ডিএসএলআর(DSLR) হচ্ছে ফটোগ্রাফির সবচেয়ে আধুনিক এবং উন্নত প্রযুক্তি, উন্নতমানের, বিশাল মাপের ও ক্লিয়ার ছবি তুলতে এর কোনো বিকল্প নেই।
মূলত ফটোগ্রাফির জন্য তৈরি হলেও অপেক্ষাকৃত সহজলভ্য ও বাহারি লেন্স ব্যবহারের সুযোগ থাকায় ভিডিওগ্রাফিতেও এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে যদিও সিনেমা ক্যামেরা বা ক্যামকর্ডারের মত হাতে ধরে ভিডিও শুট করার মত সুবিধাজনক নয় এই ডিএসএলআর। ফটোগ্রাফি নয় ভিডিও তৈরির ক্ষেত্রে এবং মূল্য বিবেচনায় ডিএসএলআর ও ক্যামকর্ডারের এরকমই কিছু সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আজকের এই লেখা।
১.সেন্সর সাইজ Sensor size & Depth Of Field:
DSLR ক্যামেরা সেন্সর সাইজ অনেক বড় এবং প্রশস্ত হওয়ায় Depth Of Field বা বস্তুর গভীরতার ভিত্তিতে ব্যাকগ্রাউন্ড আবছা বা ব্লার করা যায় যেটা ভিডিওতে সিনেমাটিক ভাব নিয়ে আসে। সে তুলনায় ক্যামকর্ডারের সেন্সর সাইজ অনেক ছোট এবং একই রকম ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করার ফিচারসম্পন্ন ক্যামকর্ডার পেতে ডিএসএলআরের থেকে দিগুন তিনগুণ খরচ করতে হবে।
২.লেন্স Lense:
ডিএসএলআর ক্যামেরার লেন্স ইন্টারচেঞ্জেবল হওয়ায় পছন্দমত লেন্স দিয়ে যেকোনো টাইপ ফটোগ্রাফি বা ভিডিও করা যায়।কিন্তু ক্যামকর্ডার বা প্রচলিত ভিডিও ক্যামেরা ফিক্সড লেন্স হওয়ায় ইচ্ছেমত বড় সাইজ লেন্স ব্যবহারের সুযোগ নেই। যদিও অনেক উচ্চমানের ক্যামকর্ডার আছে যেগুলোতে ইচ্ছেমত লেন্স চেঞ্জ করা যায় তবে সেগুলোর দাম হাজার ডলারের উপরে যেমন Sony VG30 বা এরকম কিছু মডেল।
৩· সাউন্ড (microphone)
ডিএসএলআর এর বিল্ট ইন সাউন্ড রেকর্ডার ভিডিও করার মত সন্তোষজনক নয় সেই তুলনায় ক্যামকর্ডারের সাউন্ড রেকর্ডার মাইক্রোফোন অনেক শক্তিশালী। তবে দুটোর ক্ষেত্রেই বাড়তি মাইক্রোফোন ব্যাবহারের জন্য জ্যাক রয়েছে।
৪. ফোকাস ও অটোফোকাস Focus Autofocus:
ডিএসএলআরের অটোফোকাস অপশনও খুব স্লো হওয়ায় দ্রুত ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে সমস্যায় পড়তে হয়। এজন্য সাধারণত ম্যানুয়ালি ফোকাসের কাজ করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু ক্যামকর্ডারে এরকম কোনো ঝামেলা নেই এর অটোফোকাস অপশনও দ্রুত কাজ করে।
৫. জুম Digital motorized zoom/Manual zoom:
ডিএসএলআরে ম্যানুয়ালি জুম অ্যাডজাস্ট করতে হয় এবং খুব দক্ষ না হলে ভিডিওতে মসৃণ জুম করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ক্যামকর্ডারে মোটর ও সুইচ নিয়ন্ত্রিত (Motorized zoom) জুম সিস্টেম থাকায় খুব সহজেই মসৃন জুম পাওয়া যায়।
৬. ফ্ল্যাশ (Flash) :
ক্যামকর্ডারের ফ্ল্যাশ তেমন শক্তিশালী নয় এবং দামিগুলো ছাড়া ক্যামেরার সাথেও ফ্ল্যাশ লাগানোর সুযোগ নেই। সেই তুলনায় ডিএসএলআরের ফ্ল্যাশ শক্তিশালী। কিন্ত কম আলোতে উভয় টাইপের ক্যামেরায় ভিডিও করার ক্ষেত্রে বাড়তি লাইটের প্রয়োজন হয়।
৭·রেকর্ডিং টাইম Recording Time Limit :
DSLR ক্যামেরায় স্বাভাবিক টাইম লিমিট হল মাত্র পাঁচ মিনিট, 4K ভিডিওর ক্ষেত্রে এর চেয়েও কম। তবে আরো লেটেস্ট মডেলের ডিএসএলআর ক্যামেরাগুলিতে রেকর্ডিং টাইম ৩০ মিনিট পর্যন্ত করা হয়েছে।ফিল্ম,শর্টফিল্মইত্যাদি প্রফেশনাল ভিডিও সাধারণত ছোট ছোট শট নিয়ে তৈরি করা হয় সেক্ষেত্রে এই টাইম লিমিট সমস্যা হয়না।
অন্যদিকে ক্যামকর্ডারে এরকম কোনো টাইম লিমিট নেই মেমোরি ও ব্যাটারির উপর ভিত্তি করে আপনি একটানা ২-৩ ঘন্টাও ভিডিও করতে পারবেন। যেটা ভ্রমণ খেলাধুলা ফ্যামিলি প্রগ্রাম ফানি টাইপ কিংবা সাধারণ ইউটিউব ভিডিওর জন্য আদর্শ।
৮. ND ফিল্টার (Neutral Density Filters):
ক্যামকর্ডারে বিল্ট ইন ND ফিল্টার থাকায় উজ্জল আলোতে ভিডিও করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু ডিএসএলআরে এরকম কোনো ফিল্টার নেই তাই অতিরিক্ত ফিল্টার কিনে লাগিয়ে নিতে হয়।
৮. ব্যাটারি লাইফ Battery life:
ডিএসএলআরের ক্যামেরার ব্যাটারি লাইফ দুঃখজনকভাবে অনেক কম সেই তুলনায় ক্যামকর্ডারের ব্যাটারি লাইফ অনেক বেশি।
৯. স্থিরতা ও বহনযোগ্যতা (Handling and stabilisation) :
ওজন ও গঠনের কারণে ছবি তোলার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হলেও হাতে ভিডিও শুট করার ক্ষেত্রে ডিএসএলআর মোটেও আরামদায়ক নয়, সামান্য নড়াচড়াতেও ভিডিও অস্থির হয়ে যায়। এজন্য ভিডিও মসৃণ করতে অনেক সরঞ্জাম ট্রাইপড, RIG, স্ট্যাবিলাইজার ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়। এবং ডিএসএলআরের জন্য আলাদা ব্যাগ বহন করতে হয়। অন্যদিকে ক্যামকর্ডার হাতে ভিডিও করার ক্ষেত্রে অনেক সহজ ও আরামদায়ক এবং খালি হাতেই অনেক সময় ধরে ভিডিও করা যায়।
১০.তাপ:Temperamental:
ডিএসএলআর ক্যামেরা অল্প সময়েই খুব গরম হয়ে যায় এবং হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই ভিডিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ক্যামকর্ডারের ক্ষেত্রে এরকম কোনো সমস্যা নেই।
১১.দাম (Price):
ফটোগ্রাফি যদি আপনার মূল উদ্দেশ্য হয় তবে অবশ্যই আপনাকে ডিএসএলআর নির্বাচন করতে হবে। তবে যদি ভিডিওই মূল উদ্দেশ্য হয়, ডিএসএলআর কেনার সামর্থ্য না থাকে কিংবা শুধুমাত্র ইউটিউব বা ফানটাইপ ভিডিও উদ্দেশ্য হয় তবে ক্যামকর্ডার বা হ্যান্ডিক্যাম কিনতে পারেন। আবার যদি মাঝারি ধরণের প্রফেশনাল ভিডিও শর্টফিল্ম ইত্যাদি বানাতে চান কিন্তু সিনে ক্যামেরা কেনার সামর্থ্য নেই সেক্ষেত্রে ডিএসএলআর কিনতে পারেন। পূরোটাই আপনার পছন্দের উপরে। যদি ডিএসএলআর আর ক্যামকর্ডার দুটোই চান বাজেট নিয়েও চিন্তা না থাকে এবং পূরোপুরি প্রফেশনাল শর্টফিল্ম/ফিল্ম বিজ্ঞাপন বানানোর কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে সিনে ক্যামেরাই কেনা উচিৎ সিনেমা ক্যামেরার দাম মোটামুটি-
- সনির Sony NEX VG30 2699 ডলার
- একটু উপরে Sony PMWF55 CineAlta 4K PMW Series Camcorder প্রায় ৩৫ হাজার ডলার।
- ক্যাননের EOS C100 Cinema EOS Camera প্রায় ৩ হাজার ডলার (লেন্স ছাড়া)
- ব্ল্যাকম্যাজিকের Blackmagic Pocket Cinema Camera ৯৯৫ ডলার
ডিএসএলআর বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ট্রেন্ড এবং প্রতিনিয়ত এর ফিচার উন্নত হচ্ছে কাজেই এর অসুবিধাগুলো হয়ত দ্রুতই দূর হয়ে যাবে। যাইহোক প্রফেশনাল ভিডিওগ্রাফির জন্য অবশ্যই আপনার সিনে ক্যামেরাই নির্বাচন করা উচিৎ অন্যথায় ক্যামকর্ডার বা হ্যান্ডিক্যাম।
সূত্র:
www.sony.com/electronics/camcorders/t/handycam-camcorders
www.usa.canon.com/internet/portal/us/home/products/list/cameras/cinema-eos/
www.blackmagicdesign.com/products
Comments
Post a Comment