Skip to main content

দারসুল কুরআন: সুরা ফাতিহা


দারসুল কুরআন: সুরা ফাতিহা

# আউযুবিল্লাহ/ইসতি’আযাহ/তাআব্বুজ:

اعوز بالله من الشيطان الرجيم (আ’উজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম) অর্থঃ আল্লাহ’র নিকট পানাহ চাই বিতাড়িত শয়তান হতে।
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

অতএব, যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন। [ সুরা নাহল ১৬:৯৮ ]

# আউযুবিল্লাহ পড়ার বিধান:
মাসআলাঃ- কোরআন তেলওয়াতের পূর্বে  ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’
পাঠ করা সূন্নত। (তাফসীরে খাযেন)
২য়তঃ কোরআন শরীফ পাঠের পূর্বে ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠ করা ইজমায়ে উম্মত দ্বারা সুন্নাত বলে স্বীকৃত হয়েছে।
অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে আউযুবিল্লাহ না বললেও চলে , শুধু বিসমিল্লাহ বলতে হবে।

# বিসমিল্লাহ:
তাসমীয়াহঃ- بسم الله الرحمن الرحيم (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) পাঠ করা।
অর্থঃ- আল্লাহ’র নামে শুরু যিনি পরম দয়ালু করুণাময়।

# বিসমিল্লাহ সুরা ফাতিহার অংশ কি না?
মতামত  ১. ইমামে আ’জম আবু হানীফা (রাঃ) বলেছেন, بسم الله الرحمن الرحيم সূরা নমল ব্যতীত অন্য কোন সূরার অংশ নয়। তবে এটি এমন একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আয়াত যা প্রতিটি সূরার প্রথমে লিখা এবং দু’টি সূরার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। ইমাম হাকেম, ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রাঃ) এর নীতিমালা অনুস্মরণে বিশুদ্ধ হাদীছ রুপে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম প্রথম দু’টি সূরার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ণে অসুবিধার সম্মূখীন হতেন, তখন ‘বিসমিল্লাহ’ অবতীর্ণ হয়। (মাযহারী)

# কোরআন তেলাওয়াতে বিসমিল্লাহ:
সূরা ‘তাওবা’ ব্যতীত প্রত্যেক সূরার প্রারম্ভে بسم الله الرحمن الرحيم লিখা বা পাঠ করা হয়। তবে তেলাওয়াত যদি সূরা তাওবার মাধ্যমেই শুরু হয় সেক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ পড়ে নিতে হবে।

# অন্যান্য কাজে বিসমিল্লাহ:
খাওয়া দাওয়া, স্ত্রীগমন গৃহে প্রবেশ, কুরবানি। কুরআন তেলওয়াত ছাড়া অন্যান্য সকল কাজে শুধু “বিসমিল্লাহ” যথেষ্ট ।

১) কোরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে নির্দেশ রয়েছে, প্রত্যেক কাজ বিসমিল্লাহ বা আল্লাহর নাম বলে আরম্ভ করা।

# بسم الله الرحمن الرحيم কোরআনের সূরায়ে নমলের একটি আয়াত বা অংশ।

قَالَتْ يَا أَيُّهَا المَلَأُ إِنِّي أُلْقِيَ إِلَيَّ كِتَابٌ كَرِيمٌ
বিলকীস বলল, হে পরিষদবর্গ, আমাকে একটি সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে। [ সুরা নাম’ল ২৭:২৯ ]
إِنَّهُ مِن سُلَيْمَانَ وَإِنَّهُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সেই পত্র সুলায়মানের পক্ষ থেকে এবং তা এইঃ সসীম দাতা, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে শুরু; [ সুরা নাম’ল ২৭:৩০ ]

# এছাড়া সূরা আলাকের ১ম আয়াতে এসেছে পড় তোমার প্রতিপালকের নামে

# وَقَالَ ارْكَبُواْ فِيهَا بِسْمِ اللّهِ مَجْرَاهَا وَمُرْسَاهَا إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
আর তিনি বললেন, তোমরা এতে আরোহন কর। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। আমার পালনকর্তা অতি ক্ষমাপরায়ন, মেহেরবান।
[সুরা হুদ ৪১]  

২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়য়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যে কাজ বিসমিল্লাহ ব্যতীত আরম্ভ করা হয়, তাতে কোন বরকত থাকেনা।

هو حديث أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : (كُلُّ كَلَامٍ أَوْ أَمْرٍ ذِي بَالٍ لَا يُفْتَحُ بِذِكْرِ اللهِ فَهُوَ أَبْتَرُ - أَوْ قَالَ : أَقْطَعُ -) وقد روي الحديث بألفاظ أخرى نحو هذا .

كل أمر لا يبدأ باسم الله الرحمن الرحيم فهو أبتر
كل أمر ذي بال لا يبدأ باسم الله الرحمن الرحيم فهو أقطع

৩) অন্য হাদীছে এরশাদ হয়েছে, ঘরের দরজা বন্ধ করতে, বাতি নেভাতে ও পাত্র আবৃত করতে বিসমিল্লাহ বলবে। কোন কিছু খেতে, পান করতে, অজু করতে, সওয়ারীতে আরোহণ করতে এবং তা থেকে অবতরণ কালেও বিসমিল্লাহ বলার নির্দেশ কোরআন-হাদীছে বার বার এসেছে।
(তাফসীরে কুরতুবী)

৪. বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করলে আল্লাহ তাকে করুণা করেন, হেফাজতে রাখেন ও কাজে বরকত দান করেন। আনাস রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর নামে বের হলাম, আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম, আমার কোনো উপায় নেই, ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া’ তখন তাকে বলা হয় তুমি পথ পেলে, উপায় পেলে ও রক্ষা পেলে। তারপর শয়তান তার থেকে দূর হয়ে যায়। তখন এক শয়তান আরেক শয়তানকে বলে, তুমি লোকটিকে কেমন পেলে? তখন সে বলে, তাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, পথ দেয়া হয়েছে ও রক্ষা করা হয়েছে
(মিশকাত হা-২৪৪৩)

৫. হুজায়ফা (রা:) বলেন, নবী করীম সা: বলেছেন, ‘শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না।’
(মুসলিম হা-২০১৭, আবু দাউদ হা-৩৭৬৬)

৬. আয়েশা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি খাদ্য খাবে সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তাহলে সে যেন বলে, বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’
(আবু দাউদ হা-৩৭৬৭, ইবনু মাজাহ হা-৩২৬৪)।[২]

৭. জাবির (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘বিসমিল্লাহ বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ করো। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। বিসমিল্লাহ বলে বাতি নিভিয়ে দাও। একটু কাঠখড়ি হলেও আড়াআড়িভাবে বিসমিল্লাহ বলে পাত্রের মুখ ঢেকে রাখো। বিসমিল্লাহ বলে পানির পাত্র ঢেকে রাখো।’
(বুখারি হা-৩২৮০, মুসলিম হা-২০১২, আবু দাউদ হা-৩৭৩১, তিরমিজি হা-২৮৫৭)[২]

৮. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে, সে বলবে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবিনাশ শায়তানা অজান্নিবিশ শায়তানা মা রাজাকতানা’ (অর্থাৎ) আল্লাহর নামে মিলন শুরু করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখো এবং শয়তানকে দূরে রাখো, আমাদের মাঝে কোনো সন্তান নির্ধারণ করলে শয়তান কখনো তার কোনো তি করতে পারবে না।’
(বুখারি হা-১৪৩৪, আবু দাউদ হা-২১৬১, তিরমিজি হা-১০৯২, ইবনু মাজাহ হা-১৯১৯)।

# কেন বিসমিল্লাহ?
আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে লোকদের প্রথা ছিল, তারা তাদের প্রত্যেক কাজ দেব-দেবীদের নামে শুরু করতো। এ প্রথা রহিত করার জন্য হযরত জিব্রাঈল (আঃ) পবিত্র কোরআনের সর্ব প্রথম যে আয়াত নিয়ে এসেছিলেন , তাতে আল্লাহ’র নামে আরম্ভ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ’র প্রেরিত প্রথম ওহী- اقرأ باسم ربك (ইকরা বিসমে রাব্বিকা) অর্থাৎ পাঠ করুন আপনার প্রভূ’র নামে।
কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও প্রথমে কোন কাজ আরম্ভ করতে বলতেন- باسمك اللهم (বিসমিকা আল্লাহুম্মা) এবং কোন কিছু লিখতে হলেও একথা লিখতেন। কিন্তু بسم الله الرحمن الرحيم অবতীর্ণ হওয়ার পর সর্বকালের জন্য ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বলে সকল নেক কাজ আরম্ভ করার নিয়ম প্রবর্তিত হয়।

(তাফসীরে কুরতুবী, রুহুল মা’আনী)

*মানবজীবনের সাংস্কৃতিক কিংবা ঐতিহ্যগত বিষয়গুলিতেও যাতে কোনো শুন্যতা না থাকে এজন্য আল্লাহ সব সিস্টেম ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যেমন সালাম, বিসমিল্লাহ, ঈদ

# বিসমিল্লাহ হচ্ছে অনুমতি  স্বরুপ:
সকল শুভ কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার মধ্যে তাকদীরকে অস্বীকারকারী ভ্রান্ত ফিরকা ‘ক্বাদারিয়া’ ও তাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রয়েছে। কেননা তাদের ধারণা মতে বান্দার কাজ তার নিজ ইচ্ছাধীন। এখানে আল্লাহর ইচ্ছার কোন প্রতিফলন নেই। অথচ আল্লাহ পাক আমাদেরকে সকল কাজের শুরুতে আল্লাহর সাহায্য ও তাওফীক কামনার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত বান্দার কোন ইচ্ছাই পূরণ হ’তে পারে না। তিনিই কর্মের স্রষ্টা ও বান্দা কর্মের বাস্তবায়নকারী মাত্র। তাছাড়া শুধুমাত্র আমল কাউকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবে না, যদি না আল্লাহর রহমত থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ يُدْخِلُ أحدًا منكم عملُه الجنةَ وَلاَ يُجِيْرُهُ مِنَ النَّارِ وَلاَ أَنَا إِلاَّ بِرَحْمَةِ اللهِ ‘কারু আমল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না কিংবা জাহান্নাম থেকে রেহাই দেবে না, এমনকি আমাকেও নয়, আল্লাহর রহমত ব্যতীত’। তাই শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠের মাধ্যমে মূলতঃ আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ কামনা করা হয়।

* সূরা ফাতিহা নাজিলের আরও একটি প্রয়োজনীয়তা হল একটি নব বিকাশমান ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে মুসলমানদের প্রতি আসা ঝড় ঝাপটা ও বিপদাপদে আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার টিকেটের মত। মানুষ তার চাওয়া পাওয়ার কথা আল্লাহর কাছে একান্তে জানানোর একটা সুন্দর পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল যার অভাব এই সূরা নাযিলের মাধ্যমে পূরণ হয়েছে। এবং এজন্য এটাকে নামাযে বাধ্যতামমূলক রাখা হয়েছে।

নামায কেন মিরাজ বা আল্লাহ ও তার বান্দার কথোপকথন স্বরূপ:

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সলাত আদায় করল অথচ তাতে উম্মুল কুরআন (সূরাহ্‌ ফা-তিহা) পাঠ করেনি তার সলাত ত্রুটিপূর্ণ থেকে গেল, পূর্ণাঙ্গ হল না। এ কথাটা তিনবার বলেছেন। আবূ হুরায়রা্(রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা যখন ইমামের পিছনে সলাত আদায় করব তখন কী করব? তিনি বললেন, তোমারা চুপে চুপে তা পড়ে নাও। কেননা

আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ আমার এবং আমার বান্দার মাঝে আমি সলাত কে অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে নিয়েছি এবং আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়।
বান্দা যখন বলে, (আলহামদু...) (সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য),
আল্লাহ তা’আলা তখন (ফেরেশতাদের) বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।
সে যখন বলে, (আর রহমান...) (তিনি অতিশয় দয়ালু এবং করুণাময়);
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ বান্দা আমার প্রশংসা করেছে, এবং গুণগান করেছে।
সে যখন বলে, (মালিকিইয়াওদ্দীন...) (তিনি বিচার দিনের মালিক);
তখন আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। এবং বান্দা তার সমস্ত কাজ আমার উপর সমর্পন করেছে।

----------------------
* এতক্ষণ আল্লাহর গুণগান করা ছিল মূলত আল্লাহর কাছে বান্দার নিবেদনের ভূমিকা। এটা মানুষের একপ্রকার স্বভাবজাত বা আল্লাহ প্রদত্ত স্বভাবও বলা যায়। যেমন আমরা দুনিয়ার জীবনেও কারও কাছে কিছু চাইতে গেলে আগে তার কিছু প্রশংসা করি তার বদান্যতার কথা স্বীকার করি বলি আপনি এত এত ভালো তাই আমরা আশা করি আমাদের এই আদেবনটাও রাখবেন।
------------------------------

এরপর সে যখন বলে, (ইয়্যাকা...) (আমরা কেবল তোমারই ‘ইবাদাত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি);
তখন আল্লাহ বলেনঃ এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। (এখন) আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়।

যখন সে বলে, (ইহদিনা...) আমাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালনা করুন। যেসব লোকদের আপনি নি’আমাত দান করেছেন, তাদের পথে নয় যাদের প্রতি আপনার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, তখন আল্লাহ বলেনঃ এর সবই আমার বান্দার জন্যে রয়েছ সে যা চায়।

-----------------------------
* ইহদিনা... হিদায়াত চাওয়া এবং হিদায়াতের স্বরূপ তুলে ধরার পরই আল্লাহ কুরআনের পরবর্তী বর্ণনিা শুরু করেছেন

তাফসীরে মাযহারীতে আছে: বান্দার আবেদন اهدنا الصراط المستقيم আমাদের সরল সঠিক পথের দিশা দিন জবাবে আল্লাহ সূরা আল বাকারার শুরুতেই বলে দিয়েছেন:

الٓمٓ- ذَٰلِكَ ٱلْكِتَٰبُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত।

অর্থাৎ এই কিতাব কুরআনই হল তোমার চাওয়া সেই হিদায়াত।
----------------------------

সুফ্‌ইয়ান বলেন, আমি ‘আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়া’কূবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে এ হাদীস বর্ণনা করে শুনান। এ সময় তিনি রোগশয্যায় ছিলেন এবং আমি তাকে দেখতে গিয়াছিলাম।

সহীহ মূসলিম: ৭৬৪  ( ই. ফা. ৭৬২, ই. সে. ৭৭৪)

সূরা ফাতিহা:

# নাযিলের সময় ও স্থান:
অধিকতর বিশুদ্ধমতে, মক্কা শরীফেই এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়। হযরত আলী (রাঃ) হতে ইসহাক ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, এ সূরাটি আরশের নিম্নস্থিত ভান্ডার থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।

সর্বপ্রথম সূরা ‘আলাক্ব-এর প্রথম পাঁচটি আয়াত মক্কায় নাযিল হয়।[15] অতঃপর কয়েক দিন অহি-র বিরতিকাল শেষে সূরা মুদ্দাছ্ছির-এর প্রথম ৫টি আয়াত নাযিল হয়।[16] অন্য বর্ণনায় ৭টি আয়াতের কথা এসেছে।[17] তারপরে সর্বপ্রথম পূর্ণাংগ সূরা হিসাবে সূরা ফাতিহা নাযিল হয়।[18]

# নাযিলের ঘটনা:
আবু মায়সারাহ (আমর ইবনে শুরাহবিল) বলেনঃ "আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে তিনি যখনই বাইরে বের হতেন, কেউ তাকে 'হে মুহাম্মাদ' বলে ডাকতেন ! কিন্তু যখনই তিনি এই শুনতেন তিনি ভয়ে পেয়ে সেখান থেকে চলে যেতেন। রাসূল সা; এ ঘটনা খাদীজা রাঃ এর চাচাতো ভাই তাওরাতের পণ্ডিত ওয়াকাকা ইবনে নওফালকে জানালে তিনি রাসূল সা: তার জায়গায় থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন যখন তাকে ডাকাডাকি করা হবে তিনি যেন তার কথা শুনেন। এর পরের একদিন যখন তিনি বেরিয়ে গেলেন, তখন তিনি একই ডাক শুনলেন হে মুহাম্মদ! রাসূল সা: বললেন: লাব্বায়িক 'আমি উপস্থিত' আহবানকারী বলেন: 'বলুন: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।' তারপর তিনি বললেন, 'বলো, প্রশংসা, বিশ্বজগতের পালনকর্তা, দয়াময়, করুণাময়, বিচার দিবসের মালিক ...' এবং তিনি সূরা ফাতিহার শেষ পর্যন্ত পড়লেন'।  এটি 'আলী ইবনে আবি তালিবেরও মতামত।

(আসবাবুন নুযূল লিল ওয়াহিদী)


# গুরুত্ব ও ফযিলত:
সূরা ফাতিহাকে হাদীছ শরীফে “সূরায়ে শিফা” বলা হয়েছে। সূরা ফাতিহা হলো সকল রোগের প্রতিষেধক (কুরতুবী)। 

#পুরো কোরআন শরীফের সারবস্তু সূরায়ে ফাতিহায় নিহীত বা পুরো কোরআন শরীফ হলো সূরায়ে ফাতিহার ব্যাখ্যা। তাই এ সূরাকে কোরআনের মা বলা হয়েছে।
# এ সূরার আরেকটি নাম হলো “সাবউ মছানী”। অর্থাৎ এ সূরাটিতে রয়েছে অনুপম সাতটি বাণী বা আয়াত। 
#হযরত জাবের (রাঃ) থেকেবর্ণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, হে জাবের! আমি কি বলবো কোরআনের সর্বোত্তম সূরা কোনটি ? হযরত জাবের বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরশাদ করুন,হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ”সূরা ফাতিহা”। 
# ইমাম বুখারী (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বলেছেন, সূরা ফাতিহা কোরআনের দুই তৃতিয়াংশ।
# হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহার সাতটি আয়াত আমল করবে তাঁর জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ থাকবে। শয়তান চারবার চীৎকার করে কেঁদেছিলো। ১) আদম (আঃ) কে সিজদা না দেয়ায় আল্লাহ তাকে লা’নত দেন তখন ২) জান্নাত থেকে আজাজীলকে বের করে দেয়ার সময় ৩) ঈদ-ই মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিন ও ৪) সূরা ফাতিহা নাযীলের দিন।
(আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া)

অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর

الحمد لله رب ٍالعلمين

الحمد لله : কোরআনের শুরুতে বলার কারণ এও হতে পারে যে, হযরত আদম (আঃ) প্রথম সৃষ্টি হওয়ার পর হাঁচি আসে, তখন তিনি বলেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’। এ কারণে আল্লাহ পাক কোরআনের শুরুতে এ বাক্যটি এনেছেন। কারণ এটি আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথম জিকির বা কথা বা আল্লাহ’র প্রশংসা। আর একারণে আমাদের উপরও এ হুকুম হাঁচি আসলে ‘ আলহামদুলিল্লাহ’ বলা, আর শ্রবনকারী উত্তরে বলবে ‘ইয়ারহামু কুমুল্লাহ’। 

হামদ কেন?
আরবিতে প্রশংসার জন্য অনেক শব্দ আছে, যেমন মাদহ্‌, ছানাআ, শুকর। কিন্তু আল্লাহ সেগুলো থাকতে কেন তাঁর জন্য হামদ শব্দটি বেছে নিলেন?


হামদ শব্দটি একটি বিশেষ ধরণের প্রশংসা। আরবিতে সাধারন প্রশংসাকে মাদহ مدح বলা হয়। এছাড়াও সানাআ ثناء অর্থ গুণগান। শুকর شكر অর্থ ধন্যবাদ দেওয়া। কিন্তু হামদ অর্থ একই সাথে ধন্যবাদ দিয়ে প্রশংসা করা, যখন আপনি কারো গুণে মুগ্ধ। আপনি কারো কোনো বিশেষ গুণকে স্বীকার করে, তার মুল্যায়ন করার জন্য হামদ করেন। হামদ করা হয় ভালবাসা থেকে, শ্রদ্ধা থেকে, নম্রতা থেকে।

প্রশংসার প্রকার ও আল্লাহর প্রশংসার স্বরূপ:

সাধারণত আমরা বলে থাকি আমরা আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করছি। যেমন আপনি কাউকে বলেন – “আপনি অনেক ভালো”, তেমন আমরাও আল্লাহকে বলছি যে, সমস্ত প্রশংসা আপনার — ব্যাপারটা এরকম নয়। “আলহামদু লিল্লাহ” কোনো ক্রিয়া বাচক বাক্য নয়, এটি একটি বিশেষ্যবাচক বাক্য। সহজ বাংলায় বললে, এই বাক্যে কোনো ক্রিয়া নেই বরং কোনো সত্যের পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। যেমন: আমরা যখন বলি সূর্য আলো দেয় —তখন আমরা একটি সত্যের পুনরাবৃত্তি করছি। আমরা কিন্তু প্রশংসা করে বলছি না: আহা! সূর্য, তুমি কত আলো দাও!


সূর্য সবসময়ই আলো দেয় — সেটা আমরা বলি আর না বলি। আমরা সবাই যদি ‘সূর্য আলো দেয়’ বলা বন্ধ করেও দিই, সূর্য ঠিকই আলো দেবে। ঠিক একই ভাবে আলহামদু লিল্লাহ অর্থ “আল্লাহর  সমস্ত প্রশংসা”, সেটা আমরা বলি আর না বলি, সমস্ত প্রশংসা ইতিমধ্যেই আল্লাহর।[১৮] যদি কেউ আল্লাহর প্রশংসা নাও করে, তারপরেও তিনি স্ব-প্রশংসিত।

আল্লাহ কেন রাব্বুল আলামীন?
যদি প্রশ্ন করা হয় আল্লাহ কেন রব্বুল আলামীন? অন্য কেউ নয় কেন? এর উত্তর আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন পরবর্তী আয়াতে কারণ তিনি রাহমান এবং রহীম। রব্বুল আলামীন হওয়ার যোগ্যতা একমাত্র তারই আছে।

রবের স্বরূপ:

‘রব’ শব্দটির যথার্থ অনুবাদ করার মত বাংলা বা ইংরেজি শব্দ নেই, কারণ ‘রব’ অর্থ একই সাথে মালিক, মনিব, প্রভূ উপাস্য ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারি, সযত্নে পালনকর্তা, অনুগ্রহ দাতা, রক্ষক।



সযত্নে পালনকর্তার একটি ভালো উদাহরণ হলেন পিতামাতা, যারা সন্তান নিজের পায়ের দাঁড়ানো পর্যন্ত এমনকি তারপরেও খোঁজখবর রাখেন। তেমনি রব হিসেবে আল্লাহও তার বান্দাকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর ব্যবস্থা করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় হিদায়াতের প্রসঙ্গ আসে-**

# দুনিয়ার লেখক, প্রকাশক ও সম্পাদকেরা বইয়ের ভূমিকায় তাদের ত্রুটি দূর্বলতা ও ভুলের কথা স্বীকার করেন
কিন্তু আল্লাহ পাক কোরআন শরীফের শুরুতে নিজের প্রশংশা দিয়ে শুরু করেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। আল্লাহ এমনই এক পবিত্র স্বত্তা যার কোন আ’য়িব বদনাম ত্রুটি নেই বা অপ্রশংসা নেই। যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে তিনি মুক্ত। 

# মানুষের প্রশংসা সাময়িক, কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা স্থায়ী। কেউ বিপথে চলে গেলে তো আর আমরা প্রশংসা করি না।

# আল্লাহ শব্দটি মৌলিক শব্দ, এটি আল্লাহর জাত নাম, এটি আল ইলাহ থেকে গঠিত বলে মুফাসসিরদের মতামত।

# عَالَمِيْنَ   শব্দটি  عَالَمٌ শব্দের বহুবচন। এর দ্বারা আল্লাহ ব্যতীত সকল অস্তিত্বশীল বস্ত্তকে বুঝানো হয়। عَالَمٌ নিজেই বহুবচন। এর কোন একবচন নেই। عَالَمِيْنَ বহুবচনের বহুবচন। এর দ্বারা মানুষের জানা-অজানা সকল সৃষ্টি জগতকে বুঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ আসমান ও যমীন এবং এ দুইয়ের মধ্যকার ও মধ্যবর্তী আমাদের জানা ও অজানা অগণিত জগতের প্রভু ও প্রতিপালক’ (ইবনু কাছীর ১/২৫)। 

# একসময় মানুষের চিন্তা ও গবেষণা শুধু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খেত। এরপর গ্রহ নক্ষত্র সৌরজগত আবিষ্কৃত হল। এমনকি বিজ্ঞানীরা বলেছেন সৌরজগতের বাইরেও আরও এরকম অসংখ্য জগত এবং সেগুলোতে সূর্যের মত আরও সূর্যও থাকতে পারে। আধুনিক মহাকাশ গবেষণা যতই এগিয়ে যাচ্ছে, ততই আমাদের নিকটে নভোমন্ডলের নতুন নতুন বিস্ময়ের দুয়ার খুলে যাচ্ছে ও সূরা ফাতিহার এই বাণী কার্যকর হচ্ছে। সাথে সাথে আল্লাহ পাকের রুবূবিয়াতের ব্যাপকতর ধারণা মুসলিম-অমুসলিম সকলের মধ্যে ক্রমেই দৃঢ় হ’তে দৃঢ়তর হচ্ছে।

================


 الرحمن الرحيم

(তিনি) পরম দাতা ও দয়ালু

রাহমান ও রাহীম শব্দ দু’টি সমার্থবোধক হলেও গুনগত দিক থেকে পার্থক্য বিদ্যমান, যেমন এ দুনিয়াতে আল্লাহ পাক ‘রহমান’, এর ব্যপকতা রয়েছে। অর্থাৎ পাপি-তাপী, ভালো-মন্দ নির্বিশেষে সবার প্রতি তিনি দয়ালু, তাই তিনি এ দুনিয়ার জন্য ‘রাহমান’। কিন্তু পরকালে তিনি ‘রহীম’, অর্থাৎ শুধু নেককারদের দয়া করবেন।

অনেক তাফসীরকারক বলে আরহমান আর রহীমে মূলত কোনো পার্থক্য নেই দুটো শব্দের অর্থ একই অনকেটা عالم  عليم শব্দ দুটির মত।

الحمد لله رب ٍالعلمين আয়াতে বিশ্বজগতের প্রসঙ্গের পর রহমান শব্দটি আসার একটি যোগসূত্র হল

আল্লাহ তাঁর অসীম দয়া দিয়ে বিশ্ব জগতে অসংখ্য ব্যবস্থা করে রেখেছেন পৃথিবীর সবধরনের প্রাণীর মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য। মানুষ হাজার বছর ধরে নানা ভাবে প্রকৃতির এই সম্পদগুলো ভোগ করছে, অবাধে গাছ, পশুপাখি নিধন করছে। কিন্তু তারপরেও কোটি কোটি প্রাণী প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে বের হয় এবং ঠিকই খাবার খেয়ে ঘরে ফিরে। আবার প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন গবাদি পশু এবং বিলিয়ন পরিমাণ মুরগি খাবার জন্য হত্যা করা হয়। তারপরেও আমাদের গবাদি পশু, হাস-মুরগির কোনো অভাব হয় না; কারণ, আল্লাহ পরম দয়ালু। এখানেই তার বিশ্বজগৎ এবং জীবনচক্র নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা।


তিনি আপনাকে, আমাকে, আমাদের পরিবারকে, সমাজকে, আমাদের দেশকে, আমাদের ছোট গ্রহটাকে, আমাদের ছায়াপথের ১০০ কোটি তারা এবং কোটি কোটি গ্রহকে, পুরো মহাবিশ্বের ১০০ কোটি ছায়াপথকে এবং তাদের প্রত্যেকটির ভিতরে কোটি কোটি তারা এবং গ্রহকে এই মুহূর্তে, একই সময়ে, একই সাথে দয়া করছেন।

#দুনিয়াতে আমরা যেকোনো মানুষের দয়া বোঝাতে দয়ালু শব্দটি ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু মানুষের দয়া নিরঙ্কুশ বা অ্যাবসলিউট না। আজ আমি একজনের উপর দয়া করলাম কাল তার কোনো কাজে রেগে গেলাম তার উপর মন খারাপ হল দয়া করলাম না। তাই মানুষ দয়ালু হতে পারে কিন্তু রহমান হতে পারেনা। আর এজন্যই দয়ালু বিশেষণটি আল্লাহর রহমান নাম বুঝাতে যথেষ্ট নয়।

#মহান রাব্বুল আ’লামীনের জাতী নাম দু’টি ‘ আল্লাহ’ ও ‘রহমান’। কুরআনে এই শব্দটিই আল্লাহ বিশেষভাবে ব্যবহার করেছেন যেমন-
আয়াতে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-

ক.  قُلِ ادْعُواْ اللّهَ أَوِ ادْعُواْ الرَّحْمَـنَ أَيًّا مَّا تَدْعُواْ فَلَهُ الأَسْمَاء الْحُسْنَى وَلاَ تَجْهَرْ بِصَلاَتِكَ وَلاَ تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلاً
বলুনঃ আল্লাহ বলে ডাকো কিংবা রহমান বলে, যে নামেই ডাকো না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। আপনি নিজের নামায আদায়কালে স্বর উচ্চগ্রাসে নিয়ে গিয়ে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতদুভয়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন। (সূরা বনী-ইসরাঈল ১১০)

খ. وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম। (সুরা ফুরকান ৬৩)

গ. “আর রহমান” (সূরা আর রহমান ১)
===============
ملك يوم الدين

বিচার বা প্রতিফল দিবসের মালিক
মালিকঃ- এ শব্দটি দু’ রকম ক্বিরাতে পড়া যায়। মালিক ও মা-লিক। ‘মালিক’ ও ‘মা-লিক’ এর অর্থ একই। প্রকৃত কথা হচ্ছে, সত্ত্বাধিকারী হিসেবে ব্যবহ্রত ‘মা-লিক’ শব্দটি ‘মালিক’ শব্দ থেকে গঠিত হয়েছে। আরবী ভাষায় প্রচলিত আছে রয়েছে ‘মা-লিকুদ্দার’ অর্থ ‘রাব্বুদ্দার’ অর্থাৎ ঘরের সত্ত্বাধিকারী। ‘মালিক’ শব্দের অর্থ হবে রাজা বা সম্রাট- যদি তা গঠিত হয় ‘মূলুক’ শব্দটি থেকে।

ইয়াওম শব্দটির অর্থ দিন কাল সময় ইত্যাদি আয়াতে উল্লেখিত ইয়াওমের এর দৈঘ্য দুনিয়ার দিনের দৈঘ্যের সমান নাও হতে পারে।

ইয়াউ মিদ্দিনঃ- অর্থ প্রতিফল দিবস। ঐ দিবসকে প্রতিফল দিবস বলে, যে দিন পুরুস্কার ও তিরস্কার কার্যকর হবে।

‘দ্বীন’ শব্দের অর্থই সলাম ও আনুগত্যও হতে পারে। কেননা ঐ সময় ইসলাম ও আনুগত্য ব্যতীত অন্য কিছুই ফলদায়ক হবে না।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো:
কেন আল্লাহ এর আগের আয়াতে তাঁর দয়ার কথা বলার পর এই আয়াতে শাস্তির কথা না বলে বিচারের কথা বললেন। এর কারণ হচ্ছে, কিয়ামতের দিন দুই ধরণের মানুষ থাকবে – ১) যারা আল্লাহর রহমত পেয়ে জান্নাতে যাবে, আর ২) যারা ন্যায় বিচার পেয়ে জাহান্নামে যাবে।


জাহান্নাম কোনো অন্যায্য শাস্তি নয়, সেটি ন্যায় বিচার। আল্লাহ কাউকে শাস্তি দিতে চান না, তিনি ন্যায় বিচার করেন কারণ আপনি দুনিয়াতে কারও হক নষ্ট করেছেন, হত্যা করেছেন, দুনিয়াতে পার পেলেও আল্লাহ বিনা বিচারে ছেড়ে দেবেন কেন? যারা জান্নাত পায়, তারা আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের জন্য জান্নাত পায়, বিচারের হিসাবে নয়। সত্যিই যদি আল্লাহ আমাদের ভালো কাজগুলোর শুধুমাত্র বিচার করে আমাদেরকে প্রতিদান দিতেন, তাহলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যেত। তখন আপনার আমার একটা নামাজও সঠিক নামাজ হতো না, কারণ আমরা নামাজে দাঁড়িয়ে এমন কিছু নাই যা ভাবি না। আমাদের একটা রোজাও ‘সিয়াম’ হতো না, কারণ আমরা রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলি, সুদ খাই, উল্টো পাল্টা জিনিসের দিকে তাকাই, আজে বাজে কথা শুনি ইত্যাদি। আমাদের যাকাত কোনো যাকাত হতো না, কারণ আমাদের অনেকের যাকাত হচ্ছে লোক দেখানো একটা ব্যাপার, যাদেরকে দিলে লোকমুখে অনেক নাম হবে, তাদেরকেই বেশি করে দেই। আমাদের বিরাট সৌভাগ্য যে আল্লাহ আমাদের কিছু ভালো কাজকে ১০ গুণ, কিছু ভালো কাজকে ১০০ গুণ, ১০০০ গুণ করে হিসাব করবেন। তা না হলে কেউ কোনোদিন জান্নাত পেত না।

এ দুনিয়া ভাল-মন্দ কাজ-কর্মের প্রকৃত ফলাফল পাওয়ার স্থান নয়। পৃথিবীতে কারও অর্থ- সম্পদের আধিক্য ও সূখ-শান্তির ব্যপকতা দেখে বলা যাবেনা যে, এ ব্যক্তি আল্লাহ’র দরবারে মাকবুল। নবীগণ আলাইহিমুস সালাম এ দুনিয়ার জীবনে সর্বাপেক্ষা বেশী বিপদাপদে পতিত হয়েছেন এবং তারপর সাহাবাগণ এরপর তাদের অনুসারীগন দাঈগণ, অধিক বিপদে পতিত হন। কিন্তু দেখা গেছে বিপদের তীব্রতা যতই কঠিন হউক না কেন, দৃঢ় পদে তাঁরা তা সহ্য করেছেন। এমনকি আনন্দ চিত্তে তাঁরা তা মাথা পেতে নিয়েছেন। মোটকথা, দুনিয়ার আরাম আয়াশকে সত্যবাদিতা ও সঠিকতা এবং বিপদাপদকে খারাপ কাজের নিদর্শন বলা যায় না।

অবশ্য কখনো কোন কোন কর্মের সামান্য ফলা ফল দুনিয়াতে ও প্রকাশ করা হয় বটে, তবে তা সে কাজের পূর্ণ বদলা হতে পারে না। এগুলো সাময়িক ভাবে মানুষদের সতর্ক করার জন্য একটু নিদর্শন মাত্র।

মালিক ইয়ামিদ্দীন বিচার দিনের একচ্ছত্র মালিকানার প্রসঙ্গ এসেছে কেন?
আপনি যে কাজ করবেন তার প্রতিদান প্রতিফল আপনাকে পেতেই হবে। আর এই প্রতিফল দেয়ার কাজটা একাই আল্লাহ করবেন। অন্য কারও তাতে হস্তক্ষেপের সামান্যতম সুযোগই নেই। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা দুনিয়াতে দেখি যার দল ক্ষমতায় তার দম্ভ বেশি বাবা মন্ত্রী এমপি হলে তার সন্তান কতটা উচ্ছৃঙ্খল হয়। কারণ সে জানে সে কোনো অপরাধ করলেও তার বাবার জোরে ছাড়া পেয়ে যাবে। সেরকম হাশরে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো বিচারক থাকার সুযোগ থাকতো কোনো কোনো লোক বলতো আরে হাশরে আমার লোক থাকবে আমার কিচ্ছু হবে না। যেমনটা বাংলাদশের ভন্ড পীরের মুরিদেরা বলে থাকে নামাজ রোজা এসব না করলেও, অপরাধ অপকর্ম করলেও হাশরের দিনে তাদের পীর তাদের বাাঁচিয়ে দেবে। আল্লাহ মূলত এই আয়াতের মাধ্যমে শুরুতেই সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। অতএব সাবধান।

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন

 لِّمَنِ ٱلْمُلْكُ ٱلْيَوْمَ ۖ لِلَّهِ ٱلْوَٰحِدِ ٱلْقَهَّارِ

‘আজ রাজত্ব কার’? প্রবল প্রতাপশালী এক আল্লাহর। সূরা গাফির/মুমিন ১৬

সুপারিশ:অনেকেই সুপারিশের কথা বলে থাকেন কিংবা সুপারিশের আশা নিয়ে বসে আছেন কিন্তু সুপারিশের ব্যপারটাও আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষ। আল্লাহ বলেন।

يَوْمَ يَقُومُ ٱلرُّوحُ وَٱلْمَلَٰٓئِكَةُ صَفًّا ۖ لَّا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحْمَٰنُ وَقَالَ صَوَابًا


সেদিন রূহ ও মালাইকাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে, যাকে পরম করুণাময় অনুমতি দেবেন সে ছাড়া অন্যরা কোন কথা বলবে না। আর সে সঠিক কথাই বলবে (বা বলতে বাধ্য হবে।)

সূরা নাবার ৩৮ নং আয়াত

সুপারিশ তো দূরের কথা বলার, টু শব্দ করার সাহস কারও হবে না আল্লাহ এক প্রকার ধমক দিয়েই বলেছেন 


 مَن ذَا ٱلَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذْنِهِۦ 

কে আছে এমন, (কার এত বড় স্পর্ধা) যে আমার সামনে আামার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে

সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত (আয়াতুল কুরসী)


=====================
اياك نعبد و اياك نستعين

আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি
রাব্বিল আ’লামীন, আর রাহমানির রাহীম, মালিকি ইয়াউ মিদ্দিন এ সকল বর্ণনার মাধ্যমে বুঝা যায় যে, আল্লাহ পাক সমস্ত স্তব-স্তুতির অধিকারী। তাই তিনি ব্যতীত উপাসনা লাভের যোগ্য কে?


# একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এই কথার দ্বারা শুরুতেই সব রকমের শিরক বা অংশীবাদী ধারণাকে অস্বীকার করা হয়েছে।

# ইবাদতের পরে দুয়া নিজের চাহিদা আল্লাহকে জানানো। দুনিয়াতে আমরা কারো কাছে কিছু চাইতে গেলে তার অবদানের কথা তুলে ধরি তার গুণগান করি তারপর আমাদের চাওয়ার কথা বলি তেমনিই। 

# আমরা আল্লাহর ইবাদত করলে আমাদের চাওয়া পাওয়ার আশ্রয়স্থল তো আল্লাহই হবে।

# জামায়াত বদ্ধ ইবাদত
না’বুদু’ ও ‘নাসতাঈন’ শব্দ দু’টিতে উত্তম পুরুষের বহুবচন ‘আমরা’ ব্যবহ্রত হয়েছে। এতে করে পাঠকের সঙ্গে তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ সম অংশীদার হন। এ বর্ণনা ভঙ্গিটি হচ্ছে দলবদ্ধ উপাসনার প্রতি ইঙ্গিত। না’বুদু’ বহু বচন ক্রিয়া পদ ইবাদতকে জামা’আত সহকারে বা দল বদ্ধ ভাবে আদায় করার বৈধতাও প্রমাণিত হয়। একথাও বুঝা যায় যে, সাধারণ মুসলমানের ইবাদত আল্লাহ’র প্রিয় বান্দাদের ইবাদতের সাথে মিলে কবূলিয়াতের মর্যাদা লাভ করে। আর এতে শিরক বাতিল হয়েছে। কারণ আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর জন্য ইবাদত হতে পারে না।


আল্লাহ বলেন,
 فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ ‘
অতএব তুমি তাঁরই ইবাদত কর এবং তাঁর উপরেই নির্ভর কর। (মনে রেখো) তোমরা যা কিছু কর, তোমার প্রতিপালক তা থেকে অনবহিত নন’ (হূদ ১১/১২৩)।

نعبد অর্থ এবং উবুদিয়াতের ব্যাপকতা:

সাধারণ অনুবাদে نعبد কে ইবাদত বা উপাসনা বলা হয়। কিন্তু সেটি না‘বুদুর প্রকৃত অর্থকে প্রকাশ করে না। না‘বুদু এসেছে আ’বদ عبد থেকে যার অর্থ দাস। আমরা শুধুই আল্লাহর উপাসনা করি না, আমরা আল্লাহর দাসত্ব করি। এমনটি নয় যে আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লাম, রোযা রাখলাম, যাকাত দিলাম ব্যাস, আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক শেষ বা আমাদের দায়িত্ব শেষ—এরপর আমি যা খুশি তা-ই করতে পারি। না বরং আমরা সবসময় আল্লাহর দাস। ঘুমের থেকে উঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটা কাজে, প্রতিটা কথায় আমাদেরকে মনে রাখতে হবে: আমরা আল্লাহর দাস এবং আমরা যে কাজটা করছি, যে কথাগুলো বলছি, তাতে আমাদের প্রভু সম্মতি দিবেন কিনা এবং প্রভুর কাছে আমি জবাব দিতে পারবো কি না।


ইবাদতকে সাধারণ উপাসনা ধরলে যেমনটা হবে: উদাহরণ এক ব্যক্তি বিদেশে যাচ্ছে ব্যবসার কাজে তার চাকরকে বলল বাড়ির দেখাশোনা করতে এখন চাকর যদি বাড়ির কাজকর্ম বাজার সদাই ক্ষেতখামার দেখাশোনার কাজ না করে। নির্জন রুমে বসে তার মনিবের নামে জিকির করে গুনগাণ করে কিংবা মাইকিং করে বেড়ায় তাতে কী দায়িত্ব পালন হয়ে যাবে?

নাস্তা’ই-ন نَسْتَعِينُ অর্থ যদিও করা হয় “সাহায্য” কিন্তু নাস্তা’ই-ন এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে – আপনি অনেক চেষ্টা করেছেন, আর আপনার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, এখন আপনি সাহায্য চান। যেমন আপনি একটা বোঝা ঘাড়ে তোলার চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না এমন অবস্থায় কেউ এসে সাহায্য করল এবং আপনি পারলেন। কিন্তু আপনি যদি বলেন আপনারা আমার বোঝাটাকে ঐখানে নিয়ে দেন আর আপনি নিজে পাশে বসে থাকেন বিষয়টা অপ্রীতিকর অথবা সাহায্য নাও পেতে পারেন। যদিও আল্লাহ আপনার সব কাজ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন কিন্তু নিজে কিছু না করে সাহায্য চাওয়া তেমনই হাস্যকর!

# ইস্তিআনাত বা সাহায্য চাওয়ার প্রকার:

১. বৈধ ইস্তিআনাত :
এটা এমন বিষয়ে সাহায্য চাওয়া যা মাখলূকের ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। এটা কোন দোষের কথা নয়। বরং প্রত্যেক নেকীর কাজে সাহায্য করার জন্য শরী‘আতে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, َتَعَاوَنُواْ عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى ‘তোমরা নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য কর’ (মায়েদাহ ৫/২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, وَاللهُ فِىْ عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِىْ عَوْنِ أَخِيْهِ ‘আল্লাহ তার বান্দার সাহায্যে অতক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে’। এগুলি হ’ল বৈধ    ইস্তি‘আনাত।

২. নিষিদ্ধ ইস্তিআনাত:
যে সকল বিষয়ে মাখলূকের কোন ক্ষমতা নেই, সেই সকল বিষয়ে মাখলূকের নিকটে সাহায্য চাওয়া। এটি অবৈধ এবং প্রকাশ্য শিরকের   অন্তর্ভুক্ত। যেমন মৃত মানুষের নিকট সাহায্য চাওয়া, তার অসীলায় মুক্তি কামনা করা, তার আশ্রয় ভিক্ষা করা ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন,
إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ الْمَوْتَى 
‘নিশ্চয়ই তুমি শুনাতে পারো না মৃতদের’ (নামল ২৭/৮০; রূম ৩০/৫২)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَّنْ فِي الْقُبُوْرِ 
‘তুমি কোন কবরবাসীকে শুনাতে পারো না’সুরা ফাতির ২২

মসজিদ-মাদ্রাসার চাঁদার জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তি বর্গের সাহায্য ভিক্ষা চাওয়া হয়। মানুষ তার জন্ম লগ্ন থেকে কবরস্থ হওয়া পর্যন্ত, এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত বান্দাদের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। ধাত্রির সাহায্যে জন্ম গ্রহণ করা, পিতা-মাতার মাধ্যমে লালিত-পালিত হওয়া, শিক্ষকের সাহায্যে জ্ঞান অর্জন করা, মৃত্যুর পর আত্মীয় স্বজন দ্বারা কবর খনন, কাফন-দাফন হওয়া ইত্যাদি কাজ গুলো অন্যের সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। তাহলে আমরা কোন মুখে বলতে পারি যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো মুখাপেক্ষী নই? তাহলে বুঝা গেলো প্রকৃত সাহায্য আল্লাহ’রই কিন্তু অন্যের সাহায্য হলো উসীলা।

=============================

যেমনটা একটু আগে বলা হয়েছে **

উপরের আয়াতগুলির মাধ্যমে একজন মুসলিম মূলত আল্লাহকেই একমাত্র রব এবং উপাস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় যে সে একজন অনুগত বান্দা। এখন স্বাভাবিকভাবেই একজন অনুগত দাসের প্রথম প্রশ্ন হতে পারেন প্রভূ বলুন আমাকে কী করতে হবে? এরকমই একটি আবেদন হল-


اهدنا الصراط المستقيم

হে আল্লাহ্! আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।

অর্থাৎ হে প্রভূ বলুন আমি এখন কী করবো, আমার জীবনযাপন, কী করব কী করব না এটার একটা গাইডলাইন দিন।

الصراط المستقيم
সোজা রাস্তা, সমতল পথ যাতে কোন আঁকা-বাকা নেই। এ সরল পথই মানুষের চরম আর্তি এবং প্রাপ্তি। তাই পৃথক বাক্যের মাধ্যমে এ প্রার্থনাটি পেশ করা হয়েছে। হেদায়েতের প্রকৃত অর্থ হলো- বিনম্র পথ প্রদর্শন।

ভাষাগতভাবে সিরা-ত অর্থ সোজা, চওড়া একইসাথে বিপদজনক পথও।


কীভাবে বিপদজনক?
এই রাস্তাটি এতই সরল এবং সোজা যে, যারা এই পথে যাচ্ছে, তাদেরকে সহজেই যে কেউ আক্রমন করতে পারে। একারণেই আল্লাহ تعالى যখন ইবলিসকে বলেছিলেন আদমকে সিজদা করতে এবং সে অবাধ্যতা করেছিল, তখন ইবলিসকে বের করে দেবার সময় সে বলেছিল—

قَالَ فَبِمَآ أَغْوَيْتَنِى لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَٰطَكَ ٱلْمُسْتَقِيمَ
সে বলল, ‘আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, (আমিও দেখে নেব) আমি মানুষদের সেই সিরাতুল মুস্তাকিমে ওঁৎ পেতে থাকব”। [৭:১৬]  (তাদের পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করবো )


আমরা যারা সিরা-তুল মুস্তাকি’মে চলার চেষ্টা করবো, আমাদেরকে শয়তান প্রতি নিয়ত আক্রমণ করবে সেই পথ থেকে বের করে আনার জন্য। শয়তান তার বাহিনী নিয়ে সিরা-তুল মুস্তাকি’মের দুই পাশে ঘাপটি মেরে আছে এমবুশ করার জন্য। আমরা একটু অসাবধানী হলেই তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। 

এজন্যই আমরা ইসলাম পেয়েছি হিদায়াত পেয়েছি ভেবে উল্লসিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এই হিদায়াত বা পথ ধরে এগিয়ে যাওয়াটাই মূল চ্যালেঞ্জ। অবশ্য শয়তানের চক্রান্ত মোকাবেলার বাকি পদ্ধতি আল্লাহ তায়ালা বাকী সূরাগুলিতে বর্ণনা করেছেন।


এ প্রার্থনাটি (সূরা ফাতিহা) হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে উচ্চারিত তাঁর সকল উম্মতের প্রার্থনা। তাঁর হেদায়েত প্রাপ্তিতো পূর্বেই সুনিশ্চিত ছিলো। এ প্রার্থনাটি উচ্চারনের মাধ্যমে তিনি তাঁর উম্মতকে হেদায়েত প্রাপ্তির নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন। অবশ্য হেদায়েত প্রাপ্তদের জন্যও এ প্রার্থনাটি জরুরী। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এটাই মতাদর্শ যে, আল্লাহ পাকের করুণা ও হেদায়েত অন্তহীন। (তাফসীরে মাযহারি)

‘আমাদেরকে সরল পথ দেখাও’- আল্লাহ্ তা’আলার সত্তা ও গুণাবলীর পরিচয়ের পর ইবাদত, তারপর প্রার্থনা শিক্ষা দিচ্ছেন। এ থেকে এ মাস’আলা জানা যায় যে, বান্দাদের ইবাদতের পর দোয়ায় মগ্ন হওয়া উচিৎ।  (তাবরানী ফিল কবীর ও বায়হাকী)

# হেদায়াত দুই ধরনের:
ক. জ্ঞান বা ইলমের হেদায়াত।

খ. অন্যটি হলো- ইলমকে কাজে লাগানোর হেদায়াত বা তাওফিক

# হেদায়াতের স্তরসমূহ :
ক. প্রথম স্তর (বিল্ট ইন) সমস্ত মাখলূক তথা জড়পদার্থ, উদ্ভিদ, প্রাণীজগত ইত্যাদি। এদের মধ্যে প্রয়োজনীয় বুদ্ধি ও অনুভূতির অস্তিত্ব রয়েছে। এরা সকলেই আল্লাহর হেদায়াত অনুযায়ী স্ব স্ব নিয়মে আল্লাহর গুণগান করে থাকে। আল্লাহ বলেন-

سَبَّحَ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবাই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে (তাসবিহ পড়ে)। তিনি শক্তিধর; প্রজ্ঞাময়।  

খ. দ্বিতীয় স্তর (অর্জিত হেদায়াত) রয়েছে জিন ও ইনসান জাতি, যারা অন্যান্য সৃষ্টির চাইতে তীক্ষ্ণ ও উচ্চ জ্ঞানসম্পন্ন মেধা, বিবেক চিন্তা বিবেচনার অধিকারী। আল্লাহর পক্ষ হতে নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে এদের নিকটে হেদায়াত পাঠানো হয়েছে। কেউ তা গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে। কেউ প্রত্যাখ্যান করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গ. হেদায়াতের তৃতীয় স্তর (বিশেষ হেদায়াত)- মুমিন-মুত্তাক্বিদের জন্য, যাতে তারা অধিকতর নেক বান্দা হওয়ার তাওফিক লাভ করেন। আল্লাহর দেয়া তাওফিক অনুযায়ী মুমিনদের মর্যাদার স্তর বিন্যাস হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহপাক বলেন, ‘এই রাসূলগণ! আমরা তাদের একে অপরের উপর মর্যাদা দিয়েছি। 
==========================
صراط الذين انعمت عليهم

তাঁদের পথ যারা আপনার নেআমত বা অনুগ্রহ লাভ করেছে।
অর্থাৎ যারা আপনার অনুগ্রহ বা দয়া পেয়েছে তাঁদের পথই সোজা-সরল রাস্তা। ঐ সমস্ত প্রিয়জন লোকের পথ যাদের মুস্তাকীম হওয়ার বিষয়টি সুস্বীকৃত। এর অর্থ দাঁড়াবে এরকম- হে আল্লাহ্! আমাদেরকে ঐ সমস্ত লোকের পথানুগামী করো, যাঁদের কে তুমি করুণা সিক্ত করেছো। আর অনুগ্রহ প্রাপ্ত প্রিয়ভাজন কারা আল্লাহ পাকই জানিয়ে দিয়েছেন

وَمَن يُطِعِ اللّهَ وَالرَّسُولَ فَأُوْلَـئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاء وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـئِكَ رَفِيقًا

আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সালেহীন (সৎকর্মশীল) ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। [সূরা নিসা’র ৬৯]

লক্ষ্যণীয়: আল্লাহ বলছেন, তাদের পথ যাদেরকে তিনি নিয়ামত ‘দিয়েছেন’। তিনি কিন্তু বলেননি, তাদের পথ যাদেরকে তিনি নিয়ামত দেন বা দেবেন বা দিচ্ছেন। এখানে অতীত কাল ব্যবহার করা হয়েছে। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, যারা আল্লাহর নিয়ামত পেয়েছেন, তারা অতীত হয়ে গেছেন। কু’রআনে আল্লাহ আমাদেরকে বহু ব্যক্তির এবং জাতির উদাহরণ দিয়েছেন, যারা আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে সফল হয়েছেন। যেমন: ইব্রাহিম, মুসা  আলাইহিস সালাম এবং সর্বোপরি মুহাম্মাদ সা. এর উদাহরণ দিয়েছেন। আমাদেরকে তাদের পথ অনুসরণ করতে হবে। সফল হবার পথের নিদর্শন আমাদেরকে আগেই দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। সফল হবার জন্য কোনো নতুন পথ আর আসবে না। 
 
=============================
غير المغضوب عليهيم ولا الضالين

যারা আপনার অভিশাপগ্রস্ত বা গজবপ্রাপ্ত তাঁদের পথে নয়, তাদের পথেও নয় যারা পথহারা হয়েছে।
এ বাক্যটি ‘আনআমতা আলাইহিম’ বাক্যের বাড়তি ব্যাখ্যা বোধক। এ বাক্যে ও হেদায়েত রয়েছে। অর্থাৎ যাঁদেরকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর করুণা দানে ধন্য করেছেন, তারাই আল্লাহ’র গজব ও পথভ্রষ্ঠতা থেকে মুক্ত বা সুরক্ষিত।

# হোদায়াতের পথ বলার পরও তাদের পথ নয় বলে বিশেষিত করার কারণ, পথের সংখ্যা অনেক আমাদের দরকার সেই পথ, যেটা উপরে উল্লেখিত, নিচের লোকদের পথটা নয়।

# দোকানে সবজি বা ফল কিনতে গেলে ওজনের সময়
আমরা অতিরিক্ত বলে থাকি মামা জালিগুলো দেন, মামা পঁচা দিয়েন না।

# তাফসীরে মাযহারী লেখক বলেন-
‘গাইরীল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বাল্লিন’এ শব্দ দু’টিতে সাধারন ভাবে সকল সত্য প্রত্যাখ্যানকারী, পথভ্রষ্ট ও অবাধ্য সম্প্রদায় শামীল রয়েছে।

# তিরমীজির বর্ণনা
‘মাগদুবি আলাইহিম’ যারা ‘ইহুদী (কারণ আল্লাহ তাদের উপর সবচেয়ে বেশিবার রাগান্বিত হয়েছেন তাদেরকে নানা রকম গজব দিয়েছেন)
এবং ‘দোয়াল্লিন’ দ্বারা ‘খ্রিষ্টানদের’ কথা বুঝানো হয়েছে। (দল্লিন অর্থ পথভ্রষ্ট অর্থাৎ তাদেরকে পথ দেয়া হয়েছে কিন্তু তারা সেটা থেকে সরে গেছে বা ভ্রষ্ট হয়েছে)

আবার আল্লাহ কারা মাগদুব কারা দল্লিন  উল্লেখ করেন নি বরং এটাকে ব্যাপক হিসেবে রেখে দিয়েছেন অর্থাৎ যে কেউ এর আওতায় পড়তে পারে।

মাগদুব অর্থ যারা ক্রোধের শিকার। আর দল্লিন অর্থ পথহারা এটা অনিচ্ছাকৃত বা উদাসীনতার কারণে পথভ্রষ্টতার কথা বলা হয়েছে। কেননা ইচ্ছাকৃত অন্য পথে যাওয়াকে তো পথভ্রষ্টতা বলা যায় না । বরং  যারা এমন তারা মূলত অবাধ্য/কাফির।


=======================
আমিন: এর অর্থ হলো ‘এরূপ করো’ অথবা ‘কবুল করো’।
মাস’আলা- ‘আমিন’ এটা কোরআনের শব্দ নয়। হাদীসে এটা পাঠের জন্য অসংখ্যবার নিদের্শ এসেছে। ইমাম কুরতুবী ও অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে সূরা ফাতিহা পাঠান্তে নামাজে ও নামাজের বাইরে ‘আমীন’ বলা সূন্নাত। মুসা আঃ এর সময়েও দোয়ার পরে আমিন পড়া হত।

আমিন আস্তে বলবে নাকি উচ্চস্বরে পড়বে  এ দুটো মতের পক্ষেই সহীহ হাদীস রয়েছে।

সুরা ফাতিহার কিছু ভাষা তাত্ত্বিক মাধুর্য
১) সুরা ফাতিহার প্রতিটি আয়াত কবিতার ছন্দের মত শেষ হয় ‘ইম’ বা ‘ইন’ দিয়ে। যেমন প্রথম আয়াত শেষ হয় রাহি-ম দিয়ে, দ্বিতীয় আয়াত শেষ হয় আ’লামি-ন দিয়ে, তৃতীয় আয়াত রাহি-ম, চতুর্থ আয়াত দি-ন।

২) সুরাটির মাঝামাঝি যেই আয়াতটি “ইয়্যা-কা না’বুদু…” এর আগের আয়াতগুলো হচ্ছে বিশেষ্য বাচক বাক্য এবং তার পরের আয়াতগুলো হচ্ছে ক্রিয়া বাচক বাক্য।

৩) “ইয়্যা-কা না’বুদু…” এর আগের আয়াতগুলো হচ্ছে আল্লাহর সম্পর্কে ধারণা। এর পরের আয়াতগুলো হচ্ছে আল্লাহর কাছে আমাদের চাওয়া।

৩) সুরা ফাতিহার আয়াতগুলোর উচ্চারন ক্রমাগত ভারি এবং কঠিন হতে থাকে। যেমন প্রথম চারটি আয়াতে দেখবেন সেরকম ভারি শব্দ নেই। কিন্ত “ইয়্যাকা না’বুদু…” থেকে ক্রমাগত ভারি শব্দ শুরু হতে থাকে এবং ক্রমাগত ভারি শব্দ বাড়তে থাকে। যেমনঃ

ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’ন − দুটা ভারি শব্দ।
ইহদিনাস সিরা-তা’ল মুসতাকি’ম − দুটা ভারি শব্দ।
সিরা-তা’ল্লাযিনা আনআ’মতা আ’লাইহিম − তিনটা ভারি শব্দ।

গা’ইরিল মাগ’ধুবি আ’লাইহিম ওয়া লা দ্দ−ল্লি-ন – চারটা ভারি শব্দ।

=======================
শিক্ষা:
এখন সমগ্র সূরার সার মর্ম হচ্ছে এ দোয়া- ‘হে আল্লাহ্! আমাদিগকে সরল পথ দান করুন। কেননা সরল পথের সন্ধান লাভ করাই সবচাইতে বড় জ্ঞান ও সর্বাপেক্ষা বড় কামিয়াবী। বস্তুতঃ সরল পথের সন্ধানে ব্যর্থ হয়েই দুনিয়ার বিভিন্ন জাতি ধ্বংস হয়েছে। অন্যথায় অ-মুসলমানদের মধ্যেও সৃষ্টিকর্তার পরিচয় লাভ করা এবং তাঁর সন্তুষ্টির পথ অনুস্মরন করার আগ্রহ-আকুতির অভাব নেই। এ জন্যই কোরআন শরীফে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় পদ্ধতিতেই সিরাতে মুস্তাকীমের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। আর সূরায়ে ফাতিহাতে নবী-অলী’র পথকেই ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’ বলা হয়েছে। সূরা ফতিহাকে ‘উম্মূল কোরআন’ বলা হয়। যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা বুঝতে পারলো সে গোটা কোরআন শরীফ ও ইসলামকে বুঝতে পারলো। সমাপ্ত।

সূত্র:-----------------------------------

(তাফসীরে রুহুল বয়ান,
তাফসীরে আল জামি’ লি আহকামিল কুরআন লিল কুরতুবী,
তাফসীরে মাযহারী,
তাফসীরে জালালাইন,
তাফসীরুল কাবীর,
খাজাইনুল ইরফান,
মা’রেফুল কোরআন,
শানে নুযূলের কিতাব: আসবাবুন নুযূল লিল ওয়াহিদী
সহীহ মুসলিম,
জামে’ তিরমীজি ও
https://quranerkotha.com/surah-fatiha
https://app.guidedverses.com
http://ihadis.com/books/muslim/chapter/4

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা