Skip to main content

ঈদুল ফিতরে করণীয়


১. ঈদের নামাযের আগেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা:
রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সাদাকাতুল ফিতর ঈদের নামাযের পূর্বে আদায় করবে। তা কবুল করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পরে আদায় করবে।


তা সাধারণ সাদাকাহ হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ; ইবনে মাজাহ)

২. ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা:
আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ঈদের নামাযে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

৩. মেসওয়াক করা, সুগন্ধি ও তেল ব্যবহার করা:
ইমাম মালেক রহ. বলেন: ‘আমি ওলামাদের কাছ থেকে শুনেছি তারা প্রত্যেক ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার ও সাজ-সজ্জাকে মুস্তাহাব বলেছেন।’ (আল-মুগনি: ইবনে কুদামাহ)

৪. সাধ্যমত নতুন বা পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা:
ইবনে উমার রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত যে তিনি দু ঈদের দিনে সুন্দরতম পোশাক পরিধান করতেন। [ বায়হাকী : ১৯০১ , যাদুল মায়াদ]

৫. আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশিদের খোঁজখবর নেয়া শুভেচ্ছা জানানো:
আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে তার ভাইকে তিন দিনের বেশি সময় বয়কট করবে বা সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে। তাদের অবস্থা এমন যে দেখা সাক্ষাৎ হলে একজন অন্য জনকে এড়িয়ে চলে। এ দুজনের মাঝে ঐ ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে প্রথম সালাম দেয়।’ [ মুসলিম : ৪৬৪৩ ]

৬. ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া:
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিত্‌রের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। (বুখারী: ৯৫৩, ihadis) অন্য একটি হাদীসে আছে তিনি বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেতেন।

বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানীর গোশত খেতেন। [ আহমদ : ১৪২২ ]

৭. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া:
ঈদের নামায আদায়ের জন্য তাড়াতাড়ি ঈদগাহে যাওয়া ও পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। ইরওয়া উল গালিল : ২/১০৪ ]

৮. বালক-বালিকা ও শিশুদের ঈদগাহে যেতে উৎসাহিত করা:
ঈদের মাঠে বালক-বালিকা, শিশু, মুকিম, মুসাফির সকলকে ঈদগাহে গমন করার জন্য গুরুত্ব সহকারে উৎসাহিত করা সুন্নত ।

৯. এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা:
ইবনু সুবাইর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এক রাস্তা দিয়ে ঈদের নামাযে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। যাতে উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (সহীহ বুখারী, ৯৮৬: ihadis,যাদুল-মায়াদ)

১০. তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যাওয়া:
কুরআনে এসেছে, তোমরা (রমযানের) রোজা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা কর। [সূরা আল-বাকারা: ১৮৫]

তাকবীর:‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ই-লাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’

১১. ঈদগাহে জামায়াতে ঈদের সালাত আদায় করা, নীরব থেকে খুতবা শ্রবণ করা ও দু’আয় অংশগ্রহণ করা।

আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হতেন...।’[বুখারী : ৯০৩]
আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘ঈদুল আযহা ও ‘ঈদুল ফিত্‌রের দিন সালাত আদায় করতেন। আর সালাতের পরে খুত্‌বা দিতেন। (বুখারী: ৯৫৭, ihadis)

১২. ঈদের দিনে পারস্পরিক ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করা:
শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বিনিময়ের মাধ্যমে সকলের মাঝে সুসম্পর্ক ও ভালোবাসা গড়ে উঠে। রাসূলে করীম (সা.)-এর সময় সাহাবায়ে কিরাম ঈদের দিন যখন পরস্পর মিলিত হলে একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা’ অর্থ আল্লাহতায়ালা আমাদের ও আপনার ভাল কাজগুলো কবুল করুন।
(ফতহুল বারী,  বুখারি : ১/১৩০, ইবনে মাজাহ : ৯২, আল মুজামুল কাবির লিত তাবারি : ১৭৫৮৯] তবে ঈদ মুবারক বলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।

সম্ভব হলে পরস্পরকে দাওয়াত দেয়া এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা।

১৩. পরিবার স্বজনকে সময় দেয়া:
নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে সময় অতিবাহিত করা এবং উত্তম উপদেশ দেয়া। যা পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।

১৪. সীমা লঙ্ঘন না করা:
হালাল বিনোদন ও খেলাধুলার বাইরে অর্থহীন কাজ, আড্ডা, ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা, ঘোরাফেরা, অশ্লীল নাচগানের আসর ও টিভির অনুষ্ঠান দেখে সময় ব্যয় ও গুনাহ কামাই থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবার পরিজনকে বিরত রাখা। 

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট আসলেন। এ সময় আমার কাছে আনসার সম্প্রদায়ের দু’টি বালিকা গান গাচ্ছিল। আনসারগণ বু‘আস যুদ্ধের সময় এ গানটি গেয়েছিল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারা অবশ্য (পেশাগত) গায়িকা ছিল না। আবূ বাক্‌র (রাঃ) এসব দেখে অবাক হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ বাক্‌র! প্রত্যেক জাতির জন্য উৎসবের ব্যবস্থা আছে। আর এটা হচ্ছে আমাদের উৎসবের দিন। (সহীহ মুসলিম ই.ফা. ১৯৩১, ই.সে. ১৯৩৮)

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কয়েকজন হাবশী এসে ঈদের দিনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুখে খেলাধূলা করতে লাগল। তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাঁধের উপর দিয়ে তাদের খেলা দেখতে লাগলাম। (নাসায়ী ১৫৯৪)
রসূলুল্লাহ সা. বলেন তোমরা অল্পবয়স্কা বালিকাদের শখের মূল্যায়ন কর। অল্পবয়স্কা বালিকারা সাধারণত অনেকক্ষণ আমোদ-ফূর্তিতে মেতে থাকতে চায়। (সহীহ মুসলিম ই.ফা. ১৯৩৩, ই.সে. ১৯৪০)

১৫. শুকরিয়া আদায় করা:
ঈদ আল্লাহ পাকের নিয়ামত। নিয়ামতের দাবি হলো, এর শুকরিয়া আদায় করা। নিয়ামত পেয়ে অবাধ্য হওয়া বেঈমানির শামিল। এক মাস আল্লাহর বিধান মেনে চলে পুরস্কার প্রদান দিবসে তাঁর অবাধ্যতা করার চেয়ে নিকৃষ্ট কাজ আর কী হতে পারে?

এক আরবি কবি বলেছেন-
“ লাইসাল ঈদু লিমান লাবিসাল জাদীদ 
বাল ঈদু লিমান খাফাল ওয়া’ইদ”

শুধু নতুন কাপড় পড়ার নাম ঈদ নয়
বরং ঈদ হল আল্লাহর আজাবের ভয় (তাকওয়া) অর্জন

*ঈদের দিনে কবর যিয়ারত করা যেতে পারে কিন্তু শুধুমাত্র ঈদের দিনকেই কবর যিয়ারতের দিন নির্ধারিত করা বা প্রথা বানিয়ে নেয়া শরীয়ত সম্মত নয়।

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকার কোথায় কি পাওয়া যায়?

কোন শাক-সবজি ও ফলের কী ভিটামিন?

গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার

কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা