতনা ফিরে পেল। তাদের নিজেদের গর্ব-অহংকার ও আল্লাহর সাথে নাফরমানি করার কথা মনে হলো। আর বলল, আমাদের উপর আল্লাহর লানত এসেছে, আমাদেরকে ফসল হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। তখন তাদের মধ্যে যে লোকটি স্বভাব-চরিত্রে উত্তম ছিল এবং ভিক্ষুকদের প্রতি সংবেদনশীল ছিল, সে বলল, আমি কি পূর্বে তোমাদেরকে আল্লাহর সাথে নাফরমানি না করার জন্য বলেছিলাম না? এটা আল্লাহর সাথে নাফরমানিকরণ, ভিক্ষুকগণকে বঞ্চিত করার ইচ্ছা এবং গর্ব-অহংকারের পরিণতি ছাড়া কিছুই নয়। এখনও সময় রয়েছে, গুনাহ হতে তওবা করো। আল্লাহর মহিমা ঘোষণা এখনও কেন করছ না? সর্বহারা হওয়ার পরই তাদের বিভ্রান্তির দশা কাটল। তারা মনে মনে তওবা করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার মহিমা প্রকাশ করছি। আপনিই মহাশক্তিধর। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমরা সীমালঙ্ঘণ করে ফেলেছি। ক্ষমা না করলে আমাদের আর কোনা উপায় নেই।

অতঃপর তারা পরস্পর দোষারোপ করতে লাগল। পরিশেষে নিজেদের ভাগ্য বিড়ম্বনার জন্য নিজেদেরকেই দোষী সাব্যস্ত করল এবং বলল, এটা আল্লাহর সাথে বিদ্রোহমূলক আচরণের জন্যই হয়েছে। তারা আল্লাহর নিকট খাঁটি অন্তরে তওবা করে আশা করল যে, আল্লাহ মহা ও অতিশয় দয়ালু। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি যে, তিনি নিজগুণে আমাদের ক্ষমা করে এ বাগানের পরিবর্তে উত্তম বাগান আমাদেরকে দান করতে পারেন। আমরা আমাদের যাবতীয় সমস্যা তাঁর নিকট অর্পণ করলাম এবং তাঁর দিকেই মনোনিবেশ করলাম। তাফসীরকারগণ লিখেছেন- তাদের এই তওবার ফলে এবং নিজেদের যাবতীয় সমস্যা আল্লাহর নিকট সোপর্দকরণ এবং সত্যদীনের ধারক হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা এটার তুলনায় অনেক অনেক গুণ উত্তম ও সুজলা-সুফলা শস্যভরা উদ্যান দান করে অপূর্ব সম্পদশালী করেছিলেন।

http://islamicquestions.org/2014/11/05/

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা