আর যখন তোমরা যমীনে সফর করবে, তখন তোমাদের সলাত কসর করাতে কোন দোষ নেই। যদি আশঙ্কা কর যে, কাফিররা তোমাদেরকে ফিতনায় ফেলবে। নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ সূরা নিসা : ১০১
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِى ٱلْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَقْصُرُوا۟ مِنَ ٱلصَّلَوٰةِ إِنْ خِفْتُمْ أَن يَفْتِنَكُمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ ۚ إِنَّ ٱلْكَٰفِرِينَ كَانُوا۟ لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِينًا
মুসাফির কে? মুসাফির কখন থেকে গন্য হবে??
# যে ব্যক্তি কমপক্ষে ৪৮মাইল(৭৭.২৪৬৪কিলোমিটার)সফর করার নিয়তে নিজ আবাদীর লোকালয় থেকে বের হয়েছে, সে শরীআতের পরিভাষায় মুসাফির হিসেবে গন্য হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯,আসারুস সুনান পৃ: ২৬৩।# ৪৮ মাইলের কম সফরের নিয়তে বের হলে মুসাফির হিসাবে গন্য হবে না। –প্রাগুক্ত
# ষ্টেশন/বাসস্ট্যান্ড যদি লোকালয়ের অন্তর্ভূক্ত হয় তবে তা আবাদীর মধ্যে গন্য হবে, এর সীমা পার হওয়ার আগে কসর করা যাবে না।। -আদ্দুরুরল মুখতার ২/৫৫৯-৬০০।
যে রাস্তা দিয়ে সফর করবে তার দূরত্ব ধর্তব্য হবেঃ
যদি কোথাও যাবার দুটি রাস্তা থাকে যেমন জলপথ সড়কপথ এর মধ্যে একটি সফরের দুরুত্বে হয় এবং অন্যটি না হয় তবে যে পথে যাবে সে হিসেবেই দূরত্ব ধরা হবে। অন্য পথের হিসেবে মুসাফির/অমুসাফির গন্য হবে না। মোটকথা যে রাস্তা দিয়ে গমন করবে তা ধর্তব্য হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৬
নিজ এলাকা বা আবাদীর সীমানাঃ
# কোন আবাদীর সীমানা হল, যখন সংযুক্ত বাড়ী/পাড়া/মহল্লার পরে ফসলী জমি এসে যায় অথবা বাড়ী-ঘরের মাঝে ১৩৭.১৬ মিটার বা তার চেয়েও বেশী ফাকা থাকে তখন সে ঐ সংযুক্ত ঘর বাড়ীর পর থেকেই মুসাফির গন্য হবে। যদি শহর ও শহরের প্রয়োজনীয় স্থানসমূহ যেমন- কবর স্থান,ঘোড়দৌড় এর জন্য নির্দিষ্ট স্থান এর মাঝে মাঝে ফসলী জমি না থাকে অথবা উভয়ের মধ্যে ১৩৭.১৬ মিটার বা তার চেয়ে বেশী ফাকা না থাকে তবে উক্ত জায়গা অতিক্রম করার পর মুসাফির গন্য হবে। আর যদি উভয়ের মাঝে ফসলী জমি থাকে বা মধ্যবর্তি দুরুত্ব ১৩৭.১৬ মিটার বা তার চেয়ে বেশী হয় তবে উক্ত ফেনা/এলাকা আবাদীর মধ্যে গন্য হবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/১২১-১২৩, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৭২
# শহরের চার পাশে সংযুক্ত বস্তি গুলো শহরের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে।-রদ্দুল মুহতার ২/১২১
# যেমন ঢাকা শহরের সীমানা হল উত্তরে টঙ্গীব্রিজ, দক্ষিনে বাবু বাজার ব্রিজ,দক্ষিন-পূর্ব দিকে কাচপুর ব্রিজ এবং পশ্চিম দিকে গাবতলী ব্রিজ। অর্থাৎ উল্লেখিত ব্রিজগুলোর পূর্ব পর্যন্ত ঢাকা সিটির সীমানা। কেননা উল্লেখিত ব্রিজ গুলোর ভিতরের এলাকাগুলো জনবসতি বা সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠান দ্বারা সংযুক্ত।
কসর কি ঐচ্ছিক?
# কসর আল্লাহর একটি দয়া বা দান এটা গ্রহণ না করাও এক প্রকার ধৃষ্টতা। তাই কসরকে ঐচ্ছিক বলার সুযোগ নেই।
# হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের নবীর জবানে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন।’
-সহিহ মুসলিম: ৬৮৭
মুসাফির ভুলে বা ইচ্ছাকৃত চার রাকাআত নামায পড়ে ফেললেঃ
# মুসাফির ভুলে বা ইচ্ছায় (ফরজ নামায ) চার রাকাআত পড়ে ফেললে যদি সে ১ম বৈঠক করে থাকে তবে তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। প্রথম দুই রাকাআত ফরজ ও পরের দুই রাকাআত নফল গন্য হবে। এক্ষেত্রে তার জন্য সিজদায়ে সাহু করা ওয়াজিব। যদি সিজদায় সাহু না করে থাকে তবে উক্ত নামায পূনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি ১ম বৈঠকে না বসে থাকে তবে পূরো নামায নফল গন্য হবে। ফরজ নামায পূনোরায় পড়তে হবে।
# উল্লেখ্য যে, ইচ্ছাকৃত চার রাকাআত নামায পড়লে সে গোনাহগার হবে।- আদ্দুরুরল মুখতার ২/১২৩-১৩০,আলবাহরুর রায়েক ২/২২৯,তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১১,ফাতাওয়া দারুল উলূম ৪/৩১৫।
শত্রুর ভয় যদি না থাকে?:
# ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে শত্রুর ভয় থাক না থাক সফরে কসর করতেই হবে। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে-
# আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) ... ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে বললাম, (আল্লাহ তা’আলা বলেছেন) "যদি তোমরা ভয় পাও যে, কাফিররা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে, তরে সালাত সংক্ষেপ করে পড়াতে কোন দোষ নেই" কিন্তু এখন তো লোকেরা নিরাপদ। উমর (রাঃ) বললেন, বিষয়টি আমাকেও বিস্মিত করেছে, যা তোমাকে বিস্মিত করেছিল। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম ও এর জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, এটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি একটি সাদাকা। তোমরা তাঁর সাদাকাটি গ্রহণ কর।
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ ১৪৪৬
# সফরে শত্রুর ভয় না থাকলেও কষ্ট, সমস্যা ও বিপদাপদের সম্ভাবনা তো রয়েছেই তাই আল্লাহর বিধানের চেয়ে বেশি বোঝার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ মানুষের জন্য বিধান সহজ করতে চান, তিনি কঠিন করতে চান না যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন-
شَهْرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلْقُرْءَانُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٍ مِّنَ ٱلْهُدَىٰ وَٱلْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا۟ ٱلْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا۟ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।
ফরয বাদে অন্যান্য নামায (সুন্নত নফল) পড়তে হবে না:
# কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... হাফস ইবনু আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। ইবনু উমর (রাঃ) আমাকে দেখতে আসেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর কাছে সফরে সুন্নাত সালাত পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সফরে ছিলাম, কিন্তু তাকে কখনো সুন্নাত আদায় করতে দেখি নি। যদি আমি সুন্নাত পড়তাম তাহলে আমি (ফরয) সালাতকেই পূর্ণভাবে আদায় করতাম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, "নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে তোম্যদের জন্য উত্তম আদর্শ।"
সহীহ মুসলিম ইফাঃ১৪৫২, ১৪৫৩
# তবে অন্য একটি মতে: যদি সমস্যা না থাকে বা গাড়ি চলে যাওয়ার, সাথীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হবার ইত্যাদি আশঙ্কা না থাকে তবে সুন্নত পড়ে নেবে।
# রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে সুন্নাত পড়তেন। -জামে তিরমিজী হাদীস নং-৫৫১, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯
মুসাফিরের জামায়াতে নামায:
# মুসাফিরের জন্য জামাআতে নামায পড়া ওয়াজিব নয়। বরং মুস্তাহাব। তবে সফর অবস্থায় তাড়াহুড়া না থাকলে জামাআতেই নামায পড়া উচিত। আর ব্যস্ততা বা পেরেশানী থাকলে জামাআত ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৩,আল বাহরুর রায়েক ১/৩৪৬।
মুসাফিরের জন্য জামায়াতে নামায করার ক্ষেত্রে ২টি অবস্থা-
ক. মুসাফিরদের মধ্য থেকে ইমাম: কসর আদায় করবে পুরো নামায পড়া যাবে না।
খ. মুকীম ইমাম বা যে জায়গায় সফর সেখানকার স্থানীয় ইমাম: এক্ষেত্রে পূরো নামাযই পড়তে হবে ।এখানে মুক্তাদির কমানোর সুযোগ নেই কারণ ইমাম বানানোই হয় তাকে অনুসরনের জন্য।
# এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুসাফির যদি মুকিমদের সঙ্গে নামাজে শরিক হয় তবে সে তাদের মতো (চার রাকাত) নামাজ পড়ে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩৮৪৯
# ইমাম মুাসাফির ও মুক্তাদী মুকীম হলেঃ
# মুসাফির ভুলে বা ইচ্ছায় (ফরজ নামায ) চার রাকাআত পড়ে ফেললে যদি সে ১ম বৈঠক করে থাকে তবে তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। প্রথম দুই রাকাআত ফরজ ও পরের দুই রাকাআত নফল গন্য হবে। এক্ষেত্রে তার জন্য সিজদায়ে সাহু করা ওয়াজিব। যদি সিজদায় সাহু না করে থাকে তবে উক্ত নামায পূনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি ১ম বৈঠকে না বসে থাকে তবে পূরো নামায নফল গন্য হবে। ফরজ নামায পূনোরায় পড়তে হবে।
# উল্লেখ্য যে, ইচ্ছাকৃত চার রাকাআত নামায পড়লে সে গোনাহগার হবে।- আদ্দুরুরল মুখতার ২/১২৩-১৩০,আলবাহরুর রায়েক ২/২২৯,তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১১,ফাতাওয়া দারুল উলূম ৪/৩১৫।
শত্রুর ভয় যদি না থাকে?:
# ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে শত্রুর ভয় থাক না থাক সফরে কসর করতেই হবে। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে-
# আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) ... ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে বললাম, (আল্লাহ তা’আলা বলেছেন) "যদি তোমরা ভয় পাও যে, কাফিররা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে, তরে সালাত সংক্ষেপ করে পড়াতে কোন দোষ নেই" কিন্তু এখন তো লোকেরা নিরাপদ। উমর (রাঃ) বললেন, বিষয়টি আমাকেও বিস্মিত করেছে, যা তোমাকে বিস্মিত করেছিল। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম ও এর জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, এটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি একটি সাদাকা। তোমরা তাঁর সাদাকাটি গ্রহণ কর।
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ ১৪৪৬
# সফরে শত্রুর ভয় না থাকলেও কষ্ট, সমস্যা ও বিপদাপদের সম্ভাবনা তো রয়েছেই তাই আল্লাহর বিধানের চেয়ে বেশি বোঝার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ মানুষের জন্য বিধান সহজ করতে চান, তিনি কঠিন করতে চান না যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন-
شَهْرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلْقُرْءَانُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٍ مِّنَ ٱلْهُدَىٰ وَٱلْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا۟ ٱلْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا۟ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।
কসরের নামায শুধু ৪ রাকায়াত বিশিষ্ট নামাযের জন্য:
মাগরিব, বেতর ও ফজরের নামাজ পূর্ণই আদায় করতে হবে। এগুলোর কসর নেই। তেমনিভাবে সুন্নত নামাজেরও কসর হয় না।
ফরয বাদে অন্যান্য নামায (সুন্নত নফল) পড়তে হবে না:
# কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... হাফস ইবনু আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। ইবনু উমর (রাঃ) আমাকে দেখতে আসেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর কাছে সফরে সুন্নাত সালাত পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সফরে ছিলাম, কিন্তু তাকে কখনো সুন্নাত আদায় করতে দেখি নি। যদি আমি সুন্নাত পড়তাম তাহলে আমি (ফরয) সালাতকেই পূর্ণভাবে আদায় করতাম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, "নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে তোম্যদের জন্য উত্তম আদর্শ।"
সহীহ মুসলিম ইফাঃ১৪৫২, ১৪৫৩
# তবে অন্য একটি মতে: যদি সমস্যা না থাকে বা গাড়ি চলে যাওয়ার, সাথীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হবার ইত্যাদি আশঙ্কা না থাকে তবে সুন্নত পড়ে নেবে।
# রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে সুন্নাত পড়তেন। -জামে তিরমিজী হাদীস নং-৫৫১, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯
মুসাফিরের জামায়াতে নামায:
# মুসাফিরের জন্য জামাআতে নামায পড়া ওয়াজিব নয়। বরং মুস্তাহাব। তবে সফর অবস্থায় তাড়াহুড়া না থাকলে জামাআতেই নামায পড়া উচিত। আর ব্যস্ততা বা পেরেশানী থাকলে জামাআত ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৩,আল বাহরুর রায়েক ১/৩৪৬।
মুসাফিরের জন্য জামায়াতে নামায করার ক্ষেত্রে ২টি অবস্থা-
ক. মুসাফিরদের মধ্য থেকে ইমাম: কসর আদায় করবে পুরো নামায পড়া যাবে না।
খ. মুকীম ইমাম বা যে জায়গায় সফর সেখানকার স্থানীয় ইমাম: এক্ষেত্রে পূরো নামাযই পড়তে হবে ।এখানে মুক্তাদির কমানোর সুযোগ নেই কারণ ইমাম বানানোই হয় তাকে অনুসরনের জন্য।
# এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুসাফির যদি মুকিমদের সঙ্গে নামাজে শরিক হয় তবে সে তাদের মতো (চার রাকাত) নামাজ পড়ে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩৮৪৯
# ইমাম মুাসাফির ও মুক্তাদী মুকীম হলেঃ
মুসাফির ইমামের পেছনে মুকীমের এক্তেদা জায়েয আছে।মুসাফির ইমাম যখন দু-রাকাআতে সালাম ফিরাবে তখন মুক্তাদীগণ সালাম না ফিরিয়ে দাড়িয়ে যাবে। এবং বাকি দুই রাকাআত নামায একা একা পড়ে নিবে। তবে সে কোন কিরাআত পড়বে না। বরং সূরা ফাতেহা পরিমান দাড়িয়ে রুকু-সিজদা করবে কেননা সে লাহেক।- আদ্দুররুল মুখতার ২/১২১-১২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২।
# ইমাম মুসাফির হলে তার জন্য উত্তম হল সে সালাম ফিরানোর পর এলান করবে আমি মুসাফির আপনারা আপনাদের অবশিষ্ট নামায পুরা করুন। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৬১২ (যাকারিয়া)।
# শুধু মাত্র মুক্তাদী মুসাফির হলেঃ
মাসআলাঃইমাম মুকীম এবং মুক্তাদী মুসাফির হলে সে ইমামের অনুকরনে চার রাকাআতই পড়বে।–আল-মাবসূত ২/৯৪।
# মুসাফির ইমামের পিছনে মুকীম মাসবূক হলেঃ
মুসাফির ইমামের পিছনে যদি কোন মুকীম মাসবুক হয় তবে তার ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের পদ্ধতি হল প্রথমে ইমামের পরবর্তী রাকাআত গুলো একাকী লাহেকের ন্যয় আদায় করবে। কাজেই উক্ত রাকাআত গুলোতে সে কিরাআত পড়বে না।এরপর ইমামের সাথে ছুটে যাওয়া নামায মুনফারিদের ন্যয় আদায় করবে। অর্থাৎ কিরাআত সহকারে নামায পড়বে।
# কাজেই কোন ব্যক্তি যদি ইমামর সাথে এক রাকাআত না পায় তবে ইমামের উভয় সাসালামের পর সে দাড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকাআত কিরাআত ব্যতীত পড়ে বৈঠক করবে। এরপর আবার এক রাকাআত কিরাআত ব্যতীত পড়বে। তারপর কিরাআত সহ এক রাকাআত পড়ে শেষ বৈঠক করে নামায শেষ করবে।
# আর যদি দুই রাকাআতই না পায় তবে প্রথমে কিরাআত ব্যতীত দুই রাকাআত পড়ে বৈঠক করবে। অতপর কিরাআত সহ দুই রাকাআত পড়ে নামায শেষ করবে।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২,রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৬,খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৬,হালবিয়ে কাবীর পৃ:৪৭৯,৪৭০।
# মুসাফির নামাযের নিয়ত পরিবর্তন করলেঃ
মাসআলাঃমুসাফির নামায শুরু করার পর নামাযেই কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করল। সে ঐ নামায এবং পরবর্তি সকল নামায পূরো পড়বে।- ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪১।
# মুসাফির ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর অথবা নামাযের পরে নিয়ত পরিবর্তন করলেঃ
মাসআলাঃমুসাফির নামাযের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর ইকামতের (কমপক্ষে ১৫দিন থাকার) নিয়ত করল।এখন সে ঐ নামায কাজা পড়লে কসরই পড়বে। অনুরূপভাবে কোন নামায কসর পড়ার পরে ইক্বামতের নিয়ত করলে ঐ পূর্বোক্ত নামাযই যথেষ্ট হবে। তবে সামনে থেকে পূরো নামায পড়বে।–হিদায়া ১/১৬৭।
সফরে জুময়ার নামায:
সফররত অবস্থায় ‘জুমুআ’ না পড়লে গোনাহ হবে না। তখন ‘জুমুআর’ বদলে জুহর পড়ে নেবেন। সফরে সালাতরত অবস্থায় কিবলা উল্টাপাল্টা হয়ে গেলেও নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে কিবলা কোন দিকে এটা একটু চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করে নিতে হবে।
যদি সফরের নিয়ত না থাকে: (অনিচ্ছাকৃত সফর):
কেউ ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে বের হল না। অথচ নিয়ত ব্যতীত সারা দুনিয়া ঘুরে এল । সে মুসাফির হিসাবে গন্য হবে না।-রদ্দুল মুহতার ২/১২১
অল্প সময়ে গেলে বা বিমানে গেলে:
৪৮মাইল রাস্তা যত কম সময়েই অতিক্রম করা হোক না কেন (এমনকি ১০মিনিটে অতিক্রম করা হলেও) তা অতিক্রম করার দ্বারা মুসাফির গন্য হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দুরত্বই মুল। সময় বা ক্লান্তি আসা ধর্তব্য নয়।- রদ্দুল মুহতার ২/১২৩
নিয়ত ১৫ দিনের ছিল কিন্তু কোনো কারণে থাকা বেশি হয়ে গেলে:
# কেউ বাড়ী থেকে কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। কিন্তু পথিমধ্যে কোন একটি স্থানে প্রয়োজনের কারনে ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করল। সেখান থেকে আজ যায় কাল যায় করে (টানা ১৫দিন থাকার নিয়ত ব্যতীত) কয়েক বছর থাকলেও সে মুসাফির গন্য হবে। মোটকথা যতক্ষন সে কোন একটি স্থানে টানা ১৫ থাকার নিয়ত না করবে সে মুকীম গন্য হবে না।-হিদায়া ১/১৬৬।
# তবে এক্ষেত্রে উল্লেখিত স্থানটি তার বসতের স্থান (ওয়াতনে আসলী বা ওয়াতনে ইকামত) হলে হবে না। কেননা নিজস্ব বসতের স্থানে কেউ যত দুর থেকে সফর করে আসুক না কেন সে মুকীম গন্য হবে। -আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৫।
সফরমধ্য বিরতিতে কোনো স্থানে ১৫ দিনের বেশি থাকলে
কেউ কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। কিন্তু পথিমধ্যে কোন জায়গায় ১৫ দিন বা তার বেশী থাকার নিয়ত করল বা রাস্তার মাঝে তার ওয়াতনে আসলী কিংবা ওয়াতনে ইক্বামত এসে গেল তবে সে মুকীম গন্য হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯।
সফর দূরত্বের দুই জায়গার মাঝে স্থানান্তর হলে:
# কেউ কোন স্থানে সফর করে গিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন থাকল। অতঃপর তার সামানপত্র সেখানে রেখে উক্ত স্থান থেকে চলে গেল। এর পর সেখানে ১৫দিনের কম থাকার নিয়তে গেলেও সে মুকীম গন্য হবে। তবে তার সামানপত্র সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলে কমপক্ষে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে কসর করা যাবে।-বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৪, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/১০৮-১১২।
পথিমধ্যে নিয়ত পরিবর্তন করলেঃ
# কেউ কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে ঘর থেকে বের হল। মাঝে কোন একটি স্থানে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করল। এর দ্বারা সে মুকীম হয়ে যাবে এবং পূরো নামায পড়বে। এরপর যদি সে উক্ত স্থান থেকে ১৫দিনের পূর্বেই চলে যাওয়ার নিয়ত করে তবে শুধুমাত্র এ নিয়তের কারনেই সে মুসাফির গন্য হবে না। বরং উক্ত স্থান থেকে তার গন্তব্যস্থল যদি কমপক্ষে ৪৮মাইল হয় তবে উক্ত স্থানের আবাদী থেকে বের হওয়ার পর সে মুসাফির গন্য হবে। যদি তার গন্তব্যস্থল কমপক্ষে ৪৮মাইল না হয় বা ৪৮মাইল হয় কিন্তু এখনো সে উক্ত আবাদী থেকে বের হয়নি তবে এমতাবস্থায় সে পূরো নামায পড়বে কসর জায়েয নেই।–হিদায়া ১/১৬৬।
# কেউ দুই স্থান মিলে ১৫ দিন থাকার নিয়ত করল। তবে প্রতিদিন রাতে সে এক জায়গাতে থাকবে এবং দিনে অন্যত্র অবস্থান করবে।এমতাবস্থায় সে রাতের স্থানে মুকীম হবে এবং পুরো নামায পড়বে।কিন্তু যদি দিনের কর্মস্থল রাতের স্থান থেকে ৪৮ মাইল দুরত্বে হয় তবে দিনের স্থনে সে মুসাফির হবে এবং কসর করবে। আর যদি উভয় স্থানের দুরত্ব কমপক্ষে ৪৮মাইল না হয় তবে উভয় স্থানে পুরো নামায পড়বে। মোটকথা রাতে থাকার স্থান ধর্তব্য হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৬০৭(যাকারিয়া)।
চাকুরী বা ব্যবসার স্থানে নামায:
# অনেকে চাকুরী বা ব্যবসার খাতিরে শহরে বা অন্য কোন ন্থানে অবস্থান করে। যদি কোন একটি স্থানে একটানা ১৫দিন বা তার বেশী থাকে তবে সে মুকীম হবে এবং পূরো নামায পড়বে। আর যদি উক্ত স্থানে কখনো ১৫দিন না থাকা হয় বরং ৮/১০দিন থেকেই সর্বদা বাড়ী চলে আসে তবে উক্ত স্থান বাড়ী থেকে সফরের দুরুত্ব হলে কসর করতে থাকবে। টানা ১৫দিন থাকার নিয়ত ব্যতীত মুকীম গন্য হবে না।-আল-বাহরুর রায়েক ৪/৩৪১।
# বিভিন্ন চাকুরীজীবী ও পেশাজীবীরা শহরে বাসা ভাড়া করে থাকে। তারা গ্রামের বাড়ীতে গেলেও বাসায় সামানপত্র রেখে যায়। কাজেই শহরে তারা মুকীম গন্য হবে। তবে এক্ষেত্রে একবার একটানা ১৫ দিন থাকা শর্ত। -আদ্দুরুরল মুখতার ১/১২৩।
মুকীমের বসবাসের স্থান দুধরনের:
ক. ওয়াতনে আসলী
খ. ওয়াতনে ইক্বামত
#ওয়াতনে আসলীঃ
মাসআলাঃ ওয়াতনে আসলী মানুষের এমন নিজস্ব বাসস্থানকে বলে যেখানে সে জন্মগ্রহন করেছে অথবা তার পরিবার বসবাস করে অথবা যেখানে সে নিজেই বানিয়েছে এবং চিরস্থায়ীভাবে (আজীবন) বসবাসের নিয়ত করেছে।- আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১।
# ওয়াতনে আসলীতে কেউ মুসাফির হয় না।কেউ ওয়াতনে আসলীতে ১ ঘন্টার জন্য গেলেও মুকীম গন্য হবে। আর সে চার রাকাআত বিশিষ্ট ফরজ নামায চার রাকাআতই পড়বে। কসর জায়েয নেই। - আদ্দুররুল মুখতার ২/৬১৪ (যাকারিয়া)
বাড়ি/বাসা একাধিক হলে:
# ওয়াতনে আসলী একাধিক হতে পরে। যেমন কেউ নতুন করে শহরে বাড়ী করল। আর পূর্ব থেকে তার গ্রামে বাড়ী রয়েছে। এখন সে যদি উভয় বাড়ীতে আসা-যাওয়া করে এবং উভয়টিতে প্রয়োজনবোধে স্থায়ীভাবে বসবাসের নিয়ত করে তবে উভয়টি তার জন্য ওয়াতনে আসলী হবে।
-আল বাহরুর রায়েক ২/১৩৬
# মোটকথা ওয়াতনে আসলী নির্ধারনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিয়তই মূল। সে যদি দুটি স্থানকে ওয়াতনে আসলী বানায় এবং উভয়টিতে স্থায়ীভাবে থাকার নিয়ত করে ( এখানে কিছু দিন ওখানে কিছু দিন) তবে উভয়টি তার জন্য ওয়াতনে আসলী গন্য হবে। -ফাতাওয়া উসমানী ১/৫৪৬
# কেউ শহরে চাকুরী করে। সেখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। তবে গ্রামে তার বাড়ী রয়েছে। ভবিষ্যতে সেখানে গিয়ে বসবাস করার নিয়ত করেছে । এবং মাঝে-মধ্যে গ্রামে বেড়াতে যায়। তবে তার গ্রামের বাড়ীটি তার জন্য ওয়াতনে আসলী হবে। পক্ষান্তরে যদি উক্ত লোকটি গ্রামের বাড়ীটি তার নিজ বাড়ী হিসাবে বহাল না রাখে এবং পরবর্তিতে সেখানে বসবাসের নিয়ত না থাকে এবং আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেয় তবে গ্রামের বাড়ীটি তার জন্য আর ওয়াতনে আসলী থাকবে না। - রদ্দুল মুহতার ২/১৩১
# কারো কোন স্থানে শুধু জমিন থাকলে এর দ্বারা তা ওয়াতনে আসলী গন্য হবে না। -আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১
শশুর বাড়ীতে জামাইয়ের নামায:
স্বাভাবিকভাবে শ্বশুরবাড়ি যদি সফরদূরত্বে হয় এবং ১৫ দিনের কম অবস্থানের নিয়ত থাকে তবে কসর পড়তে হবে। ১৫ দিনের বেশি থাকলে সেটা ওয়াতনে ইকামত হবে আর যদি ঘরজামাই থাকে বা শশুরবাড়িতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তবে সেটা ওয়াতনে আসলী হিসেবে গণ্য হবে।
শশুর বাড়ীতে স্ত্রীর নামায:
বিবাহের পর স্ত্রীকে যদি বাপের বাড়ী থেকে তুলে আনা হয় এবং স্ত্রী স্বামীর বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে আসে তবে স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাড়ী ওয়াতনে আসলী হবে। এবং সে সেখানে মুকীম হবে। স্ত্রীর বাপের বাড়ী যদি স্বামীর বাড়ী থেকে ৪৮ মাইল বা তদাপেক্ষা বেশী দুরুত্ব হয় তবে কমপক্ষে ১৫দিনের নিয়ত ব্যতীত স্বামী-স্ত্রী উভয়ে স্ত্রীর বাড়ীতে মুকীম হবে না। বরং উভয়ে মুসাফির গন্য হবে এবং কসর করবে। তবে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করলে উভয় মুকীম গন্য হবে। এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের হুকুম একই। কজেই স্ত্রী বাপের বাড়ী থেকে স্বামীর বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে আসার পর কোন স্থান থেকে শরঈ সফরের দূরত্ত অতিক্রম করে বাপের বাড়ীতে এলে এবং ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করলে কসর করবে।
# আর যদি স্ত্রী সর্বদা বাপের বাড়ীতে থাকার শর্তে বিবাহ হয় এবং স্বামী তাকে সেখানে রেখে দেয় তবে স্ত্রীর জন্য বাপের বাড়ী ওয়াতনে আসলী থাকবে।এবং পূরো নামায পড়বে। এমন কি স্বামীর জন্যও এক্ষেত্রে স্ত্রীর বাড়ী ওয়াতনে আসলী গন্য হবে। স্বামী যদি সফরের দুরুত্ব অতিক্রম করে স্ত্রীর বাড়ীতে আসে তবে ২/১ দিন থাকলেও পূরো নামায পড়বে। কসর জায়েয নেই। অনুরূপভাবে স্বামী সর্বদা স্ত্রীর বাড়ীতে ঘর জামাই থাকলেও স্বামীর -স্ত্রী উভয়ের জন্য স্ত্রীর বাড়ী ওয়াতনে আসলী গন্য হবে।- আল-বাহরুর রায়েক ৪/৩৪০-৩৪১(দারুল কুতুব,লেবানন)বাদায়েউস সানায়ে ১/৩১৭.৩১৮(দারুল কুতুব, বাইরূত) মারাকিল ফালাহ পৃ:২৪৯, ইমদাদুল আহকাম ১/৬৯৩-৬৯৮, ফাতাওয়া দারুল উলুম ৪/৩২০,ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৭/৪৯৫-৪৯৯
# অনেক সময় বিবাহের পর স্ত্রী কিছু দিন বাপের বাড়ীতেই থাকে। মাঝেমধ্যে কয়েক দিনের জন্যে শশুর বাড়ীতে বেড়াতে আসে। এরপর আবার বাপের বাড়ীতে চলে আসে। এমতাবস্তায় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য তাদের প্রত্যেকের শশুর বাড়ী ওয়াতনে আসলী গন্য হবে না। কাজেই যদি উভয়ের বাড়ী কমপক্ষে ৪৮মাইল দুরুত্বে হয় এবং তাদের প্রত্যেকে শশুর বাড়ীতে গিয়ে ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করে তবে কসর করবে। কিছু দিন পরে স্ত্রী স্বামীর বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে আসে তখন স্বামীর বাড়ীই স্ত্রীর জন্য ওয়াতনে আসলী হয়ে যায়। -আল-বাহরুর রায়েক ২/২৯৩ (রশীদিয়া ) ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৭/৪৯৮
১৬. ওয়াতনে ইক্বামত:
# কেউ কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফর করে কোন স্থানে গিয়ে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করলে তা তার জন্য ওয়াতনে ইক্বামত হিসাবে গন্য হবে। ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করলে ওয়াতনে ইকামত হবে না। -আল বাহরুর রায়েক ৪/৩৪১।
# তবে কেউ যদি একামতের নিয়ত না করে মুসাফির হিসেবে থাকেন, তাহলে তিনি সবসময় কসর করতে পারবেন। এমনকি ১৫ দিন পার হয়ে গেলেও। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
# কসরের হাদীসগুলোতে রাবীগণ সফরে ১২ দিন, ১৫ দিন, ১৯ দিন বা ১০ দিনের কথা উল্লেখ করেছেন। এটি আলেমদের মধ্যে একটা ইজতেহাদি বিষয় ছিল। এই মর্মে স্পষ্ট কোনো হাদিস রাসুল (সা.)-এর দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি।
# ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া তামিমী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মদিনা থেকে মক্কার দিকে রওনা দিলাম। সেই সফরে তিনি মদিনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু' রাক'আত দু’ রাক'আত করে সালাত আদায় করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি মক্কায় কতদিন ছিলেন? তিনি বললেন দশ দিন।
মুসলিম ইফা ১৪৫৯
# মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সফরে উনিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) কসর করেন। কাজেই (কোথাও) আমরা উনিশ দিনের সফরে থাকলে কসর করি এবং এর চাইতে বেশী হলে পুরোপুরি সালাত আদায় করি। সহীহ বুখারী ইফা: ১০১৯
# ওয়াতনে ইক্বামত সফরের দ্বারা বাতিল হয়ে যায়। অর্থাৎ কেউ কোন স্থানে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার পরে সেখান থেকে সফর করে (কমপক্ষে ৪৮মাইল দুরুত্ব অতিক্রম করে) অন্য আরেক স্থানে চলে এলে তার ওয়াতনে ইক্বামত বাতিল হয়ে যায়। পরে কোন দিন উক্ত স্থানে পূনরায় গেলে ১৫ দিন থাকার নিয়ত ব্যতীত তা তার জন্য ওয়াতনে ইক্বামত হবে না। তবে নতুন করে আবার ১৫দিন থাকার নিয়ত করলে তা তার জন্য ওয়াতনে ইক্বামত হবে। -মারাকিল ফালাহ ১/১৮৭
স্বামীর অনুগামী স্ত্রীর নামাযঃ
# স্ত্রী স্বামীর সাথে সফরে গেল। স্বামী যত দিন সফরে থাকবে সেও থাকবে। এক্ষেত্রে স্বামী যদি কোথাও ১৫ দিন থাকার নিয়ত করে তবে স্বামী মুকীম হওয়ার কারনে স্ত্রীও মুকীম বলে গন্য হবে এবং পূরো নামায পড়বে। ১৫দিনের কম নিয়ত করলে কসর করবে। অনুরূপ ভাবে মালিকের ১৫দিনের নিয়ত দ্বারা ড্রাইভার, কর্মচারীও মুকীম হবে। -আদ্দুরুল মুখতার ২/৬১৬।
# সফরে নামায কাযা হলে বা অন্য সময়ের কাযা নামায সফররত অবস্থায় পড়লেঃ
মাসআলাঃশরঈ মুসাফিরের সফররত অবস্থায় নামায কাযা হলে সর্বাবস্থায় কসরই পড়বে। চাই সফরেই পড়ুক অথবা সফরের পরে। আর বাড়ীতে থাকা অবস্থার কাযা নামায সফররত অবস্থায় পড়লে পূরো চার রাকাআতই পড়বে। –হিদায়া ১/১৬৭।
ড্রাইভার বা পরিবহণ কর্মচারীর নামায:
# বাস,ট্রেন ইত্যাদির ড্রাইভার এবং এমন চাকুরীজীবী যারা সর্বদা সফরে থাকে তারা যদি কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হয় এবং ১৫দিন থাকার নিয়ত না করে তবে কসর করতে থাকবে। তবে এক্ষেত্রে তার ১৫ দিন থাকার নিয়তের জন্য তার উর্ধ্বতন পর্যায়ের অনুমতি বিবেচ্য হবে। অন্যথায় তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা মালিকের নিয়ত ধর্তব্য হবে। আর যদি মালিক বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ত জানা না যায় তবে তারা কসর করতে থাকবে। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫২১(বাইরুত ), আল বাহরুর রায়েক ২/২৪৩।
# রেলগাড়ী বা পানির জাহাজে চাকুরীজীবীর নামায
মাসআলাঃযারা কোন গাড়ী বা জাহাজে চাকুরী করে এবং নিজের বসস্থান থেকে সফরের দুরুত্বে ভ্রমন করতে থাকে তারা সর্বাবস্থায় নামায কসর করবে। কেননা জাহাজে ইক্বামতের নিয়ত করলেও তা সহীহ হয় না। তবে যদি কোন জাহাজ বা নৌযান শহর বা উপশহরের কিনারাই ১৫দিন বা তদাপেক্ষা বেশী থাকার নিয়তে ভিড়ানো থাকে তবে তাতে অবস্থানকারী এর দ্বারা মুকীম গন্য হবে। এবং পূরো নামায পড়বে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া।১/১৩৯, বাদায়েউস সানায়ে ১/৯৮।
ট্রেনে নামায:
# ট্রেনে নামায পড়া জায়েয আছে চাই ট্রেন স্টেশনে দাড়িয়ে থাকুক অথবা চলমান। এক্ষেত্রে শর্ত হল কিবলামুখী হয়ে এবং দাড়িয়ে যথা নিয়মে রুকু সিজদার মাধ্যমে নামায আদায় করবে। তবে যদি দাড়ানোর কারনে মাথায় চক্কর দেয় অথবা পড়ে যাওয়ার আশংকা হয় তবে বসে রুকু সিজদার মাধ্যমে নামায আদায় করবে। নামায রত অবস্থায় ট্রেন ঘুরে গেলে নামাযীও সাথে সাথে ঘুরে যাবে।
# আর যদি ভিড় বা অন্য কোন করনে কিবলমুখী হয়ে নামাজ পড়া না যায় অথবা কিয়াম সম্ভব না হয় অথবা যথানিয়মে সিজদা না করা যায় এবং ওয়াক্তের মধ্যে সামনে কোন স্টেশনে নেমে নামায আদায় সম্ভব না হয় তবে যে কোনভাবে নামায পড়ে নিবে। এবং পরবর্তিতে উক্ত নামায দোহরিয়ে নিবে।- রদ্দুল মুহতার ২/৪১, ১/২৩৫, আদ্দুরুল মুখতার ১/৪২৭,৪৪৫,আল-বাহরউর রায়েক ১/৪৯৩,২৪৮।
বাসে নামায
# বাস ও ট্রেনে নামাযের হুকুম একই অর্থাৎ বাসে যদি উপরে উল্লেখিত নিয়মে (কিবলামূখী হয়ে কিয়াম ও রুকু সিজদা করে) নামায পড়তে না পারে এবং বাস থামানো সম্ভব না হয় অথবা গন্তব্যস্থল পর্যন্ত পৌছাতে নামাযের ওয়াক্ত চলে যায় তবে ইশারায় যে কোন ভাবে নামায পড়ে নিবে এবং পরে দোহরিয়ে নিবে। আর যথানিয়মে নামায পড়তে পারলে উক্ত নামাযই যথেষ্ট হবে। – রদ্দুল মুহতার ২/৪১, ১/২৩৫, আদ্দুরুল মুখতার ১/৪২৭,৪৪৫,আল-বাহরউর রায়েক ১/৪৯৩,২৪৮।
# বিঃদ্রঃ দুর-দুরান্তে সফর করতে হলে সকাল সকাল বের হওয়া উচিত। যাতে দুপুরের মধ্যে গন্তব্যস্থানে পৌছা যায়। এতে নামায আদায় সহজ হয়ে যায়। আর বিকালে সফর শুরু করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসর ও মাগরিবের নামায আদায় ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়।
# তবে একান্ত যদি দুপুরের পরে সফরে বের হতে হয় তবে বাসের সফর হলে নামাযের সময় গুলোতে বাসা থামিয়ে নিচে কোন স্থানে কিয়াম ও রুকু-সিজদার দ্বারা নামায আদায় করবে। যে দেশে অন্তত ৯২শতাংশ মানুষ মুসলমান সে দেশে বাস থামিয়েই নামায পড়া উচিত। আসলে আমাদের জযবার অভাব। আমরাই মনে করি বাস থামিয়ে নামায পড়লে অন্যান্য ভাইদের সময় অপচয় হবে। অথচ এর দ্বারা যেমনিভাবে নিজের ফরজ আদায় হয় তেমনিভাবে অন্যান্য ভাইদের জন্য দাওয়াতও হয়। আর বাস্তবতা ও অধমের অভিজ্ঞতা এটাই যে, নিজের সদ্বিচ্ছা থাকলে বাস থামিয়ে নামায পড়া যায়।
# তাছাড়া বাসে নামায পড়লে সাধারনত তা সহীহ হয় না। কেননা কিয়াম, কিবলামুখী হওয়া এবং সিজদা এগুলো ঠিকভাবে আদায় করা যায় না। তাই যদি নিচে নেমে নামায আদায করা না যায় অথবা নেমে গেলে নিজের জান,মালের ক্ষতি হওয়া আশংকা থাকে তবে বাসে যে কোন ভাবে নামায পড়ে নিবে এবং পরে দোহরিয়ে নিবে।
# এক্ষেত্রে আরেকটি সংশোধনযোগ্য বিষয় হল অনেক সময় পুরুষেরা বাস থামিয়ে নামায পড়লেও মহিলারা পর্দার দোহাই দিয়ে অথবা লজ্জার কারনে নামায পড়ে না। অথচ এটা চরম অন্যায় ও গোনাহের কাজ। বরং তারা যথা নিয়মে ওযু করে মসজিদের এক কিনারায় বা অন্য কোন স্থানে বোরকা পরিহীত অবস্থায় নামায আদায় করবে।
নৌকা,জাহাজ ও ষ্টীমারে নামায:
নৌযানে নামাযের কয়েকটি সূরত হতে পারে। নিম্নে প্রত্যেকটি সূরত হুকুমসহ বর্ননা করা হল-
# নৌযানটি কিনারে বাধা থাকবে এবং তার কোন অংশ মাটির সাথে লেগে থাকবে। এমতাবস্থায় তার উপর নামায পড়া জায়েয।তবে দাড়িয়ে নামায পড়া জরুরী। বসে পড়লে তা সহীহ হবে না।
# কিনারে বাধা থাকবে তবে নৌযানের কোন অংশ মাটির সংঙ্গে লেগে থাকবে না। এমতাবস্থায় যদি তা থেকে বের হয়ে নামায পড়া সম্ভব হয় তবে বের হওয়া জরুরী। আর যদি বের হওয়া সম্ভব না হয় তবে তার উপর দাড়িয়ে নামায পড়বে।
# নৌযান নদী বা সাগরের মাঝে বাধা থাকবে। যদি তার কোন অংশ মাটির সাথে লেগে থাকে তবে এর হুকুম কিনারায় বাধা ঐ নৌকার মত যার কোন অংশ মাটিতে লেগে আছে। অর্থাৎ তার উপর দাড়িয়ে নামায পড়া জায়েয।
# নৌযান নদী বা সাগরের মাঝে বাধা থাকবে অথবা চলমান থাকবে এবং তার কোন অংশ মাটিতে লেগে থাকবে না। এমতাবস্থায় যদি নৌযান থেকে বের হেয়ে নামায পড়া সম্ভব হয় তবে বের হয়ে নামায পড়া জরুরী। আর যদি বের হওয়া বা কিনারায় ভিড়ানো সম্ভব না হয় এবং গন্তব্যস্থলে পৌছা পর্যন্ত ওয়াক্ত না থাকে তবে নৌযানের উপরেই দাড়িয়ে নামায পড়ে নিবে।
# উপরে উল্লেখিত কোন সূরতে মুসল্লীর দাড়িয়ে নামায পড়লে যদি মাথা চক্কর দেয় অথবা বাতাস কিংবা ঢেউয়ের কারনে পড়ে যাওয়ার আশংকা হয় তবে বসে নামায পড়বে।- আদ্দুরুরল মুখতার এর সাথে রদ্দুল মুহতার ২/৫৭২-৫৭৩(যাকারীয়া), আল-বাহরুর রায়েক ৪/২৮৯-২৯০(দারুল কুতুব), এমদাদুল আহকাম ১/৭১২-৭১৪।
# নৌকা বা অন্য কোন নৌযানে নামাযের মধ্যে যদি নৌকা ঘুরে যায় তবে মুসল্লীও সাথ সাথে ঘুরে যাবে। কিবলামুখী হয়ে নামায না পড়লে নামায সহীহ হবে না। পূনরায় পড়তে হবে। -আদ্দুরুল মুখতার ২/৫৭৩ (যাকারিয়া)।
# নৌকা লঞ্চ-স্টিমার কিংবা বিমানে যেভাবে মুসল্লির জন্য সহজ হয় সেভাবে সালাত আদায় করতে পারবে। তা মাকরূহ হবে না। কারণ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পানির জাহাজে সালাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন,
( صل فيها قائما إلا أن تخاف الغرق ) رواه الدار قطني والحاكم على شرط الشيخين
“তুমি তাতে দাঁড়িয়ে সালাত আদা করো, তবে যদি ডুবে যাওয়ার ভয় কর তাহলে ভিন্ন কথা”। দারা-কুতনী ও হাকিম বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী তা চয়ন করেছেন।
প্লেনে নামায:
# প্লেন জমিনের সাথে লেগে থাকলে তার উপর নামায সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয। আর উড়ন্ত প্লেনে উযরের কারনে নামায জাযেয। যদি দাড়িয়ে পড়া সম্ভব না হয় তবে বসে পড়বে। এক্ষেত্রেও কিবলামুখী হওয়া ফরজ। যদি প্লেন ঘুরে যায় তবে মুসল্লীও ঘুরে যাবে।- কিতাবুল ফিক্হ আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ ১/২০৬,আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৯০।
# দ্রুতগামী প্লেনে উঠার কারনে পূর্বোক্ত ওয়াক্ত পূনরায় দেখা দিলেঃ
মাসআলাঃকেউ মাগরিবের নামায পড়ে প্লেনে উঠল। অতঃপর প্লেন পশ্চিম দিকে এত দ্রুত বেগে ছুটল যে পূনরায় সূর্য দেখা দিল। এখন তার জন্য পূনরায় মাগরিবের নামায পড়তে হবে না। আর রোযা থেকে থাকলে তারও কোন ক্ষতি হবে না। তবে এখন থেকে দ্বিতীয় বার সূর্য ডোবা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকবে।-রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৪।
সফরে পানি না পেলে:
# কেউ সফররত অবস্থায় পানি না পেলে এবং ওয়াক্তের মধ্যে গন্তব্যস্থলে পৌছাতে না পারলে অথবা ওয়াক্তের মধ্যে পানি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন না হলে তায়াম্মুম করে নামায পড়বে। পরে ওয়াক্তের মধ্যে পানি পাওয়া গেলেও নামায দোহরাতে হবে না।- ফাতাওয়া হিন্দীয়া ১/২৮, রদ্দুল মুহতার ১/২৩৫।
# অনেক সময় ট্রেনে বা বাসে তায়াম্মুমেরে জন্য মাটি পাওয়া যায় না। তবে বাস বা ট্রেনের গায়ে এত পরিমান ধুলা বালি জমা হয়ে যায়, যা দ্বারা তায়াম্মুম করা যায়। যদি ধুলা বালি জমা হওয়ার স্থান পাক হয় তবে তা দ্বারা তায়াম্মুম করে নিবে।
# সফরে পানি ও মাটি জাতীয় জিনিস কোনটিই না পেলেঃ
মাসআলাঃঅনেক সময় ওযুর জন্য পানি এবং তায়াম্মুমের জন্য মাটি জাতীয় জিনিস কোনটিই পাওয়া যায় না। প্লেনে,বাস ও ট্রেনে প্রায়ই এমন হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় নামাযীর মত সূরত এখতিয়ার করবে। অর্থাৎ নামাযের নিয়ত ব্যতীত নামাযীর ন্যয় উঠাবসা করবে। পরে যথানিয়মে নামায কাজা করে নিবে। আর যদি ওয়াক্তের মধ্যে পানি বা মাটি জাতীয় বস্তু পেয়ে যায় তবে ওয়াক্তের মধ্যে তা পূনরায় দোহরিয়ে নিবে। -আদ্দুররুল মুখতারের সাথে রদ্দুল মুহতার ১/১৮৫.১৮৬(যাকারিয়), সুনানে তিরমিজী হা: নং ১।
# মোজার উপর মাসেহ:
মুসাফির তিন দিন তিন রাত মোজার উপর মাসেহ করতে পরে।- হিদায়া ১/৫৭
মুসাফিরের জুমআ ও ঈদের নামায:
# মুসাফিরের উপর জুমআ ও ঈদের নামায ফরজ নয়। সুযোগ হলে জুমআ পড়ে নিবে নতুবা যোহর পড়বে।-আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৫,আল মাবসূত ১/২৫৩।
# মাসআলাঃমুসাফিরের উপর জুমআ বা ঈদ ফরজ না হলেও সে জুমআ বা ঈদের ইমামতি করলে তা সহীহ হবে।–হিদায়া ১/১৫২।
সফরে কিবলা নির্নয়:
# কেউ যদি কোন স্থানে কিবলার দিক নির্নয় করতে না পারে এবং এমন কোন মানুষও না পায় যার নিকট জিজ্ঞাসা করে নিতে পারে তবে সে অন্তর দ্বারা চিন্তা করবে। যেদিকে কিবলা হওয়ার ব্যপারে প্রবল ধারনা হবে সে দিকে ফিরে নামায পড়বে। যদি সে কোন চিন্তা ফিকির ছাড়াই কোন একদিকে ফিরে নামায পড়ে তবে তার নামায সহীহ হবে না। পূনরায় পড়তে হবে। তবে পরবর্তিতে যদি জানতে পারে যে সে যেদিকে ফিরে নামায পড়েছে কেবলা সে দিকেই ছিল তাহলে তার নামায হয়ে যাবে। -রদ্দুল মুহতার ১/৪৩২,আল বাহরুর রায়েক-১/৪৯৯।
#মাসআলাঃকেউ জিজ্ঞাসা করার কোন লোক না পেয়ে চিন্তা ফিকির করে প্রবল ধারনার ভিত্তিতে কোন এক দিকে নামায পড়ল । পরবর্তিতে প্রকাশ পেল কিবলা অন্য দিকে ছিল। উক্ত নামায তাকে পূনরায় পড়তে হবে না। বরং পূর্বোক্ত নামাযই সহীহ হবে। -আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৩১।
# মাসআলাঃযদি কিবলার দিক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য কাউকে পেয়েও জিজ্ঞাসা না করে চিন্তা করে কোন একদিকে ফিরে নামায পড়ে তবে তার নামায সহীহ হবে না। তবে নামাযের পর যদি প্রকাশ পায় যে সে কিবলার দিকেই নামায পড়েছে তবে তা সহীহ হবে। -রদ্দুল মুহতার ১/৪৩২আহসানুল ফাতাওয়া ২/৩১৮-৩১৯।
মহিলাদের একাকী সফরসীমা:
#মহিলাদের জন্য তার মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ৪৮মাইল বা তদাপেক্ষা বেশী দুরুত্বের সফর করা জায়েয নয়। এর কম হলে জায়েয আছে । তবে সর্বাবস্থায় মাহরাম পুরুষের সাথে সফর করাই উত্তম। আর গাইরে মাহরামদের সাথে সফর করা মারাত্তক গোনাহ।হাদীসে মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের সফরের ব্যপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। -বুখারী শরীফ হা: নং১০৮৬,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২।
# মাহরাম হওয়া সত্তেও যদি কারো সাথে সফরের দ্বারা ফেতনার আশংকা হয় তবে তার সাথেও সফর করা জায়েয নেই। -আলা বাহরুর রায়েক ২/৩১৫।
# হায়েয অবস্থায় সফর শুরু করলে অথবা সফরের মাঝে হায়েয চলে এলেঃ
কোন মহিলা হায়েয অবস্থায় কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। অতঃপর সে পথিমধ্যে পবিত্র হয়ে গেল। এখন যদি সে ঐ স্থানেই অবস্থান করে অথবা ঐ স্থান থেকে তার গন্তব্যস্থান ৪৮মাইলের কম হয় তবে সে মুসাফির গন্য হবে না। পূরো নামায পড়বে। আর যদি উক্ত স্থান থেকে গন্তব্যস্থান ৪৮মাইল বা তার বেশী হয় তবে সে কসর করবে।-রদ্দুল মুহতার ২/১৩৫,আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৮৭,৮৮।
# কোন মহিলা পবিত্র অবস্থায় কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। পথিমধ্যে তার হায়েয এলো। এর দ্বারা সে মুসাফিরই থাকবে এবং কসর করবে। -আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩৫,হাশিয়ায়ে ত্বাহতাবী ১/৩৩৭।
রমযানে সফর:
# শরঈ সফররত অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে মুসাফিরের জন্য রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে। সে পরে কাযা করে নিবে। -হিদায়া ১/২২১
# মুসাফিরের জন্য সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে যদি রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা ভাঙ্গা জায়েয নয়। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহ হবে। তবে এক্ষেত্রে তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।
# কেউ যদি রোযা রাখার পর সফর শুরু করে তবে তার জন্যও রোযা ভাঙ্গা জায়েয নেই। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহগার হবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
# উল্লেখিত মাসআলা দুটি খুব ভালভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। অনেকেই মনে করে সফররত অবস্থায় মুতলাক্বভাবে (সর্ববস্থায়)রোযা ভেঙ্গে দেওয়া যায়। বরং শরঈ সফররত অবস্থায় যদি সুবহে সাদিক এসে যায় তবে সেই কেবল রোযা না রাখতে পারে । তবে যদি রোযা রাখার পর সফর করে অথবা সফর শুরু করার পর রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয হবে না।
# মুসাফির যদি সূর্য উঠার আগে মুকীম হয়ে যায় আর তার থেকে রোযা ভঙ্গ হওয়ার কোন কারন প্রকাশ না পায় তবে তার জন্য রোযার নিয়ত করা জরুরী । অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।তবে রোযা না রাখলে তার জন্য শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
দুই নামায একত্রে পড়ার বিধান:
সফরে মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করা।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্রুত সফর করতেন, তখন মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। ইবরাহীম ইবনু তাহমান (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সফরে দ্রুত চলার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহ্র ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) একত্রে আদায় করতেন আর মাগরিব ইশা একত্রে আদায় করতেন।
আর হুসাইন (রহঃ) আনাস ইবনু মলিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরকালে মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করতেন এবং আলী ইবনু মুবারকও হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় হুসাইন (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একত্রে আদায় করেছেন।
সহীহ বুখারী (ইফাঃ) ১০৪২।
হাসসান ওয়াসেতী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে পড়ার আগে সফর শুরু করলে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত (পূর্ব পর্যন্ত) যুহ্র বিলম্বিত করতেন এবং উভয় সালাত (নামায/নামাজ) একত্রে আদায় করতেন। আর (সফর শুরু করার আগেই) সূর্য ঢলে গেলে যুহর আদায় করে নিতেন। এরপর (সফরের উদ্দেশ্যে) আরোহণ করতেন।
সহীহ বুখারী (ইফাঃ ১০৪৫।
এক্ষেত্রে অনেক আলেম বলেছেন এটা মূলত এক ওয়াক্তে দুই নামাজ পড়া বলে না। বরং দুই ওয়াক্তের সীমায় বা দুই ওয়াক্তের মাঝে কিছু বিলম্ব করে নামায পড়া। এক্ষেত্রে ইকামতও আলাদা দিতে হবে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে,
“মহানবী (সা.) মদীনাতে কোনরূপ ভয় কিংবা বৃষ্টির আশংকা ছাড়াই যোহর-আসর এবং মাগরিব ও এশার নামায একত্রে আদায় করতেন।”
হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) নিকট জিজ্ঞাসা করা হয়: এক্ষেত্রে রাসূলের (সা.) উদ্দেশ্য কি ছিল?
জবাবে তিনি বলেন: রাসূল (সা.) চেয়েছিলেন যে, কোন মুসলমান যেন নামায আদায়ের ক্ষেত্রে কষ্টের শিকার না হয়।
সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড পৃ. ১৫২
সফরের আগের সফরের সময়ের এবং সফরের পরের কিছু করণীয় বা আদব:
link:
https://www.hadithbd.com/show.php?pageNum_RsHadith=0&BookID=2&SectionID=103
https://www.hadithbd.com/show.php?pageNum_RsHadith=0&BookID=1&SectionID=21
https://habibur.com/kitab/hadith/book.bukhari/part.21/
https://www.ntvbd.com/religion-and-life/77013
http://www.ihadis.com:8080/books/bukhari/chapter/18/section/223
http://www.ihadis.com:8080/books/muslim/chapter/6
http://muftihusain.com/article
https://quranalo.wordpress.com
# ইমাম মুসাফির হলে তার জন্য উত্তম হল সে সালাম ফিরানোর পর এলান করবে আমি মুসাফির আপনারা আপনাদের অবশিষ্ট নামায পুরা করুন। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৬১২ (যাকারিয়া)।
# শুধু মাত্র মুক্তাদী মুসাফির হলেঃ
মাসআলাঃইমাম মুকীম এবং মুক্তাদী মুসাফির হলে সে ইমামের অনুকরনে চার রাকাআতই পড়বে।–আল-মাবসূত ২/৯৪।
# মুসাফির ইমামের পিছনে মুকীম মাসবূক হলেঃ
মুসাফির ইমামের পিছনে যদি কোন মুকীম মাসবুক হয় তবে তার ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের পদ্ধতি হল প্রথমে ইমামের পরবর্তী রাকাআত গুলো একাকী লাহেকের ন্যয় আদায় করবে। কাজেই উক্ত রাকাআত গুলোতে সে কিরাআত পড়বে না।এরপর ইমামের সাথে ছুটে যাওয়া নামায মুনফারিদের ন্যয় আদায় করবে। অর্থাৎ কিরাআত সহকারে নামায পড়বে।
# কাজেই কোন ব্যক্তি যদি ইমামর সাথে এক রাকাআত না পায় তবে ইমামের উভয় সাসালামের পর সে দাড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকাআত কিরাআত ব্যতীত পড়ে বৈঠক করবে। এরপর আবার এক রাকাআত কিরাআত ব্যতীত পড়বে। তারপর কিরাআত সহ এক রাকাআত পড়ে শেষ বৈঠক করে নামায শেষ করবে।
# আর যদি দুই রাকাআতই না পায় তবে প্রথমে কিরাআত ব্যতীত দুই রাকাআত পড়ে বৈঠক করবে। অতপর কিরাআত সহ দুই রাকাআত পড়ে নামায শেষ করবে।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২,রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৬,খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৬,হালবিয়ে কাবীর পৃ:৪৭৯,৪৭০।
# মুসাফির নামাযের নিয়ত পরিবর্তন করলেঃ
মাসআলাঃমুসাফির নামায শুরু করার পর নামাযেই কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করল। সে ঐ নামায এবং পরবর্তি সকল নামায পূরো পড়বে।- ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪১।
# মুসাফির ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর অথবা নামাযের পরে নিয়ত পরিবর্তন করলেঃ
মাসআলাঃমুসাফির নামাযের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর ইকামতের (কমপক্ষে ১৫দিন থাকার) নিয়ত করল।এখন সে ঐ নামায কাজা পড়লে কসরই পড়বে। অনুরূপভাবে কোন নামায কসর পড়ার পরে ইক্বামতের নিয়ত করলে ঐ পূর্বোক্ত নামাযই যথেষ্ট হবে। তবে সামনে থেকে পূরো নামায পড়বে।–হিদায়া ১/১৬৭।
সফরে জুময়ার নামায:
সফররত অবস্থায় ‘জুমুআ’ না পড়লে গোনাহ হবে না। তখন ‘জুমুআর’ বদলে জুহর পড়ে নেবেন। সফরে সালাতরত অবস্থায় কিবলা উল্টাপাল্টা হয়ে গেলেও নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে কিবলা কোন দিকে এটা একটু চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করে নিতে হবে।
কেউ ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে বের হল না। অথচ নিয়ত ব্যতীত সারা দুনিয়া ঘুরে এল । সে মুসাফির হিসাবে গন্য হবে না।-রদ্দুল মুহতার ২/১২১
অল্প সময়ে গেলে বা বিমানে গেলে:
৪৮মাইল রাস্তা যত কম সময়েই অতিক্রম করা হোক না কেন (এমনকি ১০মিনিটে অতিক্রম করা হলেও) তা অতিক্রম করার দ্বারা মুসাফির গন্য হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দুরত্বই মুল। সময় বা ক্লান্তি আসা ধর্তব্য নয়।- রদ্দুল মুহতার ২/১২৩
নিয়ত ১৫ দিনের ছিল কিন্তু কোনো কারণে থাকা বেশি হয়ে গেলে:
# কেউ বাড়ী থেকে কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। কিন্তু পথিমধ্যে কোন একটি স্থানে প্রয়োজনের কারনে ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করল। সেখান থেকে আজ যায় কাল যায় করে (টানা ১৫দিন থাকার নিয়ত ব্যতীত) কয়েক বছর থাকলেও সে মুসাফির গন্য হবে। মোটকথা যতক্ষন সে কোন একটি স্থানে টানা ১৫ থাকার নিয়ত না করবে সে মুকীম গন্য হবে না।-হিদায়া ১/১৬৬।
# তবে এক্ষেত্রে উল্লেখিত স্থানটি তার বসতের স্থান (ওয়াতনে আসলী বা ওয়াতনে ইকামত) হলে হবে না। কেননা নিজস্ব বসতের স্থানে কেউ যত দুর থেকে সফর করে আসুক না কেন সে মুকীম গন্য হবে। -আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৫।
সফরমধ্য বিরতিতে কোনো স্থানে ১৫ দিনের বেশি থাকলে
কেউ কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। কিন্তু পথিমধ্যে কোন জায়গায় ১৫ দিন বা তার বেশী থাকার নিয়ত করল বা রাস্তার মাঝে তার ওয়াতনে আসলী কিংবা ওয়াতনে ইক্বামত এসে গেল তবে সে মুকীম গন্য হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯।
সফর দূরত্বের দুই জায়গার মাঝে স্থানান্তর হলে:
# কেউ কোন স্থানে সফর করে গিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন থাকল। অতঃপর তার সামানপত্র সেখানে রেখে উক্ত স্থান থেকে চলে গেল। এর পর সেখানে ১৫দিনের কম থাকার নিয়তে গেলেও সে মুকীম গন্য হবে। তবে তার সামানপত্র সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলে কমপক্ষে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে কসর করা যাবে।-বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৪, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/১০৮-১১২।
পথিমধ্যে নিয়ত পরিবর্তন করলেঃ
# কেউ কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে ঘর থেকে বের হল। মাঝে কোন একটি স্থানে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করল। এর দ্বারা সে মুকীম হয়ে যাবে এবং পূরো নামায পড়বে। এরপর যদি সে উক্ত স্থান থেকে ১৫দিনের পূর্বেই চলে যাওয়ার নিয়ত করে তবে শুধুমাত্র এ নিয়তের কারনেই সে মুসাফির গন্য হবে না। বরং উক্ত স্থান থেকে তার গন্তব্যস্থল যদি কমপক্ষে ৪৮মাইল হয় তবে উক্ত স্থানের আবাদী থেকে বের হওয়ার পর সে মুসাফির গন্য হবে। যদি তার গন্তব্যস্থল কমপক্ষে ৪৮মাইল না হয় বা ৪৮মাইল হয় কিন্তু এখনো সে উক্ত আবাদী থেকে বের হয়নি তবে এমতাবস্থায় সে পূরো নামায পড়বে কসর জায়েয নেই।–হিদায়া ১/১৬৬।
# কেউ দুই স্থান মিলে ১৫ দিন থাকার নিয়ত করল। তবে প্রতিদিন রাতে সে এক জায়গাতে থাকবে এবং দিনে অন্যত্র অবস্থান করবে।এমতাবস্থায় সে রাতের স্থানে মুকীম হবে এবং পুরো নামায পড়বে।কিন্তু যদি দিনের কর্মস্থল রাতের স্থান থেকে ৪৮ মাইল দুরত্বে হয় তবে দিনের স্থনে সে মুসাফির হবে এবং কসর করবে। আর যদি উভয় স্থানের দুরত্ব কমপক্ষে ৪৮মাইল না হয় তবে উভয় স্থানে পুরো নামায পড়বে। মোটকথা রাতে থাকার স্থান ধর্তব্য হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৬০৭(যাকারিয়া)।
চাকুরী বা ব্যবসার স্থানে নামায:
# অনেকে চাকুরী বা ব্যবসার খাতিরে শহরে বা অন্য কোন ন্থানে অবস্থান করে। যদি কোন একটি স্থানে একটানা ১৫দিন বা তার বেশী থাকে তবে সে মুকীম হবে এবং পূরো নামায পড়বে। আর যদি উক্ত স্থানে কখনো ১৫দিন না থাকা হয় বরং ৮/১০দিন থেকেই সর্বদা বাড়ী চলে আসে তবে উক্ত স্থান বাড়ী থেকে সফরের দুরুত্ব হলে কসর করতে থাকবে। টানা ১৫দিন থাকার নিয়ত ব্যতীত মুকীম গন্য হবে না।-আল-বাহরুর রায়েক ৪/৩৪১।
# বিভিন্ন চাকুরীজীবী ও পেশাজীবীরা শহরে বাসা ভাড়া করে থাকে। তারা গ্রামের বাড়ীতে গেলেও বাসায় সামানপত্র রেখে যায়। কাজেই শহরে তারা মুকীম গন্য হবে। তবে এক্ষেত্রে একবার একটানা ১৫ দিন থাকা শর্ত। -আদ্দুরুরল মুখতার ১/১২৩।
মুকীমের বসবাসের স্থান দুধরনের:
ক. ওয়াতনে আসলী
খ. ওয়াতনে ইক্বামত
#ওয়াতনে আসলীঃ
মাসআলাঃ ওয়াতনে আসলী মানুষের এমন নিজস্ব বাসস্থানকে বলে যেখানে সে জন্মগ্রহন করেছে অথবা তার পরিবার বসবাস করে অথবা যেখানে সে নিজেই বানিয়েছে এবং চিরস্থায়ীভাবে (আজীবন) বসবাসের নিয়ত করেছে।- আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১।
# ওয়াতনে আসলীতে কেউ মুসাফির হয় না।কেউ ওয়াতনে আসলীতে ১ ঘন্টার জন্য গেলেও মুকীম গন্য হবে। আর সে চার রাকাআত বিশিষ্ট ফরজ নামায চার রাকাআতই পড়বে। কসর জায়েয নেই। - আদ্দুররুল মুখতার ২/৬১৪ (যাকারিয়া)
# ওয়াতনে আসলী একাধিক হতে পরে। যেমন কেউ নতুন করে শহরে বাড়ী করল। আর পূর্ব থেকে তার গ্রামে বাড়ী রয়েছে। এখন সে যদি উভয় বাড়ীতে আসা-যাওয়া করে এবং উভয়টিতে প্রয়োজনবোধে স্থায়ীভাবে বসবাসের নিয়ত করে তবে উভয়টি তার জন্য ওয়াতনে আসলী হবে।
-আল বাহরুর রায়েক ২/১৩৬
# মোটকথা ওয়াতনে আসলী নির্ধারনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিয়তই মূল। সে যদি দুটি স্থানকে ওয়াতনে আসলী বানায় এবং উভয়টিতে স্থায়ীভাবে থাকার নিয়ত করে ( এখানে কিছু দিন ওখানে কিছু দিন) তবে উভয়টি তার জন্য ওয়াতনে আসলী গন্য হবে। -ফাতাওয়া উসমানী ১/৫৪৬
# কেউ শহরে চাকুরী করে। সেখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। তবে গ্রামে তার বাড়ী রয়েছে। ভবিষ্যতে সেখানে গিয়ে বসবাস করার নিয়ত করেছে । এবং মাঝে-মধ্যে গ্রামে বেড়াতে যায়। তবে তার গ্রামের বাড়ীটি তার জন্য ওয়াতনে আসলী হবে। পক্ষান্তরে যদি উক্ত লোকটি গ্রামের বাড়ীটি তার নিজ বাড়ী হিসাবে বহাল না রাখে এবং পরবর্তিতে সেখানে বসবাসের নিয়ত না থাকে এবং আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেয় তবে গ্রামের বাড়ীটি তার জন্য আর ওয়াতনে আসলী থাকবে না। - রদ্দুল মুহতার ২/১৩১
# কারো কোন স্থানে শুধু জমিন থাকলে এর দ্বারা তা ওয়াতনে আসলী গন্য হবে না। -আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১
শশুর বাড়ীতে জামাইয়ের নামায:
স্বাভাবিকভাবে শ্বশুরবাড়ি যদি সফরদূরত্বে হয় এবং ১৫ দিনের কম অবস্থানের নিয়ত থাকে তবে কসর পড়তে হবে। ১৫ দিনের বেশি থাকলে সেটা ওয়াতনে ইকামত হবে আর যদি ঘরজামাই থাকে বা শশুরবাড়িতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তবে সেটা ওয়াতনে আসলী হিসেবে গণ্য হবে।
শশুর বাড়ীতে স্ত্রীর নামায:
বিবাহের পর স্ত্রীকে যদি বাপের বাড়ী থেকে তুলে আনা হয় এবং স্ত্রী স্বামীর বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে আসে তবে স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাড়ী ওয়াতনে আসলী হবে। এবং সে সেখানে মুকীম হবে। স্ত্রীর বাপের বাড়ী যদি স্বামীর বাড়ী থেকে ৪৮ মাইল বা তদাপেক্ষা বেশী দুরুত্ব হয় তবে কমপক্ষে ১৫দিনের নিয়ত ব্যতীত স্বামী-স্ত্রী উভয়ে স্ত্রীর বাড়ীতে মুকীম হবে না। বরং উভয়ে মুসাফির গন্য হবে এবং কসর করবে। তবে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করলে উভয় মুকীম গন্য হবে। এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের হুকুম একই। কজেই স্ত্রী বাপের বাড়ী থেকে স্বামীর বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে আসার পর কোন স্থান থেকে শরঈ সফরের দূরত্ত অতিক্রম করে বাপের বাড়ীতে এলে এবং ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করলে কসর করবে।
# আর যদি স্ত্রী সর্বদা বাপের বাড়ীতে থাকার শর্তে বিবাহ হয় এবং স্বামী তাকে সেখানে রেখে দেয় তবে স্ত্রীর জন্য বাপের বাড়ী ওয়াতনে আসলী থাকবে।এবং পূরো নামায পড়বে। এমন কি স্বামীর জন্যও এক্ষেত্রে স্ত্রীর বাড়ী ওয়াতনে আসলী গন্য হবে। স্বামী যদি সফরের দুরুত্ব অতিক্রম করে স্ত্রীর বাড়ীতে আসে তবে ২/১ দিন থাকলেও পূরো নামায পড়বে। কসর জায়েয নেই। অনুরূপভাবে স্বামী সর্বদা স্ত্রীর বাড়ীতে ঘর জামাই থাকলেও স্বামীর -স্ত্রী উভয়ের জন্য স্ত্রীর বাড়ী ওয়াতনে আসলী গন্য হবে।- আল-বাহরুর রায়েক ৪/৩৪০-৩৪১(দারুল কুতুব,লেবানন)বাদায়েউস সানায়ে ১/৩১৭.৩১৮(দারুল কুতুব, বাইরূত) মারাকিল ফালাহ পৃ:২৪৯, ইমদাদুল আহকাম ১/৬৯৩-৬৯৮, ফাতাওয়া দারুল উলুম ৪/৩২০,ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৭/৪৯৫-৪৯৯
# অনেক সময় বিবাহের পর স্ত্রী কিছু দিন বাপের বাড়ীতেই থাকে। মাঝেমধ্যে কয়েক দিনের জন্যে শশুর বাড়ীতে বেড়াতে আসে। এরপর আবার বাপের বাড়ীতে চলে আসে। এমতাবস্তায় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য তাদের প্রত্যেকের শশুর বাড়ী ওয়াতনে আসলী গন্য হবে না। কাজেই যদি উভয়ের বাড়ী কমপক্ষে ৪৮মাইল দুরুত্বে হয় এবং তাদের প্রত্যেকে শশুর বাড়ীতে গিয়ে ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করে তবে কসর করবে। কিছু দিন পরে স্ত্রী স্বামীর বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে আসে তখন স্বামীর বাড়ীই স্ত্রীর জন্য ওয়াতনে আসলী হয়ে যায়। -আল-বাহরুর রায়েক ২/২৯৩ (রশীদিয়া ) ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৭/৪৯৮
১৬. ওয়াতনে ইক্বামত:
# কেউ কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফর করে কোন স্থানে গিয়ে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার নিয়ত করলে তা তার জন্য ওয়াতনে ইক্বামত হিসাবে গন্য হবে। ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করলে ওয়াতনে ইকামত হবে না। -আল বাহরুর রায়েক ৪/৩৪১।
# তবে কেউ যদি একামতের নিয়ত না করে মুসাফির হিসেবে থাকেন, তাহলে তিনি সবসময় কসর করতে পারবেন। এমনকি ১৫ দিন পার হয়ে গেলেও। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
# কসরের হাদীসগুলোতে রাবীগণ সফরে ১২ দিন, ১৫ দিন, ১৯ দিন বা ১০ দিনের কথা উল্লেখ করেছেন। এটি আলেমদের মধ্যে একটা ইজতেহাদি বিষয় ছিল। এই মর্মে স্পষ্ট কোনো হাদিস রাসুল (সা.)-এর দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি।
# ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া তামিমী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মদিনা থেকে মক্কার দিকে রওনা দিলাম। সেই সফরে তিনি মদিনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু' রাক'আত দু’ রাক'আত করে সালাত আদায় করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি মক্কায় কতদিন ছিলেন? তিনি বললেন দশ দিন।
মুসলিম ইফা ১৪৫৯
# মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সফরে উনিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) কসর করেন। কাজেই (কোথাও) আমরা উনিশ দিনের সফরে থাকলে কসর করি এবং এর চাইতে বেশী হলে পুরোপুরি সালাত আদায় করি। সহীহ বুখারী ইফা: ১০১৯
# ওয়াতনে ইক্বামত সফরের দ্বারা বাতিল হয়ে যায়। অর্থাৎ কেউ কোন স্থানে কমপক্ষে ১৫দিন থাকার পরে সেখান থেকে সফর করে (কমপক্ষে ৪৮মাইল দুরুত্ব অতিক্রম করে) অন্য আরেক স্থানে চলে এলে তার ওয়াতনে ইক্বামত বাতিল হয়ে যায়। পরে কোন দিন উক্ত স্থানে পূনরায় গেলে ১৫ দিন থাকার নিয়ত ব্যতীত তা তার জন্য ওয়াতনে ইক্বামত হবে না। তবে নতুন করে আবার ১৫দিন থাকার নিয়ত করলে তা তার জন্য ওয়াতনে ইক্বামত হবে। -মারাকিল ফালাহ ১/১৮৭
স্বামীর অনুগামী স্ত্রীর নামাযঃ
# স্ত্রী স্বামীর সাথে সফরে গেল। স্বামী যত দিন সফরে থাকবে সেও থাকবে। এক্ষেত্রে স্বামী যদি কোথাও ১৫ দিন থাকার নিয়ত করে তবে স্বামী মুকীম হওয়ার কারনে স্ত্রীও মুকীম বলে গন্য হবে এবং পূরো নামায পড়বে। ১৫দিনের কম নিয়ত করলে কসর করবে। অনুরূপ ভাবে মালিকের ১৫দিনের নিয়ত দ্বারা ড্রাইভার, কর্মচারীও মুকীম হবে। -আদ্দুরুল মুখতার ২/৬১৬।
# সফরে নামায কাযা হলে বা অন্য সময়ের কাযা নামায সফররত অবস্থায় পড়লেঃ
মাসআলাঃশরঈ মুসাফিরের সফররত অবস্থায় নামায কাযা হলে সর্বাবস্থায় কসরই পড়বে। চাই সফরেই পড়ুক অথবা সফরের পরে। আর বাড়ীতে থাকা অবস্থার কাযা নামায সফররত অবস্থায় পড়লে পূরো চার রাকাআতই পড়বে। –হিদায়া ১/১৬৭।
ড্রাইভার বা পরিবহণ কর্মচারীর নামায:
# বাস,ট্রেন ইত্যাদির ড্রাইভার এবং এমন চাকুরীজীবী যারা সর্বদা সফরে থাকে তারা যদি কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হয় এবং ১৫দিন থাকার নিয়ত না করে তবে কসর করতে থাকবে। তবে এক্ষেত্রে তার ১৫ দিন থাকার নিয়তের জন্য তার উর্ধ্বতন পর্যায়ের অনুমতি বিবেচ্য হবে। অন্যথায় তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা মালিকের নিয়ত ধর্তব্য হবে। আর যদি মালিক বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ত জানা না যায় তবে তারা কসর করতে থাকবে। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫২১(বাইরুত ), আল বাহরুর রায়েক ২/২৪৩।
# রেলগাড়ী বা পানির জাহাজে চাকুরীজীবীর নামায
মাসআলাঃযারা কোন গাড়ী বা জাহাজে চাকুরী করে এবং নিজের বসস্থান থেকে সফরের দুরুত্বে ভ্রমন করতে থাকে তারা সর্বাবস্থায় নামায কসর করবে। কেননা জাহাজে ইক্বামতের নিয়ত করলেও তা সহীহ হয় না। তবে যদি কোন জাহাজ বা নৌযান শহর বা উপশহরের কিনারাই ১৫দিন বা তদাপেক্ষা বেশী থাকার নিয়তে ভিড়ানো থাকে তবে তাতে অবস্থানকারী এর দ্বারা মুকীম গন্য হবে। এবং পূরো নামায পড়বে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া।১/১৩৯, বাদায়েউস সানায়ে ১/৯৮।
ট্রেনে নামায:
# ট্রেনে নামায পড়া জায়েয আছে চাই ট্রেন স্টেশনে দাড়িয়ে থাকুক অথবা চলমান। এক্ষেত্রে শর্ত হল কিবলামুখী হয়ে এবং দাড়িয়ে যথা নিয়মে রুকু সিজদার মাধ্যমে নামায আদায় করবে। তবে যদি দাড়ানোর কারনে মাথায় চক্কর দেয় অথবা পড়ে যাওয়ার আশংকা হয় তবে বসে রুকু সিজদার মাধ্যমে নামায আদায় করবে। নামায রত অবস্থায় ট্রেন ঘুরে গেলে নামাযীও সাথে সাথে ঘুরে যাবে।
# আর যদি ভিড় বা অন্য কোন করনে কিবলমুখী হয়ে নামাজ পড়া না যায় অথবা কিয়াম সম্ভব না হয় অথবা যথানিয়মে সিজদা না করা যায় এবং ওয়াক্তের মধ্যে সামনে কোন স্টেশনে নেমে নামায আদায় সম্ভব না হয় তবে যে কোনভাবে নামায পড়ে নিবে। এবং পরবর্তিতে উক্ত নামায দোহরিয়ে নিবে।- রদ্দুল মুহতার ২/৪১, ১/২৩৫, আদ্দুরুল মুখতার ১/৪২৭,৪৪৫,আল-বাহরউর রায়েক ১/৪৯৩,২৪৮।
বাসে নামায
# বাস ও ট্রেনে নামাযের হুকুম একই অর্থাৎ বাসে যদি উপরে উল্লেখিত নিয়মে (কিবলামূখী হয়ে কিয়াম ও রুকু সিজদা করে) নামায পড়তে না পারে এবং বাস থামানো সম্ভব না হয় অথবা গন্তব্যস্থল পর্যন্ত পৌছাতে নামাযের ওয়াক্ত চলে যায় তবে ইশারায় যে কোন ভাবে নামায পড়ে নিবে এবং পরে দোহরিয়ে নিবে। আর যথানিয়মে নামায পড়তে পারলে উক্ত নামাযই যথেষ্ট হবে। – রদ্দুল মুহতার ২/৪১, ১/২৩৫, আদ্দুরুল মুখতার ১/৪২৭,৪৪৫,আল-বাহরউর রায়েক ১/৪৯৩,২৪৮।
# বিঃদ্রঃ দুর-দুরান্তে সফর করতে হলে সকাল সকাল বের হওয়া উচিত। যাতে দুপুরের মধ্যে গন্তব্যস্থানে পৌছা যায়। এতে নামায আদায় সহজ হয়ে যায়। আর বিকালে সফর শুরু করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসর ও মাগরিবের নামায আদায় ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়।
# তবে একান্ত যদি দুপুরের পরে সফরে বের হতে হয় তবে বাসের সফর হলে নামাযের সময় গুলোতে বাসা থামিয়ে নিচে কোন স্থানে কিয়াম ও রুকু-সিজদার দ্বারা নামায আদায় করবে। যে দেশে অন্তত ৯২শতাংশ মানুষ মুসলমান সে দেশে বাস থামিয়েই নামায পড়া উচিত। আসলে আমাদের জযবার অভাব। আমরাই মনে করি বাস থামিয়ে নামায পড়লে অন্যান্য ভাইদের সময় অপচয় হবে। অথচ এর দ্বারা যেমনিভাবে নিজের ফরজ আদায় হয় তেমনিভাবে অন্যান্য ভাইদের জন্য দাওয়াতও হয়। আর বাস্তবতা ও অধমের অভিজ্ঞতা এটাই যে, নিজের সদ্বিচ্ছা থাকলে বাস থামিয়ে নামায পড়া যায়।
# তাছাড়া বাসে নামায পড়লে সাধারনত তা সহীহ হয় না। কেননা কিয়াম, কিবলামুখী হওয়া এবং সিজদা এগুলো ঠিকভাবে আদায় করা যায় না। তাই যদি নিচে নেমে নামায আদায করা না যায় অথবা নেমে গেলে নিজের জান,মালের ক্ষতি হওয়া আশংকা থাকে তবে বাসে যে কোন ভাবে নামায পড়ে নিবে এবং পরে দোহরিয়ে নিবে।
# এক্ষেত্রে আরেকটি সংশোধনযোগ্য বিষয় হল অনেক সময় পুরুষেরা বাস থামিয়ে নামায পড়লেও মহিলারা পর্দার দোহাই দিয়ে অথবা লজ্জার কারনে নামায পড়ে না। অথচ এটা চরম অন্যায় ও গোনাহের কাজ। বরং তারা যথা নিয়মে ওযু করে মসজিদের এক কিনারায় বা অন্য কোন স্থানে বোরকা পরিহীত অবস্থায় নামায আদায় করবে।
নৌকা,জাহাজ ও ষ্টীমারে নামায:
নৌযানে নামাযের কয়েকটি সূরত হতে পারে। নিম্নে প্রত্যেকটি সূরত হুকুমসহ বর্ননা করা হল-
# নৌযানটি কিনারে বাধা থাকবে এবং তার কোন অংশ মাটির সাথে লেগে থাকবে। এমতাবস্থায় তার উপর নামায পড়া জায়েয।তবে দাড়িয়ে নামায পড়া জরুরী। বসে পড়লে তা সহীহ হবে না।
# কিনারে বাধা থাকবে তবে নৌযানের কোন অংশ মাটির সংঙ্গে লেগে থাকবে না। এমতাবস্থায় যদি তা থেকে বের হয়ে নামায পড়া সম্ভব হয় তবে বের হওয়া জরুরী। আর যদি বের হওয়া সম্ভব না হয় তবে তার উপর দাড়িয়ে নামায পড়বে।
# নৌযান নদী বা সাগরের মাঝে বাধা থাকবে। যদি তার কোন অংশ মাটির সাথে লেগে থাকে তবে এর হুকুম কিনারায় বাধা ঐ নৌকার মত যার কোন অংশ মাটিতে লেগে আছে। অর্থাৎ তার উপর দাড়িয়ে নামায পড়া জায়েয।
# নৌযান নদী বা সাগরের মাঝে বাধা থাকবে অথবা চলমান থাকবে এবং তার কোন অংশ মাটিতে লেগে থাকবে না। এমতাবস্থায় যদি নৌযান থেকে বের হেয়ে নামায পড়া সম্ভব হয় তবে বের হয়ে নামায পড়া জরুরী। আর যদি বের হওয়া বা কিনারায় ভিড়ানো সম্ভব না হয় এবং গন্তব্যস্থলে পৌছা পর্যন্ত ওয়াক্ত না থাকে তবে নৌযানের উপরেই দাড়িয়ে নামায পড়ে নিবে।
# উপরে উল্লেখিত কোন সূরতে মুসল্লীর দাড়িয়ে নামায পড়লে যদি মাথা চক্কর দেয় অথবা বাতাস কিংবা ঢেউয়ের কারনে পড়ে যাওয়ার আশংকা হয় তবে বসে নামায পড়বে।- আদ্দুরুরল মুখতার এর সাথে রদ্দুল মুহতার ২/৫৭২-৫৭৩(যাকারীয়া), আল-বাহরুর রায়েক ৪/২৮৯-২৯০(দারুল কুতুব), এমদাদুল আহকাম ১/৭১২-৭১৪।
# নৌকা বা অন্য কোন নৌযানে নামাযের মধ্যে যদি নৌকা ঘুরে যায় তবে মুসল্লীও সাথ সাথে ঘুরে যাবে। কিবলামুখী হয়ে নামায না পড়লে নামায সহীহ হবে না। পূনরায় পড়তে হবে। -আদ্দুরুল মুখতার ২/৫৭৩ (যাকারিয়া)।
# নৌকা লঞ্চ-স্টিমার কিংবা বিমানে যেভাবে মুসল্লির জন্য সহজ হয় সেভাবে সালাত আদায় করতে পারবে। তা মাকরূহ হবে না। কারণ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পানির জাহাজে সালাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন,
( صل فيها قائما إلا أن تخاف الغرق ) رواه الدار قطني والحاكم على شرط الشيخين
“তুমি তাতে দাঁড়িয়ে সালাত আদা করো, তবে যদি ডুবে যাওয়ার ভয় কর তাহলে ভিন্ন কথা”। দারা-কুতনী ও হাকিম বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী তা চয়ন করেছেন।
প্লেনে নামায:
# প্লেন জমিনের সাথে লেগে থাকলে তার উপর নামায সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয। আর উড়ন্ত প্লেনে উযরের কারনে নামায জাযেয। যদি দাড়িয়ে পড়া সম্ভব না হয় তবে বসে পড়বে। এক্ষেত্রেও কিবলামুখী হওয়া ফরজ। যদি প্লেন ঘুরে যায় তবে মুসল্লীও ঘুরে যাবে।- কিতাবুল ফিক্হ আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ ১/২০৬,আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৯০।
# দ্রুতগামী প্লেনে উঠার কারনে পূর্বোক্ত ওয়াক্ত পূনরায় দেখা দিলেঃ
মাসআলাঃকেউ মাগরিবের নামায পড়ে প্লেনে উঠল। অতঃপর প্লেন পশ্চিম দিকে এত দ্রুত বেগে ছুটল যে পূনরায় সূর্য দেখা দিল। এখন তার জন্য পূনরায় মাগরিবের নামায পড়তে হবে না। আর রোযা থেকে থাকলে তারও কোন ক্ষতি হবে না। তবে এখন থেকে দ্বিতীয় বার সূর্য ডোবা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকবে।-রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৪।
সফরে পানি না পেলে:
# কেউ সফররত অবস্থায় পানি না পেলে এবং ওয়াক্তের মধ্যে গন্তব্যস্থলে পৌছাতে না পারলে অথবা ওয়াক্তের মধ্যে পানি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন না হলে তায়াম্মুম করে নামায পড়বে। পরে ওয়াক্তের মধ্যে পানি পাওয়া গেলেও নামায দোহরাতে হবে না।- ফাতাওয়া হিন্দীয়া ১/২৮, রদ্দুল মুহতার ১/২৩৫।
# অনেক সময় ট্রেনে বা বাসে তায়াম্মুমেরে জন্য মাটি পাওয়া যায় না। তবে বাস বা ট্রেনের গায়ে এত পরিমান ধুলা বালি জমা হয়ে যায়, যা দ্বারা তায়াম্মুম করা যায়। যদি ধুলা বালি জমা হওয়ার স্থান পাক হয় তবে তা দ্বারা তায়াম্মুম করে নিবে।
# সফরে পানি ও মাটি জাতীয় জিনিস কোনটিই না পেলেঃ
মাসআলাঃঅনেক সময় ওযুর জন্য পানি এবং তায়াম্মুমের জন্য মাটি জাতীয় জিনিস কোনটিই পাওয়া যায় না। প্লেনে,বাস ও ট্রেনে প্রায়ই এমন হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় নামাযীর মত সূরত এখতিয়ার করবে। অর্থাৎ নামাযের নিয়ত ব্যতীত নামাযীর ন্যয় উঠাবসা করবে। পরে যথানিয়মে নামায কাজা করে নিবে। আর যদি ওয়াক্তের মধ্যে পানি বা মাটি জাতীয় বস্তু পেয়ে যায় তবে ওয়াক্তের মধ্যে তা পূনরায় দোহরিয়ে নিবে। -আদ্দুররুল মুখতারের সাথে রদ্দুল মুহতার ১/১৮৫.১৮৬(যাকারিয়), সুনানে তিরমিজী হা: নং ১।
# মোজার উপর মাসেহ:
মুসাফির তিন দিন তিন রাত মোজার উপর মাসেহ করতে পরে।- হিদায়া ১/৫৭
মুসাফিরের জুমআ ও ঈদের নামায:
# মুসাফিরের উপর জুমআ ও ঈদের নামায ফরজ নয়। সুযোগ হলে জুমআ পড়ে নিবে নতুবা যোহর পড়বে।-আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৫,আল মাবসূত ১/২৫৩।
# মাসআলাঃমুসাফিরের উপর জুমআ বা ঈদ ফরজ না হলেও সে জুমআ বা ঈদের ইমামতি করলে তা সহীহ হবে।–হিদায়া ১/১৫২।
সফরে কিবলা নির্নয়:
# কেউ যদি কোন স্থানে কিবলার দিক নির্নয় করতে না পারে এবং এমন কোন মানুষও না পায় যার নিকট জিজ্ঞাসা করে নিতে পারে তবে সে অন্তর দ্বারা চিন্তা করবে। যেদিকে কিবলা হওয়ার ব্যপারে প্রবল ধারনা হবে সে দিকে ফিরে নামায পড়বে। যদি সে কোন চিন্তা ফিকির ছাড়াই কোন একদিকে ফিরে নামায পড়ে তবে তার নামায সহীহ হবে না। পূনরায় পড়তে হবে। তবে পরবর্তিতে যদি জানতে পারে যে সে যেদিকে ফিরে নামায পড়েছে কেবলা সে দিকেই ছিল তাহলে তার নামায হয়ে যাবে। -রদ্দুল মুহতার ১/৪৩২,আল বাহরুর রায়েক-১/৪৯৯।
#মাসআলাঃকেউ জিজ্ঞাসা করার কোন লোক না পেয়ে চিন্তা ফিকির করে প্রবল ধারনার ভিত্তিতে কোন এক দিকে নামায পড়ল । পরবর্তিতে প্রকাশ পেল কিবলা অন্য দিকে ছিল। উক্ত নামায তাকে পূনরায় পড়তে হবে না। বরং পূর্বোক্ত নামাযই সহীহ হবে। -আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৩১।
# মাসআলাঃযদি কিবলার দিক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য কাউকে পেয়েও জিজ্ঞাসা না করে চিন্তা করে কোন একদিকে ফিরে নামায পড়ে তবে তার নামায সহীহ হবে না। তবে নামাযের পর যদি প্রকাশ পায় যে সে কিবলার দিকেই নামায পড়েছে তবে তা সহীহ হবে। -রদ্দুল মুহতার ১/৪৩২আহসানুল ফাতাওয়া ২/৩১৮-৩১৯।
মহিলাদের একাকী সফরসীমা:
#মহিলাদের জন্য তার মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ৪৮মাইল বা তদাপেক্ষা বেশী দুরুত্বের সফর করা জায়েয নয়। এর কম হলে জায়েয আছে । তবে সর্বাবস্থায় মাহরাম পুরুষের সাথে সফর করাই উত্তম। আর গাইরে মাহরামদের সাথে সফর করা মারাত্তক গোনাহ।হাদীসে মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের সফরের ব্যপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। -বুখারী শরীফ হা: নং১০৮৬,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২।
# মাহরাম হওয়া সত্তেও যদি কারো সাথে সফরের দ্বারা ফেতনার আশংকা হয় তবে তার সাথেও সফর করা জায়েয নেই। -আলা বাহরুর রায়েক ২/৩১৫।
# হায়েয অবস্থায় সফর শুরু করলে অথবা সফরের মাঝে হায়েয চলে এলেঃ
কোন মহিলা হায়েয অবস্থায় কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। অতঃপর সে পথিমধ্যে পবিত্র হয়ে গেল। এখন যদি সে ঐ স্থানেই অবস্থান করে অথবা ঐ স্থান থেকে তার গন্তব্যস্থান ৪৮মাইলের কম হয় তবে সে মুসাফির গন্য হবে না। পূরো নামায পড়বে। আর যদি উক্ত স্থান থেকে গন্তব্যস্থান ৪৮মাইল বা তার বেশী হয় তবে সে কসর করবে।-রদ্দুল মুহতার ২/১৩৫,আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৮৭,৮৮।
# কোন মহিলা পবিত্র অবস্থায় কমপক্ষে ৪৮মাইল সফরের নিয়তে বের হল। পথিমধ্যে তার হায়েয এলো। এর দ্বারা সে মুসাফিরই থাকবে এবং কসর করবে। -আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩৫,হাশিয়ায়ে ত্বাহতাবী ১/৩৩৭।
রমযানে সফর:
# শরঈ সফররত অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে মুসাফিরের জন্য রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে। সে পরে কাযা করে নিবে। -হিদায়া ১/২২১
# মুসাফিরের জন্য সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে যদি রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা ভাঙ্গা জায়েয নয়। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহ হবে। তবে এক্ষেত্রে তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।
# কেউ যদি রোযা রাখার পর সফর শুরু করে তবে তার জন্যও রোযা ভাঙ্গা জায়েয নেই। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহগার হবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
# উল্লেখিত মাসআলা দুটি খুব ভালভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। অনেকেই মনে করে সফররত অবস্থায় মুতলাক্বভাবে (সর্ববস্থায়)রোযা ভেঙ্গে দেওয়া যায়। বরং শরঈ সফররত অবস্থায় যদি সুবহে সাদিক এসে যায় তবে সেই কেবল রোযা না রাখতে পারে । তবে যদি রোযা রাখার পর সফর করে অথবা সফর শুরু করার পর রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয হবে না।
# মুসাফির যদি সূর্য উঠার আগে মুকীম হয়ে যায় আর তার থেকে রোযা ভঙ্গ হওয়ার কোন কারন প্রকাশ না পায় তবে তার জন্য রোযার নিয়ত করা জরুরী । অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।তবে রোযা না রাখলে তার জন্য শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
দুই নামায একত্রে পড়ার বিধান:
সফরে মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করা।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্রুত সফর করতেন, তখন মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। ইবরাহীম ইবনু তাহমান (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সফরে দ্রুত চলার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহ্র ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) একত্রে আদায় করতেন আর মাগরিব ইশা একত্রে আদায় করতেন।
আর হুসাইন (রহঃ) আনাস ইবনু মলিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরকালে মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করতেন এবং আলী ইবনু মুবারকও হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় হুসাইন (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একত্রে আদায় করেছেন।
সহীহ বুখারী (ইফাঃ) ১০৪২।
হাসসান ওয়াসেতী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে পড়ার আগে সফর শুরু করলে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত (পূর্ব পর্যন্ত) যুহ্র বিলম্বিত করতেন এবং উভয় সালাত (নামায/নামাজ) একত্রে আদায় করতেন। আর (সফর শুরু করার আগেই) সূর্য ঢলে গেলে যুহর আদায় করে নিতেন। এরপর (সফরের উদ্দেশ্যে) আরোহণ করতেন।
সহীহ বুখারী (ইফাঃ ১০৪৫।
এক্ষেত্রে অনেক আলেম বলেছেন এটা মূলত এক ওয়াক্তে দুই নামাজ পড়া বলে না। বরং দুই ওয়াক্তের সীমায় বা দুই ওয়াক্তের মাঝে কিছু বিলম্ব করে নামায পড়া। এক্ষেত্রে ইকামতও আলাদা দিতে হবে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে,
“মহানবী (সা.) মদীনাতে কোনরূপ ভয় কিংবা বৃষ্টির আশংকা ছাড়াই যোহর-আসর এবং মাগরিব ও এশার নামায একত্রে আদায় করতেন।”
হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) নিকট জিজ্ঞাসা করা হয়: এক্ষেত্রে রাসূলের (সা.) উদ্দেশ্য কি ছিল?
জবাবে তিনি বলেন: রাসূল (সা.) চেয়েছিলেন যে, কোন মুসলমান যেন নামায আদায়ের ক্ষেত্রে কষ্টের শিকার না হয়।
সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড পৃ. ১৫২
সফরের আগের সফরের সময়ের এবং সফরের পরের কিছু করণীয় বা আদব:
১. পরামর্শ চাওয়া এবং ইস্তেখারা করা:
কোন ব্যাক্তির অন্তরে সফরের বাসনা জাগ্রত হওয়া মাত্রই তার উচিত এমন একজন লোকের নিকট পরামর্শ চাওয়া যে তার হিতাকাঙ্খী এবং তার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত। পরামর্শের পর যদি মনে করে এর মাঝে কল্যাণ রয়েছে, তখন সে ইস্তেখারা করবে। দুই রাকাত সালাত আদায় করবে এবং ইস্তেখারার দুআ পড়বে; অতঃপর যার প্রতি তার মন ধাবিত হয়, সে অনুপাতে আমল করবে।
২. পিতা-মাতার অনুমতি নিয়ে সফরে বের হওয়া :
পিতা-মাতা জীবিত থাকলে তাদের অনুমতি নিয়ে সফরে যাওয়া উত্তম।
৩. মহিলাদের মুহরিম ছাড়া সফর না করা:
মহিলাদের জন্য মুহরিম ছাড়া সফর করা বৈধ নয়। মহিলা হ’লে তার অভিভাবকের অনুমতি এবং স্বামী বা মাহরাম (যার সাথে বিবাহ হারাম, যেমন-পিতা, ভাই, চাচা, ছেলে ) সহ সফরে বের হওয়া। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,
لاَ تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلاَّ مَعَ ذِيْ مَحْرَمٍ، وَلاَ يَدْخُلُ عَلَيْهَا رَجُلٌ إِلاَّ وَمَعَهَا مَحْرَمٌ. فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ أُرِيْدُ أَنْ أَخْرُجَ فِيْ جَيْشِ كَذَا وَكَذَا، وَامْرَأَتِيْ تُرِيْدُ الْحَجَّ. فَقَالَ اخْرُجْ مَعَهَا-
‘মহিলারা মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না। মহিলার মাহরাম ব্যতীত কোন পুরুষ তার নিকট গমন করবে না। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক অমুক সেনাদলের সাথে আমি জিহাদ করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী একাকিনী হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে যাও’। মহিলাদের জন্য হজ্জের সফরেও মাহরাম থাকা যরূরী।
(মুসলিম-২২৯১)
৪. পরিবার পরিজন থেকে বিদায় নেয়া:
# পরিবার পরিজন থেকে বিদায় নেয়া: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবীরা এরকমই করতেন।
# অসিয়তনামা লিখে যাবেন। ঋণ আছে কিনা তাও লিখে দিয়ে যাবেন। কারণ আপনি ফিরে আসতে পারবেন কিনা তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
# পরিবারের লোকদেরকে তাকওয়া অর্জনের এবং ইসলামী জীবন যাপন করার অসিয়ত করে যাবেন।
৫. সফরের জন্য সাথী যোগাড় করা:
# ইবনে উমার (রা:) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যদি লোকেরা জানত যে, একাকী সফরে কী ক্ষতি রয়েছে; যা আমি জানি, তাহলে কোন সওয়ারী একাকী সফর করত না।” (বুখারী)৩
# আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর) হতে বর্ননা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “একজন (সফরকারী) আরোহী একটি শয়তান এবং দু’জন আরোহী দু’টি শয়তান। আর তিনজন আরোহী একটি কাফেলা।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ বিশুদ্ধসূত্র)
# আবূ সাঈদ ও আবূ হুরাইরা (রায্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যখন তিন ব্যক্তি সফরে বের হবে, তখন তারা যেন তাদের একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়।” (আবূ দাউদ হাসান সূত্রে)
# ইবনে আব্বাস (রা:) কর্তৃক বর্নিত, নবী (সা:) বলেছেন, “সর্বোত্তম সঙ্গী হল চারজন, সর্বোত্তম ছোট সেনাবাহিনী হল চারশ’ জন, সর্বোত্তম বড় সেনাবহিনী হল চার হাজার জন। আর বারো হাজার সৈন্য স্বল্পতার কারনে কখনো পরাজিত হবে না।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)
# রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একা সফর করা হতে নিষেধ করেন, তিনি বলেন-
الراكب شيطان والراكبان شيطانان والثلاثة ركب
একজন আরোহী শয়তান আর দুইজন আরোহী দুইটি শয়তান। তবে তিন জন আরোহী হল একটি জামাত। (তিরমিযী-১৫৯৮)
৬. জামাতের মধ্য হতে একজনকে আমীর নিযুক্ত করবে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন এক সাথে তিন জন সফরে বের হবে তখন একজনকে আমীর নিযুক্ত করবে। (আবু দাউদ -২২৪১)
৭. সফরের তথ্যাদি ও মাসয়ালা পূর্বেই জেনে নেয়া:
# যেমন- কছর সালাতের বিধান, একত্রে সালাত আদায়ের বিধান, তায়াম্মুম ও মোজার উপর মাছেহ করার বিধান ইত্যাদি।
# যারা হজ্জ বা উমরা করতে যাবেন তারা আগে থেকেই মাস্আলাগুলো জেনে নেবেন।
৮. সফর বৃহস্পতিবারে আরম্ভ করা:
যদি কোন প্রকার কষ্ট না হয় মানুষ তার সফর বৃহস্পতিবারে আরম্ভ করতে চেষ্টা করবে। কারণ, রাসুল (সাঃ) অধকিাংশ সময় বৃহস্পতিবারে সফর করতেন।
৯. তওবা দোয়া ও জিকির:
# নতুনভাবে তওবা করে নেবে। কারণ, সফরে কোন সময় কি অঘটন ঘটে তা তো বলা যায় না।
# আল্লাহর যিকির দ্বারা সফর আরম্ভ করবে।
# আরোহণের সময়, বিশেষ করে সফরের শুরুতে হাদীসে বর্ণিত দু’আ সমুহ পড়ব।
# ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) যখন সফরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর উটকে প্রস্তুত করতেন তখন তিনবার আল্লাহু আকবর বলতেন।
১০. সফরে ও বিরতিতে/বিশ্রামে করণীয়:
৭। আবূ হুরাইরা (রাJ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,
# “যখন তোমরা সবুজ-শ্যামল ঘাসে ভরা যমীনে সফর করবে, তখন উটকে তার যমীনের অংশ দাও (অর্থাৎ, কিছুক্ষন চরতে দাও)।
# আর যখন তোমরা ঘাস-পানিবিহীন যমীনে সফর করবে, তখন তার উপর চড়ে দ্রুত চলো এবং তার শক্তি শেষ হওয়ার পূর্বেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাও।
# আর যখন তোমরা রাতে বিশ্রামের জন্য কোন স্থানে অবতরন করবে, তখন আম রাস্তা থেকে দূরে থাকো। কারন, তা রাতে (হিংস্র) জন্তুদের রাস্তা এবং (বিষাক্ত) পোকামাকড়ের আশ্রয় স্থল।”
(মুসলিম)
১১. গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা:
# সফরে উচিৎ হল গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা।
# সৎ কাজের উৎসাহ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা।
# চরিত্র হেফাযতে রাখা।
# অন্যকে কষ্ট না দেয়া,
# কারো ফসল গাছ নষ্ট না করা।
১২. সঙ্গী ও দুর্বলকে সাহায্য করা:
পথের সঙ্গী ও দুর্বলকে যথাসাধ্য সহায়তা করা। পারলে টাকা পয়সা দেয়া।
১৩. উঁচু স্থানে আরোহনের ক্ষেত্রে:
# যখন কোন উঁচু স্থানে আরোহন করবে তখন সুন্নাত হল আল্লাহ আকবর বলবে। আর যখন নিচের দিকে অবতরণ করবে তখন সুবহানাল্লাহ বলবে।
# যাবের (রা.) বলেন, আমরা যখন উপর দিকে আরোহন করতাম আল্লাহু আকবর (الله أكبر) বলতাম আর যখন নিচে অবতরণ করতাম সুবহানাল্লাহ (سبحان الله) বলতাম।(বুখারী-২৭৭১)
# যখন কোন ঘরে অবতরণ করবে তখন সুন্নাত হল খাওলা বিনতে হাকিমের হাদীসে উল্লেখিত দুআটি পাঠ করবে –
# নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন স্থানে অবতরণ করার পর এ দুআ পড়বে - أعوبذ بكلمات الله التامات من شر ما خلق
“আ‘উযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মা-তি মিন শাররি মা খালাক”
কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। যতক্ষণ সে ঐ স্থান ত্যাগ না করে। (বুখারীঃ ৪৮৮১)
১৪. অত্যাচারীদের সমাধি, ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থান:
# ইবনে উমার (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) সামূদ জাতির বাসস্থান হিজর (নামক) স্থানে পৌঁছে নিজ সাহাবীদেরকে বললেন, “তোমরা এ সকল শাস্তিপ্রাপ্তদের স্থানে প্রবেশ করলে কাঁদতে কাঁদতে (প্রবেশ) কর। যদি না কাঁদ, তাহলে তাদের স্থানে প্রবেশ করো না। যেন তাদের মত তোমাদের উপরেও শাস্তি না পৌঁছে যায়।” (সহীহুল বুখারী ৪৩৩, ৩৩৭৮, মুসলিম ২৯৮০)
# অন্য এক বর্ননায় আছে, ইবনে উমার (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) হিজর অতিক্রম করার সময় বললেন, “তোমরা সেই লোকদের বাসস্থানে প্রবেশ করো না, যারা নিজেদের আত্মার প্রতি অত্যাচার করেছে। যেন তাদের মতো তোমাদের উপরও আযাব না পৌঁছে। কিন্তু কান্নারত অবস্থায় প্রবেশ করতে পার।” অত:পর রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজ মাথা ঢেকে নিলেন এবং দ্রুত গতিতে উপত্যকা পার হয়ে গেলেন।
১৫. বেশি বেশি দোআ করা:
মুসাফিরের দুআ আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
ثلاث دعوات مستجابات لا شك فيهن، دعوة المظلوم ودعوة الوالد ودعوة المسافر
তিনটি দুআ আল্লাহর নিকট কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। নির্যাতিত ব্যাক্তির দুআ, মাতা পিতার দুআ, মুসাফিরের দুআ। (বুখারী-১৮২৮)
১৬. প্রয়োজন শেষে দ্রুত বাড়ি ফেরা:
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজন শেষে পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে আসবে।
রাসুল (সাঃ) বলেন, সফর আযাবের একটি অংশ সফর একজন মানুষকে ঠিকমত খেতে দেয়না, পান করতে দেয়না এবং ঘুমাতে দেয়না। তাই যখন প্রয়োজন পুরণ হয়ে যাবে সে যেন তার পরিবার পরিজনের নিকট তাড়াতাড়ি ফির আসে। (বুখারী-১৬৭৭)
১৭. পরিবারের লোকজনের জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে আসা:
(২২) পরিবারের লোকজনের জন্য হাদিয়া উপঢৌকন নিয়ে আসা এবং ঘরে ফিরে তাদের সাথে কোমল ব্যবহার করা।
১৮. বাড়িতে দিনের বেলায় ফিরে আসা:
# সফর শেষে বাড়িতে দিনের বেলায় আসা উত্তম এবং অপ্রয়োজনে রাতের বেলায় ফিরা অনুত্তম
জাবের (রা:) হতে বর্নিত, রসূল (সা:) বলেন, “যখন তোমাদের কারের বিদেশের অবস্থান দীর্ঘ হবে, তখন সে যেন অবশ্যই রাত্রিকালে নিজ গৃহে না ফিরে।” (বুখারী ও মুসলিম)২৯
# অন্য এক বর্ননায় আছে, আল্লাহর রসূল (সা:) নিষেধ করেছেন যে, (মুসাফির) পুরুষ যেন স্ত্রীর কাছে রাতের বেলায় প্রবেশ না করে। তবে পূর্বেই যদি আগমন বার্তা জানিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে রাতের বেলায় বাড়ি গেলে কোন ক্ষতি নেই।)
# আনাস (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:) সফর শেষে রাত্রিকালে স্বীয় বাড়ি ফিরতেন না। তিনি সকালে কিম্বা বিকালে বাড়ি আগমন করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)৩০
১৯. এলাকার ফিরে করণীয়:
# সফর হতে প্রত্যার্বতন করা মাত্রই মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত সালাত আদায় করবে। কাব ইবনে মালেক (রা.) ঘটনা সম্বলতি হাদীসে বর্ণিত :
# তিনি বলেন যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর হতে ফিরে আসতেন প্রথমে তিনি মসজিদি প্রবেশ করতেন। এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন। (বুখারী-৪০৬৬)
# সফর থেকে এসে এলাকার লোকজনের সাথে মু‘আনাকা (কোলাকুলি) ও মুসাফা করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে তাঁর সাথীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতেন। (বুখারী)
link:
https://www.hadithbd.com/show.php?pageNum_RsHadith=0&BookID=2&SectionID=103
https://www.hadithbd.com/show.php?pageNum_RsHadith=0&BookID=1&SectionID=21
https://habibur.com/kitab/hadith/book.bukhari/part.21/
https://www.ntvbd.com/religion-and-life/77013
http://www.ihadis.com:8080/books/bukhari/chapter/18/section/223
http://www.ihadis.com:8080/books/muslim/chapter/6
http://muftihusain.com/article
https://quranalo.wordpress.com
https://www.jagonews24.com/religion/article/435939
http://at-tahreek.com/site/show/1904
http://imam.gov.bd/node/4823
https://www.quraneralo.com/manners-of-travelling/
https://www.quraneralo.com/travel-etiquttes/
Comments
Post a Comment