Skip to main content

তালিকাভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদীস


৫টি জিনিসের উপর ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে:
আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ্ বিন উমার বিন আল-খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ
পাঁচটি জিনিসের উপর ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে- 

১. সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা’বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল,
২. সালাত কায়েম করা,
৩. যাকাত আদায় করা,
৪. আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা এবং
৫. রমাদানে সওম পালন করা।

[বুখারীঃ ৭, মুসলিমঃ ২১ ও হাদীসে জিবরাইল]

ঈমানের রুকন ৬টি
১. আল্লাহ তাআ’লার প্রতি, 
২. আল্লাহর সৃষ্ট ফেরেশতাদের প্রতি, 
৩. আল্লাহর নাযিলকৃত আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি, 
৪. আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসুলগণের প্রতি,

৫. পরকালের প্রতি এবং 
৬. তাকদীরের ভালো ও মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।


সহীহ বুখারীঃ ৪৮, সহীহ মুসলিমঃ ১ (হাদীসে জিবরাইল)

মুমিনের হক ৬ টি:
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « حَقُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدُّ السَّلاَمِ، وَعِيَادَةُ المَرِيضِ، وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَتَشْمِيتُ العَاطِسِ 
বাংলা হাদিস আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক মুসলিমের অধিকার অপর মুসলিমের উপর পাঁচটি হক রয়েছে।

১. সালামের জবাব দেওয়া,
২.রুগীকে দেখতে যাওয়া,
৩.জানাযার সঙ্গে যাওয়া,
৪.দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচলে তার জবাব দেওয়া।’’ 

[বুখারি ১২৪০,মুসলিম ২১৬২, তিরমিযি ২৭৩৭, নাসায়ি ১৯৩৮, আবু দাউদ ৫০৩০, ইবন মাজাহ ১৪৩৫, আহমদ , ১০৫৮৩, ২৭৫১১]

রাস্তার হক ৬টি
আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেন, তোমরা রাস্তার উপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। কেননা, এটাই আমাদের উঠাবসার জায়গা এবং এখানেই আমরা কথাবার্তা বলে থাকি। তিনি (সা) বলেন, যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, রাস্তার হক কি ? তিনি (সা) বললেন,

১. দৃষ্টি অবনমিত রাখা,
২. কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা, কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা
৩. সালামের জওয়াব দেওয়া,
৪. সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং
৫. অসৎকাজে নিষেধ করা।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে- ৬. পথচারীকে সহায়তা করা
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৩ :: অধ্যায় ৪৩ :: হাদিস ৬৪৫

৭ শ্রেনীর যুবক আরশের ছায়ায় স্থান পাবে
হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ (কিয়ামত দিবসে) তার (আরশের) ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না।

১. ন্যায় পরায়ন শাসক,
২. ঐ যুবক যে আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে বড় হয়েছে,
৩. ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে আছে (জামায়াতের প্রতি যে উম্মুখ থাকে),
৪. ঐ দু’ ব্যক্তি যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অন্যকে ভালবেসেছে এবং তাতে অবিচল রয়েছে, কিংবা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ( তাও আল্লাহর উদ্দেশ্যে),
৫. ঐ ব্যক্তি যাকে কোন অভিজাত শ্রেনীর সুন্দরী মহিলা (ব্যাভিচারের দিকে) আহবান করে আর (তদুত্তরে) সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি,
৬. ঐ ব্যক্তি যে কিছু দান করল এবং তা এতটা গোপনভাবে করল যে, তার বাম হাত জানতে পারল না তার ডান হাত কি দান করেছে,
৭. ঐ ব্যক্তি যে একাকী বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার চোখ দু’টো (আল্লাহর ভয়ে) অশ্রুপাত করে।

(বুখারী, ২য় খন্ড, যাকাত অধ্যায়, হাদীস নং- ৫০৪) ।
 [বুখারি ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, ৬৮০৬, মুসলিম ১০৩১, তিরমিযি ২৩৯১, নাসায়ি ৫৩৮০, আহমদ ৯৩৭৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৭]

৫ টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া হাশরে এক কদমও নড়তে পারবে না
 « ﻟَﺎ ﺗَﺰُﻭﻝُ ﻗَﺪَﻡُ ﺍﺑْﻦِ ﺁﺩَﻡَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻣِﻦْ ﻋِﻨْﺪِ ﺭَﺑِّﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺴْﺄَﻝَ ﻋَﻦْ ﺧَﻤْﺲٍ، ﻋَﻦْ ﻋُﻤُﺮِﻩِ ﻓِﻴﻢَ ﺃَﻓْﻨَﺎﻩُ، ﻭَﻋَﻦْ ﺷَﺒَﺎﺑِﻪِ ﻓِﻴﻢَ ﺃَﺑْﻠَﺎﻩُ، ﻭَﻣَﺎﻟِﻪِ ﻣِﻦْ ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻛْﺘَﺴَﺒَﻪُ ﻭَﻓِﻴﻢَ ﺃَﻧْﻔَﻘَﻪُ، ﻭَﻣَﺎﺫَﺍ ﻋَﻤِﻞَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﻋَﻠِﻢَ »
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও স্বস্থান হতে নড়তে দেওয়া হবে না।

১. তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে,
২. যৌবনের সময়টা কিভাবে ব্যয় করেছে,
৩. ধন সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে,
৪. তা কিভাবে ব্যয় করেছে,
৫. সে দ্বীনের যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সেই অনুযায়ী আমল করেছে কিনা।’’

সুনান তিরমিযী, খ- ৪, হাদীস নং ২৪১৭, 

জান্নাতি নারীর বৈশিষ্ট্য:
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে মহিলা 

(১) পাচঁ ওয়াক্ত নামায (নিয়মমত) আদায় করবে,
(২) রমযানের রোযা (ঠিকমত) রাখবে,
(৩) লজ্জাস্থান হেফাযত করবে এবং 
(৪) স্বামীকে মান্য করবে,

তাকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, যে দরজা দিয়ে মন চায় সে দরজা দিয়ে তুমি বেহেশতে প্রবেশ করবে।
- মিশকাত

তিন ব্যক্তির জন্যে জান্নাত হারাম:
তিন ব্যক্তির জন্যে আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করেছেন-
১. মাদক প্রস্তুতকারক ব্যক্তি, যারা নেশাদার দ্রব্য পান বা গ্রহণ করে।
২. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং 
৩. দাইয়ুস (যে পরিবারের মহিলাদের অশ্লীলতা ও পর্দাহীনতা ও  কুকর্মকে মেনে নিয়েছে)
- মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৫৮৩৯


রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, “দাইয়ুস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
 (নাসায়ীঃ ২৫৬২, মিশকাতঃ ৩৬৫৫)

৫ টি সময় আসার পূর্বে পাচটি সময়ের গুরুত্ব দাও:
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়েছেন :
عن بن عباس رضي الله عنهما قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لرجل وهو يعظه ” إغتنم خمسا قبل خمس شبابك قبل هرمك وصحتك قبل سقمك وغناءك قبل فقرك وفراغك قبل شغلك وحياتك قبل موتك
অনুবাদ : পাঁচটি বস্তু আসার পূর্বে পাঁচটি বস্তুকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করো। বা পাঁচটি খারাপ সময় আসার আগে পাঁচটি ভালো সময়কে কাজে লাগাও :

১.মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে,
২.বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে,
৩.অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে,
৪.দরিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে এবং
৫.ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে।

(হাকেম ৭৮৪৬, বাইহাকী, তিরমিযী : আমর ইবনে মাইমুন রাঃ)

মাদক সংশ্লিষ্ট  ১০ শ্রেণীর লোকের উপর অভিশাপ:
মদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণীর লোকের প্রতি রাসূল (ছাঃ) অভিশাপ করেছেন।

১. যে লোক মদের নির্যাস বের করে
২. মদ প্রস্ত্কারক
৩. মদপানকারী
৪.  যে পান করায় পরিবেশনকারনী
৫. মদের আমদানীকারক
৬. যার জন্য আমদানী করা হয়
৭. বিক্রেতা
৮. ক্রেতা
৯. সরবরাহকারী ডিস্ট্রিবিউটর এবং
১০. এর লভ্যাংশ ভোগকারী’।

তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/২৭৭।

৪ শেণির দায়িত্বশীল জিজ্ঞাসিত হবে :
রাসুলুল্লাহ সা. আরও বলেছেন, “জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ নিজ অধীনস্থের বিষয়ে তোমাদের প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। অতঃপর

১. দেশের শাসক জনগণের উপর দায়িত্বশীল। সে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।
২. পুরুষ তার পরিবারের উপর দায়িত্বশীল। অতএব, সে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।
৩. স্ত্রী তার স্বামীগৃহের উপর দায়িত্বশীলা। কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে।
৪. দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল। সেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।

তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী : ৮৯৩; মুসলিম: ১৮২৯)

৩ টি আমল ছাড়া মৃত্যুর সাথে সব আমল বন্ধ হয়ে যায়:
 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إِذَا مَاتَ الإنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاثٍ: صَدَقةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ »
. رواه مسلم 
বাংলা হাদিস আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিস নয়;

১. সাদকা জারিয়াহ,
২. যে বিদ্যা দ্বারা উপকার পাওয়া যায় অথবা
৩. সৎ সন্তান যে তার জন্য দোআ করে।’’

[মুসলিম ১৬৩১, তিরমিযি ১৩৭৬, নাসায়ি ৩৬৫১, আবু দাউদ ২৮৮০,৩৫৪০, আহমদ ৮৬২৭, দারেমি ৫৫৯]

সবচেয়ে কঠিন ৩টি কবীরা গুনাহ্‌
নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সবচেয়ে কঠিন কবীরা গুনাহ্‌ হচ্ছে
১. আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করা,
২. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া ও
৩. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।

সহীহ বুখারী: ৬৯১৯ (আধুনিক প্রকাশনী- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫১)

৩টি কাজ পূর্বের সব গুনাহ মুছে দেয়
১. ইসলাম গ্রহণ
২. কবুল হজ্জ
৩. আল্লাহর জন্য হিজরত

সহীহ মুসলিম ১২১

মুনাফিকের আলামত ৩টি
সুলায়মান আবুর রাবী’ (র) আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ মুনাফিকের আলামত তিনটি-
১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে
২. যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে এবং
৩. আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।

অন্য বর্ণনায় আছে ৪. ঝগড়া করলে অশ্লীল গালাগালি করে
সহীহ বুখারি হাদিস নং ৩২

৩ ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেনও না

আরবি হাদিস وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلاَ يُزَكِّيهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ». قَالَ: فَقَرَأَهَا رَسُولُ اللهِ ﷺ ثَلاَثَ مِرَارٍ، قَالَ أَبُو ذرٍّ: خَابُوا وَخَسِرُوا ! مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «المُسْبِلُ، وَالمنَّانُ، وَالمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالحَلِفِ الكاذِبِ ». رواه مسلم . وفي رواية لَهُ: «المُسْبِلُ إزَارَهُ » 

বাংলা হাদিস আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বাক্যগুলি তিনবার বললেন। আবূ যার্র বললেন, তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক! তারা কারা? হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন,

১. লুঙ্গি-কাপড় পায়ের টাখনুর নীচে যে ঝুলিয়ে পরে,
২. দান করে যে লোকের কাছে দানের কথা বলে বেড়ায়
৩. যে মিথ্যা কসম খেয়ে যে পণ্য বিক্রি করে।


[মুসলিম ১০৬, তিরমিযি ১২১১, নাসায়ি ২৫৬৩, ২৬৫৪, ৪৪৫৮, ৪৪৬৯, ৫৩৩৩, আবু দাউদ ৪০৮৭, ইবন মাজাহ ২২০৮, আহমদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমি ২৬০৫

আরও ৩ পাপী ব্যক্তি (অন্য বর্ণনায়)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمْ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ قَالَ أَبُوْ مُعَاوِيَةَ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ.



আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের তিনি পবিত্রও করবেন না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হচ্ছেন

১. বৃদ্ধ যেনাকার

২. মিথ্যাবাদী শাসক এবং
৩. অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি

(মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৯ম খণ্ড, হা/৪৮৮২)

৩ ব্যক্তির ধ্বংস চেয়েছেন রাসূল সা.

হজরত কা’ব ইবনে উজরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে বললেন, তোমরা মিম্বরের নিকট সমবেত হও। আমরা সকলেই তথায় উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম সিঁড়তে পা রাখলেন, তখন বললেন, আমীন, যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন, যখন তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন। হজরত কা’ব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, যখন তিনি (মিম্বর থেকে) অবতরণ করলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আজ আমরা (মিম্বরে উঠার সময়) আপনাকে এমন কিছু কথা বলতে শুনেছি, যা ইতোপূর্বে কখনো শুনিনি। উত্তরে তিনি বললেন, জিব্রাইল (আ.) আমার নিকট আগমন করেছিলেন, যখন আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন,

১. ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে রমজান মাস পেল, তবুও তার গুনাহ মাফ হল না। আমি বললাম, আমীন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম তখন বললেন,

২. ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার নিকট আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পাঠ করল না। আমি বললাম আমীন। যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন বললেন,

৩. ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেল কিন্তু তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতবাসী করতে পারল না। । আমি বললাম, আমীন।

(মুসলিম, হাদিস-২৫৫১ ও তিরমিযী, হাদিস-৩৫৪৫)

কিয়ামতের ৪টি নিদর্শন
১. ইসলামের জ্ঞান লুপ্ত হবে
২. অজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়বে
৩. মদ্যপান বেড়ে যাবে
৪. ব্যভিচার প্রসার পাবে

বুখারী ৮০ মুসলিম ৮: ২৬৭১

গায়েবের চাবি ৫টি, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই জানে না
হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন হযরত নবী করীম (সাঃ) বলেছেন,

১৷ মাতৃজঠরে কি গুপ্ত রয়েছে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন ৷
২৷ আগামীকাল কি সংঘটিত হবে তাও জানেন একমাত্র আল্লাহ ৷
৩৷ বৃষ্টিপাত কখন হবে তাও একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না ৷
৪৷ কে কোন ভূমিতে মারা যাবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা ৷
৫৷ আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেনা কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে ৷

(বুখারী - ৩৬৪১)

৫টি সামাজিক আচরণ বিধি:
আবূ হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

১. পরস্পর হিংসা করো না,
২. একে অপরের জন্য নিলাম ডেকে দাম বাড়াবে না,
৩. পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করবে না,
৪. একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যেও না,
৫. একজনের দামের উপর অন্যজন দামাদামি করো না।

হে আল্লাহর বান্দাগণ! পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই,
*সে তার উপর যুলুম করে না 
*তাকে সঙ্গীহীন ও সহায়হীনভাবে ছেড়ে দেয় না।
*সে তার কাছে মিথ্যা বলে না 
*তাকে অপমান করে না।

তাকওয়া হচ্ছে- এখানে, তিনি নিজের বুকের দিকে তিনবার ইশারা করেন। কোন মানুষের জন্য এতটুকু মন্দ যথেষ্ট যে, সে আপন মুসলিম ভাইকে নীচ ও হীন মনে করে। এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম।
[মুসলিম: ২৫৬৪]

৬ টি কাজের জন্য কেয়ামতের দিনে ৬ টি প্রতিদান:
আবূ হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

১. যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন মুমিনের দুঃখ দূর করে দেয়, আল্লাহ্ কেয়ামতের দিন তার দুঃখ দূর করে দিবেন।
২. যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ্ দুনিয়াতে ও আখেরাতে তার বিপদ দূর করে দিবেন।
৩. যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।
৪. যে বান্দা আপন ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ্ সে বান্দাকে সাহায্য করবেন।
৫. যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভের জন্য কোন রাস্তা গ্রহণ করে, তার অসীলায় আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দিবেন।
৬. যেসব লোক আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্যে সমবেত হবে, কুরআন পড়বে, তার থেকে শিক্ষা নেবে ও দেবে, * তাদের উপর অবশ্যই প্রশান্তি অবতীর্ণ হবে * রহমত তাদের ঢেকে নেবে *ফিরিশ্‌তাগণ তাদের ঘিরে থাকবে * আল্লাহ্ তাদের কথা এমন সকলের মধ্যে উল্লেখ করবেন যারা তাঁর কাছে উপস্থিত।
যে ব্যক্তি তার আমলের কারণে পিছিয়ে পড়বে, তার বংশ পরিচয় তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।
[মুসলিম: ২৬৯৯]

৫ টি আমল করলে আল্লাহ বান্দার জামিন হন:
হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মুয়াজকে পাঁচটি জিনিসের তাকিদ দিয়ে বলেছিলেনঃ যে এই আমলগুলো করে আল্লাহ তার জামিন হয়ে যান।

১. অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া,
২. জানাযার সাথে চলা,
৩. জিহাদে বের হওয়া,
৪. শাসককে প্রয়োজনে ভীতি প্রদর্শন অথবা সম্মান দেখানোর জন্য যাওয়া,
৫. প্রয়োজনে ঘরে চুপচাপ বসে থাকা-যাতে সে নিরাপদ থাকে এবং মানুষও তার থেকে নিরাপদ হয়ে যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নৈতিক শিক্ষা দেন এভাবেঃ মুয়াজ! একটি মন্দ কাজ করার পর একটি নেক কাজ কর। নেক কাজ মন্দ কাজটি বিলীন করে দেয়। আর মানুষের সামনে সর্বোত্তম নৈতিকতার দৃান্ত উপস্থাপন কর। (মুসনাদ-৫/২৩৮)

৬টি বিষয়ের নিশ্চয়তায় জান্নাতের নিশ্চয়তা:
 উবাদা ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « ﺍﺿْﻤَﻨُﻮﺍ ﻟِﻲ ﺳِﺘًّﺎ ﺃَﺿْﻤَﻦْ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﺍﺻْﺪُﻗُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﺣَﺪَّﺛْﺘُﻢْ ﻭَﺃَﻭْﻓُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﻭَﻋَﺪْﺗُﻢْ ﻭَﺃَﺩُّﻭﺍ ﺇِﺫَﺍ ﺍﺋْﺘُﻤِﻨْﺘُﻢْ ﻭَﺍﺣْﻔَﻈُﻮﺍ ﻓُﺮُﻭﺟَﻜُﻢْ ﻭَﻏُﻀُّﻮﺍ ﺃﺑﺼﺎﺭﻛﻢ ﻭﻛﻔﻮﺍ ﺃﻳﺪﻳﻜﻢ » ‘তোমরা আমাকে ছয়টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দাও, আমি তোমদেরকে জান্নাতে যাওয়ার যামীন হব,
১. যখন কথা বলবে সত্য বলবে,
২. যখন ওয়াদা করবে তা পূরণ করবে,
৩. যখন আমানত গ্রহণ করবে তখন তা আদায় করবে,
৪. তোমাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে,
৫. তোমাদের চক্ষুগুলো নীচু করে রাখবে এবং
৬. হাতগুলো নিয়ন্ত্রনে রাখবে’।
সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২৭১; নাসির উদ্দীন আলবানী, আসসিলসিলাতুস সহীহাহ, খ- ৩, পৃ. ৩৩, হাদীস নং ১৪৭০। 

সৌভাগ্যবান হওয়ার ৪টি জিনিস ও দুর্ভাগা হওয়ার ৪ টি জিনিস
সা’দ ইবনু আবু ওয়াক্কাছ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, 
‘সৌভাগ্যবান হওয়ার চারটি জিনিস রয়েছে -
১ সতী সাধ্বীস্ত্রী
২ প্রশস্ত বাসস্থান
৩ সৎ ও উপযুক্ত প্রতিবেশী 
৪ আরামদায়ক যানবাহন। 
আর দুর্ভাগা হওয়ার চারটি জিনিস রয়েছে-
১. খারাপ প্রতিবেশী  
২. মন্দ আচরণের স্ত্রী 
৩. বিপদজনক যানবাহন 
৪. সংকীর্ণ বাসস্থল’ 

(সিলসিলা ছহীহাহ/২৮৩,১৯০৩)।

আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল সা: এর ৫ টি বিষয়ে আদেশ:
عن الْحَارِثُ الأَشْعَرِيُّ قال وقال رسول الله صلى الله عليه و سلم انا آمركم بخمس الله أمرني بهن بالجماعة وبالسمع والطاعة والهجرة والجهاد في سبيل الله
হযরত হারেস আল আশয়ারী থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূল (স.) বলেন, আমি পাঁচটি জিনিসের ব্যাপারে তোমাদের আদেশ করছি আমার আল্লাহ আমাকে পাঁচটি বিষয়ে নিদের্শ দিয়েছেন)

১. জামায়াতবদ্ধ হবে
২. নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে
৩. নেতার আদেশ মেনে চলবে
৪. আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে
৫. আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।

সুনানে তিরমিযি: ২৮৬৩

মুয়াজ রাঃ কে দেয়া রাসূল সা. এর ১০টি উপদেশ:
হযরত মুয়াজ (রাঃ) কে দেওয়া রাসুল (সাঃ) এর ১০টি উপদেশ:

১ যদি কখনো তোমাকে হত্যা কিংবা পুড়িয়ে ফেলাও হয়, তবুও তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না।
২ তোমার পিতামাতা ,পরিবার- পরিজন ধনসম্পদ হতে তাড়িয়ে দিলেও তাদের অবাধ্য হবে না।
৩ ইচ্ছাকৃতভাবে কখনোই ফরয নামাজ ত্যাগ করবেনা । স্বেচ্ছায় ত্যাগ করলে তার ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কোন দায়িত্ত্ব থাকবে না।
৪ কিছুতেই শরাব (হারাম পানীয়) পান করবে না। যা সমস্ত অশ্লীল কাজের মূল।
৫ সব রকমের পাপকার্য হতে নিজেকে দূরে রাখবে। তা না হলে আল্লাহর গজব অবতীর্ণ হবে।
৬ চরম কঠিন মুহূর্তেও জিহাদের ময়দান পরিত্যাগ করবে না।
৭ যেখানে তোমার অবস্থান, সেখানে মহামারী দেখা দিলেও সেখানেই অবস্থান করবে।
৮ সাধ্যমত পরিবার পরিজনের প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করবে।
৯ সন্তানদের আদব শেখাতে তাদের উপর শাসনের লাঠি সরাবেনা । এবং
১০ পরিবার-পরিজনকে সর্বদা আল্লাহর ভীতি প্রদর্শন করবে।

আল-আদাবুল মুফরাদ, মুসনাদে আহমদ ৫/২৩৮-২৪৩

৪ টি আদেশ ও ৫ টি নিষেধ: অবহেলা না করাই উত্তম
জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) আমাদেরকে চারটি কাজের আদেশ ও পাঁচটি কাজ
থেকে নিষেধ করেছেনঃ

১. যখন ঘুমাবে দরজা বন্ধ করবে,
২. মশকের (পানির পাত্র) মুখ বেঁধে রাখবে,
৩. পাত্র ঢেকে রাখবে,
৪. বাতি নিভিয়ে দিবে ।
কারণ শয়তান (বদ্ধ) দ্বার খুলতে পারে না, (বন্ধ) মশক খুলতে পারে না এবং (ঢাকা) পাত্র উন্মুক্ত করতে পারে না । আর দুষ্ট ইঁদুর গৃহবাসীসহ ঘর পুড়িয়ে ফেলতে পারে ।
পাঁচটি নিষেধঃ
১. বাম হাতে খাবে না,
২. বাম হাতে পান করবে না,
৩. এক পায়ে জুতা পরিধান করে হাটবে না,
৪. ইশতেমালুস সাম্মা (চাদরের দু'মাথা বিপরীত দিক থেকে কাঁধের উপরে তুলে শরীর জড়িয়ে পরিধান করবে না)
৫. লুঙ্গি পড়ে লজ্জাস্থান উন্মুক্ত রেখে নিতম্ব মাটিতে রেখে হাটুদ্বয় খাড়া করে একটি কাপড়
দ্বারা হাটুদ্বয়কে জড়িয়ে বসবে না ।

- [সহীহ ইবনু হিব্বান, মুসনাদে আহমাদ, আস-সহীহা হা/ ২৯৭৪]

৪ শ্রেণীর লোককে আল্লাহ বেহেশতে প্রবেশ করতে দিবেন না(১) মদখোর
(২) সুদখোর
(৩) ইয়াতীমের মাল আত্মসাতকারী
(৪) পিতা-মাতার অবাধ্যচারী।
তবে তওবা করলে ভিন্ন কথা।

(মুসতাদরাকে হাকেম)

৪টি বিষয় মানুষের জন্য পূর্বনির্ধারিত

তোমাদের সকলের সৃষ্টি নিজের মায়ের পেটে চল্লিশ দিন যাবৎ শুক্ররূপে জমা হওয়ার মাধ্যমে শুরু হতে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন জমাট বাঁধা রক্তরূপে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন মাংসপিণ্ড রূপে থাকে, তারপর তার কাছে ফিরিশ্‌তা পাঠানো হয়। অতঃপর সে তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করায় এবং তাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য হুকুম দেয়া হয়-
১. তার রিজিক,
২. তার আয়ু ,
৩. তার কাজ
৪. ভাগ্য

মুসলমানের মধ্যকার ৩টি হারাম সীমা
আরবি হাদিস وَعَنْ أَبي بَكْرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فِي خُطْبَتِهِ يَوْمَ النَّحْرِ بِمِنًى فِي حَجَّةِ الوَدَاعِ: «إِنَّ دِمَاءَكُمْ، وَأَمْوَالَكُمْ، وَأَعْرَاضَكُمْ، حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِي شَهْرِكُمْ هَذَا، فِي بَلَدِكُمْ هَذَا، أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ». متفق عَلَيْهِ বাংলা অনুবাদ আবূ বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী হজ্জে মিনায় ভাষণ দানকালে বলেছেন, “নিশ্চয়
তোমাদের রক্ত,
তোমাদের মাল এবং
তোমাদের স‎ম্ভ্রম
এ রকমই হারাম (অলঙ্ঘনীয়), যেমন তোমাদের এ দিনের সম্মান তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের এ শহরে রয়েছে। শোন! আমি কি পৌঁছে দিলাম?” [বুখারি ৬৭, ১০৫, ১৪৪১, ৩১৯৭, ৪৪০৬, ৪৬৬২, ৫৫৫০, ৭০৭৮, ৭৪৪৭, মুসলিম ১৬৭৯, ইবন মাজাহ ২৩৩, আহমদ ১৯৮৭৩, ১৯৮৯৪, ১৯৯৩৬, ১৯৯৮৫, দারেমি ১৯১৬]

৩টি সর্বোত্তম আমল (ক্রমান্বয়ে) 
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، عَنِ الشَّيْبَانِيِّ، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ الْعَيْزَارِ، عَنْ سَعْدِ بْنِ إِيَاسٍ أَبِي عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ قَالَ ‏"‏ الصَّلاَةُ لِوَقْتِهَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ ‏"‏ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ ‏"‏ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ‏"‏ ‏.‏ فَمَا تَرَكْتُ أَسْتَزِيدُهُ إِلاَّ إِرْعَاءً عَلَيْهِ ‏.‏

আবু আম্‌র আশ-শাইবানী থেকে বর্ণিত : এই ঘরের মালিক (আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদের ঘরের দিকে ইশারা করে) বলেছেন : আমি রাসূলকে (সা) জিজ্ঞাসা করেছিলাম : কোন ‘আমলটি আল্লাহ্‌র নিকট সর্বাধিক প্রিয়?’ তিনি (সা) উত্তরে বলেছিলেন :
১. “যথা সময়ে সালাত (আদায় করা)।”
তারপর তিনি জানতে চাইলেন : তারপর কী?’ তিনি (সা) বলেন :
২. “বাবা-মায়ের সাথে ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করা।”
তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তারপর কী?’ তিনি (সা) বললেন :
৩. “আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করা।”
এসব বলার পর তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেন : আমি আরও জানতে চাইলে তিনি (সা) আমাকে আরও বলতেন। [বুখারী, খণ্ড : ৮, অধ্যায় : ৭৩, হাদীস : ১]

সর্বোত্তম আমলের আরও ২টি
আরবি হাদিস وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، أنَّ رَجُلاً سَأَلَ رَسُولَ اللهِ ﷺ: أَيُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ ؟ قَالَ: « تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ ». متفقٌ عَلَيْهِ বাংলা হাদিস আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কী? তিনি বললেন,
১. “(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং
২. পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।

[বুখারি ১২, ২৮, ৬২৩৬, মুসলিম ৩৯, তিরমিযি ১৮৫৫, নাসায়ি ৫০০০, আবু দাউদ ৫১৯৪, ইবন মাজাহ ৩২৫৩, ৩৬৯৪, আহমদ ৬৫৪৫, ৬৮০৯, দারেমি ২০৮১]

যে কাজ জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেবে
 মু’আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন: আমি নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কাজ বলুন যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেবে। তিনি বললেন: তুমি এক বৃহৎ বিষয়ে প্রশ্ন করেছ। এটা তার জন্য খুবই সহজ আল্লাহ্ যার জন্য সহজ করে দেন

১. তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর,
২. তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না,
৩. নামায প্রতিষ্ঠা কর,
৪. যাকাত দাও,
৫. রমযানে রোযা রাখ
৬. (কা’বা) ঘরে হজ্জ কর

কল্যাণের দরজা
তারপর তিনি বলেন: আমি কি তোমাদের কল্যাণের দরজা দেখাব না?
১. রোযা হচ্ছে ঢাল, সাদকাহ্ গোনাহকে নিঃশেষ করে দেয় যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়;
২. আর কোন ব্যক্তির গভীর রাতের নামায।
তারপর তিনি পড়েন: تتجافي جنوبهم عن المضاجع হতে يعلمون পর্যন্ত। যার অর্থ হলো: তারা শয্যা পরিত্যাগ করে তাদের রবকে ভয়ে ও আশায় ডাকে এবং
৩. তাদেরকে যে রিয্‌ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। তাদের কর্মের জন্য যে চক্ষু শীতলকারী প্রতিফল রক্ষিত আছে তা তাদের কেউই জানে না।

[সূরা আস্-সাজদাহ্: ১৬-১৭]

কর্মের মূলভিত্তি, স্তম্ভ ও তার সর্বোচ্চ চূড়া

তিনি আবার বলেন: আমি তোমাদের কর্মের মূল এবং তার স্তম্ভ ও তার সর্বোচ্চ চূড়া বলবো কি?
আমি নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন।
তিনি বললেন:
কর্মের মূল হচ্ছে ইসলাম,
তার স্তম্ভ হচ্ছে নামায এবং
সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে জিহাদ।

আয়ত্তে রাখার জিনিস

তারপর তিনি বলেন: আমি কি তোমাকে এসব কিছু আয়ত্তে রাখার জিনিস বলবো না?
আমি নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন।
তিনি নিজের জিভ ধরে বললেন: এটাকে সংযত কর।
আমি জিজ্ঞেস করি: হে আল্লাহর নবী! আমরা যা বলি তার হিসাব হবে কি?
তিনি বললেন: তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, হে মু’আয! জিভের উৎপন্ন ফসল ব্যতীত আর কিছু এমন আছে কি যা মানুষকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করে?
[তিরমিযী: ২৬১৬ এবং তিনি বলেছেন: এটা হাসান (সহীহ্) হাদীস।]

হাদীসের কুদসীতে আল্লাহ তায়ালার ৮ টি আদেশ:
আবূ যর আল-গিফারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় ও সুমহান রবের নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্ বলেছেন:
১. “হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করে দিয়েছি, আর তা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি; অতএব তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না।
২. হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হেদায়াত দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। সুতরাং আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদের হেদায়াত দান করব।
৩. হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে অন্ন দান করেছি, সে ছাড়া তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও, আমি তোমাদের খাদ্য দান করব।
৪. হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সবাই বিবস্ত্র, সে ব্যতীত যাকে আমি কাপড় পরিয়েছি। সুতরাং আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব।
৫. হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গোনাহ্ করছ, আর আমি তোমাদের গোনাহ্ ক্ষমা করে দেই। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।
৬. হে আমার বান্দাগণ! তোমরা কখনোই আমার ক্ষতি করার সামর্থ রাখ না যে আমার ক্ষতি করবে আর তোমরা কখনোই আমার ভালো করার ক্ষমতা রাখ না যে আমার ভালো করবে।
৭. হে আমার বান্দাগণ! তোমরা পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মোত্তাকী ও পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই বৃদ্ধি করবে না।
আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই কমাতে পারবে না।
হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বের ও তোমাদের পরের সকলে, তোমাদের সমস্ত মানুষ ও তোমাদের সমস্ত জিন যদি সবাই একই ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার কাছে চায় এবং আমি সকলের চাওয়া পূরণ করে দেই তবে আমার নিকট যা আছে তাতে সমুদ্রে এক সুঁই রাখলে যতটা কম হয়ে যায় তা ব্যতীত আর কিছু কম হতে পারে না।
৮. হে আমার বান্দাগণ! আমি তোমাদের আমলকে (কাজকে) তোমাদের জন্য গণনা করে রাখি, আর আমি তার পুরোপুরি প্রতিফল দিয়ে দেব। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তম প্রতিফল পাবে তার আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত, আর যে তার বিপরীত পাবে তার শুধু নিজেকেই ধিক্কার দেয়া উচিত।”
[মুসলিম: ২৫৭৭]

রাসূল সা. ৪টি আদেশ ও ৪টি নিষেধ

আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দলের প্রতি রাসূল সা: আমি তোমাদেরকে চারটি কাজের আদেশ দিচ্ছি এবং চারটি কাজের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করছি।

১. আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনা এবং এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন প্রকৃত ইলাহ নেই,
২. সালাত কায়িম করা,
৩. যাকাত আদায় করা,
৪. গনীমতের যে মাল তোমরা লাভ কর তার পঞ্চমাংশ আল্লাহ্‌র জন্য বায়তুল মালে দান করা।


আর আমি তোমাদেরকে
দুব্বা (কদুর খোলের পাত্র),
হান্তম (সবুজ রং এর ঘড়া),
নাকীর (খেজুর বৃক্ষের মূল খোদাই করে তৈরি পাত্র),
মযাফ্ফাত (আলকাতরা লাগানো মাটির পাত্র, এই চারটি পাত্রের) ব্যবহার করতে নিষেধ করছি।

সহীহুল বুখারী ৩৫১০

হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) এর ১১টি বিশেষ উপদেশ
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশাল হাদিসে ভাণ্ডার থেকে চয়ন করে উম্মতের জন্য বিশেষ ১১টি উপদেশ এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
ওই সব উপদেশ মালায় হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
১. যদি পরিপূর্ণ ঈমানওয়ালা হতে চাও, তবে উত্তম চরিত্র অর্জন করো।
২. যদি সবচেয়ে বড় আলেম বা জ্ঞানী হতে চাও, তবে তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) অর্জন করো।
৩. যদি সবচেয়ে বেশি সম্মান পেতে চাও, তবে মানুষের নিকট হাত পাতা (অন্যের ওপর ভরসা করা, ভিক্ষা করা) বন্ধ করে দাও।
৪. যদি আল্লাহর নিকট বিশেষ সম্মান পেতে চাও, তবে অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করো।
৫. যদি রিজিকের প্রশস্ততা চাও, তবে সর্বদা অজুর সঙ্গে থাকার চেষ্টা করবে।
৬. যদি সমস্ত দোয়া কবুল হওয়ার আশা রাখো, তবে অবশ্যই হারাম থেকে বেঁচে থাকবে।
৭. যদি কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে গুনাহমুক্ত উঠতে চাও, তবে সহবাসের পর দ্রুত পবিত্র হয়ে যাবে।
৮. যদি কেয়ামতের দিন আল্লাহর নূর নিয়ে উঠতে চাও, তবে মানুষের ওপর জুলুম
করা ছেড়ে দাও।
৯. যদি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাও, তবে আল্লাহর ফরজ বিষয়াদির প্রতি যত্নবান হও।
১০. যদি জাহান্নামের আগুন নেভাতে চাও, তবে দুনিয়ার বিপদাপদে সবর করো।
১১. যদি আল্লাহতায়ালার রাগ বা গোস্বা থেকে বাঁচতে চাও, তবে গোপনে সদকা করো, আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলো এবং মানুষের ওপর রাগ করা ছেড়ে দাও

রাসূল সঃ এর আরও ৫ টি ওয়াসীয়ত:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায়কালীন উপদেশ আপনি আমাদেরকে অসীয়াত করুন। তিনি বললেন: 
১. “আমি তোমাদের মহান আল্লাহকে ভয় করতে অসীয়াত করছি,
২. আর আনুগত্য দেখাতে অসীয়াত করছি; যদি কোন  গোলামও তোমাদের শাসক হয় তবুও।
৪. তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখবে;
সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের পদ্ধতি মেনে চল, তা দাঁত দিয়ে (অর্থাৎ খুব শক্তভাবে) ধরে রাখ; 
৫. আর অভিনব বিষয় সম্পর্কে সাবধান থাক, কারণ প্রত্যেক অভিনব বিষয় হচ্ছে বিদ’আত, প্রত্যেক বিদ’আত হচ্ছে গোমরাহী এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হচ্ছে জাহান্নামের আগুন।”

মুসলমান হয়েও যারা জান্নাতে প্রবেশ থেকে বঞ্চিত থাকবে

কাফির-বেদ্বীনরা তো চিরস্থায়ী জাহান্নামী। কিন্তু যারা মুসলমান হয়েও বিভিন্ন হারাম কাজ করবে বা আমল পরিত্যাগ করবে, তারা হাশরের দিন প্রথম থেকেই বেহেশতের অধিকারী হতে পারবে না, বরং প্রথমে তারা সেই গুনাহের কারণে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে, এরপর ঈমান থাকলে, জান্নাত যাবে। নিম্নবর্ণিত হাদীসসমূহে এ ধরনের গুনাহর কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে।

১। হারাম খাদ্য ভক্ষণকারী জান্নাতে যাবে না
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা লালিত-পালিত হয়েছে, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সুনানে বাইহাকী, হাদীস নং ৫৫২০)

২। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না
হযরত যুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৫২৫)

৩। প্রতিবেশীকে কষ্ট দানকারী জান্নাতে যাবে না
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যার অত্যাচার থেকে প্রতিবেশীরা নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬)

৪। মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, দাইউস ও পুরুষের বেশ ধারণকারীণী জান্নাতে যাবে না
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না : মাতা-পিতার অবাধ্য, দাইউস (অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-বোন প্রমুখ অধীনস্থ নারীদের বেপর্দা চলাফেরায় বাধা দেয় না) এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলা।” (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ২২৬)

৫। অশ্লীলভাষী ও উগ্রমেজাজী জান্নাতে যাবে না
হারেছা বিন ওহাব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “অশ্লীলভাষী ও উগ্রমেজাজী ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৬৮)

৬। অধীনস্থদেরকে ধোঁকাদানকারী শাসক জান্নাতে যাবে না
হযরত মা‘কাল বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, “মুসলমানদের উপর প্রতিনিধিত্বকারী শাসক যদি এ অবস্থায় মারা যায় যে, সে তার অধীনস্থদেরকে ধোঁকা দিয়েছে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬১৮)

৭। অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী জান্নাতে যাবে না
হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি কসম করে কোন মুসলমানের সম্পদ আত্মসাৎ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন এবং জান্নাত হারাম করেন। এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদিও সামান্য কোন জিনিস হয়? তিনি বললেন, যদিও পিলু গাছের একটি ছোট ডাল হোক না কেন।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬)

৮। খোটাদানকারী, অবাধ্য সন্তান ও মদ্যপ জান্নাতে যাবে না
হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন, “উপকার করে খোটা দানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, সর্বদা মদপানকারী--এই তিনশ্রেণীর মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৫৫৭৭)

৯। চোগলখোর জান্নাতে যাবে না
হযরত হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫১)

১০। অন্য পিতার সাথে সম্বন্ধকারী জান্নাতে যাবে না
হযরত সা‘দ ও আবু বাকরাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজেকে অন্য পিতার সাথে সম্পর্কিত করে অর্থাৎ নিজেকে অন্য পিতার সন্তান বলে পরিচয় দেয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৬৯)

১১। গর্ব-অহংকারকারী জান্নাতে যাবে না
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩১)

১২। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাফরমান জান্নাতে যাবে না
হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “আমার সব উম্মত জান্নাতে যাবে, কিন্তু সে ব্যক্তি ব্যতীত যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে। সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে অস্বীকার করেছে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করে, সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার নাফরমানী করে, সে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৭৩৭)

১৩। দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে ইলম অর্জনকারী জান্নাতে যাবে না
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয় সেই ইল্মকে যে ব্যক্তি দুনিয়াবী কোন স্বার্থ-সম্পদ হাসিলের উদ্দেশ্যে শিক্ষা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১৭৯)

১৪। অকারণে তালাক কামনাকারীণী জান্নাতে যাবে না
হযরত সাওবান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “যে মহিলা তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক কামনা করে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।” (জামি‘ তিরমিযী, হাদীস নং ১১০৮)

১৫। কালো কলপ ব্যবহারকারী জান্নাতে যাবে না
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “শেষ যুগে কিছু লোক কবুতরের সীনার ন্যায় কালো কলপ ব্যবহার করবে। তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।” (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৪৯৮৮)

১৬। রিয়াকারী জান্নাতে যাবে না
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম একজন শহীদকে ডাকা হবে। অতঃপর একজন ক্বারীকে। তারপর একজন দানশীল ব্যক্তিকে হাজির করা হবে। প্রত্যেককে তার কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। অতঃপর শহীদকে বীর-বাহাদুর উপাধি লাভের উদ্দেশ্যে জিহাদ করার অপরাধে, ক্বারী সাহেবকে বড় ক্বারীর উপাধি ও সুখ্যাতি লাভের জন্য কিরাআত শেখার অপরাধে এবং দানশীলকে বড় দাতা উপাধি লাভের নিয়তে দান-সদকা করার অপরাধে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫২৭)

১৭। ওয়ারিসকে বঞ্চিতকারী জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি কোন ওয়ারিসকে তার অংশ থেকে বঞ্চিত করলো, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।” (সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং ২৬৯৪)

কিয়ামতের আলামত:
কিছু হাদীস: কিয়ামত পূর্ব আলামত সম্পর্কে সতর্ক করে যেমন

১. আবু উমামা বাহেলি (রা) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (স) বলেছেন, ইসলামের কড়াগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর মানুষ তার পরেরটি আঁকড়ে ধরবে। সর্বপ্রথম যে কড়াটি ভাঙবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আর সর্বশেষটি হল নামাজ। [মুসনাদ আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান]



২. আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুলাহ (স) বলেছেন: “শেষ যুগে আমার উম্মাতের কিছু মানুষ তোমাদেরকে এমন সব হাদীস বলবে যা তোমরা বা তোমাদের পিতা-পিতামহগণ কখনো শুননি। খবরদার! তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকবে, তাদের থেকে দুরে থাকবে।” [মুসলিম/৬]



৩. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্নিত, রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, মানুষের জীবনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন তারা সুদ খাবে। তাদের যে লোক সুদ খাবে না, সুদের কিছু ধুলা তাকে গ্রাস করবে। [নাসায়ী/৪৪৫৫ (সহীহ)]

৪. আব্দুল্লাহ(রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সা) বলেন: কিয়ামত যখন কাছে চলে আসবে তখন এমন দিন আসবে যখন মূর্খতা ছড়িয়ে পরবে, জ্ঞান তুলে নেওয়া হবে এবং প্রচুর ‘হারজ’ হবে। হারজ হল হত্যা। [বুখারী/৭০৬২]

৫. রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেন যার হাতে আমার জীবন তার শপথ, এই উম্মত ধ্বংস হবে না যতক্ষণ না তাদের পুরুষ নারীকে রাস্তায় ফেলে জনসমক্ষে ব্যাভিচারে লিপ্ত হবে। সে যুগে যে উত্তম ব্যক্তি হবে সে করে বলবে, যদি মহিলাকে এ দেয়ালের পেছনে আড়াল করে নিতে! [মুসনাদে আবি ইউলা/৬১৪১ (সহীহ)]

৬. নবীজী (স) ইরশাদ করেন, শেষ যুগে সংঘটিত হবে ভূমিধ্বস, বর্ষিত হবে পাথরবৃষ্টি এবং মানবাকৃতিতে আসবে বিকৃতি। বলা হলো, তা কখন হবে হে আল্লাহর রাসূল! নবীজী বললেন, যখন গায়িকা বাদী, বাদ্যযন্ত্র ও মদ ব্যাপক হবে। [আলবানী, সহীহ আল জামে]

৭. আমাকে কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন’! নবীজী বললেন,‘দাসী তার মনিবকে জন্ম দিবে এবং তুমি দেখবে নগ্নপদ, নগ্ন শরীর, অভাবী, বকরীর পালের রাখালরা প্রতিযোগিতা করবে উঁচু উঁচু বিল্ডিং নির্মাণ নিয়ে [মুসলিম/১]

৮. আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং মিথ্যাচার বেড়ে যাবে এবং বাজার হবে কাছাকাছি’ [আহমদ (সহীহ)]

৯. নবী (স) বলেন, শেষ যুগে একদল লোকের আগমণ হবে যারা সাদা চুল-দাড়ি কালো রং দিয়ে পরিবর্তন করবে। তারা জান্নাতের গন্ধও পাবে না। [নাসায়ী/৫০৭৫ (সহীহ)]

১০. যত দিন লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব না করবে ততদিন কিয়ামত হবেনা [মুসনাদে আহমাদ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে, হাদীছ নং ৭২৯৮]

১১. নবী (স) বলেন, কিয়ামতের পূর্বে কেবল পরিচিত লোকদেরকেই সালাম দেয়া হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি স্ত্রীলোকেরা তাদের স্বামীদের ব্যবসায়িক কাজে সহযোগিতা করবেমুমিন। [মুসনাদে আহমাদ, আহমাদ শাকের (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন]

১২. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, দুই প্রকার মানুষ জাহান্নামী হবে। আমি তাদেরকে দেখিনি। এক প্রকার ঐ সমস্ত মানুষ যাদের নিকট গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে। তারা এর দ্বারা লোকদের প্রহার করবে। প্রকার ঐ সমস্ত মহিলা, যারা বস্ত্র পরিহিতা কিন্তু উলঙ্গ, বিচ্যুতকারিনা ও স্বয়ংবিচ্যুত। যাদের মাথার খোপা বুখতী উটের পিঠের উচুকুজোর ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সূঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সূঘ্রাণ এতো-এতো দূরত্বে পাওয়া যাবে। [মুসলিম/২১২৮]

১৩. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স) ইরশাদ করেন, এমন এক সময় উপস্থিত হবে যখন লোকেরা পরোয়া করবে না সম্পদ হালাল নাকি হারাম উপায়ে অর্জিত। [নাসায়ী/৪৪৫৪ (সহীহ)]

১৪. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ইবনে আস (র) হতে বর্নিত তিনি বলেন আমি রসুলুল্লাহ (স) কে বলতে শুনেছি, “নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের কাছ থেকে এক টানে ইলম উঠিয়ে নিবেন না, বরং আলেমদের উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নিবেন। অবশেষে যখন তিনি কোন আলেমই অবশিষ্ট রাখবেন না তখন লোকেরা অজ্ঞ জাহেলদের ইমাম হিসেবে গ্রহণ করবে। অতঃপর জিজ্ঞাসিত হলে না জেনেই ফাতোয়া দেবে। তারা নিজেও গোমরাহ হবে অন্যকেও গোমরাহ করবে। [বুখারী/১০০]

১৫. নিশ্চয়ই কিয়ামতের পূর্বে অন্ধকার রাত্রির মত ঘন কালো অনেক ফিতনার আবির্ভাব হবে। সকালে একজন লোক মুমিন অবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হবে। বিকালে সে কাফেরে পরিণত হবে। বহু সংখ্যক লোক ফিতনায় পড়ে দুনিয়ার সামান্য লাভের বিনিময়ে তাদের দ্বীন বিক্রি করে দিবে। [মুসলিম/ কিতাবুল ফিতান]

১৬. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) হতে বর্নিত, এমন এক যমানা আসবে মানুষ মসজিদে জমায়েত হয়ে সালাত পড়বে কিন্তু সেখানে একজনও মুমিন থাকবে না। [আবি শায়বা/১০১ (সহীহ)]

১৭. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর আগমণ ও মৃত্যু বরণ
কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর আগমণ। কেননা তিনি হলেন সর্বশেষ নবী। তাঁর পর কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবীর আগমণ হবেনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর দুনিয়াতে আগমণের অর্থ হলো, দুনিয়ার বয়স শেষ হয়ে আসছে, কিয়ামত অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। তিনি বলেনঃ

بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ قَالَ وَضَمَّ السَّبَّابَةَ وَالْوُسْطَى

‘‘আমি এবং কিয়ামত এক সাথে প্রেরিত হয়েছি। একথা বলে নবী (সাঃ) হাতের শাহাদাত আঙ্গুল এবং মধ্যমা আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন’’। মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিয়ামতের আলামত।

১৮ চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ  اقْتَرَبَتْ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ‘‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়েছে’’। (সূরা কামারঃ ১)

হাফেয ইবনে রজব বলেনঃ ‘‘আল্লাহ তাআলা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়াকে কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম আলামত হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।

আলেমদের সর্বসম্মত অভিমত হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর যামানায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনা সংঘটিত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে একাধিক  সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেনঃ মক্কাবাসীরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে নবুওয়াতের প্রমাণ চাইল তখন তিনি চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত করে দেখালেন’’।

- الحكم الجديرة بالإذاعة: ص ১৯ - মুসলিম, অধ্যায়ঃ সিফাতুল মুনাফিকীন।

১৯. বায়তুল মাকদিস (ফিলিস্তীন) বিজয়
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি বস্ত্ত গণনা করো। তার মধ্যে বায়তুল মাকদিস বিজয় অন্যতম।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)এর শাসনামলে হিজরী ১৬ সালে বায়তুল মাকদিছ বিজয়ের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর ভবিষ্যৎ বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে। বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জিযইয়্যাহ।

২০. ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে
কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে মানুষের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। ফকীর-মিসকীন খুঁজে পাওয়া যাবেনা। সাদকা ও যাকাতের টাকা নিয়ে খুঁজা-খুঁজি করেও নেয়ার মত কোন লোক পাওয়া যাবেনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ الْمَالُ فَيَفِيضَ حَتَّى يُهِمَّ رَبَّ الْمَالِ مَنْ يَقْبَلُ صَدَقَتَهُ وَحَتَّى يَعْرِضَهُ فَيَقُولَ الَّذِي يَعْرِضُهُ عَلَيْهِ لَا أَرَبَ لِي

‘‘ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা যতক্ষণ না মানুষের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। মানুষ যাকাতের মাল নিয়ে সংকটে পড়বে। যাকাতের মাল মানুষের কাছে পেশ করা হলে সে বলবেঃ এতে আমার কোন প্রয়োজন নেই’’।[1]

কিয়ামতের এই আলামতটি একাধিক সময়ে প্রকাশিত হবে। উমার ইবনে আব্দুল আযীযের শাসন আমলে তা প্রকাশিত হয়েছিল।

ইয়াকূব ইবনে সুফিয়ান বলেনঃ ‘‘উমার ইবনে আব্দুল আযীযের শাসন আমলে লোকেরা প্রচুর সম্পদ নিয়ে আমাদের কাছে আগমণ করতো। তারা আমাদেরকে বলতঃ তোমরা যেখানে প্রয়োজন মনে কর সেখানে এগুলো বিতরণ করে দাও। গ্রহণ করার মত লোক না পাওয়া যাওয়ার কারণে তাদের কাছ থেকে কেউ মাল গ্রহণ করতে রাজী হতোনা। পরিশেষে মাল ফেরত নিতে বাধ্য হত। মোট কথা তাঁর শাসন আমলে যাকাত নেয়ার মত লোক ছিলনা’’।[2] কিয়ামতের এই আলামতটি ইমাম মাহদীর আমলে পুনরায় প্রকাশিত হবে।

মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যাকাত। ফাতহুল বারী, (১৩/৮৩)

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা