Skip to main content

ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়ন


ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়ন

আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশে ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক ব্যাংক ব্যবস্থা কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাংকিং লেনদেনের সকল স্তরে সুদ ও হারাম বিষয়কে বর্জন করে মুনাফা ভিত্তিক ব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল মূল লক্ষ্য। প্রচলিত ব্যাংকিং আইনের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম হলেও সময়ের উল্টো স্রোতে চলা কত কঠিন বিগত ২৫ বছরে তা নিশ্চয়ই বুঝে ওঠা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ঐ মিছিলে বেশ ক'টি ব্যাংক যুক্ত হয়েছে এবং অনেকগুলো প্রচলিত ধারার ব্যাংক কিছু শাখা খুলেছে। পরিপূর্ণভাবে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালনার দাবীদার ব্যাংকসমূহ হচ্ছে-


১. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
২. আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড (সাবেক আল বারাকা/ওরিয়েন্টাল ব্যাংক)
৩. আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিঃ
৪. সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ
৫. শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ
৬. এক্সিম ব্যাংক লিঃ
৭. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিঃ
৮. ব্যাংক আলফালাহ লিঃ (বিদেশী ব্যাংক)
৯. ইউনিয়ন ব্যাংক

প্রশ্ন হচ্ছে এসব ব্যাংক কতটুকু শরীয়াহ পন্থায় বিনিয়োগ করে কিংবা জনমানুষের নিকট দেয়া প্রতিশ্র“তি কিভাবে তারা পূরণ করে। অর্থাৎ পরিপূর্ণ শরয়ী পদ্ধতিতে ব্যবসা করে কিনা? সাধারণ মানুষ যারা শুধুমাত্র সুদের গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য এসব ব্যাংকে টাকা জমা রাখে তারাই বা কতটুকু লাভবান হচ্ছে? এ প্রশ্নটি সাধারণ জনগণ, আলেম সমাজ, বুদ্ধিজীবীসহ প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকে কর্মরত প্রথিতযশা ব্যাংকারগণও করে থাকেন। তাত্ত্বিকভাবে এটি অতীতে যথেষ্ট পরিমাণে আলোচিত হলেও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শত শত ব্যাংক সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার ফলে বিষয়টির বাস্তবায়ন পন্থা নিয়ে আলোচনাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়। তবে এটি বাস্তবসম্মত যে, বাংলাদেশে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ব্যবসা পরিচালনার বয়স ২৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবদি এর জন্য কোন পৃথক আইন বা বিধি চালু করা সম্ভব হয়নি। এটি দেশের আলেম সমাজ, বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ, পেশাজীবীসহ আইন প্রণেতা, অর্থনীতিবিদ সর্বোপরি এ পেশায় নিয়োজিতদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। শুধুমাত্র যথাযথ আইনের অভাবে একটি মহৎ উদ্যোগ পুরোপুরি সফল হবে না, এটা ভাবতেও খারাপ লাগে। তবে আশার কথা এই যে, ২০০৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক, Guidelines for Islamic Banking অনুমোদন করে।
আলোচনার জন্য আমরা ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত কিছু নিয়ম পদ্ধতি আলোচনা করবো।

ব্যবসা কাকে বলে?
লাভের আশায় লোকসানের ঝুঁকি নিয়ে উপযুক্ত মূল্যের মালের ক্রয় বিক্রয় করাকেই ব্যবসা বলে। সুতরাং পণ্য ক্রয় বিক্রয় ব্যতীত ব্যবসা হবে না এবং লোকসানের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও লাভের আশায় মানুষ ব্যবসা করে।

বৈধ ব্যবসার শর্তাবলী:
ক. হালাল জিনিসের ব্যবসা হতে হবে, হারাম দ্রব্যের ব্যবসা হতে পারবেনা।
খ. জনহিতকর দ্রব্যের ব্যবসা হতে হবে।
গ. মজুদদারী, মুনাফাখোরী, মানুষকে ঠকানো, ভেজাল মিশ্রণ করা যাবে না।
ঘ. পণ্যের গুণাগুণ ভোক্তা/ক্রেতাকে জানাতে হবে।
ঙ. পণ্যের দখল বিক্রেতার নিকট থাকতে হবে এবং ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
চ. ক্রয়-বিক্রয়ে ইজাব-কবুল অর্থাৎ প্রস্তাব ও সম্মতি থাকতে হবে।
ছ. অশ্লীলতা বেহায়াপনা বৃদ্ধি পায় এমন দ্রব্য, মাদকজাতীয় দ্রব্য ক্রয়বিক্রয় বৈধ নয়।
জ. সুদ-ঘুষের আদান প্রদান নিষিদ্ধ
ঝ. মূল্যবৃদ্ধি বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সিন্ডিকেট করা যাবে না।
ঞ. বিনিময় ও সমঝোতা ছাড়া মাল হস্তগত করা যাবে না।
ট. ওজন ও পরিমাণে কমবেশী করা যাবে না।
ঠ. ওভার ইনভয়েসিং/আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে অর্থ পাচার অবৈধ।
ড. মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ট্যাক্স ও ভ্যাট ফাঁকি দেয়া যাবে না।
ঢ. মিথ্যা ও প্রতারণা পূর্ণ বিজ্ঞাপন দিয়ে ফায়দা হাসিল নিষিদ্ধ।
ণ. অনিশ্চিত পণ্য (আল গারার) ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ।
এসব শরয়ী বিধিবিধান মেনে চলে যে সমস্ত ব্যবসা করা হয় তা বৈধ ব্যবসা বলে স্বীকৃত।

ব্যবসার পদ্ধতি সমূহ:
১. সরাসরিঃ
(ক) ক্রেতা ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে মাল ক্রয় করে আনেন। দোকানে সাজিয়ে রাখেন। পরিবহন জনিত ঝুঁকি, বিক্রি না হবার ঝুঁকি, পুড়ে যাওয়া নষ্ট হওয়া কিংবা লোকসানের ঝুঁকি বহন করেন। এর মধ্যেই ব্যবসা পরিচালনা করেন।
খ. ক্রেতা চট্টগ্রামে, বিক্রেতা সিরাজগঞ্জে, কেউ কাউকে দেখেন না বা জানেনও না। টেলিফোনে পণ্যের গুণাগুণ জেনে দর দাম ঠিক করে টাকা প্রেরণ করে দিচ্ছেন। পণ্য ক্রেতার নিকট পৌঁছে যাচ্ছে। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। 

২.মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমেঃ
চাঁদপুরে প্রসিদ্ধ চালের আড়ৎ, ক্রেতা চট্টগ্রামে। একজন মধ্যস্থতাকারী ক্রেতার নিকট এসে চালের নমুনা প্রদর্শন করে দর দাম ঠিক করেন, তার সাথে নিজের কমিশনও ঠিক করে নেন। পণ্য ক্রেতার নিকট পৌঁছে গেল। মধ্যস্থতাকারী টাকা নিয়ে বিক্রেতাকে পৌঁছে দিলো। ক্রেতা বিক্রেতার পারস্পরিক কোন যোগাযোগ নেই। মধ্যস্থতাকারী বা উকিলের সাহায্যে ইজাব কবুল সম্পন্ন হলো।

৩. প্রতিনিধির মাধ্যমেঃ
একজন ব্যক্তির একটি ঔষধ দরকার যা ঢাকায় পাওয়া যাবে। কিন্তু তিনি ঢাকায় গেলে যে পরিমাণ খরচ হবে তা দিয়ে ঔষধের মূল্য বা এর কার্যকারিতা থেকে বেশি হবে। ফলত তিনি খুঁজছেন একজন লোক যিনি নিজস্ব প্রয়োজনে ঢাকা যাবেন। তারই এক প্রতিবেশী ঢাকা যাচ্ছেন যার কাছে টাকা দিলে কোন অতিরিক্ত যাতায়াত খরচ ব্যতীত ঐ ঔষধ কিনা সম্ভব। এক উক্ত প্রতিবেশী মূল ক্রেতার প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করবেন। বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ও প্রতিনিধি নিয়োগ করা যায়।

৪. বিদেশি বাণিজ্য:
ক্রেতা বাংলাদেশী বিক্রেতা চীনে, পণ্য তাইওয়ান বা থাইল্যান্ডে রয়েছে। চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশী ক্রেতা পণ্য কিনতে সম্মত হলে চীনা বিক্রেতা তাইওয়ান/থাইল্যান্ড কারখানায়/গুদামে অর্ডার পাঠালো, পণ্য বাংলাদেশে প্রেরণের জন্য। পণ্য বাংলাদেশে এলো। ক্রেতা চট্টগ্রামে থাকলেও ক্রেতা বন্দরে অর্ডার দিলো পণ্য সিলেট পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য। পণ্য সিলেট পৌঁছে গেল। এক্ষেত্রে সশরীরে কেউ কারো সাাৎ পাননি কিংবা পণ্য নিজ হাতে কেউ দখল নেয়নি। তথাপি পণ্য যার আদেশে একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হয়েছে মালিকানা তারই। তাই স্বহস্তে দখল না থাকলেও মালিকানা অর্জিত হয়েছে বিধায় বিক্রি বৈধ এবং হালাল। 

ক্রয় বিক্রয় হালাল হওয়ার শর্তাবলী :
১. বিক্রয়ের জন্য মালের মালিক হতে হবে।
২. ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিময় মূল্য দিতে হবে।
৩. ইজাব কবুল বা প্রস্তাব সম্মতি থাকতে হবে।
৪. পণ্যের গুণাগুণ, পরিমাণ, মূল্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
৫. বিক্রির জন্য পণ্যের দখল অধিকার (ঞরঃষব) থাকতে হবে।

ব্যবসার অন্যান্য পদ্ধতি:
এছাড়া ব্যবসা কেনা-বেচা ছাড়া অন্যভাবেও হতে পারে যেমনঃ
ক. ভাড়া:  একজন ব্যক্তি গাড়ি কিনলেন এবং ভাড়ায় চালালেন। ভাড়া পেলেন। পুনরায় ভাড়া দিলেন। পুনঃপুনঃ ব্যবহার করে ভাড়া আয় করলেন। যা বৈধ এবং হালাল।
খ. ভাড়ার জন্য ভাড়া: কোনো ড্রাইভারের কাছে দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেন। ড্রাইভার মালিকের ভাড়ার অতিরিক্ত যা পাবেন তা তার। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে গাড়ি নষ্ট হলে মেরামত খরচ মালিক বহন করবেন।
গ. বাড়ি ভাড়া: একজন বাড়ি তৈরি করলেন, মাসিক নির্ধারিত ভাড়ায় খাটালেন। ভাড়া বাবদ যা আয় হলো তা বৈধ। এ থেকে এটি বুঝা গেল যা পুনঃ পুনঃ ব্যবহারযোগ্য (Non-Fungible)তা ভাড়ায় খাটানো বৈধ অর্থাৎ তা পুনঃ পুনঃ লাভ করা যায়। কিন্তু যে সমস্ত দ্রব্য একবার ব্যবহারে নিঃশেষ হয়ে যায় (Fungible) বা নিঃশেষ না করে সেবা পাওয়া যায় না তা থেকে পর পর ব্যবসা করা যায় না। যেমন- কাউকে এক কেজি চাল দিয়ে বলা যায় না যে, একবার খেয়ে আবার রেখে দিবে এবং আবার খাবে। অর্থাৎ- 
১. ভোগ্যপণ্যের উপর বিক্রেতা একবারই লাভ করতে পারেন।
২. বিনিময় মূল্য দিতে হবে।
৩. পুনঃ ব্যবহার যোগ্য পণ্য ভাড়ায় খাটিয়ে পুনঃ পুনঃ ভাড়া নেয়া যাবে কিন্তু মালিকানা হস্তান্তরের পর ভাড়া নেয়া যাবে না।
৪. বিনিময় মূল্য অবশ্যই প্রচলিত/গ্রহণযোগ্য মুদ্রায় হতে হবে।

ফানজিবল দ্রব্য (Fungible):
নিন্মোক্ত বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে ফানজিবল দ্রব্য বলে
১. একবার ব্যবহার করলে নিঃশেষ হয়ে যায়
২. এসব পণ্যের সেবা প্রবাহ বা Flow of Service নেই।
৩. এসব পণ্যের সেবাকে পণ্য থেকে আলাদা করা যায় না।

সুদ কাকে বলে?
ঋণের আসলের উপর ঋণের শর্ত হিসেবে পূর্ব নির্ধারিত যে কোন অতিরিক্ত অংশ যার কোন বিনিময় দেয়া হয় না। এবং যা ঋণের ব্যবহার ও ফলাফলের সাথে সংযুক্ত নয় তাই সুদ। উদাহরণ স্বরূপ- ঋণদাতা ‘ক' গ্রহীতা ‘খ' কে ১০০০ টাকা এ শর্তে এক বছরের জন্য ঋণ দিলেন গ্রহীত ১ বছর পর উক্ত ১০০০ টাকার সাথে আরও অতিরিক্ত ১০০ টাকা যোগ করে ১১০০ টাকা ফেরত দিবে। এক্ষেত্রে উক্ত ১০০ টাকা ১০০০ টাকার এক বছরের সুদ। অনুরূপ ১০০০ টাকা না হয়ে ১০০০ কেজি চালের ক্ষেত্রে ১০০ কেজি চাল অতিরিক্ত মূল্য বা সুদ যা হারাম। কিংবা ৫ কেজি চালের সাথে ৬ কেজি খারাপ চাল হাতে হাতে বিনিময় করলো। এক্ষেত্রে ১ কেজি অতিরিক্ত চাল রিবা বা সুদ।

এক হাদীছে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) উল্লেখ করেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

اَلذَّهَبُ بَالذَّهَبِ، وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ، وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ، وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ، وَالتَّمَرُ بِالتَّمَرِ، وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ، مِثْلاً بِمِثْلٍ، يَدًا بِيَدٍ، فَمَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى، اَلْآخِذُ وَالْمُعْطِىْ فِيْهِ سَوَاءٌ،

‘সোনার বিনিময়ে সোনা, রূপার বিনিময়ে রূপা, গমের বিনিময়ে গম, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, যবের বিনিময়ে যব, লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান হতে হবে এবং উপস্থিত ক্ষেত্রে হাতে হাতে হতে হবে। যে ব্যক্তি বেশী দিয়েছে বা নিয়েছে সে সূদী কারবার করেছে। এক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতা উভয়েই সমান’।

মুসলিম, আল-বানী, মিশকাত হা/২৮০৯; ঐ বঙ্গানুবাদ ৬/১৯ পৃঃ হা/২৬৮৫।

তাই ইসলামে এই ধরনের লেনদেন তথা রিবা নিষিদ্ধ। এর অন্তর্নিহিত কারণ হ’ল, তাৎক্ষণিক লেনদেনের ক্ষেত্রে উভয়ের পক্ষে ইনসাফ ও যথাযথ বিনিময় সম্ভব নাও হ’তে পারে। এজন্য শরী‘আতের হুকুম হ’ল প্রয়োজনে আপনি নির্ধারিত পণ্যটি প্রথমে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হবে,এতে কোনো সমস্যা নেই।


সুদ কখন হবে:
যখন ঋণের ক্ষেত্রে চারটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে তখনই সেখানে সুদের উদ্ভব হবে।
১. সুদের উদ্ভব হয় ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ নগদ অর্থ বা পণ্য সামগ্রী যাই হোক না কেন।
২. ঋণের শর্ত হিসাবে আসলের উপর অতিরিক্ত ধার্য করা।
৩. অতিরিক্ত অংশের কোন বিনিময় না দেয়া।
৪. কারবার বা লেনদেনের ফলাফলের সাথে অতিরিক্ত ধার্যের সম্পৃক্ততা না থাকা।


সূদের বৈশিষ্ট্য:
সূদের চারটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো হ’ল-

(ক)  সূদের উদ্ভব হয় ঋণের ক্ষেত্রে।
(খ) ঋণ পরিশোধের সময়ে পূর্বনির্ধারিত হারে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে।
(গ) প্রদেয় অতিরিক্ত অর্থ ও গৃহীত ঋণ পরিশোধের জন্য একটা সময়সীমা ঋণগ্রহণের সময়েই নির্ধারিত হবে।
(ঘ) ঋণগ্রহীতার কোন ক্ষয়-ক্ষতি, লাভ-লোকসান বা ঝুঁকি কোনভাবেই বিবেচনার বিষয় বলে গণ্য হবে না।

ঋণ বা কর্জ:
সুদের উৎস ঋণ যার আরবী কর্জ। সূরা বাকারার ২৭৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে “সুদ বাবদ যা পাওনা রয়েছে তা ছেড়ে দাও।” ২৭৯ নং আয়াতে বলা হচ্ছে “যদি তোমরা মেনে নাও তাহলে আসল ফেরত নিতে পারে।” অর্থাৎ উক্ত আয়াতের প্রেক্ষিত আসল ফেরত নিলেও অতিরিক্ত ধার্য যা রয়েছে তা ছেড়ে দিতে হবে। হাদীসে রাসূল (সঃ) বলেছেন, “ঋণ ছাড়া আর কোথাও সুদ নেই।”
ঋণের মাঝে নিন্মোক্ত বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়
১. ফানজিবল দ্রব্য হওয়া (নিঃশেষযোগ্য)
২. ঋণগ্রহীতাকে পণ্য ব্যবহার করতে দেয়া
৩. অনুরূপ পণ্য সমপরিমাণ ফেরতের শর্ত থাকা
৪. ঋণদাতা কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের কোন ঝুঁকি বহন না করা
৫. সময় বা অবকাশ থাকা।

প্রচলিত সূদভিত্তিক ঋণ:
ব্যাংকের প্রধান কাজ হলো জনগণ থেকে আমানত সংগ্রহ করে তা প্রকৃত উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়িদের মাঝে খাটানো। প্রচলিত সুদী ব্যাংক সমূহের তহবিল খাটানোর সর্বজনবিধিত এবং বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো নগদ ঋণ (Cash Credit) বা সিসি। ব্যবসায়ী-অব্যবসায়ী এবং শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সিসি শব্দটির সাথে সমাজের সকল মানুষ সমধিক পরিচিত। উল্লেখ্য যে সিসি বা ক্যাশ ক্রেডিট ব্যাংক ঋণের এমন একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি যেখানে ব্যাংক গ্রাহকের আবেদনক্রমে মঞ্জুরীকৃত ঋণের টাকা তার হিসাবে জমা করে দেয় এই শর্তে যে গ্রাহক হিসাব থেকে উত্তোলনকৃত টাকার উপর বাৎসরিক হারে মূলধনের অতিরিক্ত পূর্ব নির্ধারতি হারে ঋণদাতা ব্যাংককে প্রদান করবে। এখানে কোনরূপ পণ্যের ক্রয় বিক্রয় ছাড়াই মূলধনের উপর অর্জিত অতিরিক্ত অংশই ইসলামী শরীয়াতের দৃষ্টিতে সুদ বলে বিবেচিত। ইসলামী ব্যাংক ব্যবসার উদ্দেশ্যে কাউকে নগদ টাকা ঋণ বা ধার দেয় না। তার পরিবর্তে ইসলামী শরীয়া অনুমোদিত বিনিয়োগ এবং অর্থায়ন পদ্ধতিতে ব্যবসা করে সম্পূর্ণ হালাল আয় উপার্জন করে।

সূদ ও মুনাফার পার্থক্য:
অনেকে সূদ ও মুনাফাকে একই মাপকাঠিতে বিচার করেন। এমনকি ‘সূদ তো মুনাফার মতই’ এতদূর পর্যন্তও বলতে কছূর করেন না। এজন্যই এ দু’য়ের পার্থক্য সংক্ষেপে কিন্তু সুস্পষ্টভাবে নীচে তুলে ধরা হ’ল।

(ক) সূদ হ’ল ঋণের শর্ত অনুযায়ী ঋণগ্রহীতা কর্তৃক ঋণদাতাকে মূল অর্থের সাথে প্রদেয় অতিরিক্ত অর্থ। পক্ষান্তরে মুনাফা হ’ল উৎপাদনের মূল্য ও উৎপাদন খরচের পার্থক্য।

(খ) সূদ পূর্ব নির্ধারিত। অপরপক্ষে মুনাফা অর্জিত হয় পরে।

(গ) সূদে কোন ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা নেই। অপরপক্ষে কোন উদ্যোগে বা কারবারে মুনাফা না হয়ে লোকসানও হ’তে পারে। এক্ষেত্রে মূলধন সরবরাহকারী এবং উদ্যোক্তা উভয়ের ক্ষেত্রেই ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বিদ্যমান।

(ঘ) সূদ কখনই ঋণাত্মক হ’তে পারে না। বড় জোর খুবই  কম বা তাত্ত্বিকভাবে শূন্য হ’তে পারে। মুনাফা ধনাত্মক, শূন্য এমনকি ঋণাত্মক (অর্থাৎ লোকসান) হ’তে পারে।

(ঙ) সূদের ক্ষেত্রে ঋণদাতা সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করে না। পক্ষান্তরে মুনাফা উদ্যোক্তা ও পুঁজির যোগানদাতার সময় ও শ্রম বিনিয়োগের  ফল।


ভাড়া (ইজারা) কাকে বলে ?
ভাড়াকে আরবীতে বলা হয় “আজর” যার অর্থ বিনিময়। এটি আসলে ‘সেবা' এর মূল্য। সংজ্ঞায় বলা যায় “ভাড়া হচ্ছে ফানজিবল নয় এমন দ্রব্যের/সম্পদের সেবার মূল্য বিশেষ।” যেমন- মানুষ তার শ্রম বিক্রি করে যা পায় তাকে বলা হয় “মজুরী- বা আজুরাহ” যা আজর থেকে এসেছে। অর্থাৎ ব্যবহারের মূল্য নিয়ে অন্যকে কোন নন-ফানজিবল (নিঃশেষ হয়না) পণ্য ব্যবহার করতে দিলে তাকে বলা হয় “ইজারা: আর ব্যবহারের মূল্যকে বলে আজর বা ভাড়া। এখানে সমমূল্যের দুটি পণ্যের অর্থাৎ সেবা ও তার মূল্য বিনিময় হয়। ইজারায় পণ্য নয় বরং সেবা বিক্রি হয়। এখানে বিক্রিত সেবার বিনিময় মূল্য হচ্ছে ভাড়া বা (Rent) এতে কোন পরে ঠকা জেতা নেই- তাই এটা হালাল।

বাই বা ক্রয় বিক্রয়:
আরবী বাই অর্থ ক্রয়-বিক্রয়। পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি। ক্রয়ে বিক্রয় এবং বিক্রয়ে ক্রয়। আমি কিনলাম অন্যজন বিক্রি করলেন। উভয়টি বুঝাতেই বাই- ব্যবহৃত হয়। বিক্রয় না থাকলে ক্রয় নেই এবং ক্রয় না থাকলে বিক্রয়ও নেই। বাই- হচ্ছে-
ক. দু'টি জিনিসের মালিকানা বিনিময়। দ্রব্য একজনের মালিকানা থেকে অন্যের মালিকানায় এবং মূল্য বিপরীতমুখী মালিকানায় হস্তান্তর।
খ. বিকল্প গ্রহণের বিনিময়ে মালিকানা হস্তান্তর।
গ. ক্ষতিপূরণ প্রদান করে কোন জিনিসের মালিকানা অর্জন।

ক্রয় বিক্রয়ের শর্ত:
১. ক্রয়, বিক্রয়ে মাল হালাল বা কমপক্ষে মুবাহ হওয়া।
২. মালের অস্তিত্ব থাকা।
৩. মালের মালিকানা ও দখল থাকা।
৪. মাল সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকা।
৫. স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ।
৬. স্বেচ্ছায় বিনিময় করা।

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, ইসলামী শরীয়ায় ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত লাভ বৈধ কিন্তু ঋণ প্রদানের মাধ্যমে যে অতিরিক্ত আদায় করা হয় তা সুদ এবং অবৈধ ও হারাম। এবারে আসা যাক ইসলামী ব্যাংকগুলো কি পদ্ধতিতে ব্যবসা করে তার পর্যালোচনায়।

ইসলামী ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশে তিন ধরনের পদ্ধতিতে তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত করে
১. ক্রয় বিক্রয় পদ্ধতি- 
# বাই ই-মুরাবাহা
# বাই-ই-মুয়াজ্জাল
# বাই-ই-সালাম
# বাই ইসতিসনা

২. অংশীদারিত্ব পদ্ধতি
#মুশারাকা
#মুদারাবা

৩. ভাড়া পদ্ধতি-
# লিজিং বা ইজারা
# হায়ার পার্চেজ বা ভাড়া ক্রয়
# হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক 

১. ক্রয় বিক্রয় পদ্ধতি----------------------------------
# বাই মুরাবাহা (সম্মত লাভে বিক্রয়)
বাই' মুরাবাহা শব্দ দু'টি আরবী বাইয়ুন এবং রিবহুন শব্দদ্বয় থেকে এসেছে। বাইয়ুন শব্দটির অর্থ ক্রয়-বিক্রয় এবং রিবহুন শব্দের অর্থ হল সম্মত মুনাফা। কাজেই বাই' মুরাবাহার অর্থ সম্মত মুনাফায় বিক্রয়।
সংজ্ঞাঃ নগদে অথবা ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে একসাথে অথবা নির্ধারিত কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের সম্মতিক্রমে ক্রয়মূল্যের উপর নির্ধারিত মুনাফা ধার্য করে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরীয়াহ্ অনুমোদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করাকেই বাই' মুরাবাহা বলে। বৈশিষ্ট্য-
* ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মত নির্ধারিত লাভে বিক্রয়।
* ক্রয়মূল্য ও মুনাফা ক্রেতাকে আলাদাভাবে জানাতে হয়।
* মাল ক্রয় ও পরে বিক্রি করা শর্ত।
* মালের অস্তিত্ব থাকতে হবে এবং ক্রয়যোগ্য হতে হবে।
* রূপান্তরের সুযোগ ও ঝুঁকি থাকার কারণেই এ পদ্ধতি শরীয়াহসম্মত।
* লাভ শতকরা হিসাবে নির্ধারিত করা হলেও শরীয়াতে নিষেধাজ্ঞা নেই।
* চুক্তির পর নির্ধারিত মূল্য বৃদ্ধি করা যায় না।

বাই মুয়াজ্জাল (বাকিতে বিক্রয়: ক্রেডিট সেল)
বাই'মুয়াজ্জাল শব্দ দু'টি আরবী বাই' এবং ‘আজল' শব্দদ্বয় থেকে এসেছে। বাই শব্দটির অর্থ ক্রয়-বিক্রয় এবং আজল শব্দটির অর্থ নির্ধারিত সময়। কাজেই বাই' মুয়াজ্জাল শব্দদ্বয়ের অর্থ ভবিষ্যতে কোনো নির্ধারিত তারিখে অথবা ভবিষ্যতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধের শর্তে বাকি মূল্যে বিক্রি।
সংজ্ঞাঃ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে একসাথে অথবা নির্ধারিত কিস্তিতে সম্মতমূল্য পরিশোধের শর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরীয়াহ্ অনুমোদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করাকে বাই' মুয়াজ্জাল বলে। বৈশিষ্ট্য

* ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে নির্ধারিত দাম পরিশোধের শর্তে বাকিতে বিক্রি।
* Goods delivered, Price deferred.
* মাল ক্রয় করে মালিকানা লাভ করার পর বিক্রয় করতে হবে।
* মাল ক্রয় করে অর্থকে মালে রূপান্তর এবং মাল বিক্রি করে মালকে অর্থে রূপান্তর করতে হবে।
* বাই' মুয়াজ্জালের চুক্তি সম্পাদনের সময় মালের অস্তিত্ব থাকতে হবে এবং ক্রয়যোগ্য হতে হবে।
* বাই' মুয়াজ্জালে ব্যাংক ক্রয়মূল্য ও লাভ বিনিয়োগ গ্রাহকের নিকট পেশ করা জরুরী নয়।
* মাল ক্রয়ের পর ক্রেতার/গ্রাহকের কাছে বিক্রি ও হস্তান্তর করার পূর্ব পর্যন্ত ব্যাংককে মালের ঝুঁকি বহন করতে হবে।
* রূপান্তরের সুযোগ ও ঝুঁকি থাকার কারণেই এ পদ্ধতি বৈধ।

ইসলামী ব্যাংক বাই মুয়াজ্জাল পদ্ধতিতে সরাসরি টাকা লোন দেয় না। বরং ক্রেতার কাছে বাকিতে জিনিস বিক্রি করে। মনে করুন ক্রেতার একটি ট্রাক্টর প্রয়োজন। ধরুন ক্রেতা ট্রাক্টর কিনবে ১ লক্ষ টাকায়। ইসলামী ব্যাংক গ্রাহককে সরাসরি টাকা দিবে না। বরং ইসলামী ব্যাংক প্রথমে ৯০ হাজার টাকায় ট্রাক্টর কিনবে অতপর ১ লক্ষ টাকায় অর্থাৎ ১০ হাজার টাকা লাভে গ্রাহকের কাছে বাকিতে ট্রাক্টর বিক্রি করবে। এবং টাকা পরিশোধের জন্য একটি সময় দিবে। অর্থাৎ এটা ১০০% জেনুইন ব্যবসা। এটাকে ঘুরিয়ে সুদ বা মন্দের ভালো বলার সুযোগ নেই।

বাই'সালাম (অগ্রিম ক্রয়)
বাই' সালাম শব্দ দুটি আরবী বাই এবং ‘সিলমুন' শব্দদ্বয় থেকে এসেছে। বাই' শব্দটির অর্থ ক্রয়-বিক্রয় এবং ‘সিলমুন' শব্দটির অর্থ ‘অগ্রিম'। কাজেই বাই'সালাম শব্দটির অর্থ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়।
সংজ্ঞাঃ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎক্ষণিক সম্মতমূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরীয়াহ অনুমোদিত পণ্য সামগ্রী অগ্রিম বিক্রয় করাকে বাই'সালাম বলে। বৈশিষ্ট্য

* অগ্রিম ক্রয়, Price paid in advance, goods deferred.
* অগ্রিম গৃহীত অর্থের দ্বারা মাল তৈরি করে সরবরাহ করা হয় বিধায় দাম আগে নিয়ে মাল পরে দেয়া হয়।
* মালামালের সম্পূর্ণ দাম চুক্তির সময়ই দিতে হয়।
* দ্রব্য সামগ্রীর অস্তিত্ব ছাড়াই ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।
* দ্রব্য-সামগ্রীর অস্তিত্ব থাকলে বাই'সালাম হবে না। সেক্ষেত্রে বাই'মুয়াজ্জাল বা বাই' মুরাবাহা প্রযোজ্য।
* পণ্যের দাম, বিবরণ, পরিমাণ, গুণাগুণ, আকার, এককপ্রতি দাম, মোট দাম ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে চুক্তিতে থাকতে হবে।

বাই' ইসতিসনা (আদেশের ভিত্তিতে ক্রয়)
ইসতিসনা' শব্দটি আরবী সানাআ শব্দ থেকে এসেছে। সানাআ শব্দের অর্থ শিল্প। সুতরাং ইসতিসনা শব্দের অর্থ কোনো উৎপাদনকারীর কাছে থেকে সুনির্দিষ্ট পণ্যসামগ্রী ক্রেতার ফরমায়েশ অনুযায়ী তৈরি করে বিক্রি করা।
সংজ্ঞাঃ অগ্রিম অথবা ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে নির্ধারিত কিস্তিতে সম্মতমূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রেতার ফরমায়েশ অনুযায়ী শরীয়াহ, অনুমোদিত পণ্য সামগ্রী তৈরি করে বিক্রয় করাকে ইসতিসনা' বলে। বৈশিষ্ট্য

*মালের দাম অগ্রিম/এককালীন/কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য।
*Both deliverz of goods  payment of price may be deferred.
*Order দিয়ে মাল তৈরি করানো ও পরে দাম দেয়া বৈধ।
* বাই'সালামের ন্যায় ইসতিসনা' পদ্ধতিতে মালের অস্তিত্ব ছাড়াই বেচা-কেনা সংঘটিত হওয়া শরীয়াহ সম্মত।
*Manufacturing  Construction শিল্পে প্রয়োগযোগ্য।

২. অংশীদারিত্ব ভিত্তিক পদ্ধতি--------------------------------------------
মুশারাকা (অংশীদারিত্ব ভিত্তিক বিনিয়োগ)
আরবী শব্দ ‘শিরকাত' অথবা ‘শরীকাত' (শিরক) থেকে মুশারাকা শব্দের উৎপত্তি। তাই শাব্দিক দিক দিয়ে মুশারাকা অর্থ অংশীদারিত্ব। সমসাময়িক অর্থনীতিবিদগণ ও ব্যাংকারদের মধ্যে মুশারাকা শব্দটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সংজ্ঞাঃ যে কারবারে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মুলধন যোগান দেয়, সকলে অথবা কেউ কেউ কারবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় অংশ নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী লাভ নেয় এবং লোকসান হলে মুলধন অনুপাতে বহন করে তাকে মুশারাকা বলে। বৈশিষ্ট্য
* দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পুঁজি যোগান দেয়।
* সকলেরই কারবার পরিচালনার অধিকার থাকে।
* লাভ হলে সম্মত হারে ভাগ করে নেয়।
* লোকসান হলে পুঁজির আনুপাতিক হারে সকলেই বহন করে।
* পুঁজি রূপান্তরের ও ঝুঁকি সকলেই বহন করে।

মুদারাবা (উদ্যোক্তার মাধ্যমে বিনিয়োগ)
আরবী ‘দারবুন' শব্দ থেকে ‘মুদারাবা' শব্দের উৎপত্তি। মুদারাবা শব্দের অর্থসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে ভ্রমণ। তাই ইসলামী চিন্তাবিদগণ আল্লাহর অনুগ্রহ অনে¦ষণে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভ্রমণকে মুদারাবার মৌলিক বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। 
সংজ্ঞাঃ যে কারবার এক প মূলধন যোগান দেয় এবং দ্বিতীয় প শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করে এবং চুক্তি অনুযায়ী লাভ নেয় অথবা দ্বিতীয় পরে অবহেলাজনিত কারণ ছাড়া সমুদয় আর্থিক মূলধন যোগানদাতা বহন করে তাকে মুদারাবা বলে। বৈশিষ্ট্য
* মুলধন যোগানদাতাকে ‘সাহিব-আলমাল' এবং উদ্যোক্তাকে ‘মুদারিব' বলা হয়।
* এক পরে পুঁজি আর এক পরে শ্রম।
* লাভ হলে চুক্তি সম্মত হারে ভাগ করে নেয়।
* লোকসান পুঁজির মালিকের।
* পুঁজির মালিক, অংশীদার হিসেবে পুঁজি দিয়ে বিনিয়োগ করে।
* সাহিব-আল-মাল পুঁজির ঝুঁকি নেয়।

৩. ভাড়া পদ্ধতি-------------------------------------------
লিজিং বা ইজারা
ইজারা শব্দটি আরবী। এটি আজর বা উজরাত থেকে এসেছে। এর অর্থ প্রতিদান, আয়, মজুরি, ভাড়া ইত্যাদি। ইজারা এমন এক ধরনের চুক্তি, যেখানে ভাড়া গ্রহীতা নির্দিষ্ট ভাড়া প্রদানপূর্বক ভাড়া গ্রহীতার নিকট থেকে ভাড়াদাতার মালিকানাধীন সম্পদ থেকে সেবা/সুবিধা ভোগ করে।
সংজ্ঞাঃ যে বিনিয়োগ পদ্ধতিতে স্থায়ী প্রকৃতির সম্পদ ক্রয় অথবা তৈরি করে নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে অন্যকে ব্যবহার করতে দেয়া হয় তাকে ইজারা বলে। বৈশিষ্ট্য
* স্থায়ী সম্পদ কিনে ভাড়া দেয়া এবং মেয়াদ শেষে মাল ফেরত নেয়া।
* রূপান্তর আছে।
* ঝুঁকি আছে।

হায়ার পার্চেজ (ক্রয়ের চুক্তিতে ভাড়া/ইজারা বিল বাই')
যে বিনিয়োগ পদ্ধতিতে এক প সমুদয় যোগান দিয়ে কোনো স্থায়ী প্রকৃতির সম্পত্তির মালিকানা অর্জনপূর্বক তা নির্ধারিত ভাড়ায় ও আসল অর্থ নির্ধারিত কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে অন্য পরে নিকট ভাড়া দেয় বা বিক্রি করে তাকে হায়ার পার্চেজ ও ইজারা বিল বাই' বলে। বৈশিষ্ট্য
* পুঁজি দ্বারা মাল ক্রয় বা তৈরি করে মালের মালিক হওয়া।
* হস্তান্তর যোগ্য মালের ঝুঁকি বহন করা।
* দাম সম্পূর্ণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত মালিক থাকা।

হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক (মালিকানায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভাড়ায় ক্রয়)
হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক একটি বিশেষ ধরনের চুক্তি। প্রকৃতপক্ষে এর মধ্যে শিরকাত, ইজারা এবং বিক্রয় এ তিনটি পদ্ধতির সমন্বয় ঘটেছে। শিরকাত শব্দের অর্থ অংশীদারিত্ব। শিরকাতুল মিল্ক এর অর্থ মালিকানায় অংশীদারিত্ব। যখন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ হয়ে যৌথ মালিকানা অর্জনের নিমিত্তে মূলধন বিনিয়োগ করে কোনো সম্পদ অর্জন করে তখন এ ধরনের কারবারে সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয় পক্ষগণের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বণ্টিত হয় এবং লোকসান হলে তা তারা মুলধন অনুপাতে বহন করে। 
সংজ্ঞাঃ যে পদ্ধতিতে দুটি পক্ষ সম অথবা অসম অনুপাতে মূলধন যোগান দিয়ে কোনো সম্পত্তির মালিকানা অর্জনপূর্বক পরস্পর সম্মতিক্রমে ভাড়া ও বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে নির্ধারিত কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে এক পক্ষের অংশ অন্য পক্ষের নিকট ভাড়া দেয় ও বিক্রয় করে তাকে হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক বলে। বৈশিষ্ট্য
* Shirkat means partnership.
* Shirkatul melk means share in ownership.
* এটি একটি বিশেষ ধরনের চুক্তি। এতে শিরকাত, ইজারা এবং বিক্রয়- এই তিনটি পদ্ধতির সমন্বয় ঘটেছে।
* পক্ষদ্বয় স্ব স্ব অনুপাতে সম্পদের ঝুঁকি বহন করে।
* সম্পদের দখল হস্তান্তরের দিন থেকে ভাড়া গণনা করা হয়।
* এবংঃধঃরড়হ চবৎরড়ফ এর ভাড়া নেয়া বৈধ নয়।
* ভাড়ার উপর ভাড়া ধার্য হয় না।
* কিস্তির টাকা পরিশোধের সাথে সাথে কিস্তির পরিমাণ মালিকানা হস্তান্তরিত হয়।
* Graduale transfer of ownership on payment of everz installment.

বিভিন্ন বিনিয়োগ ম্যাকানিজমে শরীয়াহর ভিত্তি:
উদ্দেশ্য এবং বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে ইসলামী ব্যাংক সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে ভিন্ন। এ ব্যাংক ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলামী শরীয়তের নীতিমালার উপর ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত, কুরআন ও হাদীসের আইনের মাধ্যমে এর যাবতীয় কার্যক্রম ও লেনদেন নিয়ন্ত্রিত এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স)-এর অনুমোদিত কল্যাণধর্মী অর্থব্যবস্থা কায়েমে বদ্ধপরিকর। ইসলামী ব্যাংক তার বিনিয়োগ কার্যক্রম লাভ-লোকসান বাই' ইজারা ম্যাকানিজমের ভিত্তিতে করে থাকে।

মুদারাবা:
মুদারাবা ফার্সি ভাষা থেকে উদগত ও আরবী ভাষায় বহুল ব্যবহৃত শব্দ। ‘মুদারাবা' মুকারাদা' বা কিরাদ নামেও পরিচিত। মুদরাবা এমন একটি অংশীদারী কারবার, যেখানে অর্থের মালিক অপর একজনকে অর্থ প্রদান করে আর যিনি অর্থ গ্রহণ করেন তিনি মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে কারবার পরিচালনা করেন এবং নির্ধারিত আনুপাতিক হারে তারা লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে নেন। এটি  Sleeping Partnership(নিস্ক্রিয়/সুপ্ত অংশীদারিত্ব) বা Trust Sharing । অন্য কথায় এক পক্ষের মূলধন অপর পক্ষের দক্ষতা, প্রচেষ্টা, শ্রম, মেধা প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা দিয়ে মুদারাবা কারবার পরিচালিত হয়। কারবারে যিনি অর্থ বা মূলধন দিয়ে অংশগ্রহণ করেন তাকে সাহিব আল মাল (Sahib-al-mal)বলা হয়। যিনি মূলধন বিনিয়োগ করেন তাকে রাব্বুল মাল (Rab-al-mal) বলা হয়। মূলধন ব্যবহারকারী মুদারিব (Mudarib) বা আমিল (Amil) বা মুকারিদ (Muqarid) বা পরিচালক বা উদ্যোক্তা বা মুদারাবা কারবারের ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকেন।

মুদারাবা বিনিয়োগ পদ্ধতির বৈধতা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা সম্পর্কিত
“কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা জমিনে পরিভ্রমণ করে আল্লাহর দয়া/রিযক লাভের প্রত্যাশায়” এ আয়াতে ব্যবহৃত ‘দারাবা' (পরিভ্রমণ করা) শব্দ থেকেই মুদারাবা শব্দটি এসেছে। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ঐসব পরিভ্রমণকারীদের কথা বলা হয়েছে, যারা বৈধ পন্থায় ব্যবসা বা হালাল আয়ের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয় এবং অর্জিত রিযক দ্বারা নিজের ও পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে থাকে। হাদীসের একটি বর্ণনা মতে, হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা) মুদারাবা পদ্ধতিতে মূলধন বিনিয়োগ করতেন এবং মুদারিবের উপর নিম্নবর্ণিত শর্তাদি আরোপ করতেন, যেমন- মুদারিব সাগর পথে পরিভ্রমণ করবেন না, উপত্যকা পাড়ি দেবেন না এবং গবাদি পশু কেনা-বেচার ব্যবসা করবেন না। এসব শর্ত লঙ্ঘন করে কারবার করলে এবং তাতে ক্ষতি হলে মুদারিব সেজন্য দায়ী হবেন। এ শর্তগুলো মহানবী (স) কে শোনানো হলে তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, সাহিব আল-মাল শর্ত আরোপ করার অধিকার রাখেন।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. আরো বিস্তারিতভাবে লিখেছেন- ‘জাহেলী যুগে মুদারাবা ব্যবসা ছিল। বিশেষত কুরাইশ গোত্রের লোকদের মাঝে এর প্রচলন ছিল। কারণ, আরব জাতি ব্যবসা নির্ভর জাতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওতের পূর্বে অন্যের সম্পদ দ্বারা মুদারাবা ব্যবসা করেছেন। যেমন হযরত খাদিজা রা. এর সম্পদ দ্বারা মুদারাবা ব্যবসা করেছেন। বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে শাম থেকে ফেরৎ আবু সুফিয়ানের যে বাণিজ্য কাফেলা মুসলমান কর্তৃক বাধার সম্মুখিন হয়েছিল, তাতে আবু সুফিয়ানের সাথে মক্কার অনেকেরই মুদারাবা চুক্তি ছিল। এরপর যখন ইসলাম এসেছে তখন মুদারাবাকে বহাল রাখা হয়েছে। তাই দেখা গেছে, সাহাবীগণ অন্যের সম্পদ দিয়ে মুদারাবা ব্যবসা করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিষেধ করেননি। নবীর সামনে হওয়ার পরও নিষেধ না করাটাও সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এটি সুন্নাহ দ্বারাও প্রমাণিত।’ -(ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া, খ. ১৯, পৃ. ১৯৫)।

আরেকটি হাদীস থেকে জানা যায়, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এক ইয়াতিমের টাকা জনৈক ব্যক্তিকে মুদারাবা পদ্ধতিতে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন এবং তিনি ঐ মুদারাবা ফান্ড দিয়ে ইরাকে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। মহানবী (স) নিজেই হযরত খাদিজা (রা)-এর মূলধন দিয়ে মুদারাবা কারবার পরিচালনা করেছেন। এটি প্রাক-ইসলামী যুগের ঘটনা। ইসলামী সমাজে এ পদ্ধতিকেই গ্রহণ করা হয়। ইবনুল মুনযির উল্লেখ করেছেন, ফকীহদের মধ্যে মুদারাবা পদ্ধতির কারবারের ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।

মুদারাবা চুক্তি বৈধ হওয়ার জন্য যৌক্তিকতা:
১. মুদারাবা চুক্তি বৈধ হয় যখন সাহিব আল-মাল নিজে বিনিয়োগ কারবার পরিচালনার সময় পান না এবং মুদারিবকে মূলধন সরবরাহ করেন আর মুদারিব শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করে লাভ করার উদ্দেশ্যে কারবার পরিচালনা করেন। এ পরিস্থিতিতে মুদারাবা চুক্তির ভিত্তিতে উভয় পরে স্বার্থ সংরতি হয়। 
২. যাদের মূলধন আছে কিন্তু ব্যবসায়িক যোগ্যতা নেই এবং যাদের ব্যবসায়িক যোগ্যতা দতা অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু মূলধন নেই- এ পদ্ধতিতে এ দু পরে সমন¦য় হয়, যা অলস টাকা সচল এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করে এবং কল্যাণ নিশ্চিত করে।
৩. মুদারাবা ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ব্যবসায়িক পদ্ধতি। এ ম্যাকানিজম ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহে বিভিন্ন কাতে ব্যাপক ব্যবহারের সুযোগ আছে।

মুশারাকা:
মুশারাকা বা শিরকত ইসলামী ব্যাংকের একটি স্থায়ী ও সর্বজনস্বীকৃত শরীআত অনুমোদিত বিনিয়োগ পদ্ধতি। মুশারাকা হচ্ছে এমন অংশীদারী কারবার যেখানে দু বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাভ করার উদ্দেশ্যে পুঁজি যোগন দেয়, কারবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করে এবং কারবারের লাভ-তিতে অংশ নেয়। কারবারে লাভ হলে অংশীদারগণ পূর্বনির্ধারিত অনুপাতে তা ভাগ করে নেয়, আর লোকসান হলে অংশীদারগণ নিজ নিজ পুঁজির আনুপাতিক হারে তা বহন করে। প্রাক ইসলামী যুগে আরব উপদ্বীপে মুশারাকা বা শিরকতের ব্যাপক প্রচলন ছিল। শিরকত বর্তমান সময়ে অংশীদার কারবার (Partnership Business) এর মতো। মহানবী (স) মদীনা রাষ্ট্রে এ বিনিয়োগ পদ্ধতিটি ইসলামী নীতিমালার আলোকে গ্রহণ ও এর ব্যাপক প্রচলন করেন।
মুশারাকা/শিরকত বিনিয়োগপদ্ধতির বৈধতা একাধারে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা সমর্থিত ও প্রতিষ্ঠিত। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা অংশীদার হবে এক তৃতীয়াংশের' (সূরা নিসা: ১২) পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘শরীকদের অনেকেই একে অপরের প্রতি জুলুম করে থাকে; (জুলুম) করে না কেবল সেসব লোকেরা, যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ও সৎকর্ম সম্পাদনকারী। অবশ্য এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। (সূরা সোয়াদ: ২৪)

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) মহানবী (স)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা বলেন, দু'জন অংশীদারের সাথে আমি তৃতীয় জন হয়ে থাকি; যতণ না তাদের একজন তার অপর সাথী (অংশীদার)-এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। আর যখনই কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসি। দু'জন অংশীদারের উপর আল্লাহর হাত (সাহায্য) অব্যাহত থাকে, যতক্ষণ না তারা পরস্পর বিশ্বাসঘাতকতা করে।” (আবু দাউদ)

হযরত যায়েদ (রা) বলেন, “আমি ও বারা (রা) দু'জন শরীক।” (বুখারী) ইবনুল মুনযির (রা) বর্ণনা করেছেন, শিরকাত পদ্ধতির পে সকল যুগের আইনবেত্তাগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

আলওয়াদিয়া (কারেন্ট/চলতি অ্যাকাউন্ট): আলওয়াদিয়া আমানত সংগ্রহের শরীয়া সম্মত এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আমানতকারী এ শর্তে কারো নিকট টাকা গচ্ছিত রাখে যেখানে দ্বিতীয় পক্ষ তথা আমানতের জিম্মাদার তার জিম্মায় থাকা টাকা আমানতকারী চাহিবামাত্র ফেরৎ দেবার শর্তে তার নিজ ঝুঁকিতে ব্যবহার করার অনুমতিও লাভ করেন। এখানে আমানতকারী কোন প্রকার ঝুঁকি যেমন নেন না তেমনি কোন পারিতোষিকও দাবী করতে পারেন না। ইসলামী ব্যাংকে ব্যবসায়িক চলতি হিসাব আল ওয়াদিয়া পদ্ধতিতেই খোলা হয়।

ফিক্সড ডিপোজিট ও ইসলামী ব্যাংক:
প্রসঙ্গত: উল্ল্যেখ্য যে ইসলামী কখনো ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করে না। সে হিসেবে গ্রাহকের একাউন্টে ফিক্সড সুদ দেবার প্রশ্নও ওঠে না। সূদী ব্যাংকের ফিক্সড হিসাবে বিকল্প ইসলামী হিসেবে ব্যাংক মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট একাউন্ট (MTDRA) খুলে স্বল্প মেয়াদী/দীর্ঘ মেয়াদী আমানত জমা নেয়। এখানেও সেই শরীয়া সম্মত মুদারাবা নীতি অনুসরণ করা হয়। তবে ব্যাংকের ব্যবহার সুবিধা বেশী হওয়ায় মেয়াদী হিসাবে বেশী ওয়েটেজ ধরে এসব হিসাবে দেয় মুনাফার হার তুলনামুলক বেশী হয়।

ব্যাংকের আরও কিছু কাজ:

ট্রান্সফার: এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা স্থানান্তর করা, অনুরূপ এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে টাকা ট্রান্সফার করা। অবশ্য এর বিনিময়ে ব্যাংক সামান্য ফী গ্রহণ করে থাকে। যা ভাড়া বা মজুরীর পর্যায়ভুক্ত, আর তা দেওয়া-নেওয়া নিশ্চয়ই বৈধ।

আকলপত্র: (LC:LETTERS OF CREDIT) খোলা। বিনা সূদে এল সি খোলার উপর ব্যাংক যে ফী নেয় তা বৈধ।

লকার ভাড়া দেওয়া: যদি কোন ব্যক্তি (নিরাপদ) আয়রন-চেষ্ট বা লকে টাকা পয়সা অথবা সোনা-দানা রাখতে চায়, তাহলে সে তা ব্যাংক থেকে ভাড়া নিতে পারে।

ট্রাভেল চেক: (TRAVEL CHEQUE) জারী করাঃ- যে ব্যক্তি এক রাষ্ট্র থেকে ভিন্ন রাষ্ট্রে সফর বা ভ্রমণ করে তার এ রাষ্ট্রে অর্থের প্রয়োজন অবশ্যই পড়ে। এ ক্ষেত্রে সে ব্যাংকে নগদ টাকা জমা করে ট্রাভেল চেক সংগ্রহ করে; যা সে যে কোন জায়গায় ভাঙ্গিয়ে (যত টাকা জমা দিয়েছিল) তত টাকাই গ্রহণ করতে পারে। আর এ পদ্ধতি নিঃসন্দেহে নিজের সাথে নগদ টাকা নিয়ে বেড়ানোর চাইতে অধিকতর সহজ এবং নিরাপত্তামূলক।

মূদ্রা বিনিময়: এক‌দে‌শের মুদ্রা দি‌য়ে অন্য দে‌শের মুদ্রা ক্রয় বিক্রয় কর‌লে সেটা সূদ হবে না কারণ এখা‌নে‌ একই জাতীয় জিনিসের বিনিময় হ‌চ্ছে না বরং বহু জাতীয় দ্রব্য হ‌চ্ছে, ডলার, ইউরো টাকা ইত্যাদি সব আলাদা জিনিস, আলাদা স্থান, আলাদা মান। এ ধর‌নের ক্রয় বিক্রয়‌কে বলে “বাই‌য়ে ছারফ”।

বাই' ম্যাকানিজমসমূহের শরয়ী ভিত্তি:
বাই' ম্যাকানিজসমূহের বৈধতা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, “আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন।” (সূরা বাকারা: ২৭৫)” “হে মু'মিনগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে আসাৎ করো না; তবে তোমাদের পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ। (সূরা নিসা: ২৯)।

বাই' মুরাবাহা
বাই' যেহেতু বৈধ, তাই বাই' মুরাবাহাও বৈধ। কারণ, আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ করেছেন। কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহর করুণা প্রত্যাশা করা দোষের নয়।” মুফাসসিরীন কেরাম ‘করুণা' বলতে লাভ বুঝিয়েছেন। মুরাবাহা ‘তাওলিয়াহ' নামক একই ধরনের বেচা-কেনার অনুরূপ, যেখানে বিক্রেতা তার নিজের জন্য কোনো মুনাফা ধার্য না করে কেবল ক্রয়মূল্যে পণ্য বিক্রয় করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একবার মহানবী (স) হযরত আবু বকর (রা)-এর নিকট থেকে মাদি উট ক্রয় করেছেন, যাদ্বারা তিনি মদীনা গমন করেছেন। হযরত আবু বকর (রা) চেয়েছিলেন উটটিকে এমনি এমনি দিয়ে দিতে, কিন্তু মহানবী (স) এতে অসম্মত হলেন এবং বললেন “বরং আমি একটি নির্ধারিত মূল্যে নেব।” অধিকাংশ ফকীহ বাই' মুরাবাহার বৈধতা হিসেবে একেই নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক-এর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে বাই' মুরাবাহা পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাই-ই-সালাম
বাই' সালাম পদ্ধতির বৈধতা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মাজীদে ইরশাদ করা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য লেনদেন কর তখন তা লিখে নাও।” (সূরা বাকারা: ২৮১)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, উপরিউক্ত আয়াতে বাই, সালামকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দ্রব্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধের মাধ্যমে চুক্তিতে ক্রয় হচ্ছে বাই' সালাম। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, মহানবী (সঃ) বলেন, “যে বা যারা খেজুরের জন্য আগাম মূল্য পরিশোধ করবে তা তারা করবে নির্দিষ্ট আকার বা ওজনের ভিত্তিতে।” আরেক হাদীসে এসেছে, “নির্দিষ্ট আকার, ওজন ও সরবরাহের তারিখের ভিত্তিতে।” 
ইমাম বুখারী ও মুসলিম (রহ.) বর্ণনা করেছেন, “মহানবী (সঃ) যখন হিজরত করে মদীনায় এসেছেন তখন সেখানকার অধিবাসীগণ ফলের জন্য এক বছর ও দু বছর মেয়াদের জন্য বাই' সালাম করছিল। মহানবী (সঃ) এরশাদ করলেন, “যে কেউ বাই' সালাম করবে সে যেন সুনির্দিষ্ট বাটখারা পরিমাপ করে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তা করে। সকল ফকীহ বাই' সালাম চুক্তির বৈধতার ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে একমত। ইবনুল মুনযির (রাঃ) বলেন, সকলের মতামতে সালাম চুক্তি এমন একটি চুক্তি, যেখানে একজন আরেক জনের কাছে কোনো বস্তু নির্দিষ্ট আকার, ওজন ও সরবরাহের তারিখের ভিত্তিতে বিক্রয় করে যা অনুমোদিত।

বাই' ইসতিসনা:
মহানবী (সঃ)-এর একটি অনুরোধের ঘটনায় বাই' ইসতিসনা পদ্ধতি বৈধতা লাভ করেছে। একবার মহানবী (সঃ) একটি মিম্বার ও সীলমোহর (মোহরাঙ্কিত আংটি) তাঁর জন্য বানিয়ে দিতে কারিগরকে অনুরোধ করেছিলেন। অর্ডার দিয়ে মাল তৈরি করিয়ে বা বানিয়ে নিয়ে পরে দাম দেয়া বৈধ। ইসতিসনা একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি। এটা শুধু প্রতিশ্র“তি নয় ওআইসি ফিকাহ্ একাডেমি বাই' ইসতিসনাকে বৈধ বিনিয়োগ পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
ইজারা
কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা ইজারার বৈধতা প্রমাণিত। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, “তাদের একজন বললঃ হে পিতা! আপনি তাকে ভাড়ার শর্তে নিযুক্ত করুন। নিশ্চয়ই শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকেই ইজারায় খাটানো উত্তম।” (সূরা কাসাস: ২৬)
হাদীসে আছে, মহানবী (সঃ) বলেছেন, “যে বা যারা একজন শ্রমিক খাটাল, অবশ্যই তাকে তার মজুরী সম্পর্কে জানাতে হবে।” 

বিরোধীদের কিছু প্রশ্নের জবাব:

ইসলাম সুনির্দিষ্ট জ্ঞানের ধর্ম। এখানে সন্দেহ, হলেও হতে পারে এই জাতীয় অনুমানের কোন অবকাশ নেই। তাই আমাদের যে স্বভাবটির মাধ্যমে আমরা অজান্তেই ইসলামের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করি, তা হল জ্ঞান ছাড়া ইসলাম নিয়ে কথা বলা। একজন ইঞ্জিনিয়ারের কাছে চিকিৎসা নিতে কেন যাব না সেটা আমরা খুব ভালভাবে বুঝি কিন্তু আলেমের কাছ থেকে সুশৃখংল উপায়ে দ্বীন শিক্ষা না করে থাকলে ইসলাম নিয়ে কেন কথা বলা যাবে না, তা আমাদের অনেকেরই মাথায় ঢোকে না।

ব্যবসা এবং সুদ এ দুটিকে এক বা অভিন্ন মনে করা নিতান্ত ভ্রান্তি। কারণ বেচা-কেনা এবং ব্যবসার আসল উদ্দেশ্যর প্রতি লক্ষ্য করলে, ব্যবসা ও সুদের মধ্যে যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, তা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করা যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলো, ব্যবসা-বাণিজ্যর মধ্যে যে লভ্যাংশ বা অতিরিক্ত সম্পদ অর্জিত হয়, তা পণ্যের বিনিময়ে বা কোনো একটা পণ্য কিনে সেটা আবার বিক্রি করে। আর সুদের মধ্যে পণ্য ব্যতীতই শুধু টাকার উপরে অতিরিক্ত সম্পদ অর্জিত হয়।

ইসলামী ব্যাংক কত পার্সেন্ট ইসলামিক? 

এই প্রশ্নের উওর দেয়ার আগে আমরা প্রত্যেকেই নিজেকে প্রশ্ন করি, ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজে কতটা ইসলামিক? আমার বিগত ২০-২৫ বছর জীবনে আমি কি কবিরা গুনাহ সমূহ এড়িয়ে যেতে পেরেছি? আমি কি গীবত করা, মিথ্যা কথা ও কাজ, হারাম - হালাল বেছে চলা কিংবা সঠিকভাবে পর্দা করি? 

হয়ত বলবেন, আরে ভাই, যেহেতু সমাজ টা ইসলামিক না, ইসলামিক শরীয়া মোতাবেক আইন চলে না, সেহেতু এখানে হালাল-হারাম বেছে চলা কিংবা সঠিক ভাবে পর্দা করা সম্ভব না। আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে নামাজের কথা বলুন, আপনি যখন নামাজ পড়েন, তখন তো আপনি ও আল্লাহ ছাড়া মাঝে কেউ থাকে না, আপনি কি আপনার অতীত জীবনের মাত্র এক ওয়াক্ত নামাজ এক্কেবারে সহীহ ভাবে, মনের মধ্যে অন্য কোন কিছু উদয় না হয়ে পড়তে পেরেছেন? হয়ত হাতে গোণা দু’চার জন ছাড়া আমরা সবাই পড়ি নাই। তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে? আমি একজন ব্যক্তি এই সমাজে শত প্রচেস্টার পর ও ১০০% ইসলামিক হতে পারি না, কেউ ২০%, কেউ ৪০% কেউবা ৬০% ইসলামিক। তাহলে একটা ব্যাংক, একটা প্রতিষ্ঠান এই অনৈসলামিক বিশ্বে শুরুতেই কিভাবে ১০০% ইসলামিক হবে? এটা কি আসলেই সম্ভব? আসুন কেন সম্ভব নয়, সেটার আরও একটু জেনে নেই। 

১। একটি ইসলামিক ব্যাংকে সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া কিছু মৌলিক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। এই শর্ত বা বিধি-নিষেধ গুলো ইসলামিক নিয়ম মেতাবেক হয় না, কারন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংক নয়। তাহলে এই ক্ষেত্রে ইচ্ছা থাকা সত্বেও ব্যাংকিং চালু করতে বা লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ইসলামিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনৈসলামিক কিছু নিয়ম মেনে চলার কারনে ১০০% ইসলামিক ভাবে চলতে পারবে না। 

১) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে যে বাধ্যতামূলক সঞ্চিতি, (SRR) এবং Foreign Currency Clearing Account এ জমাকৃত বৈদেশিক মুদ্রার উপরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ দেয়।  এই সুদের টাকা ইসলামী ব্যাংক কী করে। জি এই টাকা অনিচ্ছা সত্বেও ইসলামী ব্যাংকে নিতেই হয়। তবে এই টাকা মোটেও ব্যাংকের অভ্যন্তরীন কার্যক্রমে যুক্ত হয় না। কোনো কর্মকর্তা এই টাকা পান না। কোনো গ্রাহককেও এই টাকা দেয়া হয়না। বরং এই টাকা সম্পূর্ণ আলাদাভাবে এই আয় ব্যাংক শরীয়াহ কাউন্সিলের নির্দেশিত পন্থায় নিঃশর্তভাবে দাতব্য খাতে দান করে দেয়।

২। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার বিশ্ব ব্যাংক সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যাংকের সাথে লেনদেন করে থাকে। এই ক্ষেত্রে ইসলামিক ব্যাংক বহির্বিশ্বের ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে গিয়ে বিশ্বব্যাংকিং নীতিমালা বা সরকারের অভ্যন্তরীণ লেনদেন নীতিমালা মেনে চলতে হয়। তাই এক্ষেত্রেও ইসলামি ব্যাংক শতবার চাইলেও ১০০% ইসলামিক ভাবে চলতে পারবে না।

২) বৈদেশিক লেনদেনের জন্য বিদেশী ব্যাংকগুলোর সাথে ইসলামী ব্যাংকের যে Nostro Account থাকে, সেটা চলতি হিসাব হলেও Overnight lending থেকে তারা সেখান থেকে সুদ পায়। যেটা একইভাবে ১নং পয়েন্টে দেখানো খাতে ব্যায় হয়।

৩। অন্যান্য সূদী ব্যাংকের ন্যায় ইসলামিক ব্যাংক Call money market ( in case of lack of liquidity) এ অংশ নিতে পারে না। সেজন্য গ্রাহকদের একটা মোটা অংকের টাকা liquid বা ideal money হিসাবে রেখে দিতে হয় investment না করে। একটা ব্যাংকের জন্য এটা একটা বড় চ্যালেন্জ। 

তাহলে বলুন, একটি ১০০% সুদ ভিত্তিক অর্থনীতিতে ১০০% শরীয়াহ ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক আশা করাটা কতটুকু যৌক্তিক হতে পারে? আপনি দৈনন্দিন জীবনের অন্য সব কিছুর সাথে কম্পো্মাইজ করে চলছেন, সেখানে ১০০% খাঁটি এই কথাটা আসছে না, শুধুমাএ ইসলামিক ব্যাংকের বেলায় আসছে কেন? আমরা যদি ২০%, ৪০%, কিংবা ৬০% ইসলামিক হয়ে নিজিকে মুসলমান হিসাবে সমাজে পরিচয় দিতে পারি, তাহলে একটি পুরোপুরি সূদী অর্থনীতিতে চলা বিশ্বে ৬০%, ৮০% কিংবা ৯০% ইসলামী শরীয়া মোতাবেক চলা ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংক হিসাবে পরিচয় দিতে অসুবিধা কোথায়?

সম্পূর্ণ অনৈসলামিক পরিবেশে সুদভিত্তিক অর্থনীতির দেশে ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করাও একটা বিরাট আন্দোলন সংগ্রামের পথ। সে জায়গায় সব মুসলিমের উচিৎ হল এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা ও সহযোগিতা করা। অথচ দুঃখের বিষয় ইসলামী ব্যাংক কতটুকু ইসলামী? কিভাবে ইসলামী? “সুদ মুনাফা একই কথা” ইত্যাদি নানা ধরণের বিতর্ক তৈরি ও খুঁত ধরার চেষ্টায় ব্যস্ত। একটি পক্ষ যেখানে সুদভিত্তিক অর্থনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে সুদমুক্ত ইসলামী ও শোষণমুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে সেখানে আমাদের মুসলমানদেরই অন্য একটি পক্ষ সেটার ত্রুটি বের করে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত। অথচ মুসলমানদের দেশে সুদমুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার দায় সমানভাবে সব মুসলিমেরই। আমরা যারা ইসলামী ব্যাংকের বিরোধীতা করি, আমরা কিন্তু ইসলামী ইকোনোমিক্স এর রুপ রেখা কেমন হবে তা বলতে পারি না। বা নিজেরা যারা এত্ত বেশি বুঝি মনে করি তারাও নতুন বা সম্পূর্ণ ইসলামী ব্যাংক খুলি না। শুধু যতটা সমালোচনা করি ইসলামী ব্যাংকের, অন্য ব্যাংকের ব্যাপারে ততটাই চুপ।

ময়লা আবর্জনার নর্দমা পরিষ্কার করতে নামলে গায়ে ময়লা লাগবেই। আপনি যদি গায়ে ময়লা দেখে পরিষ্কার করার এই কাজটাকেই খারাপ বলেন পরিষ্কার হবে কেমনে? দেশে কিংবা সারা পৃথিবীতেই যেখানে সূদভিত্তিক সিস্টেম চালু এটাকে বদলাতে হলে তো সূদের পরিবেশের ভেতর থেকেই শুরু করতে হবে। এক ঝটকায় তো এই সিস্টেম চেঞ্জ করা যায় না। আর এ কাজের দায় আপনারও ভূমিকা রাখতে হবে আপনাকেও।

ইসলামী ব্যাংক কি ঘুরিয়ে সুদ খায়? 

ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শরীয়াহ ভিত্তিক কিনা, তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে । কেউ কেউ মনে করেন এটি শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক আবার কেউ মনে করেন ইসলামী ব্যাংক প্রচলিত সুদী ব্যাংকের মত সুদ খায়, তবে সরাসরি না খেয়ে একটু ঘুরিয়ে খায় । তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হল, মন্তব্যকারীদের অধিকাংশই সুদ ও মুনাফার মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা খুবই কম রাখেন । এবং ইসলাম ইসলামী অর্থনীতি ও ইসলামের ব্যবসা বাণিজ্যের মূলনীতি সম্পর্কে কোনো ধারণাই তাদের নেই। গ্রামাঞ্চলের অনেক অনেক অশিক্ষত মানুষ যেমন সুদ খাওয়াকে সাধারণ ব্যবসার মতই মনে করে, এদের ধারণাও ততটুকুই।

আল্লাহ কোরআনে বলেন-
যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে৷ তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ “ব্যবসা তো সুদেরই মতো ৷” অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম ৷ আল বাকারাহ,আয়াতঃ২৭৫

তাই সুদ ও মুনাফার ধারণা পরিষ্কার হলেই বুঝা যাবে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শরীয়াহ ভিত্তিক কিনা ? এজন্য প্রথমে সুদ ও মুনাফার সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়ার জন্য আলোচনা করা হল –

সুদ হচ্ছে ঋণকৃত অর্থের উপর একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিশ্চিত সুনির্দিষ্ট অতিরিক্ত পাওনা । অর্থাৎ সুদের সাথে ‘নিশ্চিত’ এবং ‘সুনির্দিষ্ট’ শব্দ দুটির সম্পর্ক রয়েছে । যেমন আপনি কারো নিকট হতে ২০% সুদে ১০০০ টাকা ঋণ নিলেন । এই ঋণকৃত টাকা আপনি ব্যবসায় খাটাতে পারেন , আবার শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন , আবার ভোগে ব্যয় করতে পারেন। এই ১০০০ টাকা নিয়ে আপনি যাই করেন না কেন , বছর শেষে ঋণ প্রদানকারীকে ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে । এক্ষেত্রে ঋণ প্রদানকারী নিশ্চিত জানে যে, বছর শেষে আপনার নিকট হতে সে নির্দিষ্ট ২০০ টাকা পাবে । এখানে ২০০ টাকা হল সুদের পরিমাণ,যা ইসলামে নিষিদ্ধ ।

অন্যদিকে মুনাফা হল ব্যবসা বা শিল্পখাতে বা উৎপাদনশীল কোন খাতে বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনিশ্চিত অনির্দিষ্ট অতিরিক্ত পাওনা । অর্থাৎ মুনাফার সাথে ‘অনিশ্চিত’ এবং ‘অনির্দিষ্ট’ শব্দ দুটির সম্পর্ক রয়েছে । ‘অনিশ্চিত’ শব্দটি থাকার কারণে অতিরিক্ত পাওনার বিষয়টি নিশ্চিত নয় । অর্থাৎ কোন কোন সময় অতিরিক্ত পাওনার পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে । আবার ‘অনির্দিষ্ট’ শব্দটির কারণে বলা যায় যে অতিরিক্ত পাওনার পরিমাণটি সুনির্দিষ্ট নয় । যেমন আপনি কারো নিকট হতে ১০০০ টাকা নিয়ে ব্যবসায় খাটাতে পারেন বা শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন । এক্ষেত্রে যার নিকট হতে আপনি টাকা নিয়েছেন , তাকে আগাম বলতে পারবেন না যে , আমি আপনাকে ২০০ টাকা মুনাফা দেব, কারণ আপনি তো জানেন না ব্যবসায় আসলে কতটুকু লাভ হবে নাকি লোকসান হবে।

সুদী ব্যাংকের ঋণ নিয়ে সেই টাকা দিয়ে আপনি কী করলেন, ব্যবসায় খাটালেন নাকি ফূর্তি করে উড়িয়ে দিলেন তা দেখবেনা। কারণ তারা জানে নির্দিষ্ট সময় পর নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ তারা পাবেই এতে ঋণগ্রহীতা ফতুর হোক, ব্যবসায় লোকসান হোক বা যাই হোক। তাদের তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক শুধু সেই ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করবে যেটা ইসলামে বৈধ পাশাপাশি উৎপাদনশীল। এজন্যই ইসলামী ব্যাংকের ঋণ পাওয়া অন্যান্য ব্যাংকের মত এত সহজ নয়।

হাদীসে রাসূল (সঃ) বলেছেন, “ঋণ ছাড়া আর কোথাও সুদ নেই।” অর্থাৎ সুদের প্রশ্ন তখনই আসবে যখন ঋণের প্রসঙ্গ আসবে অর্থাৎ ইসলামে ঋণ দিয়ে লাভ নেয়ার কোনো সুযোগই নেই। তাহলে কী করে ইসলামী ব্যাংক? ইসলামী ব্যাংক কি ঋণ দেয় না? ঋণ দিলে ইসলামী ব্যাংক কি লাভ নেয় না? জি এখানেই ইসলামী ব্যাংক অন্যান্য সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলো থেকে আলাদা কারণ ইসলামী ব্যাংক গ্রাহককে হাতে হাতে নগদ টাকায় ঋণ দেয় বরং পণ্যের বিনিময় করে ব্যবসার মত বৈধ পদ্ধতিতে। শুধু তাই নয় বিনিয়োগ পণ্যে ব্যবসার মতই অনিশ্চিত লাভ লোকসানের শর্ত থাকে। বিস্তারিত আলোচনা উপরে।

নরমাল ব্যাংকের চেয়ে তো ইসলামিক ব্যাংক লাভ বেশী নিচ্ছে। আমরা কেন তাহলে ইসলামী ব্যাংকে যাব? ইসলামিক ব্যাংক তো লাভ আরো কম নেওয়া উচিত!

আপনি ঠিকই বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিমা অনেক দেশে নরমাল ব্যাংকের চেয়ে ইসলামী ব্যাংক/ ক্রেডিট কোম্পানী গুলো লাভ বেশী নিচ্ছে। ( যেমন, MCCA, ICFAL )। কিন্তু এর অনেকগুলো কারন ও আছে। প্রথমত: এখানকার ইসলামিক ইসলামী ব্যাংক/ ক্রেডিট কোম্পানী গুলো আকারে ছোট এবং গ্রাহক সংখ্যা ও কম, আবার establishment cost ও আছে। নতুন হিসাবে ঐ সব ইসলামী ব্যাংক/ ক্রেডিট কোম্পানী গুলোকে বিভিন্ন trial and error মাধ্যমের ভিতর যেতে হয়, তাই সাময়িক ভাবে উনাদের লাভ বেশী নিতে হয়। আশা করি, অদূর ভবিষ্যৎ এ সেটা থাকবে না।

আর আপনি সূদী ব্যাংক থেকে লোন নিবেন নাকি ইসলামিক ব্যাংক থেকে লোন নিবেন, সেটা কিন্তু কে লাভ বেশী নিচ্ছে কিংবা কম নিচ্ছে, সেটার উপর নির্ভর করছে না, সেটা নির্ভর করছে হালাল হারামের উপর, আল্লাহ সুবাহানাতাল্লাহর এই ব্যাপারে কি নির্দেশ সেটার উপর। প্রশ্ন হচ্ছে এই বেশী লাভ নেওয়া ইসলাম অনুমোদন করে কিনা? আসুন জেনে নিই ইসলামে কত পারসেন্ট লাভ নেয়া বৈধ?

ইসলামী ব্যাংক জমাকারী কে সবসময় মুনাফা দেয় কিভাবে?
একজন ব্যবসায়ী যেমন সব পণ্যে লাভ না করলেও সব পণ্য বিক্রির পর মোটের উপর লাভ করতে পারে, ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটে। ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা জমাকারীদের অর্থ দিয়ে একটি যৌথ তহবিল গঠন করে। এরপর উক্ত তহবিল শরিয়াহ সম্মত বিভিন্ন পদ্ধতিতে শাখার মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে বিনিয়োগ করে। বছর শেষে দেখা যায়, কোথাও লাভ হয়েছে আবার কোথাও লোকসান হয়েছে। কোন শাখা লাভ করেছে আবার কোন শাখা লোকসান দিয়েছে। তবে সকল মুদারাবা তহবিলকে একত্রে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, মোটের উপর লাভ হয়েছে। বছর শেষে চূড়ান্ত হিসাব করে যদি লাভ হয় তাহলে জমাকারীদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী তা বন্টন করা হয়। লাভ বেশি হলে সবাই বেশি লাভ পায় আর কম হলে কম লাভ পায়। এছাড়া ব্যবসায় লস হতেই হবে এমন কোনো শর্ত তো নেই।

মুনাফার রেট কেন হয়?

রেট মানেই সুদ নয়। ব্যাংকের আমানত নেয়ার সময় প্রাক্কলিত মুনাফার হারই গ্রাহককে জানানো হয়। ব্যাংকের অতীতের মুনাফা প্রবণতার প্রতি লক্ষ্য রেখে এই রেট ঘোষণা করা হয়। তেমনি পণ্যের উপর মুরাবাহা বিনিয়োগ দেয়ার সময়ও গ্রাহককে ক্রয়মূল্যের উপর আরোপিত নির্ধারিত মুনাফার হার ঘোষণা করেই বিক্রি করা হয়। এটাই সম্মত লাভে ক্রয় বিক্রয় যা আরবীতে মুরাবাহা নামে পরিচিত এবং অনুশীলিত। অনেকে ব্যাংকের জমা হিসাব কিংবা বিনিয়োগ হিসাবের মুনাফার হারকেই সুদ বলে মনে করেন। অথচ এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। কারণ রেট নিজে কোন সুদ কিংবা লাভ নয়। বরং রেট হলো লাভ কিংবা সুদের শতকরা হিসাবে প্রকাশ করার মাধ্যম। কোন মানুষ ব্যাংকের সাথে ব্যবসা না করলেও তার ব্যবসায় লাভ লোকসানের হিসাব রেট বা শতকরা হার বাদ দিয়ে করতে পারেন না।

অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে ইসলামী ব্যাংক ঋণে সূদ বেশি নিচ্ছে!!
কয়েকদিন আগে পত্রিকায় এরকম একটি উদ্দেশ্যমূলক শিরোনামে সংবাদ ছাপানো হয়েছিল। বলা হয়েছে অন্যান্য ব্যাংক যেখানে ৯ পার্সেন্ট সূদ নিচ্ছে ইসলামী ব্যাংক নিচ্ছে ১৪ পার্সেন্টের মত, এটা একটা প্রতারণা ! আসলে কি তাই? প্রকৃত ঘটনা হল ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে ঐ রিপোর্টারের জ্ঞানই নেই। কারণ ইসলামী ব্যাংক তো ঋণে সূদ নেয় না, আর নগদ টাকাও ঋণ দেয় না। স্বাভাবিকভাবেই ঋণহিসেবে পণ্য কিনে দেয়ার সময় পণ্যে বিক্রেতা হিসেবে লাভ এবং সার্ভিস চার্জ নেয়া হয়ে থাকে সেটা প্রচলিত সূদী ঋণের চেয়ে বেশি হয়ে যেতেও পারে। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং যেমন অনুমোদিত এই লাভ নেয়ার বিভিন্ন হারও অনুমোদিত। এ নিয়ে না জেনে আসলে মূর্খতারই লক্ষণ হিসেবে প্রমাণিত হয়।

ইসলামে কত পারসেন্ট লাভ নেয়া বৈধ?

লাভের পরিমাণ : কোন পণ্যে কত লাভ করা যাবে এরূপ কোন নির্দেশনা কুরআন-হাদীছে পাওয়া যায় না। আবার সকল পণ্যে এক রকম লাভ করা যাবে না এরূপ কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই। আসলে শরী‘আতে বিষয়টিকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। কারণ লাভ নির্ণয়ের বিষয়টি নির্ভর করে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পরিস্থিতি-পরিবেশ ও পণ্যের উপর। তবে লাভের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা সম্পর্কে একটা ধারণা আমরা হাদীছ থেকে লাভ করতে পারি। উরওয়া ইবনে আবিল জাদ আল-বারেকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট পশুর একটি চালানের সংবাদ আসল। তিনি আমাকে একটি দীনার দিয়ে বললেন, উরওয়া! তুমি চালানটির নিকট যাও এবং আমাদের জন্য একটি বকরী ক্রয় করে নিয়ে আস। তখন আমি চালানটির কাছে গেলাম এবং চালানের মালিকের সাথে দরদাম করে এক দীনার দিয়ে দুইটি বকরী ক্রয় করলাম। বকরী দু’টি নিয়ে আসার পথে এক লোকের সাথে দেখা হয়। লোকটি আমার থেকে বকরী ক্রয় করার জন্য আমার সাথে দরদাম করল। তখন আমি তার নিকট এক দীনারের বিনিময়ে একটি বকরী বিক্রয় করলাম এবং একটি বকরী ও একটি দীনার নিয়ে চলে এলাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এই হচ্ছে আপনার দীনার এবং এই হচ্ছে আপনার বকরী। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটা করলে কিভাবে? উরওয়া বলেন, আমি তখন তাঁকে ঘটনাটি বললাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আপনি তার হাতের লেন-দেনে বরকত দিন।

উল্লেখ্য, উক্ত ছাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পক্ষে ১০০% লাভ করা সত্ত্বেও রাসূল (ছাঃ) তার জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন এবং এ দো‘আর ফলে উক্ত ছাহাবী জীবনে প্রচুর বরকত লাভে ধন্য হয়েছেন। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, উক্ত ছাহাবী মাটি ক্রয় করলেও তাতে লাভ হ’ত। সুতরাং মজুতদারী না করে, প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে ক্রেতার স্বাভাবিক ও স্বেচ্ছা সম্মতির ভিত্তিতে কোন পণ্য বিক্রি করে বিক্রেতা ১০০% লাভ করলেও শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতা বা ভোক্তা যেন যুলুমের শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা যরূরী। তবে আমাদের দেশে ইসলামী সিস্টেমে কোনো পণ্য নেয়ার বদলে গ্রাহকদের মধ্যে নগদ টাকা নেয়ার প্রবণতা বেশি এটাও ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথে একটা অন্তরায়।

তথ্যসূত্র ও ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ক কিছু বই ওপ্রবন্ধের লিংক: 

১. ইসলামী ব্যাংকিংঃ বৈশিষ্ট্য ও কর্মপদ্ধতি: লেখকঃ শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান: প্রকাশনীঃ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার
http://www.pathagar.com/book/detail/2743
https://islamicbookhouse.wordpress.com/tag/%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%93-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF-pdf/

২. ইসলামি ব্যাংকিংয়ের বৈশিষ্ট্য: মোঃ আবদুল মান্নান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
https://www.priyo.com/articles/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%AF

৩. ইসলামী ব্যাংকগুলো কি ঘুরিয়ে সূদ খায়?:
https://i-onlinemedia.net/3386

৪. ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি: ইউসুফ সুলতান
https://articlebari.com/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF/

৫. ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থায় বিনিয়োগ পদ্ধতি: এন.এম. শহীদ উল্লাহ
https://www.somewhereinblog.net/blog/romei/29088585

৬. সুদ কি? ইসলাম কি বলে সুদ সম্পর্কে?
https://www.somewhereinblog.net/blog/samurai008/29937119

৭. সূদ -এর পরিচয়: গ্রন্থ: সূদ, লেখক: শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান
https://i-onlinemedia.net/8801

৮. ব্যাংকের বৈধ কার্যাবলী: শাইখ মুশ্তাক আহমাদ কারীমী
https://i-onlinemedia.net/8763

৯. ইসলামী ব্যাংকসমূহে মুরাবাহায় বিনিয়োগ, যুবায়ের আহমাদ
https://i-onlinemedia.net/7335

১০. সূদ -এর কুফল
https://i-onlinemedia.net/8806

১১. ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ণ :আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া
https://ia801201.us.archive.org/31/items/kawmi/MT-Islami-Orthonitir-Adhunik-Rupayon[Almodina.com].pdf

১২. ইসলামের অর্থনীতি: লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)
http://www.pathagar.com/book/detail/171/12

১৩. পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামিক ব্যাংক: মুসলমাদের করনীয়:ওরিয়ন
http://www.newsatbd.net/blog/blogdetail/detail/2729/Orion_sky/79964#.XBlUH1wzaUk

১৪.পার্থক্যসহ শিরকাত মুদারাবা ও মুশারাকা, মুফতি মুহাম্মদ ছলিমুল ওয়াহেদ, সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া বায়তুল আমান, মোহাম্মদপুর
http://www.alokitobangladesh.com/todays/details/204140/2016/12/25

১৫. ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ: মুফতি শামসুর রহমান, পোরশা:
http://old.dhakatimes24.com/2014/06/03/26381

১৬. http://www.iknowledgebank.com/faqs/Islamic%20Banking/Investment%20Mode/345_faq

১৭. ইসলামী ব্যাংকিং : প্রাসঙ্গিক কিছু কথা-২: হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তকী উছমানী
মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ:
https://www.alkawsar.com/bn/article/1358/

১৮. ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ: মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা:
http://www.bdpratidin.com/editorial/2016/01/05/119009

১৯. আল্লাহ সুদ হারাম করেছেন: মুফতি মাহফূযুল হক
https://www.banglanews24.com/islam/news/bd/494107.details

২০.ইসলামে হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের রূপরেখা: কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী১
http://at-tahreek.com/march%202014/article0901.html

২১. ইসলামে হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের রূপরেখা – ২: কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
https://i-onlinemedia.net/6080

২২.ইসলামী ব্যাংক: বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন অংশীদার:
মাকাসিদে শরিয়ার আলোকে ব্যাংকিং ও করণীয়: মোহাম্মদ আবদুল মান্নান
https://www.islamibankbd.com/upload_dir/publication/Maqasid%20Al%20Shariah.pdf

২৩. ব্যবসায়ে হালাল-হারামের রূপরেখা:মমিনুল ইসলাম মোল্লা
http://www.alokitobangladesh.com/online/details/21642

২৪. ইসলামী অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়নে আমাদের করনীয়: শাহ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান
https://i-onlinemedia.net/6092

২৫. বায়‘এ মুআজ্জাল (একই পণ্যের নগদ ও বাকিতে ভিন্ন মূল্য)
https://i-onlinemedia.net/11272

২৬. প্রশ্নোত্তরে ইসলামী ব্যাংকিং:
http://songskar.net/2017/04/15/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE/

২৭. http://songskar.net/2017/05/04/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF-2/

২৮. http://songskar.net/2017/05/13/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF-3/

২৯. আল-কুরআনের রিবা ও প্রচলিত ব্যাংকিং সুদ কি একই জিনিস? মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ খন্দকার:
http://www.dailysangram.com/post/176176-%E0%A6%86%E0%A6%B2-%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A6-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%87-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B8

৩০.  সুদ হারাম হওয়ার নেপথ্যে: এ কিউ এম ছফিউল্লাহ আরিফ, সেক্রেটারি জেনারেল, সেন্ট্রাল শরিয়া বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংক অব বাংলাদেশ http://www.alokitobangladesh.com/todays/news_print/142837/2015/06/28

৩১. ইসলামে দারিদ্র বিমোচন: লেখকঃ আল্লামা ইউসূফ আল-কারযাভী: প্রকাশনীঃ সেন্ট্রাল শরীয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ
http://www.pathagar.com/book/detail/2745

৩২. ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা লেখকঃ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান:
প্রকাশনীঃ সেন্ট্রাল শরীয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ
http://www.pathagar.com/book/detail/2777

৩৩.ইসলামী ব্যাংকিংঃ পূর্বশর্ত ইসলামী ব্যক্তিত্ব: লেখকঃ কাজী ওমর ফারুক: প্রকাশনীঃ আহসান পাবলিকেশন্স
http://www.pathagar.com/book/detail/2826

৩৪. ISLAMIC BANKING AND INSURANCE
লেখকঃ মোহাম্মদ শরীফ হুসাইন: প্রকাশনীঃ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
http://www.pathagar.com/book/detail/2899

৩৫.ইসলামী ব্যাংক কি ও কেন? লেখকঃ ড. আহমদ আবদুল আজীজ আল নাজ্জার: প্রকাশনীঃ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
http://www.pathagar.com/book/detail/2921

৩৬. ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিনিয়োগ নীতি: আমানুল্লাহ নোমান
http://www.alokitobangladesh.com/todays/details/201235/2016/11/27

৩৭.ইসলামি ব্যাংকিং ও প্রচলিত ব্যাংকিং: লেখকঃ শাহ্ আব্দুল হান্নান
https://www.bankingnewsbd.com/islamic-banking-and-traditional-banking/

৩৮. ইসলামি ব্যাংকিং ও প্রচলিত ব্যাংকিং:লেখকঃ শাহ্ আব্দুল হান্নান
http://www.dailynayadiganta.com/sub-editorial/334274/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82

৩৯. ইসলামী ব্যাংকে সহজে অনুশীলনযোগ্য ও শরীআহসম্মত বিনিয়োগ পদ্ধতি:  নূরুল কাবীর 
http://www.dailysangram.com/post/79887-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%9C%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B6%E0%A7%80%E0%A6%B2%E0%A6%A8%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%93-%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%86%E0%A6%B9%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A4-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF

৪০.ব্যাংকিং এ শরীয়াহ: প্রসঙ্গ বিনিয়োগ: লেখক: মো: মোসলেহ উদ্দিন
এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ভৈরব শাখা, কিশোরগঞ্জ।
https://www.bankingnewsbd.com/shariah-in-banking-context-investment/

৪১.ব্যাংকিং এ শরীয়াহ: প্রসঙ্গ আমানত: লেখক: মো: মোসলেহ উদ্দিন : প্রাগুক্ত
https://www.bankingnewsbd.com/shariah-in-banking-concerned-deposit/

৪২. ইসলামী ব্যাংকের জন্য কি ব্যবসা করা হারাম?
https://www.bankingnewsbd.com/is-islami-bank-forbidden-to-do-business/

৪৩. ইসলামিক ব্যাংকিং এ মুদারাবা পরিচিতি ও ইতিহাস
https://www.bankingnewsbd.com/mudaraba-introduction-and-history-in-islamic-banking/

৪৪. ইসলামি ব্যাংক এবং সুদী ব্যাংকের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে : মুফতি মুজাহিদ
https://www.priyo.com/articles/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%95-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B0%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%AB%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A6

৪৫. ব্যাংকে টাকা রেখে প্রতি মাসে যে লাভের অংশ আমরা পাই এটা নেয়া কি বৈধ নাকি তা হারাম সুদ ????
https://www.somewhereinblog.net/blog/mizan75/30141941

৪৬.ইসলামী ব্যাংকিং কি এবং কেন?
https://www.bankingnewsbd.com/what-is-islamic-banking-and-why/

৪৭. ইসলামী ব্যাংকিং:
http://abbl.com/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82/

৪৮.সুদ ও মুনাফার পার্থক্য এবং ইসলামী ব্যাংক কি শরীয়াহ ভিত্তিক?
https://charfakira.wordpress.com/2014/09/26/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A6-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%8F%E0%A6%AC/

৪৯. ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতি
https://www.somewhereinblog.net/blog/ahlebaitibest/29844260

৫০. ইসলামিক ব্যাংকিং – সংশয় নিরসন: মুরাবাহা ও টাইম ভ্যালু অব মানি
https://www.muslimmedia.info/2016/03/21/islamic-banking-murabaha-and-time-value-of-money

৫১. ইসলামি ব্যাংকিং
http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF_%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82

৫২. https://bn.smartkompare.com/blog/%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8

৫৩. সহিহ মুসলিম ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়:
http://ihadis.com/books/muslim/chapter/22

৫৪. সহিহ মুসলিম: ফল, শস্য, জমিজমা, চাষাবাদ ও ক্রয়বিক্রয় সংক্রান্ত অধ্যায়
http://ihadis.com/books/muslim/chapter/23

৫৩.https://www.investopedia.com/terms/n/nostroaccount.asp

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা