Skip to main content

যারা ডেইরি ফার্ম দিতে আগ্রহী


ডেইরি ফার্ম যারা দিতে আগ্রহী তাদের সাথে কিছু কথা শেয়ার করা দরকার। অনেকেই প্রশ্নকরেন ভাল জাতের গাভী বা বকনা কোথায় পাব ? এ প্রশ্নটা আমি নিজেও করেছি অনেক তবে এখন বোকা বোকা লাগে তাই করিনা। ভাল জাত বা উন্নত জাত বলতে আমরা আসলে কি বুঝি সেটা আমরা নিজেরাও জানি না।
আমার খুব অবাক লাগে কোন একজন গাভীর ছবি দেখেই % বলে দেয়। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে তাদের কাছে আপনাদের ব্যারোমিটার টা আমার কাছে ভাড়া দিবেন। রাগ করবেন না যারা এ কাজটা করেন তারা আজ থেকে অভ্যাস টা ভুলে যান। এর পরিবর্তে জিজ্ঞেসা করুন এর মা কত লিটার দুধ দিত, কোন ধরনের বীজ দিয়েছে, কোন এলাকা থেকে গাভীটা কিনেছিলেন , বকনা হলে আরও জিজ্ঞেসা করতে হবে দেশী গরুর সাথের প্রথম ক্রস কিনা অথবা দেশী ষাড় দিয়ে পাল দিয়েছিল কিনা(অনেক সময় গাভী কনসিভ না করলে দেশী ষাড় দিয়ে বীজ দেয়)। % আর দুধ দেয়া এ জিনিস না এটা কখনও এক করবেন না।কেন বলছি আমি নিজেও এইসব প্রশ্ন করেছি আর অভিজ্ঞ শিক্ষিত খামারীরা হেসেছে। আর গাভী বা বকনা কিনতে গেলে উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করলে দাম আরও বেশী চায় এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আপনাদের সাথে নাও হতে পারে। তবে হ্যা একটা আদর্শ গাভী কিনতে হলে অবশ্যই বেশী দাম দিবে হবে। কেউই তার সোনার ডিম পারা হাস বিক্রি করতে চায় না।
এখন আসি কিভাবে ভাল জাত ডেভেলপ করব, একটা কথা প্রথমেই বলে রাখি ভাল মানের সিমেনের বিকল্প নেই। ভাল মানের সিমেন ছাড়া আপনার জাত ডেভেলপ সম্ভবনা। একটা কথা মনে রাখতে হবে আমাদের দেশে জগা খিচুরি পদ্ধতিতে বীজ দেওয়া হয়। দেশী গাভীকে যে বীজ দেওয়া হয় আবার ৩-৪ প্রজন্ম পরের গাভীকে ও সেই বীজ দেওয়া হয়। তাহলে দাড়াল কি? উচিৎ স্টেপ বাই স্টেপ বীজ দেওয়া তাহলে জাত ঠিক ভাবে বুঝা যাবে।ব্যাপার টা পরিস্কার করি, ধরেন আজ আমার একটা গাভী ডাকল কর্মী এসে বীজ দিয়ে গেল। আমাদের তরফ থেকে সকল ধরনের দায় দায়িত্ব শেষ। ধরুন যথা রিতি বাচ্চা জন্ম দিল বকনা । এখন এই বকনাটা ভাল জাতের হয়ে থাকলে ১৪-১৫মাসে ডাকলে ওই কর্মিকে আবার ডেকে বীজ দিলাম এবং আবার নিশ্চিন্ত মনে ঘুম দিলাম ৯ মাস পর দেখলাম বাচ্চার পা ঠিক মত কাজ করছে না , চোখে দেখতে পারছে না, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং বেশী খারাপ হলে বাছুর মারা যাচ্ছে । ব্যাস মন খারাপ করে নিজেকে অথবা ম্যনেজার কে মন্দ তথা বলে ২ দিন পরে ভুলে যাব। কেন এমন হল একবার ও তো মনে প্রশ্ন জাগলো না আসল যে অপরাধি সে তো ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে গেল। কে অপরাধি জানেন আপনি নিজে আর কর্মি ।আপনার দোষ হচ্ছে আপনি রেকর্ড রাখেননি কোন ষারের বীজ দিলেন আর কর্মি দোষ কি? তার কাজ তো সফল ভাবে হয়েই গেছে। অধিকাংশ এলাকাতে সরকারী বা বেসরকারী যারা কর্মী তাদের এই সম্ভন্ধে ধারনা খুবই কম। দেখা গেছে তারা ১০০০ পিস বীজ এনেছে সেটা নাইট্রোজেনের জারে দির্ঘদিন ধরে আছে , যখন প্রথমে গাভী টি ডাকল তখন ওই সিমেন দিল বাছুর জন্ম নিল এর পর এই বাছুর কে আবার ওই একই সিমেন দিল এখন যে বাচ্চা জন্ম দিল সেটা স্বাভাবিক নাও হতে পারে। মাকে যে বীজ দেয়া হয়েছে বাচ্চাকেও সেই বাবার বীজ দেয়া হয়েছে,যেটা জেনেটিক্যালি ডিসওর্ডার এটাকে ইনব্রিড বলে।এভাবে হলে গাভীর জাত উন্নয়ন হবে না উল্টো নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হবে। এই ব্যপারটা এখন খুব বেশী হবে, দেখা গেছে একই এলাকাতে গাভী/বকনা কিনলে এটা হবার সম্ভবনা আরও বেশী।তাই একটু খেয়াল করতে হবে।
যাই হোক আমরা যে ফ্রিজিয়ন জাতের গাভী বা বকনা কিনি সে গুলো গড়পরতা কমপক্ষে ৩-৪ প্রজন্মতো হবেই(হবেই বলছি কারন ফ্রিজয়ান ক্রস অনেক বছর ধরে হয়ে আসছে) তাই সেখানে যদি ৭৫% বীজ দেওয়া হয় তাহলে কাঙ্খিত ফলাফল আশা করা যায়না। দেশে এখন বিদেশী ১০০% বীজ পাওয়া যায়। অনেকের কথ্য মতে ১০০% বীজের বাছুর টিকে না এই কথার সাথে আমি এক মত না এটা আমাদের জানার ভূল। যারা সফল খামারী তাদের খামারে সব গাভীকে ১০০% বীজ দেয় তাদের বাছুর তো মরেনা । যে কথাটা বলতে চাচ্ছি কিছু দিন আগে আমি একটা পোষ্ট করেছিলাম সিমেনের মানের ব্যাপারে সেখানে রাব্বানী ভাই Semex কম্পানির বাংলাদেশ শাখার ঠিকানা সহ মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছিল। আমার ফার্ম যেহেতু বরিশাল বিভাগে তাই ভাল জাতের বীজ আমি খুজছিলাম যাই হোক আমি প্রতিষ্ঠানের মালিকের সাথে কথা বললাম যার সরমর্ম হচ্ছে আমরা যা জানতাম তার অনেক কিছুই ভূল। আমি তাকে বললাম যাদের বীজ দিয়েছেন তাদের অন্তত কিছু ফার্মের নাম বলতে, লিষ্ট শুনে আমি নিজেই অবাক আমার বন্ধু লিষ্টে তারা কিন্তু আছেন কিন্তু তারা একবারও বলেন নি যে এই Semex এর সিমেন ব্যবহারের ফলাফল আনেক ভাল। পরে আমাকে একজন খামারির নম্বন দেয়া হল যে অনেক ধরনের টেষ্ট করেছেন খামার নিয়ে। যাইহোক নাম্বর নিয়ে ফেইসবুকে সার্চ করে দেখলাম কামরুল ভাই আমার বন্ধুর তালিকায় আছেন। আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। আমি অনেক অভিজ্ঞ খামারি দেখেছি কি আমার মনে হয় তার জ্ঞানের কাছে কিছুনা। কথা বলার পর আমি অনেক কিছু শিখলাম তার কাছে যা আমি কোন দিন শুনিনি বা বইতে পড়িনি। তার সব থেকে একটা কথাই আমার ভাল লেগেছে হাবি যাবি ৩০-৪০ টা গাভীর দরকার নেই ভাল জাতের ১০টা গাভীর বেশি দরকার নেই। এই যে ভাল জাতের বলছি তার শুরু কিন্তু সে ২০১০ সালে হাটি হাটি পা করে শুরু করেছিলেন। তিনি নিজে জাত ডেভেলপ করছেন কিভাবে যানেন , তিনি কিন্তু ২৫-৩০ লিটার গাভি খুজেন নি সাধারন মানের ফ্রিজিয়ন গাভী ৬-৭ লিটার দুধের গাভী দিয়ে আজ প্রথম বিয়ানে ২৩-২৫ লিটার দুধ দিচ্ছে। যেভাবে করেছেন তার পথে আমরা কখনও যাইনা । কামরুল ভাই এই সাধারন মানের গাভীকে Semex এর সিমেন ব্যবহার করে এই বাছুর পেয়েছেন । Semex এর কয়েক ধরনের সিমেন বাংলাদেশে পাওয়া যায় তার সব কয়টিই সে ব্যবহার করেছে । তাদের মধ্যে সব থেকে ভাল ফলাফল পেয়েছেন CHARPENTIER MAGOT http://www.semex.com/bull/0200HO05164&lang=KR নামের ষাড়ের থেকে। এছাড়া তিনি WWS (http://university.wwsires.com/) সিমেন ও ব্যবহার করেছেন। কামরুল ভাইয়ের উদহরন হিসেবে আমি দিলাম এ ছাড়া আরও অনেক এ আছেন যারা এটা সম্ভন্ধে ভাল ভাবে জানেন। আমি কথা গুলো এ জন্যই বললাম যে ভাল জাতের গাভী/বকনার থেকে ভাল যাতের বীজের গুরুত্ব অনেক।
একজন খামারীর গাভী পালনে উন্নত ব্যবস্থাপনা, সঠিক প্রজনন পদ্ধতি, সুষম খাদ্য তৈরী, রোগদমন ও প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ের উপর আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। তবে সব কিছুর পূর্বে প্রয়োজন গাভীর খামার ব্যবস্থাপনার উপর পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ, সেই সাথে মাঝারি/বড় আকারের একটি খামারে কমপক্ষে ৬/৮ মাস জড়িত থাকার বাস্তব অভিজ্ঞতা।
ডেইরি ফার্ম নির্মাণ করে দুগ্ধ উৎপাদন করাটা মোটেও মুখ্য বিষয় নয়। আমি দেখেছি ছোট একটি পরিকল্পনা করে কীভাবে এসব মানুষগুলোকে বদলে দেওয়া যায়। যেমন ২৫টি গরু নিয়ে ছোট একটি ডেইরি ফার্ম স্থাপন করলে একদিকে এটি যেমন নির্দিষ্ট একটি দলের প্রোটিন চাহিদা মেটাবে, অন্যদিকে তেমনি তুলনায় বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করে বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস, উৎকৃষ্টমানের জৈবসার উৎপাদন করে রীতিমতো এ খাতে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিরাট বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

অমিত সম্ভাবনার এই দেশে প্রত্যাশার আলো বার বার চারিদিকে দ্যুতি ছড়িয়ে নিভে গেছে। অধরা সাফল্য দুর থেকে হাতছানি দিয়ে শুধু স্বপ্নই দেখিয়েছে। স্বপ্ন আর বাস্তবে ধরা দেয়নি। তার পরও আমরা স্বপ্ন দেখি এক সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের।সোনা ফলানো মাটি আছে। সহজ-সরল পরিশ্রমী মানুষ আছে। নেই শুধু সৎ পরিকল্পনা, সৎ বাস্তবায়ন ও সৎ মানসিকতা।আমরা সবাই যারা ফেসবুক কমুনিটিতে আছি তারা নিজেরাও যানেনা আমরা অবচেতন মনে অনেক গুরুত্বপূর্ন তথ্য জানি। এই যে শেয়ার করি কেন করি কিসের জন্য করি তা আমরা হয়ত বলতে পারব না কিন্তু আমরা যে ধিরে ধিরে একটা শক্তিশালী একটা বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি তা টের পাচ্ছি। এটা অনেক ভাল একটা দিক, যে কোন সেক্টরে বিপ্লব আনার জন্য এধরনের বন্ধনের বা শেয়ারের বিকল্প নেই। তবে আমাদের মধ্যেও সীমাবদ্ধতা আছে। অনেক দু:খের সাথে বলতে হয় যারা অভিজ্ঞ খামারী তাদের লেখা বা উপস্হিতি না দেখে আমাকে বারবার ব্যথিত করে। একটা পোষ্টে একটা লাইক বা কেউ যখন সাহায্য চায় একটু পরামর্শ সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে বলে আমি আশা করি।আমাদের সবার ফ্রেন্ড লিষ্টে অনেক ভেটেনারি ডাক্তার আছেন তাদের যদি আর একটু একটিভ করা যেত আমার মনে হয় আমাদের উন্নত হতে আর সময় লাগবে না।হোক না বাংলাদেশের রেনেসা বিপ্লবটা এখান থেকে শুরু ।
যারা শুরু করতে চান তারা নিচের মেনুয়ালটা অবশ্যই পরবেন ,বাংলাতে এর থেকে ভাল বই আর পাইনি

কার্টেসি:  
আহম্মদ ডেইরী এবং ফিশারিজ, Kamrul Hasan.

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা