Skip to main content

জীবিকা ও আল্লাহর উপর ভরসার গুরুত্ব


হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে এসতেগফার পড়বে আল্লাহ তায়ালা তাকে সব দুশ্চিন্তা ও সঙ্কটাপন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেবেন এবং তার ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন।’ (আবু দাউদ)।

জীবনের দিনগুলো নির্দিষ্ট। প্রতিটি ধাপের রয়েছে শেষ। প্রতিটি নিশ্বাস-প্রশ্বাসই আল্লাহ তায়ালার নিকট সংরত। সারা জীবন বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। স্থায়ীভাবে বসবাসের কোনো সুযোগ নেই। একমাত্র স্থায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার। সৃষ্টির জন্য মৃত্যু অনিবার্য। তাই সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। যার জন্য যা সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার ভাগ্যে অবশ্যই জুটবে।

আচ্ছা মানুষের জীবিকা যদি মানুষের হাতে হতো তাহলে কেমন হতো? কত ব্যক্তিই না অত্যাচারের স্বীকার হতো। অসম বণ্টন আর হিংসা-বিদ্বেষের কবলে পড়ত। এটা মানুষের হাতে ছেড়ে দিলে একে অপরের ওপর কর্তৃত্ব করত। এমনকি একে অন্যকে ভুলে যেত। অবহেলা আর অবজ্ঞা করত।

অতএব পবিত্র সেই সত্তা যিনি কোনো অত্যাচার ও হিংসা ছাড়াই মানুষকে জীবিকা দান করেন। এত্রে তিনি কাউকে ভুলে যান না এবং কারও ত্রে অবহেলা পোষণ করেন না। বরং তিনি তাঁর অনুগ্রহে নেয়ামত দান করেন। তিনি দয়া করেন। তিনি দয়ালু এবং সর্বজ্ঞানী। তিনি এরশাদ করেন,
‘এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না? আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রম্নত সবকিছু। নভোম-ল ও ভূম-লের পালনকর্তার কসম, তোমাদের কথাবার্তার মতোই এটা সত্য।’
(সূরা আজ জারিয়াত : ২১-২৩)

জীবিকার চিন্তা মানুষকে গ্রাস করে ফেলেছে। ব্যসত্ম করে রেখেছে তাদের বিবেক-বুদ্ধি। কিছু মানুষ তো অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কথা শুনলেই ঘাবড়ে যায়। জীবনযাত্রার সমস্যা আর আর্থিক উত্থান-পতনে অস্থির হয়ে যায়। একথা যেন তাদের মনেই থাকে না যে, মানব ও জিন জাতিসহ সব সৃষ্টির জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই গ্রহণ করেছেন। চাই তারা কাফের হোক বা মোমিন, দুর্বল হোক বা শক্তিশালী, ছোট হোক বা বড়।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
‘আর পৃথিবীতে কোনো বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন। তিনি জানেন, তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছু এক সুবিন্যসত্ম কিতাবে রয়েছে।’ (সূরা হুদ : ৬)। ‘এমন অনেক জন্তু আছে, যারা তাদের খাদ্য সঞ্চিত রাখে না। আল্লাহই রিজিক দেন তাদের এবং তোমাদেরও। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’
(সূরা আনকাবুত : ৬০)

জীবিকার জন্য অযথা অস্থিরতা কাম্য নয়। সবাই তার বরাদ্দকৃত সময় ও জীবিকা শেষ করেই দুনিয়া থেকে বিদায় হবে। ইবনে আদম দুনিয়ায় আসার আগেই আল্লাহ তায়ালা তার জীবিকা লিখে রেখেছেন।
ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকে তার মায়ের পেটে ৪০ দিন শুক্র হিসেবে থাকে। অতঃপর রক্তপি- হয়ে থাকে। অতঃপর মাংসপি– রূপামত্মরিত হয়। এরপর তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয়, সে তার মাঝে রুহ প্রবেশ করে আর তাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়- জীবিকা, তার সময় বা বয়স এবং সে কি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।’
(বোখারি মুসলিম)।

কিছু আমল রয়েছে যা রিজিক বাড়ায়। জীবিকার ত্রে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এর শিা দিয়েছেন। শরিয়ত এসব আমলের ব্যাপারে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে।
এসব আমলের মাঝে সর্বপ্রথম হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা। যে আল্লাহকে ভয় করবে, তাকওয়াহ অর্জন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে এমনভাবে রিজিক দান করবেন যে সে তা ভাবতেও পারবে না। আর আল্লাহ তায়ালার অঙ্গীকার সত্য।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন।’
(সূরা তালাক :২-৩)

এমনভাবে তাকে জীবিক দান করবেন যে, সে ধারণাও করতে পারবে না। যে জায়গার ব্যপারে তার আশা-প্রত্যাশাও ছিল না। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেজগারি অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও পার্থিব নেয়ামতগুলো উন্মুক্ত করে দিতাম।’
(সূরা আরাফ : ৯৬)

বান্দা তার পালনকর্তাকে ভয় করবে গোপনে এবং প্রকাশ্যে। ভয় করবে তার নিজের ত্রে, তার পরিবার-পরিজন, অর্থ-সম্পদ, কাজ-কর্ম ও তার সব কাজের ত্রে।
রিজিক বাড়ে এমন আমলের মধ্যে আরেকটি হচ্ছে অধিক পরিমাণে এসেত্মগফার পড়া এবং তা নিয়মিত করা। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী নুহ (আ.) এর কথা বলতে গিয়ে বলেন,
‘অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার মা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যমত্ম মাশীল। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সমত্মান-সমত্মতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’
(সূরা নুহ : ১০-১২)।

অন্যদিকে হুদ (আ.) এর কথা বলতে গিয়ে এরশাদ করেন,
‘আর হে আমার কওম! তোমাদের পালনকর্তার কাছে তোমরা মা প্রার্থনা কর, অতঃপর তারই প্রতি মনোনিবেশ করো; তিনি আসমান থেকে তোমাদের ওপর বৃষ্টিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির ওপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মতো বিমুখ হইও না।’
(সূরা হুদ : ৫২)

হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে এসতেগফার পড়বে আল্লাহ তায়ালা তাকে সব দুশ্চিমত্মা ও সঙ্কটাপন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেবেন এবং তার ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন।’ (আবু দাউদ)

কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘এতে বোঝা যায়, এসেত্মগফারে রিজিক বাড়ে এবং বৃষ্টি বর্ষিত হয়।’

জীবিকার প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার ওপর যথাযথ ভরসা করা। হৃদয় মাওলার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। সব ত্রে তার কাছেই সমর্পণ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করবে সে তার সব প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট এবং তার সব অকল্যাণ ও তিকর বিষয় তিনি প্রতিহত করবেন এবং ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন।

হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালার ওপর সঠিক ও যথাযথভাবে ভরসা করো, তাহলে তিনি তোমাদের পাখির মতো জীবিকা দান করবেন, ক্ষুধার্ত অবস্থায় সবাই বের হয় আর পেট পূর্তি করে বিকালে বাসায় ফিরে।’ (আহমাদ, তিরমিজি)।

ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘তাওয়াক্কুল ও ভরসার ত্রে এই হাদিসটি মূলনীতি হিসেবে গৃহীত। আর তাওয়াক্কুল ও ভরসা জীবিকার বিভিন্ন আমল ও মাধ্যমের অন্যতম।’

পূর্বসূরিদের অনেকে বলতেন, ‘আল্লাহর ওপর ভরসা কর তাহলে কোন কষ্ট-কেশ ছাড়াই তোমার রিজিকের ব্যবস্থা হবে।’

এত্রে একটি বিষয় ভালো করে জানা প্রয়োজন যে, মাধ্যম গ্রহণ করা বা কোনো কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা তাওয়াক্কুল বা ভরসার পরিপন্থী নয়, বরং জ্ঞানী আলেম-ওলামারা বলেন যে, প্রচেষ্টা করা এবং মাধ্যম গ্রহণ করাই হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য। আর হৃদয় দিয়ে ভরসা করা তার প্রতি ঈমানের নামামত্মর।
আর মাধ্যম গ্রহণ করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

‘তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব তোমরা তার কাঁধে বিচরণ করো এবং তার দেয়া রিজিক আহার করো।’
(সূরা মুলক : ১৫)।
‘কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে।’
(সূরা মুজ্জাম্মিল : ২০)।

ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন জীবিকার সন্ধান না করে বসে বসে এই কথা না বলে, হে আল্লাহ আমাকে রিজিক দাও, কারণ তোমরা জান আকাশ কখনও স্বর্ণ-রুপা বর্ষণ করে না।’

বরকতময় জীবিকা পাওয়ার আরেকটি অন্যতম সূত্র হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যার জীবিকার প্রসারতা ও জীবনের ব্যাপ্তি তাকে আনন্দিত করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।’
(বোখারি)।

অতএব ভালোবাসার বীজ বুননে অপমৃত্যু থেকে বাঁচতে, দীর্ঘায়ু পেতে এবং প্রসারিত জীবিকা পেতে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার রয়েছে আশ্চর্য প্রতিক্রিয়া এবং প্রত্য ফলাফল।

আল্লাহ তায়ালার হেকমত ও অনুগ্রহের মধ্যে এটি একটি যে, তিনি দান-সদকা ও আল্লাহর পথে খরচ করার মধ্যেও অফুরমত্ম জীবিকার ব্যবস্থা রেখেছেন। তাই যে আল্লাহর রাসত্মায় খরচ করবে তিনি তার বিপরীতে তাকে দান করেন এবং তার কাছে যা আছে তাতে বরকত দান করেন।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেন। তিনি উত্তম রিজিকদাতা।’
(সূরা সাবা : ৩৯)।

দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা এর পরিবর্তে কিছু দিয়ে এবং তাতে বরকত দিয়ে এর বিনিময় দান করেন। আর আখেরাতে উত্তম প্রতিদান ও বিশাল সওয়াবের মাধ্যমে বিনিময় দান করেন।

কোরআনে এসেছে, ‘শয়তান তোমাদের অভাব-অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশস্নীলতার আদেশ দেয়। পামত্মরে আল্লাহ তোমাদের নিজের প থেকে মা ও বেশি অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।’
(সূরা বাকারাহ : ২৬৮)।

ইবনে আববাস (রা.) বলেন, ‘দুটি বিষয় আল্লাহর প থেকে, আর দুটি বিষয় শয়তানের প থেকে। শয়তান অভাব-অনটনের ভয় দেখায়, আর বলে দান করো না, নিজের কাছে রেখে দাও। ভবিষ্যতে তোমার প্রয়োজন হবে। আর অশস্নীলতার আদেশ দেয়। অন্যদিকে আল্লাহ তায়ালা গোনাহ ও পাপের জন্য মার ওয়াদা করেন এবং রিজিকে অনুগ্রহের অঙ্গীকার করেন।’

তাই বেশি করে দান করা চাই। এতে আল্লাহর প থেকে বিশাল ও ব্যাপক বিনিময়ের সুসংবাদ রয়েছে। তিনি এরশাদ করেন, 
‘বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিজিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপো বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন।’
(সূরা তালাক : ৭)

গরিব, অসহায় ও অভাবী মানুষের প্রতি সদয় ও তাদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য আল্লাহ মানুষের রিজিক বাড়িয়ে দেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমরা তোমাদের দুর্বলদের মাধ্যমে সাহায্যপ্রাপ্ত ও রিজিকপ্রাপ্ত হও।’ (বোখারি)।

বর্তমান সময়ে আমাদের প্রতিবেশী, কাছের মানুষ, ভাই-বন্ধুরা অনেকেই কঠিন ও দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। তাদের খোঁজখবর নেয়া প্রয়োজন। তাদের প্রতি সদয় আচরণ করা এবং তাদের দান করা প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময় দান করবেন। রিজিকে বরকত দান করবেন, বরং এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তার সাহায্য-সহযোগিতা এবং সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়িয়ে দেবেন।

http://www.sagorkonnya.com/17685

মুসলিম মাত্রেই বিশ্বাস করেন যে তার আয় ও উপার্জন, জীবন ও মৃত্যু,  এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায় যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা।
যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু। 

আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন,
﴿هُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ ذَلُولٗا فَٱمۡشُواْ فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُواْ مِن رِّزۡقِهِۦۖ وَإِلَيۡهِ ٱلنُّشُورُ ١٥﴾ [الملك: ١٥]  

‘তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।’ {সূরা আল-মুলক, আয়াত : ১৫} 

আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের মধ্যে কুরআন ও হাদীস রোমন্থিত ১৪টি আমলের কথা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

প্রথম আমল : তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা 
আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তাঁর নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‌
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا ٣ ﴾ [الطلاق : ٢،  ٣]
   
‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’
{সূরা আত-তালাক, আয়াত : ২-৩}

অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং আনুগত্য দেখাবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে। 

দ্বিতীয় আমল : তাওবা ও ইস্তেগফার করা  
অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বাড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন, 
﴿ فَقُلۡتُ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارٗا ١٠ يُرۡسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيۡكُم مِّدۡرَارٗا ١١ وَيُمۡدِدۡكُم بِأَمۡوَٰلٖ وَبَنِينَ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ جَنَّٰتٖ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ أَنۡهَٰرٗا ١٢ ﴾ [نوح: ١٠،  ١٢] 

‘আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’।
{সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২} 

হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
« مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ».

‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’
[আবূ দাঊদ : ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১][1]  

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,   
« مَنْ أَكْثَرَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ». 
‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ 
[বাইহাকী : ৬৩৬; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত।] 

তৃতীয় আমল : আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা 
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন : আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, 
« مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ». 

‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ [বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯] 

চতৃর্থ আমল : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। যেমনটি অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে। তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা‘ব রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন,    
قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّى أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِى فَقَالَ « مَا شِئْتَ ». قَالَ قُلْتُ الرُّبُعَ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قُلْتُ النِّصْفَ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قَالَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قُلْتُ أَجْعَلُ لَكَ صَلاَتِى كُلَّهَا. قَالَ « إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ ». قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ.

আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে।
[তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ (আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি ‘হাসান’ সহীহ।)]  

পঞ্চম আমল : আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা 
আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা বাড়ে বৈ কি। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, 
﴿ قُلۡ إِنَّ رَبِّي يَبۡسُطُ ٱلرِّزۡقَ لِمَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦ وَيَقۡدِرُ لَهُۥۚ وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ٣٩ ﴾ [سبا: ٣٩]    
‘বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযকদাতা।’
{সূরা আস-সাবা’, আয়াত : ৩৯} 

ষষ্ঠ আমল : বারবার হজ-উমরা করা 
হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
« تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ».
‘তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।’
[তিরমিযী : ৮১৫; নাসাঈ : ২৬৩১] 

সপ্তম আমল : দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা 
মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান।
সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 
« هَلْ تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُونَ إِلاَّ بِضُعَفَائِكُمْ » .

‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’
[বুখারী : ২৮৯৬] 

অষ্টম আমল : ইবাদতের জন্য ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়া 
আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
« إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِى أَمْلأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِلاَّ تَفْعَلْ مَلأْتُ يَدَيْكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ ».

‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’
[তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭] 

নবম আমল : আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা
আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা ঘটে। যেমনটি অনুধাবিত হয় নিচের আয়াত থেকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, 
﴿ ۞وَمَن يُهَاجِرۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ يَجِدۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُرَٰغَمٗا كَثِيرٗا وَسَعَةٗۚ وَمَن يَخۡرُجۡ مِنۢ بَيۡتِهِۦ مُهَاجِرًا إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ يُدۡرِكۡهُ ٱلۡمَوۡتُ فَقَدۡ وَقَعَ أَجۡرُهُۥ عَلَى ٱللَّهِۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٠٠ ﴾ [النساء : ١٠٠]  

‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
{সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১০০} 

আয়াতের ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখ সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহুদ বলেন, স্বচ্ছলতা অর্থ রিজিকে প্রশস্ততা। 

দশম আমল : আল্লাহর পথে জিহাদ
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« وَجُعِلَ رِزْقِي تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِي  ».

‘আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।’
[মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বাইহাকী : ১১৫৪; শু‘আবুল ঈমান : ১৯৭৮৩]

একাদশ আমল : আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা 
সাধারণভাবে আল্লাহ যে রিজিক ও নিয়ামতরাজি দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা এবং তাঁর স্তুতি গাওয়া। কারণ, শুকরিয়ার ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,   
﴿ وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ ٧ ﴾ [ابراهيم: ٧]  
‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’

{সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৭} 
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা শুকরিয়ার বদৌলতে নেয়ামত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য আল্লাহর বাড়ানোর কোনো সীমা-পরিসীমা নাই। 

দ্বাদশ আমল : বিয়ে করা 
আজকাল মানুষের দুনিয়ার প্রাচুর্য ও বিলাসের প্রতি আসক্তি এত বেশি বেড়েছে, তারা প্রচুর অর্থ নেই এ যুক্তিতে প্রয়োজন সত্ত্বেও বিয়ে বিলম্বিত করার পক্ষে রায় দেন। তাদের কাছে আশ্চর্য লাগতে পারে এ কথা যে বিয়ের মাধ্যমেও মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তো তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,    
﴿ وَأَنكِحُواْ ٱلۡأَيَٰمَىٰ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَإِمَآئِكُمۡۚ إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٣٢ ﴾ [النور : ٣٢]  

‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’
{সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩২} 
উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুমা বলতেন, ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।’

ত্রয়োদশ আমল : অভাবের সময় আল্লাহমুখী হওয়া এবং তার কাছে দু‘আ করা 
রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তা‘আলাই রিজিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, 
﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ﴾ [غافر: ٦٠]  
‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’

{সূরা আল-মু‘মিন, আয়াত : ৬০} 

এ আয়াতে আল্লাহ দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন। যাবৎ না তা কবুলে পথে কোনো অন্তরায় না হয়।  যেমন ওয়াজিব তরক করা, হারাম কাজে জড়ানো, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাপ পরিচ্ছদ পরা ইত্যাদি এবং কবুলকে খানিক বিলম্বিতকরণ। আল্লাহর কাছে দু‘আয় বলা যেতে পারে, 

‘হে রিজিকদাতা আমাকে রিজিক দান করুন, আপনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পবিত্র সুপ্রশস্ত রিজিক চাই। হে ওই সত্তা, দানের ঢল সত্ত্বেও যার ভাণ্ডারে কমতি হয় না। হে আল্লাহ, আমাকে আপনি আপনার হালাল দিয়ে আপনার হারাম থেকে যথেষ্ট করে দিন আর আপনার দয়া দিয়ে আপনি ছাড়া অন্যদের থেকে যথেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা দিয়েই সন্তুষ্ট বানিয়ে দিন। আর যা আমাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।’ 

অভাবকালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো হবে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
« مَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ وَمَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِاللَّهِ فَيُوشِكُ اللَّهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ ». 

‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন।
[তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮] 

চতুর্দশ আমল : গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর সদা অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করে যাওয়া। 
গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা- এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয় যেমন পূর্বোক্ত আয়াতগুলো থেকে অনুমান করা যায়। 
তবে সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকার জন্য আসি নি। তাই দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে উচিত হবে আখিরাতকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয়া। আমাদের এদেন অবস্থা দেখে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, 
﴿ بَلۡ تُؤۡثِرُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا ١٦ وَٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰٓ ١٧ ﴾ [الاعلى: ١٦،  ١٧]  

‘বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী।’
{সূরা আল-আ‘লা, আয়াত : ১৬-১৭} 

আর পরকালের মুক্তি ও চিরশান্তিই যার প্রধান লক্ষ্য তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে তুষ্ট হতে চেষ্টা করা। যেমন : হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আ‘স রাদিআল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
« قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللَّهُ بِمَا آتَاهُ ».
‘ওই ব্যক্তি প্রকৃত সফল যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাসও নয়) পর্যাপ্ত পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও করেছেন।
[মুসলিম : ২৪৭৩; তিরমিযী : ২৩৪৮; আহমদ : ৬৫৭২] 

পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের এসব উপায়-উপকরণ যোগাড় করে রিজিক তথা হালাল উপার্জনে উদ্যোগী ও সফল হবার তাওফীক দান করেন। তিনি যেন আপনাদের রিজিক ও উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেন। আমীন।

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা