আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে আশরাফুল মাখলূকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আর পৃথিবীকে করেছেন মানুষের জন্য বসবাস উপযোগী আবাস।
যমীনকে করেছেন মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ إِلَى طَعَامِهِ-
أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاءَ صَبًّا- ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا- فَأَنْبَتْنَا
فِيْهَا حَبًّا- وَعِنَبًا وَقَضْبًا- وَزَيْتُوْنًا وَنَخْلاً- وَحَدَائِقَ غُلْبًا-
وَفَاكِهَةً وَأَبًّا- مَتَاعًا لَكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ-
‘মানুষ তার খাদ্যের
প্রতি লক্ষ্য করুক, আমরাই প্রচুর পানি
বর্ষণ করেছি, এরপর আমরা ভূমিকে
বিদীর্ণ করেছি, অতঃপর তাতে উৎপন্ন
করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সব্জি, যয়তুন, খেজুর, ঘন উদ্যান,
ফল এবং ঘাস তোমাদের ও তোমাদের
চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে’ (আবাসা ৮০/২৪-৩২)।
আল্লাহ তা‘আলা যমীনকে যেমন মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান
উৎস বানিয়েছেন, তেমনি তা হতে উৎপাদিত
ফসলের যাকাত ফরয করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْفِقُوْا
مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَلاَ
تَيَمَّمُوْا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيْهِ إِلَّا أَنْ
تُغْمِضُوْا فِيْهِ وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা
যা উপার্জন কর এবং আমরা যা ভূমি হতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই তন্মধ্যে যা উৎকৃষ্ট
তা ব্যয় কর এবং তার নিকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় করার সংকল্প কর না; অথচ তোমরা তা গ্রহণ করবে না, যদি না তোমরা চোখ বন্ধ করে থাক। আর জেনে রেখ যে,
নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত,
প্রশংসিত’ (বাক্বারাহ ২/২৬৭)। তিনি অন্যত্র বলেন,
وَهُوَ الَّذِيْ أَنْشَأَ جَنَّاتٍ مَعْرُوْشَاتٍ
وَغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا أُكُلُهُ وَالزَّيْتُوْنَ
وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ
وَآتُوْا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ وَلاَ تُسْرِفُوْا إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ-
‘তিনিই লতা ও বৃক্ষ-উদ্যানসমূহ
সৃষ্টি করেছেন এবং খেজুর গাছ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট
খাদ্যশস্য, যায়তুন ও ডালিমও সৃষ্টি
করেছেন; এগুলি একে অপরের সদৃশ
এবং বিসদৃশও। যখন তা ফলবান হয় তখন তার ফল আহার করবে আর ফসল কাটার দিনে তার হক (যাকাত)
প্রদান করবে এবং অপচয় করবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে
ভালবাসেন না’ (আন‘আম ৬/১৪১)।
কৃষিপণ্যের
যাকাতের নিছাব ও পরিমাণ
কৃষিপণ্যের
যাকাতের নিছাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَيْسَ فِيْمَا أَقَلُّ مِنْ خَمْسَةِ
أَوْسُقٍ صَدَقَةٌ-
‘পাঁচ
ওয়াসাক-এর কম উৎপন্ন ফসলের যাকাত নেই’।[1]
‘ওয়াসাক’-এর
পরিমাণ : ১ ওয়াসাক সমান ৬০ ছা‘। অতএব ৫
ওয়াসাক সমান ৬০×৫=৩০০
ছা‘। ১ ছা‘ সমান
২ কেজি ৫০০ গ্রাম হলে ৩০০ ছা‘ সমান
৭৫০ কেজি হয়। অর্থাৎ ১৮ মন ৩০ কেজি। এই পরিমাণ শস্য বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত হলে ১০
ভাগের ১ ভাগ যাকাত ফরয। আর নিজে পানি সেচ দিয়ে উৎপাদন করলে ২০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত
ফরয।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,
فِيْمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُوْنُ أَوْ
كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ، وَمَا سُقِىَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ-
‘বৃষ্টি
ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা নালার পানিতে উৎপন্ন ফসলের উপর ‘ওশর’ (দশ
ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর ‘অর্ধ
ওশর’ (বিশ
ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব’।[2]
ফুটনোট:
[1]. বুখারী
হা/১৪৮৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ঐ, বঙ্গানুবাদ
(তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/১২০ পৃঃ; মুসলিম হা/৯৭৯; মিশকাত হা/১৭৯৪।
[2]. বুখারী হা/১৪৮৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ঐ, বঙ্গানুবাদ ২/১১৯ পৃঃ; মিশকাত হা/১৭৯৭।
[2]. বুখারী হা/১৪৮৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ঐ, বঙ্গানুবাদ ২/১১৯ পৃঃ; মিশকাত হা/১৭৯৭।
বৃষ্টির পানি
ও কৃত্রিম সেচ উভয় মাধ্যমে উৎপাদিত শস্যের যাকাতের পরিমাণ
যে
শস্য শুধুমাত্র বৃষ্টির পানি অথবা শুধুমাত্র কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় না।
বরং কিছু অংশ বৃষ্টির পানিতে এবং কিছু অংশ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়, সে
শস্যের যাকাত বের করার নিয়ম হল, যদি
বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশী হয় তাহলে العشر অর্থাৎ
দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর কৃত্রিম সেচের পরিমাণ বেশী হলে نصف العشر অর্থাৎ
বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর যাদি অর্ধাংশ বৃষ্টির পানিতে এবং অর্ধাংশ
কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তাহলে ثلاثة أرباع العشر অর্থাৎ দশ ভাগের তিন-চতুর্থাংশ যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ কারো ২০ মণ
ধান উৎপন্ন হওয়ার জন্য বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশী হলে তার দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ
দুই মণ যাকাত দিতে হবে। আর কৃত্রিম সেচের পরিমাণ বেশী হলে বিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ
এক মণ যাকাত দিতে হবে। আর অর্ধাংশ বৃষ্টির পানি ও অর্ধাংশ নিজের সেচের মাধ্যমে
উৎপন্ন হলে তার দশ ভাগের তিন-চতুর্থাংশ অর্থাৎ এক মণ বিশ কেজি যাকাত দিতে হবে। ইবনু কুদামা
(রহঃ) বলেন, এ
ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কোন মতভেদ আছে বলে আমার জানা নেই।[1]
ফুটনোটঃ
[1]. ইবনু কুদামা, শারহুল কাবীর
২/৫৬৩ পৃঃ; মুহাম্মাদ বিন
ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৬/৭৮ পৃঃ; ফাতাওয়া
লাজনাহ দায়েমাহ ৯/১৭৬ পৃঃ; ফিকহুস
সুন্নাহ ১/৩৫৪ পৃঃ; নায়লুল আওতার
৪/২০১ পৃঃ; ইউসুফ কারযাবী, ফিকহুয যাকাত
১/৩৩৩ পৃঃ।
এক শস্য অন্য
শস্যের নিছাব পূর্ণ করবে কি?
কোন
ব্যক্তির ১০ মণ ধান ও ১০ মণ গম উৎপন্ন হলে সে কি উভয় শস্য একত্রিত করে যাকাত আদায়
করবে? না-কি
পৃথকভাবে কোনটি নিছাব পরিমাণ না হওয়ায় যাকাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবে? এ
ব্যাপারে ছহীহ মত হল, গম, যব, ধান
ইত্যাদি প্রত্যেকটি পৃথক শস্য। অতএব শস্যগুলি পৃথকভাবে নিছাব পরিমাণ হলেই কেবল
যাকাত ফরয। অন্যথা ফরয নয়। তবে একই শস্যের বিভিন্ন শ্রেণী একই নিছাবের
অন্তর্ভুক্ত। যেমন মিনিকেট, পারিজা, চায়না, স্বর্ণা
সহ বিভিন্ন শ্রেণীর ধান একই নিছাবের অন্তর্ভুক্ত।[1]
ফুটনোটঃ
[1]. ছহীহ ফিক্বহুস
সুন্নাহ ২/৪৫ পৃঃ।
কখন শস্যের
যাকাত ফরয?
শস্য
যখন পরিপক্ক হবে এবং তা কর্তন করা হবে তখন শস্যের যাকাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন, وَآتُوْا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ ‘ফসল
তুলবার দিনে তার হক (যাকাত) প্রদান করবে’ (আন‘আম
৬/১৪১)।
উল্লেখ্য
যে, শস্য
কর্তন করে তা সংরক্ষণের যথাস্থানে রাখার পূর্বে নষ্ট বা হারিয়ে গেলে তার উপর যাকাত
ফরয নয়। তবে তা সংরক্ষণের যথাস্থানে রাখার পরে মালিকের অলসতা বা অবহেলার কারণে
নষ্ট হলে বা হারিয়ে গেলে তার উপর যাকাত ফরয। আর তা সংরক্ষণের যথাসাধ্য চেষ্টা করার
পরে নষ্ট বা হারিয়ে গেলে তার উপর যাকাত ফরয নয়।[1]
ফুটনোটঃ
[1]. শারহুল মুমতে‘ ৬/৮২ পৃঃ।
যে সকল শস্যের
যাকাত ফরয
যে
সকল শস্য জমিতে উৎপন্ন হয় তা যদি মানুষের সাধারণ খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হয় এবং তা
ওযন ও গুদামজাত করা যায়, সে
সকল শস্যেই কেবল যাকাত ফরয। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ إِنَّمَا
سَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الزَّكَاةَ فِيْ هَذِهِ الأَرْبَعَةِ
الْحِنْطَةِ وَالشَّعِيْرِ وَالزَّبِيْبِ وَالتَّمْرِ-
ওমর
ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) গম, যব, কিসমিস
এবং খেজুর এই চারটি শস্যের যাকাত প্রবর্তন করেছেন।[1]
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ مُوسَى بْنِ طَلْحَةَ قَالَ عِنْدَنَا
كِتَابُ مُعَاذٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ إِنَّمَا أَخَذَ
الصَّدَقَةَ مِنَ الْحِنْطَةِ وَالشَّعِيْرِ وَالزَّبِيْبِ وَالتَّمْرِ-
মূসা
ইবনু ত্বালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) কর্তৃক মু‘আয
(রাঃ)-এর নিকট প্রেরিত পত্র আমাদের নিকট ছিল। যাতে তিনি গম, যব, কিসমিস
ও খেজুরের যাকাত গ্রহণ করেছেন।[2]
উল্লিখিত হাদীছদ্বয়ে
বর্ণিত চারটি শস্যের যাকাতের কথা বলা হলেও এই চারটিকেই নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং
ওযন ও গুদামজাত সম্ভব সকল শস্যই এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন ধান, ভুট্টা
ইত্যাদি।
যে সকল শস্যের
যাকাত
নেই
অতএব
গুদামজাত অসম্ভব এমন শস্যের যাকাত ফরয নয়। যেমন শাক-সবজি বা কাঁচা মালের কোন যাকাত
(ওশর) নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لَيْسَ فِى الْخَضْرَوَاةِ زَكَاةٌ
‘শাক-সব্জিতে
কোন যাকাত (ওশর) নেই’।[3] উল্লেখ্য
যে, এ
জাতীয় সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ এক বছর অতিক্রম করলে এবং নিছাব পরিমাণ হলে শতকরা
২.৫০ টাকা হারে যাকাত দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ زَكَاةَ فِيْ مَالٍ حَتَّى يَحُوْلَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ ‘এক
বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মালের যাকাত নেই’।[4]
ফুটনোটঃ
[1].সুনানুদ দারাকুতনী হা/১৯৩৬; সিলসিলা
ছহীহা হা/৮৭৯।
[2]. মুসনাদে আহমাদ হা/২২০৪১; সিলসিলা ছহীহা, হা/৮৭৯।
[3]. ছহীহ জামেউছ ছগীর হা/৫৪১১, আলবানী, সনদ ছহীহ।
[4]. তিরমিযী হা/৬৩২; ইবনু মাজাহ হা/১৭৯২; আলবানী, সনদ ছহীহ।
[2]. মুসনাদে আহমাদ হা/২২০৪১; সিলসিলা ছহীহা, হা/৮৭৯।
[3]. ছহীহ জামেউছ ছগীর হা/৫৪১১, আলবানী, সনদ ছহীহ।
[4]. তিরমিযী হা/৬৩২; ইবনু মাজাহ হা/১৭৯২; আলবানী, সনদ ছহীহ।
জমিতে
শস্যের পরিবর্তে মাছের চাষ করা হলে তার যাকাতের বিধান
কোন জমিতে শস্যের পরিবর্তে মাছের চাষ করলে
মাছের ওশর বা যাকাত দিতে হবে না। কারণ মাছের কোন ওশর নেই। তবে মাছের চাষ যদি
ব্যবসায় পরিণত হয়, তাহলে
বছর শেষে মূলধন ও লভ্যাংশ হিসাব করে নিছাব পরিমাণ হলে তা থেকে শতকরা ২.৫ টাকা হারে
যাকাত আদায় করতে হবে।
শস্য উৎপাদনের
ব্যয় বাদ দিয়ে যাকাত ফরয কি?
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) উৎপাদন খরচের দিকে লক্ষ্য রেখেই ফসলের যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। আর
সেচ হচ্ছে উৎপাদনের প্রধান খরচ। তাই এর উপর ভিত্তি করে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ
করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
فِيْمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُوْنُ أَوْ
كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ، وَمَا سُقِىَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ-
‘বৃষ্টি
ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা নালার পানিতে উৎপন্ন ফসলের উপর ‘ওশর’ (দশ
ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর ‘অর্ধ
ওশর’ (বিশ
ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব’।[1]
অত্র হাদীছে বর্ণিত সেচ
দ্বারা উদ্দেশ্য হল, উৎপাদন
ব্যয়। কেননা সেচের মাধ্যমে মূলত উৎপাদন কম-বেশী হয় না; বরং
খরচ কম-বেশী হয়। আর এই খরচের কম-বেশীর কারণে যাকাতের হারের কম-বেশী করা হয়েছে।
এছাড়াও সেচ ব্যতীত অন্যান্য খরচের কারণে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কৃষক যা খরচ করেন তার
বিনিময়ে অতিরিক্ত উৎপাদন লাভ করেন। অতএব খরচ যাই হোক না কেন তা বাদ না দিয়ে
উৎপাদিত পূর্ণ শস্যের যাকাত আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য
যে, শস্য
উৎপাদনের ক্ষেত্রে যদি কেউ ঋণ করে থাকে, তাহলে
শস্য কর্তনের পরে প্রথমে শস্য উৎপাদনের জন্য যে ঋণ নিয়েছে তা পরিশোধ করে অবশিষ্ট
শস্যের যাকাত আদায় করতে পারে।
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) বলেন,
يَقْضِيْ مَا أَنْفَقَ عَلَى الثَّمَرَةِ،
ثُمَّ يُزَكِّى مَا بَقِىَ-
‘প্রথমত
ফল উৎপাদনে যা ব্যয় করেছে তা পরিশোধ করবে, অতঃপর
অবশিষ্টাংশের যাকাত আদায় করবে’।[2] ইবনু
ওমর (রাঃ) বলেন,
يَبْدَأُ بِمَا اسْتَقْرَضَ، ثُمَّ يُزَكِّيْ
مَا بَقِيَ-
‘প্রথমে
যে ঋণ নিয়েছে তা পরিশোধ করবে। অতঃপর অবশিষ্টাংশের যাকাত আদায় করবে’।[3]
ফুটনোটঃ
[1].বুখারী হা/১৪৮৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ঐ, বঙ্গানুবাদ ২/১১৯ পৃঃ; মিশকাত হা/১৭৯৭।
[2]. সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/৭৮৫৮।
[3]. সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/৭৩৯৭; সদন ছহীহ, আহমাদ শাকের, কিতাবুল খারাজ ১৫৩ পৃঃ।
[2]. সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/৭৮৫৮।
[3]. সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/৭৩৯৭; সদন ছহীহ, আহমাদ শাকের, কিতাবুল খারাজ ১৫৩ পৃঃ।
খাজনার জমিতে
উৎপাদিত শস্যের যাকাতের বিধান
যে
জমির খাজনা দিতে হয় সে জমি হতে উৎপাদিত শস্যের ওশর বা যাকাত আদায় করতে হবে। ওমর
বিন আব্দুল আযীয (রহঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
الْخَرَاجُ عَلَى الأَرْضِ وَفِيْ الْحَبِّ
الزَّكَاةُ-
‘খাজনা
হল জমির উপর এবং যাকাত (ওশর) হল ফসলের উপর’।[1]
পক্ষান্তরে খাজনার
জমিতে ওশর দিতে হয় না মর্মে নিম্নোক্ত দলীল পেশ করা হয়ে থকে, لاَ يَجْتَمِعُ عَلَى
الْمُسْلِمِ خِرَاجٌ وَعُشْرٌ- ‘মুসলমানের
উপর একই সাথে খাজনা ও ওশর একত্রিত হয় না’।[2]
ইমাম
বায়হাক্বী (রহঃ) উল্লিখিত হাদীছটিকে বাতিল বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ উল্লিখিত
হাদীছের বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া ইবনু আনবাসাহ্ হাদীছ জাল করার দোষে দুষ্ট।[3]
ফুটনোটঃ
[1]. সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/৭৭৪৬।
[2]. সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/৭৭৪৮।
[3]. তদেব।
[2]. সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/৭৭৪৮।
[3]. তদেব।
বাৎসরিক
লিজ নেয়া জমি থেকে উৎপাদিত শস্যের যাকাত
লীজের টাকা বাদ দিয়ে বাকী শস্যের যাকাত আদায়
করতে হবে, না-কি
উৎপাদিত সমুদয় শস্য হিসাব করে যাকাত দিতে হবে? এ
ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে গ্রহণীয় মত হল, জমিতে
উৎপাদিত শস্য নিছাব পরিমাণ হলে তার ওশর বা যাকাত প্রদান করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন,
يَا أَيُّهَا
الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا
أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ-
‘হে
মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি হতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই
তন্মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর (যাকাত দাও)’ (বাক্বারাহ ২/২৬৭)।
আলুর যাকাতের
বিধান
আলুর
ওশর বা যাকাত দিতে হবে না। কেননা যমীন থেকে উৎপাদিত যেসব খাদ্য-শস্য স্বাভাবিকভাবে
এক বছর পর্যন্ত থাকে না বরং তার আগেই পচন দেখা দেয়, সেগুলোর ওশর নেই। তবে এগুলির বিক্রয়লব্ধ টাকা
যদি এক বছর সঞ্চিত থাকে এবং নিছাব পরিমাণ হয়, তাহলে
শতকরা ২.৫ টাকা বা ৪০ ভাগের ১ ভাগ হিসাবে তার যাকাত দিতে হবে।[1]
ফুটনোটঃ
[1]. ফিক্বহুস
সুন্নাহ ১/৩৩৪-৩৬ পৃঃ।
মধুর যাকাতের
হুকুম
আল্লাহ
তা‘আলা
মানুষকে যেসব নে‘আমত
দান করেছেন তার মধ্যে মধু অন্যতম। তিনি বলেন,
وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ
اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُوْنَ-
ثُمَّ كُلِيْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِيْ سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا
يَخْرُجُ مِنْ بُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيْهِ شِفَاءٌ
لِلنَّاسِ إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ-
‘আর
তোমার রব মৌমাছিকে ইংগিতে জানিয়েছেন যে, তুমি
পাহাড়ে ও গাছে এবং তারা যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে নিবাস বানাও। অতঃপর তুমি প্রত্যেক
ফল থেকে আহার কর এবং তুমি তোমার রবের সহজ পথে চল। তার পেট হতে এমন পানীয় বের হয়, যার
রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে
রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা
চিন্তা করে’ (নাহল
১৬/৬৮-৬৯)।
এক্ষণে প্রশ্ন হল, মানুষের
উপর আল্লাহ তা‘আলার
দানকৃত উপরোক্ত নে‘মত
মধুর যাকাত আদায় করতে হবে কি-না? এ
ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে ছহীহ মত হল, মধুর
যাকাত আদায় করতে হবে না। কেননা তা প্রথমতঃ কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দলীল দ্বারা
সাব্যস্ত নয়। দ্বিতীয়তঃ তা এক প্রকার প্রাণীর পেট থেকে বের হয় যা গাভীর দুধের মত।
সুতরাং দুধের যেমন যাকাত ফরয নয়, তেমনি
মধুর যাকাত ফরয নয়।[1]
ফুটনোটঃ
[1]. শারহুল মুমতে‘ আলা যাদিল
মুস্তাকনি‘ ৬/৮৭-৮৮ পৃঃ; ফিক্বহুস
সুন্নাহ ২/৫০-৫২ পৃঃ।
Comments
Post a Comment