কুরআনে কুরবানির বিধান:
১. নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি।
অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন।
যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ। - সূরা কাওসার ১-৩
২."আল্লাহ তায়ালার কাছে কখনো (কোরবানির) গোশত ও রক্ত পৌছায় না । বরং তার কাছে তোমাদের তাকওয়াটুকুই (আল্লাহভীতি) পৌছায়...। -সূরা আল-হাজ্জ: ৩৭
৩. অতঃপর সে (ইসমাঈল) যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।
সূরা সাফফাত ১০২
সূরা সাফফাত ১০২
৪. যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম,তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। (সূরা সাফফাত ১০৩-১০৬)
৫. আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু।
আমি তার এ বিষয়টি পরবর্তীদের জন্য ঐতিহ্য হিসেবে রেখে দিয়েছি , (সূরা সাফফাত ১০৭-১০৮)
৬. আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর বিধান দিয়েছি; যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণসরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাং তোমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ কর। (সূরা হাজ্জ ৩৪-৩৫)
৭. যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। [সূরা কাহফ:১১০]।
৮. ‘‘স্মরণ কর, তার কারূনের সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, (দর্পময়) আনন্দ করো না। অবশ্যই আল্লাহ (দর্পময়) আনন্দকারীদেরকে পছন্দ করেন না।’’ (সূরা কাসাস ৭৬ আয়াত)
কুরবানী এবং ঈদের আনন্দ হোক লোক দেখানোর প্রবণতা দর্প ও অহঙ্কার মুক্ত।
হাদীসের আলোকে কুরবানী:
কুরবানীর আগের করণীয়:
‘‘যখন তোমরা যুলহাজ্জ মাসের চাঁদ দেখবে এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন কুরবানী না করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ (কাটা) হতে বিরত থাকে।’’ অন্য এক বর্ণনায় বলেন, ‘‘সে যেন তার (মরা বা ফাটা) চর্মাদির কিছুও স্পর্শ না করে।’’ - মুসলিম
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সা) বলেছেনঃ যখন তোমরা যিলহাজ্জ মাসের (নতুন চাঁদ দেখতে পাও) আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন তার চুল না ছাটে ও নখ না কাটে। - সহিহ মুসলিম ৫০১৩ (ই.ফা. ৪৯৫৭, ই.সে. ৪৯৬৩)
তাকবীরে তাশরীক:
আরাফার (৯ম যুলহাজ্জ) দিনের ফজর থেকে তাশরীকের শেষ দিনের (১৩ই যুল হাজ্জের) আসর পর্যন্ত পঠনীয় তাকবীর নিম্নরূপঃ
اَللهُ أَكْبَر، اللهُ أَكْبَر، لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَر، اَللهُ أَكْبَر، وَللهِ الْحَمْد
‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ। - ইরওয়াউল গালীল ৩/১২৫
ঈদের দিনের করণীয়:
বারা'আ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে খুত্বা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ আমাদের আজকের এ দিনে আমরা যে কাজ প্রথম শুরু করব, তা হল সালাত আদায় করা। অতঃপর ফিরে আসব এবং কুরবাণী করব। তাই যে এ রকম করে সে আমাদের রীতি সঠিকভাবে মান্য করল। সহিহ বুখারী ৯৫১
ঈদের দিন রোযা না রাখা:
আবূ উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে ঈদের দিন উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুতবাহ্র আগে সলাত পড়েন, অতঃপর বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এ দু’ দিন সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন। কেননা ঈদুল ফিতরের দিন হচ্ছে তোমাদের সিয়াম ভঙ্গের দিন এবং ঈদুল আযহার দিন তোমরা তোমাদের কুরবানির গোশত খাবে।
সহীহুল বুখারী ১৯৯০, ৫৫৭৩, মুসলিম ১১৩৭, তিরমিযী ৭৭১, আবূ দাউদ ২৪১৬, আহমাদ ২৮৪, মুয়াত্তা মালেক ৪৩১, বায়হাকী ৫/১১৭, ইরওয়াহ ৩/১২৭-১২৮, সহীহ আবী দাউদ ২০৮৭, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
সালাতের পরে খুতবা:
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল আযহা ও ‘ঈদুল ফিত্রের দিন সালাত আদায় করতেন। আর সালাতের পরে খুত্বা দিতেন। সহিহ বুখারী ৯৫৭
কুরবানী না করলে:
‘‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানী করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।’’- মুসনাদ আহমাদ ২/৩২১, ইবনে মাজাহ ২/১০৪৪, হাকেম ২/৩৮৯
কুরবানীর পশুর প্রকার:
নির্ধারিত শ্রেণীর পশু চারটি; উঁট, গরু, ভেঁড়া ও ছাগল। অধিকাংশ উলামাদের মতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কুরবানী হল উঁট, অতঃপর গরু, তারপর মেষ (ভেঁড়া), তারপর ছাগল। - আযওয়াউল বায়ান ৫/৬৩৪
কুরবানীর পশুর বয়স:
বয়সের দিক দিয়ে উঁটের পাঁচ বছর, গরুর দুই বছর এবং মেষ ও ছাগলের এক বছর হওয়া জরুরী। অবশ্য অসুবিধার ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়সী মেষ কুরবানী করা যায়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘‘দাঁতালো ছাড়া যবেহ করো না। তবে তা দুর্লভ হলে ছয় মাসের মেষ যবেহ কর।’’ - মুসলিম ১৯৬৩
কুরবানীর অযোগ্য পশু:
১. কানা: যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, । তবে শুধু একচোখের আংশিক কানা বা ছানিপড়া বা সাদা হয়ে গেলে চলবে। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
২. খোঁড়া: যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭
৩. রোগা: এমন স্পষ্ট রোগা, শুকনো বা দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
৪. দাঁতহীন: যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮
৫. শিং ভাঙ্গা: যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭
৬. কান বা লেজ কাটা:
যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি ঠিক থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮
* গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। (কাযীখান , বাদায়েউস সানায়ে )
পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে:
কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয নয়, তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর বদলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে, হারিয়ে গেলে বা মরে গেলে:
কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯)
অন্য মতে: অবহেলাবশত কোনো কারণে মারা গেলে বা মারা যাওয়ার হারিয়ে যাওয়ার পেছনে উদাসীনতা থাকলে আরেকটা কুরবানি করা আগের মতই ওয়াজিব। আর অবহেলা না থাকলে নতুন কুরবানি ওয়াজিব নয়। কুরবানিদাতা গরিব হোক বা ধনী হোক।
ইবনে কুদামা (রহঃ) ‘আল-মুগনি’ গ্রন্থে (৯/৩৫৩), মিরদাওয়ি এর ‘আল-ইনসাফ’ (৪/৭১)]
নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে গরিব হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। (সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭)
পরিবারের কুরবানী:
উলামাদের মতে, একটি পরিবারের তরফ থেকে এক বা দুই ভাগ গরু কুরবানী দেওয়ার চাইতে ১টি ছাগল বা ভেঁড়া দেওয়াটাই অধিক উত্তম। - ফাতাওয়া শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ৬/১৪৯
কুরবানীতে শরীক:
উঁট অথবা গরুতে সাত ব্যক্তি কুরবানীর জন্য শরীক হতে পারে। কিন্তু ভেড়া বা ছাগলে শরীক বৈধ নয়। তবে একটি পরিবারের তরফ থেকে মাত্র একটি মেষ বা ছাগল যথেষ্ট হবে। তাতে সেই পরিবারের লোক-সংখ্যা যতই হোক না কেন। - ফাতাওয়া শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ৬/১৪৯, সহীহ মুসলিম, মুয়াত্তা মালেক, কাযীখান, বাদায়েউস সানায়ে
জাবির (রা:) বলেন: আমরা হুদাবিয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়েছি।’ (ইবনে মাজাহ)।
কুরবানির যন্ত্র:
ধারালো ধাতব ছুড়ি, ধারালো পাথর, বাঁশের চটা দিয়ে যবেহ বৈধ। কিন্তু নখ, শিং, হাড় দিয়ে যবেহ মাকরুহ।
রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আগামীকাল শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করবো। অথচ আমাদের সঙ্গে কোন ছুরি নেই। তিনি বললেন, তাড়াতাড়ি কিংবা ভালভাবে দেখে নিখঁতভাবে যাবাহ করবে। যা রক্ত প্রবাহিত করে, যার উপর আল্লাহ্র নাম নেয়া হয় তা (দিয়ে যাবাহকৃত জন্তু) খাও। তবে তা যেন দাঁত ও নখ না হয়। আমি তোমাদের কাছে এর কারণ বর্ণনা করেছি। কেননা দাঁত হলো হাড় বিশেষ, আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি। রাবী বলেন, আমরা গনীমাতের কিছু উট ও বকরী পেলাম। সেখান থেকে একটি উট ছুটে গেলে এক লোক তীর মেরে সেটাকে আটকিয়ে ফেললো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এসব উটের মধ্যেও বন্য প্রাণীর মতো আচরণ রয়েছে। অতএব এগুলোর মাঝে কোন একটি যদি নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে যায় তবে তার সঙ্গে এরূপ ব্যবহারই করবে। (ই.ফা. ৪৯৩২, ই.সে. ৪৯৩৬)
রাফি ‘ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আগামীকাল শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করবো। অথচ আমাদের সঙ্গে কোন ছুরি নেই। আর (ধারালো) বাঁশের খোলস দ্বারা কি যাবাহ করবো? রাবী ইসমা’ঈল পুরো ঘটনাসহ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তিনি [”রাফি (রাঃ)] আরও বলেন, উক্ত উটগুলোর মধ্য হতে একটি উট ছুটে গেলে আমরা তীর ছুঁড়ে সেটাকে পাকড়াও করি। (ই.ফা. ৪৯৩৪, ই.সে. ৪৯৩৮)
যবেহ করার সময় করণীয়:
১। পশুর প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করা: সেইরূপ ব্যবস্থা নিয়ে যবেহ করা, যাতে পশুর অধিক কষ্ট না হয় এবং সহজেই এবং দ্রুত সে প্রাণত্যাগ করতে পারে। যবেহ যেন খুব তীক্ষ্ম ধারালো অস্ত্র দ্বারা হয় এবং তা যেন খুবই শীঘ্রতা ও শক্তির সাথে যবেহস্থলে গলায় চালানো হয়।
২.পশুকে প্রস্তুত করা: কুরবানী যদি উঁট হয়, (অথবা এমন কোন পশু হয় নিয়ণ্ত্রণ করা সম্ভব নয়), তাহলে তাকে বাম পা বাঁধা অবস্থায় দাঁড় করিয়ে নহর করা হবে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘‘সুতরাং দন্ডায়মান অবস্থায় ওদের যবেহকালে তোমরা আল্লাহর নাম নাও।’’ - সুরা আল হাজ্জ ৩৬
যদি উঁট ছাড়া অন্য পশু হয় তাহলে তা বামকাতে কেবলামুখে শয়ন করাতে হবে অন্যমুখে শুইয়েও যবেহ করা সিদ্ধ হবে। কেবলামুখ করে শুইয়ে যবেহ করা ওয়াজেব হওয়ার ব্যাপারে কোন শুদ্ধ প্রমাণ নেই
৩.কুরবানী নিজের হাতে করা: অপরকে দায়িত্ব না দিয়ে নিজের কুরবানী নিজের হাতে যবেহ করা। যেহেতু আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বহস্তে নিজ কুরবানী যবেহ করেছেন। এবং যেহেতু কুরবানী নৈকট্যদানকারী এক ইবাদত, তাই এই নৈকট্য লাভের কাজে অপরের সাহায্য না নিয়ে নিজস্ব কর্মবলে লাভ করা উত্তম। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন, ‘আবু মূসা (রাঃ) তাঁর কন্যাদেরকে আদেশ করেছিলেন যে, তারা যেন নিজের কুরবানী নিজের হাতে যবেহ করে।’
৪. যবেহকালে আল্লাহর নাম নেওয়া: (‘বিসমিল্লাহ’ বলা) ওয়াজেব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘যদি তোমরা তাঁর নিদর্শনসমূহের বিশ্বাসী হও তবে যাতে (যে পশুর যবেহ করার সময়) আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা আহার কর।’’ - সুরা আনআম ১১৮
‘‘এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা হতে তোমরা আহার করো না; উহা অবশ্যই পাপ।’’
- সুরা আনআম ১২১
৫। রক্ত প্রবাহিত হওয়া: আর তা দুই শাহরগ (কন্ঠনালীর দুই পাশে দু’টি মোটা আকারের শিরা) কাটলে অধিকরূপে সম্ভব হয়।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যা রক্ত বহায়, যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তা ভক্ষণ কর। তবে যেন (যবেহ করার অস্ত্র) দাঁত বা নখ না হয়।’’
সুতরাং রক্ত প্রবাহিত ও শুদ্ধ যবেহ হওয়ার জন্য চারটি অঙ্গ কাটা জরুরী; শক্ষাসনালী, খাদ্যনালী এবং পাশর্ক্ষস্থ দুই মোটা শিরা।
৬। প্রাণ ত্যাগ করার পূর্বে কাটাছেড়া না করা : পশুর অন্য কোন অঙ্গ কেটে কষ্ট দেওয়া হারাম। যেমন ঘাড় মটকানো, পায়ের শিরা কাটা, চামড়া ছাড়ানো ইত্যাদি জান যাওয়ার আগে বৈধ নয়। অনুরূপভাবে দেহ আড়ষ্ট হয়ে এলে চামড়া ছাড়াতে শুরু করার পর যদি পুনরায় লাফিয়ে ওঠে তাহলে আরো কিছুক্ষণ প্রাণ ত্যাগ করা কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যেহেতু অন্যভাবে পশুকে কষ্ট দেওয়া আদৌ বৈধ নয়।
* মাকরুহ বা বর্জনীয় কিছু কাজ:
- ভোতা ছুড়ি দিয়ে কুরবানি করা
- পশুকে মাটিতে শোয়ানোর পর ছুরিতে ধার দেয়া
- মাথা শরীর থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা
- হারাম মগজ বা অস্থিমজ্জা পর্যন্ত ছুড়ি ঠেকিয়ে দেওয়া।
- পশুকে মাটিতে শোয়ানোর পর পা ধরে টেনে হেচড়ে জবাইয়ের স্থানে নিয়ে যাওয়া
কুরবানীর গোশত বন্টন:
কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০
অতঃপর তোমরা তা (কুরবানীর পশু) হতে ভক্ষণ কর এবং নিঃসব অভাবগ্রস্তদেরকে ভক্ষণ করাও। (সূরা হাজ্জ ২৮ আয়াত)
অতঃপর তোমরা তা (কুরবানীর পশু) হতে ভক্ষণ কর এবং নিঃসব অভাবগ্রস্তদেরকে ভক্ষণ করাও। (সূরা হাজ্জ ২৮ আয়াত)
কুরবানির গোশত জমিয়ে রাখা:
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা তিনদিনের বেশি কুরবানীর গোশ্ত জমা করে রাখতাম না। পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনদিনের পরেও খাওয়ার এবং পথেয় হিসেবে
রেখে ব্যবহার করার জন্য আমাদের অনুমতি দেন। সহিহ মুসলিম ৫০০০ (ই.ফা. ৪৯৪৫, ই.সে. ৪৯৫০)
কুরবানীর চামড়া:
কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা দান করে দিতে হবে। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১
জবাইকারীকে চামড়া, গোশত পারিশ্রমিক হিসেবে না দেওয়া:
জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য আলাদাভাবে পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।
আরও পড়ুতে পারেন:
একনজরে পবিত্র হজ ও হজ্জযাত্রীদের করণীয়
কুরবানী : ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ
আরও পড়ুতে পারেন:
একনজরে পবিত্র হজ ও হজ্জযাত্রীদের করণীয়
কুরবানী : ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ
সূত্র:
https://www.alkawsar.com/bn/article/740/
Comments
Post a Comment